গীতা-মাহাত্ম্য Srimad Bhagavad Gita

 

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা মাহাত্ম্যম্
    গীতাশাস্ত্রমিদং পুণ্যং যঃ পঠেৎ প্রযতঃ পুমান্ ।
বিষ্ণোঃ পদমবাপ্নোতি ভয়শোকাদিবর্জ্জিতঃ ॥১॥
যে পুরুষ সংযত চিত্ত হইয়া পুণ্যপ্রদ এই গীতাশাস্ত্র পাঠ করিবেন, তিনি ভয় এবং শোকাদিরহিত বিষ্ণুর ধাম বৈকুণ্ঠাদি প্রাপ্ত হইবেন ॥১॥

গীতাধ্যয়নশীলস্য প্রাণায়ামপরস্য চ ।
নৈব সন্তি হি পাপানি পূর্ব্বজন্মকৃতানি চ ॥২॥
গীতাশাস্ত্র অধ্যয়নশীল ও প্রাণায়াম পরায়ণ ব্যক্তির পূর্ব্বজন্ম কৃত বা এই বর্ত্তমান জন্মকৃত কোন পাপই থাকে না, সমস্তই ভষ্ম হইয়া যায় ॥২॥

মলনির্ম্মোচনং পুংসাং জলস্নানং দিনে দিনে ।
সকৃদ্গীতাম্ভসি স্নানং সংসারমলনাশনম্ ॥৩॥
মনুষ্যের প্রতিদিন জলে স্নানদ্বারা যেমন শরীরের মল দূর হয়, সেইরূপ একবার মাত্র গীতারূপ জলে স্নান করিলে অর্থাৎ গীতা পাঠ করিলে সংসাররূপ মল নাশ হয় ॥৩॥

গীতা সুগীতা কর্ত্তব্যা কিমন্যৈঃ শাস্ত্রবিস্তরৈঃ ।
যা স্বয়ং পদ্মনাভস্য মুখপদ্মাদ্বিনিঃসৃতা ॥৪॥
যে গীতা স্বয়ং ভগবান্ শ্রীকৃষ্ণের মুখপদ্ম হইতে বিনির্গত হইয়াছে, তাহারই নিত্য সুন্দররূপে অধ্যয়নাদি করা কর্ত্তব্য । অন্যান্য বহু শাস্ত্রাধ্যয়ন দ্বারা কি ফল হইবে ॥৪॥

ভারতামৃতসর্ব্বস্বং বিষ্ণোর্বক্ত্রাদ্­বিনিসৃতম্ ।
গীতা-গঙ্গোদকং পীত্বা পুনর্জন্ম ন বিদ্যতে ॥৫॥
বিষ্ণুর মুখ হইতে বিনির্গত ; মহাভারতরূপ অমৃতের সার ; গীতা নামক গঙ্গাজল পান অর্থাৎ গীতা পাঠ করিলে আর পুনরায় জন্ম হয় না ॥৫॥

সর্ব্বোপনিষদো গাবো দোগ্ধা গোপালনন্দনঃ ।
পার্থো বৎসঃ সুধীর্ভোক্তা দুগ্ধং গীতামৃতং মহৎ ॥৬॥
সমুদয় উপনিষদ্গণ গো সদৃশ ; তাহাদের দোহনকারী নন্দনন্দন শ্রীকৃষ্ণ ; বৎস অর্জ্জুন ; দুগ্ধ গীতারূপ শ্রেষ্ঠ অমৃত এবং পণ্ডিতগণই ইহার ভোক্তা অর্থাৎ পানকারী ॥৬॥

একং শাস্ত্রং দেবকীপুত্ত্রগীতমেকো দেবো দেবকীপুত্ত্র এব ।
একো মন্ত্রস্তস্য নামানি যানি কর্ম্মাপ্যেকং তস্য দেবস্য সেবা ॥৭॥
শ্রীকৃষ্ণ-মুখোচ্চারিত গীতাই একমাত্র শাস্ত্র, কৃষ্ণই একমাত্র দেবতা, তাঁহার যে সকল নাম আছে তাহাই একমাত্র মন্ত্র এবং সেই দেবতা শ্রীকৃষ্ণের সেবাই একমাত্র কর্ম্ম ॥৭॥


শ্রীমদ্ভগবদ্­গীতামাহাত্ম্যম্

(শ্রীবৈষ্ণবীয় তন্ত্রসারোক্ত)

ঋষিরুবাচ
গীতায়াশ্চৈব মাহাত্ম্যং যথাবৎ সূত ! মে বদ ।
পুরা নারায়ণ-ক্ষেত্রে ব্যাসেন মুনিনোদিতম্ ॥১॥
ঋষি কহিলেন—হে সূত ! পুরাকালে নারায়ণক্ষেত্রে মহামুনি ব্যাস-কথিত গীতা-মাহাত্ম্য আমাকে বলুন ॥১॥
সূত উবাচ
ভদ্রং ভগবতা পৃষ্টং যদ্ধি গুপ্ততমং পরম্ ।
শক্যতে কেন তদ্বক্তুং গীতামাহাত্ম্যমুত্তমম্ ॥২॥
সূত বলিলেন—হে ভগবান্! আপনি উত্তম জিজ্ঞাসা করিয়াছেন । যাহা পরম গোপনীয়তম সেই উত্তম গীতামাহাত্ম্য কে বলিতে সমর্থ ? ॥২॥

কৃষ্ণো জানাতি বৈ সম্যক্ কিঞ্চিৎ কুন্তীসূতঃ ফলম্ ।
ব্যাসো বা ব্যাসপুত্ত্রো বা যাজ্ঞবল্ব্যোঽথ মৈথিলঃ ॥৩॥
শ্রীকৃষ্ণই ইহা সম্যক্ অবগত ; কুন্তীপুত্র অর্জ্জুন ইহার কিঞ্চিৎ ফল জানেন, আর ব্যাসদেব, শুকদেব, যাজ্ঞবল্ক্য ও রাজর্ষি জনক ইঁহারাও কিছু কিছু জ্ঞাত আছেন ॥৩॥

অন্যে শ্রবণতঃ শ্রুত্বা লেশং সঙ্কীর্ত্তয়ন্তি চ ।
তস্মাৎ কিঞ্চিদ্বদাম্যত্র ব্যাসস্যাস্যান্ময়া শ্রুতম্ ॥৪॥
এতদ্ব্যতীত অন্যে পরম্পরায় শ্রবণ করিয়া ইহার লেশমাত্র কীর্ত্তন করিয়া থাকেন । আমি ব্যাসদেবের নিকট যে প্রকার শ্রবণ করিয়াছি তাহারই কিঞ্চিৎ এখানে বলিতেছি ॥৪॥

সর্ব্বোপনিষদো গাবো দোগ্ধা গোপালনন্দনঃ ।
পার্থো বৎসঃ সুধীর্ভোক্তা দুগ্ধং গীতামৃতং মহৎ ॥৫॥
উপনিষদ্ সমূহ গাভী-স্বরূপ । গোপালনন্দন শ্রীকৃষ্ণ তাহাদের দোহনকর্ত্তা । পৃথানন্দন বৎস স্বরূপ । এই গীতামৃতই পরমোৎকৃষ্ট দুগ্ধ এবং সুধীগণই ইহার আস্বাদনকারী ॥৫॥

সারথ্যমর্জ্জুনস্যাদৌ কুর্ব্বন্ গীতামৃতং দদৌ ।
লোকত্রয়োপকারায় তস্মৈ কৃষ্ণাত্মনে নমঃ ॥৬॥
যে কৃষ্ণ অর্জ্জুনের সারথ্য অঙ্গীকার পূর্ব্বক ত্রিলোকের উপকারার্থ এই গীতামৃত প্রদান করিয়াছেন, আমি প্রথমেই সেই কৃষ্ণ-স্বরূপকে নমস্কার করি ॥৬॥

সংসারসাগরং ঘোরং তর্ত্তুমিচ্ছতি যো নরঃ ।
গীতানাবং সমাসাদ্য পারং যাতি সুখেন সঃ ॥৭॥
যে ব্যক্তি ঘোর সংসার-সাগর উত্তীর্ণ হইতে চাহেন, তিনি গীতারূপ নৌকার আশ্রয়ে তাহা সুখেই পার হইতে পারেন ॥৭॥

গীতাজ্ঞানং শ্রুতং নৈব সদৈবাভ্যাসযোগতঃ ।
মোক্ষমিচ্ছতি মূঢ়াত্মা যাতি বালকহাস্যতাম্ ॥৮॥
গীতাজ্ঞান শ্রবণ না করিয়াই যে মূঢ়াত্মা সর্ব্বদা অভ্যাসযোগে মোক্ষলাভ করিতে চায়, তাহাকে বালকেও উপহাস করে ॥৮॥

যে শৃণ্বন্তি পঠন্ত্যেব গীতাশাস্ত্রমহর্নিশম্ ।
ন তে বৈ মানুষা জ্ঞেয়া দেবরূপা ন সংশয়ঃ ॥৯॥
যাঁহারা অহর্নিশ গীতাশাস্ত্র শ্রবণ বা পাঠ করেন, তাঁহারা কখনই মনুষ্য নহেন—নিশ্চিত দেবতুল্য, ইহাতে সংশয় নাই ॥৯॥

গীতাজ্ঞানেন সম্বোধং কৃষ্ণঃ প্রাহার্জ্জুনায় বৈ ।
ভক্তিতত্ত্বং পরং তত্র সগুণং বাথ নির্গুণম্ ॥১০॥
ভগবান্ কৃষ্ণচন্দ্র গীতাজ্ঞান দ্বারা অর্জ্জুনের সম্বোধনার্থ সগুণ এবং নির্গুণ পরমাভক্তিতত্ত্ব কীর্ত্তন করিয়াছিলেন ॥১০॥

সোপানাষ্টাদশৈরেবং ভুক্তিমুক্তিসমুচ্ছ্রিতৈঃ ।
ক্রমশশ্চিত্তশুদ্ধিঃ স্যাৎ প্রেমভক্ত্যাদিকর্ম্মসু ॥১১॥
এই প্রকারে ভোগ ও মোক্ষ-নিরাকৃত অষ্টাদশাধ্যায়-সোপানবিশিষ্ট গীতাজ্ঞান-দ্বারা চিত্তশুদ্ধি হয় এবং ক্রমশঃ প্রেমভক্ত্যাদি কার্য্যে অধিকার জন্মে ॥১১॥

সাধো র্গীতাম্ভসি স্নানং সংসারমলনাশনম্ ।
শ্রদ্ধাহীনস্য তৎ কার্য্যং হস্তিস্নানং বৃথৈব তৎ ॥১২॥
এই গীতারূপ সলিলে স্নান করিয়া সাধুগণ সংসার-মল মুক্ত হন কিন্তু শ্রদ্ধাহীন জনের উহাই হস্তিস্নানের ন্যায় বৃথা হইয়া থাকে ॥১২॥

গীতায়াশ্চ ন জানাতি পঠনং নৈব পাঠনম্ ।
স এব মানুষে লোকে মোঘকর্ম্মকরো ভবেৎ ॥১৩॥
যে ব্যক্তি গীতার পঠন পাঠন কিছুই জানে না, সে ব্যক্তি মনুষ্যলোকে নিষ্ফল কর্ম্মকারী ॥১৩॥

তস্মাদ্গীতাং ন জানাতি নাধমস্তৎপরো জনঃ ।
ধিক্ তস্য মানুষং দেহং বিজ্ঞানং কুলশীলতাম্ ॥১৪॥
অতএব গীতাতত্ত্ব যে জানে না তদপেক্ষা অধম আর কেহ নাই । তাহার কুল, শীল, বিজ্ঞান ও মনুষ্যদেহে ধিক্ ॥১৪॥
গীতার্থং ন বিজানাতি নাধমস্তৎপরো জনঃ ।
ধিক্ শরীরং শুভং শীলং বিভবন্তদ্গৃহাশ্রমম্ ॥১৫॥
যে গীতার্থ অবগত নহে, তদপেক্ষা অধম আর নাই । তাহার সুন্দর দেহ, চরিত্র, বৈভব, গৃহাশ্রম সকলি ধিক্ ॥১৫॥

গীতাশাস্ত্রং ন জানাতি নাধমস্তৎপরো জনঃ ।
ধিক্ প্রারব্ধং প্রতিষ্ঠাঞ্চ পূজাং দানং মহত্তমম্ ॥১৬॥
যে ব্যক্তি গীতাশাস্ত্র জানে না, তদপেক্ষা অধম জন আর নাই । তাহার প্রারদ্ধে ধিক্, প্রতিষ্ঠায় ধিক্, পূজা, দান, মহত্ত্ব সমস্তই ধিক্ ॥১৬॥

গীতাশাস্ত্রে মতির্নাস্তি সর্ব্বং তন্নিষ্ফলং জগুঃ ।
ধিক্ তস্য জ্ঞানদাতারং ব্রতং নিষ্ঠাং তপো যশঃ ॥১৭॥
গীতাশাস্ত্রে মতিহীন ব্যক্তির সমস্তই নিষ্ফল বলিয়া কথিত হয় । তাহার জ্ঞানদাতাকে ধিক্, তাহার ব্রতে ধিক্, তাহার নিষ্ঠায় ও তপস্যায়, যশেও ধিক্ ॥১৭॥

গীতার্থপঠনং নাস্তি নাধমস্তৎপরো জনঃ ।
গীতাগীতং ন যজ্­জ্ঞানং তদ্বিদ্ধ্যাসুরসম্মতম্ ।
তন্মোঘং ধর্ম্মরহিতং বেদবেদান্তগর্হিতম্ ॥১৮॥
যে ব্যক্তি গীতার্থ আলোচনা করে না, তার চেয়ে অধম আর নাই ; যে জ্ঞান গীতায় গীত হয় নাই, সেই জ্ঞান নিষ্ফল, ধর্ম্মরহিত, বেদ-বেদান্ত-গর্হিত এবং অসুর-সম্মত জ্ঞান বলিয়া জানিবে ॥১৮॥

তস্মাদ্ধর্ম্মময়ী গীতা সর্ব্বজ্ঞানপ্রযোজিকা ।
সর্ব্বশাস্ত্রসারভূতা বিশুদ্ধা সা বিশিষ্যতে ॥১৯॥
অতএব গীতাই ধর্ম্মময়ী সর্ব্বজ্ঞান-প্রযোজিকা এবং সর্ব্বশাস্ত্রসারভূতা বিশুদ্ধা বলিয়া সর্ব্বত্র সর্ব্বকালে সমাদৃতা ॥১৯॥

যোঽধীতে বিষ্ণুপর্ব্বাহে গীতাং শ্রীহরিবাসরে ।
স্বপন্ জাগ্রৎ চলন্ তিষ্ঠন্ শত্রুভির্ন স হীয়তে ॥২০॥
যে ব্যক্তি বিষ্ণুপর্ব্বদিনে বিশেষতঃ শ্রীহরিবাসরতিথি একাদশীতে গীতা অধ্যয়ন করেন, তিনি নিদ্রিত বা জাগ্রতাবস্থায়, গমন বা অবস্থানকালে কখনই শক্রদ্বারা পরাভূত হন না ॥২০॥

শালগ্রাম-শিলায়াং বা দেবাগারে শিবালয়ে ।
তীর্থে নদ্যাং পঠেদ্গীতাং সৌভাগ্যং লভতে ধ্রুবম্ ॥২১॥
যিনি শালগ্রামশিলার সামনে, দেবাগারে বা শিবালয়ে, তীর্থে ও নদীতটে গীতা পাঠ করেন, তিনি নিশ্চিত সৌভাগ্য লাভের অধিকারী হন ॥২১॥

দেবকীনন্দনঃ কৃষ্ণো গীতাপাঠেন তুষ্যতি ।
যথা ন বেদৈর্দানেন যজ্ঞতীর্থব্রতাদিভিঃ ॥২২॥
দেবকীনন্দন ভগবান্ শ্রীকৃষ্ণ গীতা পাঠে যে প্রকার তুষ্ট হন, বেদাধ্যয়ন, দান, যজ্ঞ, তীর্থভ্রমণ বা ব্রতাদি দ্বারাও সে প্রকার সন্তুষ্ট হন না ॥২২॥

গীতাধীতা চ যেনাপি ভক্তিভাবেন চেতসা ।
বেদশাস্ত্রপুরাণানি তেনাধীতানি সর্ব্বশঃ ॥২৩॥
যিনি ভক্তিভাবিতচিত্তে গীতাধ্যয়ন করেন, বেদপুরাণাদি সমস্ত শাস্ত্রই সর্ব্বতোভাবে তাঁহার অধ্যয়ন করা হইয়া যায় ॥২৩॥

যোগস্থানে সিদ্ধপীঠে শিলাগ্রে সৎসভাসু চ ।
যজ্ঞে চ বিষ্ণুভক্তাগ্রে পঠন্ সিদ্ধিং পরাং লভেৎ ॥২৪॥
যোগস্থানে, সিদ্ধপীঠে, শালগ্রামশিলাগ্রে, সজ্জনসভায়, যজ্ঞে বিশেষতঃ বিষ্ণু-ভক্তের নিকট গীতাপাঠ করিলে পরমা সিদ্ধি লাভ হয় ॥২৪॥

গীতাপাঠঞ্চ শ্রবণং যঃ করোতি দিনে দিনে ।
ক্রতবো বাজিমেধাদ্যাঃ কৃতাস্তেন সদক্ষিণাঃ ॥২৫॥
যিনি প্রতিদিন গীতা পাঠ এবং শ্রবণ করেন তাঁহার সদক্ষিণা অশ্বমেধাদি যজ্ঞ স্বাভাবিক ভাবেই করা হইয়া যায় ॥২৫॥

যঃ শৃণোতি চ গীতার্থং কীর্ত্তয়ত্যেব যঃ পরম্ ।
শ্রাবয়েচ্চ পরার্থং বৈ স প্রযাতি পরং পদম্ ॥২৬॥
যিনি যত্নপূর্ব্বক গীতার্থ শ্রবণ-কীর্ত্তন করেন বা অন্যকে শ্রবণ করান, তিনি পরমপদ লাভ করেন ॥২৬॥

গীতায়াঃ পুস্তকং শুদ্ধং যোঽর্পয়ত্যের সাদরাৎ ।
বিধিনা ভক্তিভাবেন তস্য ভার্য্যা প্রিয়া ভবেৎ ॥২৭॥
যে ব্যক্তি সাদরে ভক্তিভাবে বিধিপূর্ব্বক শুদ্ধ গীতাপুস্তক কাহাকেও অর্পণ করেন, তাঁহার ভার্য্যা প্রিয়া হয় ॥২৭॥

যশঃ সৌভাগ্যমারোগ্যং লভতে নাত্র সংশয়ঃ ।
দয়িতানাং প্রিয়ো ভূত্বা পরমং সুখমশ্নুতে ॥২৮॥
এবং তিনি যশ, সৌভাগ্য, আরোগ্যলাভ করেন, ইহা নিঃসন্দেহ । অধিকন্তু প্রিয়জনের অতিপ্রিয় হইয়া পরম সুখ ভোগ করেন ॥২৮॥
অভিচারোদ্ভবং দুঃখং বরশাপাগতঞ্চ যৎ ।
নোপসর্পতি তত্রৈব যত্র গীতার্চ্চনং গৃহে ॥২৯॥
যে গৃহে গীতার্চ্চন হইয়া থাকে সেখানে কখনও অভিশাপ বা অভিচারোদ্ভব দুঃখ প্রবেশ করে না ॥২৯॥

তাপত্রয়োদ্ভবা পীড়া নৈব ব্যাধির্ভবেৎ ক্বচিৎ ।
ন শাপো নৈব পাপঞ্চ দুর্গতির্নরকং ন চ ॥৩০॥
বা কখনও সেখানে ত্রিতাপোদ্ভব পীড়া, বা অন্য প্রকার ব্যাধি বা শাপ, পাপ, দুর্গতি বা নরকভয় থাকে না ॥৩০॥

বিষ্ফোটকাদয়ো দেহে ন বাধন্তে কদাচন ।
লভেৎ কৃষ্ণপদে দাস্যাং ভক্তিঞ্চাব্যভিচারিণীম্ ॥৩১॥
কদাচ বিষ্ফোটকাদি পীড়া দেহে জন্মে না । এবং তত্রস্থ জনগণ শ্রীকৃষ্ণপাদপদ্মে অব্যভিচারিণী দাস্য-ভক্তি লাভ করেন ॥৩১॥

জায়তে সততং সখ্যং সর্ব্বজীবগণৈঃ সহ ।
প্রারব্ধং ভুঞ্জতো বাপি গীতাভ্যাসরতস্য চ ॥৩২॥
গীতাভ্যাসরত ব্যক্তি প্রারব্ধ ফল ভোগ করিলেও সমস্ত জীবগণের সহিত তাহার সখ্যভাব উৎপন্ন হয় ॥৩২॥

স মুক্তঃ স সুখী লোকে কর্ম্মণা নোপলিপ্যতে ।
মহাপাপাতিপাপানি গীতাধ্যায়ী করোতি চেৎ ।
ন কিঞ্চিৎ স্পৃশ্যতে তস্য নলিনীদলমম্ভসা ॥৩৩॥
সে ব্যক্তি মুক্ত, সুখী । এ জগতে কর্ম্ম করিয়াও সে কর্ম্মে লিপ্ত হয় না । গীতাধ্যয়নকারী মহাপাপ, অভিপাপ করিয়া ফেলিলেও সেই সমস্ত পাপ তাহাকে পদ্মপত্র জলের ন্যায় বিন্দুমাত্র স্পর্শ করিতে পারে না ॥৩৩॥

অনাচারোদ্ভবং পাপমবাচ্যাদিকৃতঞ্চ যৎ ।
অভক্ষ্যভক্ষজং দোষমস্পৃশ্যস্পর্শজং তথা ॥৩৪॥
জ্ঞানাজ্ঞানকৃতং নিত্যমিন্দ্রয়ৈর্জনিতঞ্চ যৎ ।
তৎ সর্ব্বং নাশমায়াতি গীতাপাঠেন তৎক্ষণাৎ ॥৩৫॥
অনাচার-উদ্ভূত পাপ বা অবাচ্য কথন পাপ, অভক্ষ্য-ভক্ষণ দোষ এবং জ্ঞান-অজ্ঞানকৃত দৈনন্দিন ইন্দ্রিয়জ সমস্ত প্রকার পাপই গীতাপাঠে সদ্য বিনষ্ট হয় ॥৩৪-৩৫॥

সর্ব্বত্র প্রতিভোক্তা চ প্রতিগৃহ্য চ সর্ব্বশঃ ।
গীতাপাঠং প্রকুর্ব্বাণো ন লিপ্যেত কদাচন ॥৩৬॥
সর্ব্বত্র ভোজন বা সর্ব্বতোভাবে প্রতিগ্রহণ করিলেও প্রকৃষ্টরূপে গীতাপাঠকারী সর্ব্বদা তাহাতে নির্লিপ্ত থাকে ॥৩৬॥

রত্নপূর্ণাং মহীং সর্ব্বাং প্রতিগৃহ্যাবিধানতঃ ।
গীতাপাঠেন চৈকেন শুদ্ধস্ফটিকবৎ সদা ॥৩৭॥
এমন কি অবিধিপূর্ব্বক রত্নপূর্ণা সসাগরা ধরিত্রী প্রতিগ্রহকারীও একবার গীতাপাঠেই শুদ্ধ স্ফটিকবৎ নির্ম্মল হয় ॥৩৭॥

যস্যান্তঃকরণং নিত্যং গীতায়াং রমতে সদা ।
স সাগ্নিকঃ সদা জাপী ক্রিয়াবান্ স চ পণ্ডিতঃ ॥৩৮॥
যাহার অন্তঃকরণ সদা সর্ব্বদা গীতাতেই নিবিষ্ট, তিনিই প্রকৃষ্ট সাগ্নিক, সর্ব্বদা জাপী, ক্রিয়াবান্, এবং তিনিই প্রকৃত পণ্ডিত ॥৩৮॥

দর্শনীয়ঃ স ধনবান্ স যোগী জ্ঞানবানপি ।
স এব যাজ্ঞিকো যাজী সর্ব্ববেদার্থদর্শকঃ ॥৩৯॥
তিনিই দর্শনীয়, তিনিই ধনবান্, তিনিই যোগী বা প্রকৃত জ্ঞানবান্ এবং তিনিই যাজ্ঞিক, যাজনকারী এবং তিনিই সর্ব্ব বেদার্থ-দর্শক ॥৩৯॥

গীতায়াঃ পুস্তকং যত্র নিত্যপাঠশ্চ বর্ত্ততে ।
তত্র সর্ব্বানি তীর্থানি প্রয়াগাদীনি ভূতলে ॥৪০॥
যেখানে নিত্য গীতা-পুস্তক অবস্থান করে, এ জগতে সেখানে প্রয়াগাদি সকল তীর্থগণ সর্ব্বদা অবস্থান করেন ॥৪০॥

নিবসন্তি সদা দেহে দেহশেষেঽপি সর্ব্বদা ।
সর্ব্বে দেবাশ্চ ঋষয়ো যোগিনো দেহরক্ষকাঃ ॥৪১॥
সর্ব্বদা গীতাধ্যয়নকারীর দেহে, বা দেহশেষেও দেহরক্ষক রূপে দেব, ঋষি বা যোগিগণ অবস্থান করেন ॥৪১॥

গোপালো বালকৃষ্ণোঽপি নারদধ্রুবপার্ষদৈঃ।
সহায়ো জায়তে শীঘ্রং যত্র গীতা প্রবর্ত্ততে ॥৪২॥
যেখানে গীতা বর্ত্তমান থাকেন, সেখানে নারদধ্রুবাদি পার্ষদবৃন্দসহ স্বয়ং বালগোপাল শ্রীকৃষ্ণ সহায় রূপে আবির্ভূত হন ॥৪২॥

যত্র গীতা-বিচারশ্চ পঠনং পাঠনং তথা ।
মোদতে তত্র শ্রীকৃষ্ণো ভগবান্ রাধয়া সহ ॥৪৩॥
 
যে স্থানে গীতা শাস্ত্রের বিচার এবং পঠন পাঠন হয়, ভগবান্ শ্রীকৃষ্ণ তথায় শ্রীরাধিকার সহিত পরমানন্দে বিরাজ করেন ॥৪৩॥

শ্রীভগবানুবাচ—
গীতা মে হৃদয়ং পার্থ ! গীতা মে সারমুত্তমম্ ।
গীতা মে জ্ঞানমত্যুগ্রং গীতা মে জ্ঞানমব্যয়ম্ ॥৪৪॥
শ্রীভগবান্ কহিলেন,—হে পার্থ ! গীতা আমার হৃদয়, গীতা আমার উত্তম সার-স্বরূপ, গীতা আমার অত্যুগ্র জ্ঞান এবং গীতাই আমার অব্যয়-জ্ঞান ॥৪৪॥

গীতা মে চোত্তমং স্থানং গীতা মে পরমং পদম্ ।
গীতা মে পরমং গুহ্যং গীতা মে পরমো গুরুঃ ॥৪৫॥
গীতা আমার উত্তম স্থান, গীতা আমার পরমপদ, গীতা আমার পরম গোপনীয় বস্তু, বিশেষ কি গীতাই আমার পরম গুরু ॥৪৫॥

গীতাশ্রয়েঽহং তিষ্ঠামি গীতা মে পরমং গৃহম্ ।
গীতাজ্ঞানং সমাশ্রিত্য ত্রিলোকীং পালয়াম্যহম্ ॥৪৬॥
গীতার আশ্রয়েই আমি বর্ত্তমান আছি, গীতাই আমার পরম গৃহ । এই গীতাজ্ঞানকে সম্যক্ আশ্রয় করিয়াই আমি ত্রিলোক পালন করিয়া থাকি ॥৪৬॥

গীতা মে পরমা বিদ্যা ব্রহ্মরূপা ন সংশয়ঃ ।
অর্দ্ধমাত্রাহরা নিত্যমনির্ব্বাচ্যপদাত্মিকা ॥৪৭॥
অর্দ্ধমাত্রা-স্বরূপ নিত্য অনির্ব্বাচ্যপদাত্মিকা গীতাই আমার ব্রহ্মরূপা পরাবিদ্যা—ইহা নিঃসংশয়ে জানিবে ॥৪৭॥

গীতানামানি বক্ষ্যামি গুহ্যানি শৃণু পাণ্ডব ।
কীর্ত্তনাৎ সর্ব্বপাপানি বিলয়ং যান্তি তৎক্ষণাৎ ॥৪৮॥
হে পাণ্ডব ! গীতার যে নাম সমূহ কীর্ত্তনের দ্বারা তৎক্ষণাৎ সমস্ত পাপ ধ্বংস হয়, সেই গোপনীয় নাম সকল বলিতেছি, শ্রবণ কর ॥৪৮॥

গঙ্গা গীতা চ সাবিত্রী সীতা সত্যা পতিব্রতা ।
ব্রহ্মাবলির্ব্রহ্মবিদ্যা ত্রিসন্ধ্যা মুক্তগেহিনী ॥৪৯॥
অর্দ্ধমাত্রা চিদানন্দা ভবঘ্নী ভ্রান্তিনাশিনী ।
বেদত্রয়ী পরানন্দা তত্ত্বার্থজ্ঞানমঞ্জরী ॥৫০॥
ইত্যেতানি জপেন্নিত্যং নরো নিশ্চলমানসঃ ।
জ্ঞানসিদ্ধিং লভেন্নিত্যং তথান্তে পরমং পদম্ ॥৫১॥
গঙ্গা, গীতা, সাবিত্রী, সীতা, সত্যা, পতিব্রতা, ব্রহ্মাবলী, ব্রহ্মবিদ্যা, ত্রিসন্ধ্যা, মুক্তগেহিনী, অর্দ্ধমাত্রা, চিদানন্দা, ভবঘ্নী, ভ্রান্তি-নাশিনী, বেদত্রয়ী, পরানন্দ, তত্ত্বার্থজ্ঞানমঞ্জরী, যে নর অচঞ্চলচিত্তে এই গুপ্ত নাম সমূহ নিত্য জপ করেন, তিনি দিব্যজ্ঞান-সিদ্ধি লাভ করেন এবং অন্তে পরমপদ প্রাপ্ত হন ॥৪৯-৫১॥

পাঠেঽসমর্থঃ সম্পূর্ণে তদর্দ্ধং পাঠমাচরেৎ ।
তদা গো-দানজং পুণ্যং লভতে নাত্র সংশয়ঃ ॥৫২॥
সম্পূর্ণ গীতাপাঠে অসমর্থ হইলে তাহার অর্দ্ধ্বাংশ পাঠ করিবে । তদ্দ্বারা গো-দান জনিত পুণ্য লাভ হইবে—ইহাতে সন্দেহ নাই ॥৫২॥

ত্রিভাগং পঠমানন্তু সোমযাগফলং লভেৎ ।
ষড়ংশং জপমানন্তু গঙ্গাস্নানফলং লভেৎ ॥৫৩॥
এক-তৃতীয়াংশ পাঠে সোম-যজ্ঞের ফল এবং এক-ষষ্ঠাংশ জপে গঙ্গাস্নান ফল লাভ করিবে ॥৫৩॥

তথাধ্যায়দ্বয়ং নিত্যং পঠমানো নিরন্তরম্ ।
ইন্দ্রলোকমবাপ্নোতি কল্পমেকং বসেদ্ধ্রুবম্ ॥৫৪॥
যিনি নিষ্ঠাসহকারে নিত্য ইহার দুইটি অধ্যায় পাঠ করেন, তিনি নিঃসন্দেহে ইন্দ্রলোক লাভ করিয়া তথায় কল্পকাল বাস করেন ॥৫৪॥

একমধ্যায়কং নিত্যং পঠতে ভক্তিসংযুতঃ ।
রুদ্রলোকমবাপ্নোতি গণো ভূত্বা বসেচ্চিরম্ ॥৫৫॥
যিনি ভক্তি সহকারে দৈনিক একটি অধ্যায় পাঠ করেন, তিনি চিরকালের জন্য রুদ্রগণে পরিগণিত হইয়া রুদ্রলোক লাভ করেন ॥৫৫॥

অধ্যায়ার্দ্ধঞ্চ পাদং বা নিত্যং যঃ পঠতে জনঃ ।
প্রাপ্নোতি রবিলোকং স মন্বন্তরসমাঃ শতম্ ॥৫৬॥
যে জন অর্দ্ধ-অধ্যায় বা এক-চতুর্থাংশ নিত্য পাঠ করেন, তিনি শতমন্বন্তর সমকাল রবিলোক প্রাপ্ত হন ॥৫৬॥

গীতায়াঃ শ্লোকদশকং সপ্ত পঞ্চ চতুষ্টয়ম্ ।
ত্রিদ্ব্যেকমর্দ্ধমথ বা শ্লোকানাং যঃ পঠেন্নরঃ ।
চন্দ্রলোকমবাপ্নোতি বর্ষাণামযুতং তথা ॥৫৭॥
যে ব্যক্তি এই গীতার দশটি বা সাতটি বা পাঁচটি বা তিনটি বা দুইটি বা একটি বা অর্দ্ধশ্লোকও শ্রদ্ধাসহকারে পাঠ করেন, তিনি চন্দ্রলোক প্রাপ্ত হইয়া তথায় অযুতবর্ষকাল বাস করেন ॥৫৭॥

গীতার্দ্ধমেকপাদঞ্চ শ্লোকমধ্যায়মেব চ ।
স্মরংস্ত্যক্ত্বা জনো দেহং প্রয়াতি পরমং পদম্ ॥৫৮॥
যিনি গীতার অর্দ্ধভাগ, একপাদ, বা একটি অধ্যায় বা শ্লোকও স্মরণ করিতে করিতে দেহত্যাগ করেন, তিনি পরমপদ লাভ করেন ॥৫৮॥

গীতার্থমপি পাঠং বা শৃণুয়াদন্তকালতঃ ।
মহাপাতকযুক্তোঽপি মুক্তিভাগী ভবেজ্জনঃ ॥৫৯॥
মৃত্যুকালে গীতার্থ পাঠ বা শ্রবণ করিয়া মহাপাতকযুক্ত জনও মুক্তিভাগী হয় ॥৫৯॥

গীতাপুস্তক সংযুক্তঃ প্রাণাংস্ত্যক্ত্বা প্রয়াতি যঃ ।
স বৈকুণ্ঠমবাপ্নোতি বিষ্ণুনা সহ মোদতে ॥৬০॥
যিনি গীতাপুস্তক-সংযুক্ত হইয়া দেহত্যাগ করেন, তিনি বৈকুণ্ঠলাভ করিয়া ভগবান্ বিষ্ণুর সঙ্গে আনন্দে বিরাজ করেন ॥৬০॥

গীতাধ্যায়সমাযুক্তো মৃতো মানুষতাং ব্রজেৎ ।
গীতাভ্যাসং পুনঃ কৃত্বা লভতে মুক্তিমুত্তমাম্ ॥৬১॥
গীতার একটি অধ্যায় সমাযুক্ত হইয়া মৃত্যু হইলে, পুনরায় সে মনুষ্যজন্ম লাভ করিয়া গীতাভ্যাসের দ্বারা উত্তমা-মুক্তি লাভ করেন ॥৬১॥

গীতেত্যুচ্চার-সংযুক্তো ম্রিয়মাণো গতিং লভেৎ ॥৬২॥
'গীতা' এই শব্দ উচ্চারণের সঙ্গে মৃত্যু হইলেও সদ্গতি লাভ হয় ॥৬২॥

যদ্­যৎ কর্ম্ম চ সর্ব্বত্র গীতাপাঠপ্রকীর্ত্তিমৎ ।
তত্তৎ কর্ম্ম চ নির্দ্দোষং ভূত্বা পূর্ণত্বমাপ্নুয়াৎ ॥৬৩॥
যে সমস্ত কর্ম্ম গীতাপাঠ সহকারে অনুষ্ঠিত হয়, তৎসমুদয়ই নির্দ্দোষ হইয়া পুর্ণত্ব লাভ করে ॥৬৩॥

পিতৄনুদ্দিশ্য যঃ শ্রাদ্ধে গীতাপাঠং করোতি হি ।
সন্তুষ্টাঃ পিতরস্তস্য নিরয়াদ্­যান্তি স্বর্গতিম্ ॥৬৪॥
পিতৃগণের উদ্দেশ্যে যে ব্যক্তি শ্রাদ্ধে গীতাপাঠ করেন, তাঁহার পিতৃগণ সন্তুষ্ট হন ও নরক হইতে স্বর্গগমন করেন ॥৬৪॥

গীতাপাঠেন সন্তুষ্টাঃ পিতরঃ শ্রাদ্ধতর্পিতাঃ ।
পিতৃলোকং প্রয়ান্ত্যেব পুত্রাশীর্ব্বাদতৎপরাঃ ॥৬৫॥
শ্রাদ্ধকালে গীতাপাঠ দ্বারা শ্রাদ্ধতর্পিত পিতৃগণ, সেই পুত্রকে আশির্ব্বাদ করিতে করিতে পিতৃলোক গমন করেন ॥৬৫॥

গীতাপুস্তকদানঞ্চ ধেনুপুচ্ছসমন্বিতম্ ।
কৃত্বা চ তদ্দিনে সম্যক্ কৃতার্থো জায়তে জনঃ ॥৬৬॥
চামর সমন্বিত গীতাগ্রন্থ দান করিলে তদ্দিনেই মানুষ সম্যক্ কৃতার্থতা লাভ করেন ॥৬৬॥

পুস্তকং হেমসংযুক্তং গীতায়াঃ প্রকরোতি যঃ ।
দত্ত্বা বিপ্রায় বিদুষে জায়তে ন পুনর্ভবম্ ॥৬৭॥
পণ্ডিত ব্রাহ্মণকে যিনি সুবর্ণ সংযুক্ত গীতা দান করেন, তাঁহার আর জন্ম হয় না ॥৬৭॥

শতপুস্তকদানঞ্চ গীতায়াঃ প্রকরোতি যঃ ।
স যাতি ব্রহ্মসদনং পুনরাবৃত্তিদুর্ল্লভম্ ॥৬৮॥
যিনি একশতখানি গীতা দান করেন, তিনি পুনরাবৃত্তিদুর্ল্লভ ব্রহ্মধামে গমন করেন ॥৬৮॥

গীতাদান প্রভাবেন সপ্তকল্পমিতাঃ সমাঃ ।
বিষ্ণুলোকমবাপ্যন্তে বিষ্ণুনা সহ মোদতে ॥৬৯॥
গীতাদান-প্রভাব সপ্ত-কল্পকাল যাবৎ বিষ্ণুলোকে স্থান লাভ করিয়া জীব পরমানন্দে বিষ্ণুর সহিত বাস করেন ॥৬৯॥

সম্যক্ শ্রুত্বা চ গীতার্থং পুস্তকং যঃ প্রদাপয়েৎ ।
তস্মৈ প্রীতঃ শ্রীভগবান্ দদাতি মানসেপ্সিতম্ ॥৭০॥
যিনি গীতার্থসম্যক্ শ্রবণ করিয়া সেই পুস্তক ব্রাহ্মণকে দান করেন, শ্রীভগবান্ প্রীত হইয়া তাঁহার মনোঽভীষ্ট পূরণ করেন ॥৭০॥

ন শৃণোতি ন পঠতি গীতামমৃতরূপিণীম্ ।
হস্তাত্ত্যক্ত্বামৃতং প্রাপ্তং স নরো বিষমশ্নুতে ॥৭১॥
যে ব্যক্তি অমৃতরূপিণী গীতা পাঠ বা শ্রবণ না করে, সে হস্তস্থিত অমৃত পরিত্যাগ করিয়া বিষ ভক্ষণ করে ॥৭১॥

জনঃ সংসারদুঃখার্ত্তো গীতাজ্ঞানং সমালভেৎ ।
পীত্বা গীতামৃতং লোকে লব্ধ্বা ভক্তিং সুখী ভবেৎ ॥৭২॥
মরজগতে সংসার-দুঃখার্ত্তজন গীতাজ্ঞান লাভ করিয়া ও গীতামৃত পান করিয়া ভগবদ্ভক্তির আশ্রয় লাভ করে ও সুখী হয় ॥৭২॥

গীতামাশ্রিত্য বহবো ভূভুজো জনকাদয়ঃ ।
নির্ধূতকল্মষা লোকে গতাস্তে পরমং পদম্ ॥৭৩॥
জনকাদি বহু রাজর্ষি গীতা-জ্ঞান আশ্রয়েই নিষ্পাপ থাকিয়া পরমপদ লাভ করিয়াছেন ॥৭৩॥

গীতাসু ন বিশেষোঽস্তি জনেষূচ্চাবচেষু চ ।
জ্ঞানেষ্বেব সমগ্রেষু সমা ব্রহ্মস্বরূপিণী ॥৭৪॥
গীতাপাঠে উচ্চ নীচ কুলের বিচার নাই । শ্রদ্ধালু মাত্রেই গীতাপাঠের অধিকারী। যেহেতু সমগ্র জ্ঞানের মধ্যে গীতাই ব্রহ্ম-স্বরূপিণী ॥৭৪॥

যোঽভিমানেন গর্ব্বেণ গীতানিন্দাং করোতি চ ।
স যাতি নরকং ঘোরং যাবদাহূতসংপ্লবম্ ॥৭৫॥
যে ব্যক্তি অভিমান বা গর্ব্বভরে গীতার নিন্দা করে, সে মহাপ্রলয় কাল পর্য্যন্ত ঘোর নরকে বাস করে ॥৭৫॥

অহঙ্কারেণ মূঢ়াত্মা গীতার্থং নৈব মন্যতে ।
কুম্ভীপাকেষু পচ্যেত যাবৎ কল্পক্ষয়ো ভবেৎ ॥৭৬॥
যে মূঢ়াত্মা অহঙ্কারে স্ফীত হইয়া গীতার্থ অবমাননা করে, সে কল্পক্ষয় কালপর্য্যন্ত কুম্ভীপাক নরকে পচিতে থাকে ॥৭৬॥

গীতার্থং বাচ্যমানং যো ন শৃণোতি সমাসতঃ ।
স শূকরভবাং যোনিমনেকামধিগচ্ছতি ॥৭৭॥
সম্যক্­রূপে গীতার অর্থ কীর্ত্তন করিলেও যে ব্যক্তি তাহা শ্রবণ করে না, সে পুনঃ পুনঃ শূকরযোনি প্রাপ্ত হয় ॥৭৭॥

চৌর্য্যং কৃত্বা চ গীতায়াং পুস্তকং যঃ সমানয়েৎ ।
ন তস্য সফলং কিঞ্চিৎ পঠনঞ্চ বৃথা ভবেৎ ॥৭৮॥
গীতা-পুস্তক যে ব্যক্তি চুরি করিয়া আনে, তাহার কিছুই সফল হয় না, এবং পাঠও বৃথা হইয়া যায় ॥৭৮॥

যঃ শ্রুত্বা নৈব গীতাঞ্চ মোদতে পরমার্থতঃ ।
নৈব তস্য ফলং লোকে প্রমত্তস্য যথা শ্রমঃ ॥৭৯॥
যে জন গীতা শ্রবণ করিয়াও পরমার্থতঃ আনন্দ পায় না, পাগলের পরিশ্রমের ন্যায় সে কোন ফলই পায় না ॥৭৯॥

গীতাং শ্রুত্বা হিরণ্যঞ্চ ভোজ্যং পট্টাম্বরং তথা ।
নিবেদয়েং প্রদানার্থং প্রীতয়ে পরমাত্মনঃ ॥৮০॥
ভগবানের প্রীতির জন্য গীতা শ্রবণ করিয়া সুবর্ণ, ভোজ্য ও পট্টবস্ত্র বৈষ্ণব-ব্রাহ্মণকে নিবেদন করিবে ॥৮০॥

বাচকং পূজয়েদ্ভক্ত্যা দ্রব্য-বস্ত্রাদ্যুপস্করৈঃ ।
অনেকৈর্বহুধা প্রীত্যা তুষ্যতাং ভগবান্ হরিঃ ॥৮১॥
ভগবান্ শ্রীহরির প্রীতির জন্য গীতা পাঠককে বহুপ্রকার দ্রব্য বস্ত্রাদি উপচার-দ্বারা ভক্তিপূর্ব্বক পূজা করিবে ॥৮১॥

সূত উবাচ—
মাহাত্ম্যমেতদ্গীতায়াঃ কৃষ্ণপ্রোক্তং পুরাতনম্ ।
গীতান্তে পঠতে যস্তু যথোক্তফলভাগ্­ভবেৎ ॥৮২॥
সূত কহিলেন,—ভগবান শ্রীকৃষ্ণ-কথিত এই সনাতন গীতামাহাত্ম্য, যিনি গীতাপাঠান্তে পাঠ করেন, তিনি যথোক্ত ফলভাগী হন ॥৮২॥

গীতায়াঃ পঠনং কৃত্বা মাহাত্ম্যং নৈব যঃ পঠেৎ ।
বৃথা পাঠফলং তস্য শ্রম এব উদাহৃতঃ ॥৮৩॥
গীতাপাঠ করিয়া যিনি মাহাত্ম্য পাঠ না করেন, তাঁহার পাঠফল বৃথা, পণ্ডশ্রম হয় ॥৮৩॥

এতন্মাহাত্ম্যসংযুক্তং গীতাপাঠং করোতি যঃ ।
শ্রদ্ধয়া যঃ শৃণোত্যেব পরমাং গতিমাপ্নুয়াৎ ॥৮৪॥
মাহাত্ম্য-সংযুক্ত গীতা যিনি শ্রদ্ধাপূর্ব্বক পাঠ বা শ্রবণ করেন, তিনি পরমাগতি প্রাপ্ত হন ॥৮৪॥

শ্রুত্বা গীতামর্থযুক্তাং মাহাত্ম্যং যঃ শৃণোতি চ ।
তস্য পুণ্যফলং লোকে ভবেৎ সর্ব্বসুখাবহম্ ॥৮৫॥
যে জন শ্রদ্ধাপূর্ব্বক অর্থযুক্ত গীতা শ্রবণ করিয়া গীতা-মাহাত্মা শ্রবণ করেন, ইহলোকে তাঁহার পুণ্যফল সর্ব্বসুখের কারণ হইয়া থাকে ॥৮৫॥

ইতি শ্রীবৈষ্ণবীয়-তন্ত্রসারে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা- মাহাত্ম্যং সম্পূর্ণম্ ।
ইতি শ্রীগীতা মাহাত্ম্যের বঙ্গানুবাদ সম্পূর্ণ ।

 গীতার নাম সমূহ
গীতা, গঙ্গা, সাবিত্রী, সীতা, সত্যা, পতিব্রতা, ব্রহ্মাবলি, ব্রহ্মবিদ্যা, ত্রিসন্ধ্যা, মুক্তি-গেহিনী,অর্ধমাত্রা, চিতানন্দা, ভবঘ্নী, ভ্রানি-নাশিনী, বেদত্রয়ী, পরনন্দা, তত্ত্বার্থজ্ঞানমঞ্জরী।
 
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার যেকোন অধ্যায় পাঠ করতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন...... 
 

 

সনাতন ধর্ম সম্পর্কে জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন-

আরো জানুনঃ

কেন প্রসাদভোজী হবেন? সমস্ত বৈদিক শাস্ত্র (বেদ,সংহিতা, মহাভারত, গীতা,ভাগবত,পুরাণ,উপনিষদ) থেকে প্রমান দেওয়া হলো...

চার যুগ-সত্য,ত্রেতা,দ্বাপর ও কলির সময় পরিমাণ ও বৈশিষ্ট্যসমূহঃ

শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর কিছু অমৃত বাণী

মহাভারতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কিছু বাণী ও উপদেশ

মনুষ্য দেহের কথা আলোচনা

আপনি কি অনেক হতাশায় ভুগছেন? সকল সমস্যাগুলোর সমাধান খুজে পান!!!!!!!!!!

ভগবান বিষ্ণুর গাত্র বর্ণ নীল কেন?

এই জগতে প্রকৃত জ্ঞানী,কে এই জগতে প্রকৃত সুখী,আর কে-ই বা প্রকৃত দুঃখী ?

অনাচার কাকে বলে ও কয় প্রকার?

কলিযুগের মানুষদের ভগবানের নামে রুচি নেই কেন ? 

ঘট কিসের প্রতীক? 

সনাতন ধর্মের বৈদিক শাস্ত্রে জন্ম ও মৃত্যুযোগ অশৌচ কি?

মহাভারত পড়ার সময় না থাকলেও এর মূল সূত্রগুলি আমাদের জীবনে কার্যকর প্রমাণ করতে পারে----------------------- 

মহাভারতের কিছু বাণী

শ্রীমদভগবদগীতায় উচ্চারিত ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সকল নামের অর্থ ও মাহাত্ম্য

প্রকৃত ভালোবাসার খোঁজে.......... 

রাধাকৃষ্ণের প্রেম-কাহিনীর প্রকৃত রহস্য

ভক্তি কি ?

 মায়া কি? মায়া থেকে পরিত্রাণের উপায় কি? 

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কেন মাথায় ময়ূরপালক/পুচ্ছ পরিধান করতেন?

রাজা পুরঞ্জনের কেন পরবর্তী জন্মে নারী হয়ে জন্ম হয়েছিল ?

 
আরো পড়ুন.....


 
হিন্দুদের কেন গো মাংস খাওয়া উচিত না? গো মাতা কেন সনাতন ধর্মে পূজনীয় ? Why Hindus should not eat beef? Why is Go Mata revered in traditional religion?
অম্বুবাচী (আম্ববর্তী) কি? কেন অম্বুবাচী পালন করা হয়? What is Ambubachi? Why is Ambubachi celebrated?
একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তির নতুন বছরের প্রতিজ্ঞাগুলো ঠিক এরকমই হওয়া উচিত--That's the decent thing to do, and it should end there.
শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন সর্ব কারণের পরম কারণ এবং লীলা পুরুষােত্তম স্বয়ং ভগবান । Lord Krishna is the ultimate cause of all causes and Leela is the best man himself.
মা লক্ষ্মীর কৃপালাভের কিছু মন্ত্র ও আচার-অনুষ্ঠান ! Some mantras and rituals of mother Lakshmi's grace!
ছাত্র-ছাত্রীদের আট প্রকার প্রবণতা বিদ‍্যা অর্জনে বিশেষ বাধা-স্বরূপ: The eight types of tendency of students to acquire knowledge are special obstacles:
 
সনাতন  ধর্মের মূল গ্রন্থসমূহ:Original texts of traditional religion:
গীতার ১৮ টি নামের মাহাত্ব্যঃ Greatness of 18 names of Gita:
কেনো মহাপ্রসাদ আহার করা উচিত?Why should Mahaprasad be eaten?
অক্ষয় তৃতীয়া মাহাত্ম্যঃ Akshay titiya Mahatmyah
শ্রীরাম নবমী তাৎপর্য ও মহিমাঃ Sriram-Nabami-meaning-and-glory
মা মনসার ধ্যান মন্ত্র প্রণাম মন্ত্রঃ মনসা অঞ্জলি : Ma Manasa Dhyana Mantra Pranam Mantra: Manasa Anjali:
রাশি বা লগ্ন অনুসারে জেনে নিন আপনার বৈশিষ্ঠ্য...........
মহা বারুণী স্নান মাহাত্ম্য
চৈত্র সংক্রান্তি Chaitra Sankranti
 
বাসন্তী পূজা
দোল পূর্ণিমা এবং ভগবান শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর আবির্ভাব তিথি -গৌর পূর্ণিমা
রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের জীবনী ও শিক্ষাঃ
দেবাদিদেব মহাদেব শিব চতুর্দশী ব্রত মাহাত্ম্য এবং শিবরাত্রি পূজার সময়সূচি ও নিয়মাবলি
শ্রীমদ্ভগবদগীতা কি? কেন গীতা পড়বেন?
 
অশ্বিনীকুমার ব্রত মাহাত্ম্য
দামোদর মাস ও ব্রত...মাহাত্ম্য
দুর্গাপূজার তাৎপর্য, মহিমা ও  বিভিন্ন তিথির আনুষ্ঠানিকতা এবং সময় নির্ঘণ্টঃ
পিতৃপক্ষ এবং দেবীপক্ষ বিশেষ তাত্‍পর্য্য
 
একাদশী ব্রত পালনের তাৎপর্য ও নিয়মাবলিঃ
শয়ন একাদশী মাহাত্ম্য
আমলকী একাদশী মাহাত্ম্য
 
পবিত্রারোপণী একাদশী মাহাত্ম্য Pobitrarohini Ekadashi Mahatmya
অন্নদা একাদশী মাহাত্ম্য Annada Ekadashi Mahatmya
পার্শ্ব একাদশী এর মাহাত্ম্য Parsha Ekadashi Mahatmya
ইন্দিরা একাদশী মাহাত্ম্য Indira Ekadashi Mahatmya
 
সফলা একাদশী মাহাত্ম্য Safala Ekadashi Mahatmya
পুত্রদা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য Putrada Ekadashi Brata Mahatmya
ষটতিলা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য Shattila Ekadashi Brata Mahatmya
পাপমোচনী একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য Paapmochani Ekadashi Brata Mahatmya
 
প্রথম অধ্যায়  অর্জুন বিষাদ-যোগ
দ্বিতীয় অধ্যায়  সাংখ্য-যোগ
তৃতীয় অধ্যায়  কর্মযোগ
 
একাদশ-অধ্যায় বিশ্বরূপ-দর্শন-যোগ
দ্বাদশ-অধ্যায় ভক্তিযোগ
প্রকৃতি-পুরুষ বিবেকযোগ
 
শিব কল্প তরু শ্রী শ্রীমৎ স্বামী অদ্বৈতানন্দ পুরী মহারাজ Shiva Kalpa Taru Sri Srimat Swami Advaitananda Puri Maharaj
শ্রী অদ্বৈত আচার্য
শ্রীগদাধর পণ্ডিত : মহাপ্রভুর ছায়া
 
সংঘাত নিরসনের পন্থা
হরি নামের মহিমা
কামকে কিভাবে জয় করবেন ?
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রিয় হতে চান এই গুনগুলোর চর্চা করুনঃ If you want to be dear to Lord Krishna, practice these qualities:

 
সনাতন ধর্ম সম্পর্কে নিজে জানুন অন্যকে জানার ‍সুযোগ করে দিতে অবশ্যই সকলকে শেয়ার করুন..........................................


 

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ