পিতৃপক্ষ এবং দেবীপক্ষ বিশেষ তাত্পর্য্য
পিতৃপক্ষ আর দেবীপক্ষের সন্ধীক্ষণ হচ্ছে মহালয়া। ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষে শুরু হয়ে পরর্বতী অমাবস্যা র্পযন্ত সময়কে পিতৃপক্ষ বলে। পুরাণ মতে ব্রহ্মার নির্দেশে পিতৃপুরুষরা এই ১৫ দিন মনুষ্যলোকের কাছাকাছি চলে আসেন। তাই এই সময় তাঁদের উদ্দেশ্যে কিছু র্অপণ করা হলে তা সহজেই তাঁদের কাছে পৌছায়। তাই গোটা পক্ষকাল ধরে পিতৃপুরুষদেব স্মরণ ও মননের মাধ্যমে তর্পন করা হয়। যার চূড়ান্ত প্রকাশ বা মহালগ্ন হল এই মহালয়া। অনেকেই এই দিনটিকে দেবীপক্ষের সূচনা বলে থাকেন। যদিও এটি একটি জনপ্রিয় ভ্রান্ত ধারণা। মহালয়া পিতৃপক্ষের শেষ দিন। পরের দিন শুক্লা প্রতিপদে দেবীপক্ষের সূচনা হয়। সেই দিন থেকে কোজাগরী র্পূণমিা পযন্ত ১৫ দিনই হল দেবীপক্ষ
পিতৃপক্ষ এবং দেবীপক্ষ বিশেষ তাত্পর্য্যপূর্ণ। আশ্বিনের কৃষ্ণ পক্ষের তিথীকে বলা হয় মহালয়া। এই কৃষ্ণ পক্ষকে বলা হয় পিতৃপক্ষ। পিতৃপক্ষে স্বর্গত পিতৃপুরুষের উদ্দেশে শ্রাদ্ধ ও তর্পন করা হয়। এ সময় পিতৃ পুরুষেরা যমালয় থেকে মর্ত্যলোকে আসেন। তাদেরকে আত্মার তৃপ্ত করার জন্য তিল, জল, দান করা হয় এবং তাহাদের যাত্রাপথকে আলোকিত করার জন্য উল্কাদান করা হয়।
মহাভারতে বলা আছে যে, কর্ণের আত্মা স্বর্গে গেলে সেখানে তাঁকে খেতে দেওয়া হল শুধুই সোনা আর ধনরত্ন। কর্ণ প্রশ্ন করলেন ইন্দ্রকে 'ব্যাপার কী?' ইন্দ্র বললেন, 'তুমি সারাজীবন সোনাদানাই দান করেছ, পিতৃপুরুষকে জল দাও নি। তাই তোমার জন্যে এই ব্যবস্থা।' কর্ণ বললেন, 'আমার কী দোষ? আমার পিতৃপুরুষের কথা তো আমি জানতে পারলাম যুদ্ধ শুরুর আগের রাতে। মা কুন্তী আমাকে এসে বললেন, আমি নাকি তাঁর ছেলে। তারপর যুদ্ধে ভাইয়ের হাতেই মৃত্যু হল। পিতৃত্বর্পণের সময়ই তো পেলাম না।' ইন্দ্র বুঝলেন, কর্ণের দোষ নেই। তাই তিনি কর্ণকে ১৫দিনের জন্য মর্ত্যে ফিরে গিয়ে পিতৃপুরুষকে জল ও অন্ন দানের অনুমতি দিলেন। ইন্দ্রের কথা মতো এক পক্ষকাল ধরে কর্ণ মর্ত্যে অবস্থান করেন এবং পিতৃপুরুষকে অন্নজল দিলেন। তাঁর পাপ স্খলন হলো এবং যে পক্ষকাল কর্ণ মর্ত্যে এসে পিতৃপুরুষকে জল দিলেন সেই পক্ষটি পিতৃপক্ষ নামে পরিচিত হল।
অমাবস্যায় পিতৃপূজা সেরে পরের পক্ষে দেবীপূজায় প্রবৃত্ত হতে হয়। তাই দেবীপূজার পক্ষকে বলা হয় দেবীপক্ষ বা মাতৃপক্ষ, মহালয়া হচ্ছে পিতৃপক্ষের শেষ দিন এবং দেবী পক্ষের শুরুর পূর্ব দিনে পিতৃপক্ষে আত্নসংযম করে দেবী পক্ষে শক্তি সাধনায় প্রবেশ করতে হয়। দেবী শক্তির আদিশক্তি, তিনি সর্বভূতে বিরাজিতা। তিনি মঙ্গল দায়িনী করুনাময়ী। সাধক সাধনা করে দেবীর বর লাভের জন্য, দেবীর মহান আলয়ে প্রবেশ করার সুযোগ করেন বলেই এ দিনটিকে বলা হয় মহালয়া। মহালয়ার পর প্রতিপদ তিথি থেকে দেবী বন্দনা শুরু হয়।
২) অনাথ শিশু ও গরীব দুঃখীদের ভোজন করা ও সাধ্যনুযায়ী কিছু দান করার চেষ্টা করবেন।
৩) বাড়িতে যদি কখনো অপরিচিত কেউ এসে ভিক্ষা চাই বা ভোজনের কথা বলে তাহলে না করবেন না।( ধর্মনুযায়ী অতিথি নারায়ন )
৪) ব্রাহ্মণ ও বৈষ্ণবদের দান করবেন।( সাধ্যমতো )
৫) যেকোনো পশুহত্যা থেকে বিরত থাকবেন।
৬) যেকোনো সেলাই কাজ থেকে বিরত থাকবেন। ( কর্ম হলে অন্য কথা )
আর সবসময় ভগবানের নাম নিবেন,ও প্রাথর্না করবেন যেন আপনার পূর্বপুরুষের যেন মোক্ষ লাভ হয়।
বাৎসরিক শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে যাঁরা অপারগ, তাঁরা সর্বপিতৃ অমাবস্যা পালন করে পিতৃদায় থেকে মুক্ত হতে পারেন। শর্মার মতে, শ্রাদ্ধ বংশের প্রধান ধর্মানুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানে পূর্ববর্তী তিন পুরুষের উদ্দেশ্যে পিণ্ড ও জল প্রদান করা হয়, তাঁদের নাম উচ্চারণ করা হয় এবং গোত্রের পিতাকে স্মরণ করা হয়। এই কারণে একজন ব্যক্তির পক্ষে বংশের ছয় প্রজন্মের নাম স্মরণ রাখা সম্ভব হয় এবং এর ফলে বংশের বন্ধন দৃঢ় হয়। ড্রেক্সেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতাত্ত্বিক উষা মেননের মতেও, পিতৃপক্ষ বংশের বিভিন্ন প্রজন্মের মধ্যে সম্পর্ককে সুদৃঢ় করে। এই পক্ষে বংশের বর্তমান প্রজন্ম পূর্বপুরুষের নাম স্মরণ করে তাঁদের শ্রদ্ধা নিবেদন করে। পিতৃপুরুষের ঋণ হিন্দুধর্মে পিতৃমাতৃঋণ অথবা গুরুঋণের সমান গুরুত্বপূর্ণ।
..তর্পণ বিধি..
স্নানাঙ্গ-তর্পণ স্নানান্তেই করিতে হয়। স্নানান্তে পূর্বমুখে নদীতে নাভিমাত্র জলে দাঁড়াইয়া, যজ্ঞোপবীত বাম স্কন্ধে রাখিয়া তিলক ধারণ করিবে।
তর্পণ শুরুতে আচমন ও বিষ্ণু স্মরণ।
করজোড়ে—ওঁ তদ্ বিষ্ণোঃ পরমং পদং, সদা পশ্যন্তি সূরয়ঃ।
দিবীব চক্ষুরা ততম্।। ওঁ বিষ্ণুঃ, ওঁ বিষ্ণুঃ,।
এই মন্ত্রে বিষ্ণুকে স্মরণ করিবেন। আচমন পূবর্বক তিনবার নমো বিষ্ণুঃ বলিধা করজোড়ে বলিবেন—
নমঃ অপিত্রোবা, সর্ববাবস্থাং গতোহপিবা।
যঃ স্মরেৎ পুণ্ডরীকাক্ষং, স বাহ্যাভ্যন্তরঃ শুচিঃ।
এই মন্ত্রে বিষ্ণু স্মরণ করিবেন।
।।তীর্থ- আবাহন মন্ত্র।।
যজ্ঞোপবীত ডান স্কন্ধে রাখিয়া দক্ষিণাভিমুখে করজোড়ে নিম্নলিখিত মন্ত্রে তীর্থ- আবাহন করিবেন।
ওঁ নমঃ কুরুক্ষেত্রং গয়া-গঙ্গা-প্রভাস-পুষ্করাণিচ ।
পুণ্যান্যেতানি তীর্থানি তর্পণ-কালে ভবন্তিহ ।।
।।দেব-তর্পণ।।
পূবর্বমুখে প্রথমে দেবতর্পণ করিতে হয়। যজ্ঞোপবীত বাম স্কন্ধে রাখিয়া বামহস্ত ও দক্ষিণ হস্তের অঙ্গুলির করজোড়ে তাম্রকোষ ধরে তিল ও তুলসি সহযোগে নিম্নলিখিত মন্ত্রে প্রত্যেককে এক অঞ্জলি জল দিবেন।
সন্ধ্যা করিতে না পারিলে সবর্বশেষে সূর্য্যার্ঘ্য দিবেন।
দেব-তর্পণ—ওঁ ব্রহ্মা তৃপ্যতাম্।। ওঁ বিষ্ণুস্তৃপ্যতাম্।।
ওঁ রুদ্রস্তৃপ্যতাম্।। ওঁ প্রজাপতিস্তৃপ্যতাম্।
এরপরে নিম্নলিখিত ন্ত্র পড়িয়া পূবর্বদিকে মুখকরে এক অঞ্জলি জল তিল ও তুলসি সহযোগে প্রদান করবেন।
ওঁ নমঃ দেবা যক্ষাস্তথা নাগা, গন্ধবর্বাপ্সরসোহসুরাঃ।
ক্রুরাঃ সর্পাঃ সূপর্ণাশ্ঢ, তরবো জিহ্মগাঃ খগাঃ ।।
বিদ্যাধরা জলাধারা-স্তথৈবাকাশগামিনঃ ।
নিরাহারাশ্চ যে জীবাঃ পাপে-ধমের্ম রতাশ্চ যে ।
তেষাং আপ্যায়নায়ৈতৎ, দীয়তে সলিলং ময়া ।।২
বাংলা অনুবাদ—দেব, যক্ষ, নাগ, গন্ধবর্ব, অপ্সরা, অসুর, ক্রুরস্বভাব জন্তু, সর্প, সুপর্ণ ( গরুড়জাতীয় পক্ষী ), বৃক্ষ, সরীসৃপ, সাধারন পক্ষী, বিদ্যাধর ( কিন্নর), জলচর, খেচর, নিরাহার (ভূতাদি ) এবং পাপে ও ধর্মকার্য্যেরত যত জীব আছে, তাহাদের তৃপ্তির জন্য আমি এই জল দিতেছি ।
।। মনুষ্য-তর্পণ।।
দক্ষিণাবর্তে ( ডানদিকে ঘুরিয়া ) , উত্তরপশ্চিম মুখে (বায়ুকোণে ) নিবীত হইয়া (যজ্ঞোপবীত মালার ন্যায় ঝুলাইয়া ) নিম্নলিখিত মন্ত দুইবার পাঠকরিয়া দুই অঞ্জলি তিল ও তুলসিযুক্ত জল দিবেন ।
ওঁ নমঃ সনকশ্চ সনন্দশ্চ, তৃতীয়শ্চ সনাতনঃ .
কপিলশ্চাসুরিশ্চৈব, বোঢ়ুঃ পঞ্চশিখস্তথা ।
সর্বেব তে তৃপ্তিমায়ান্তু, মদ্দত্তে-নাম্বুদা সদা ।।
বাংলা অনুবাদ—সনক, সনন্দ, সনাতন, কপিল,আসুরি, বোঢ়ু ও পঞ্চশিখ প্রভৃতি সকলে মদ্দত্ত জলে সর্বদা তৃপ্তিলাভ করুন।
।। ঋষি-তর্পণ।।
এরপরে দক্ষিণাভিমুখে পুনরায় পূ্র্ববাস্য হইয়া উপবীতী অবস্থায় দৈবতীর্থ দ্বারা প্রত্যেককে এক অঞ্জলি তিল-তুলসি যুক্ত জল দিবেন।
ওঁ মরীচিস্তৃপ্যতাং, ওঁ অত্রিস্তৃপ্যতাং, ওঁ অঙ্গিরাস্তৃপ্যতাং, ওঁ পুলস্তস্তৃপ্যতাং,
ওঁ পুলহস্তৃপ্যতাং, ওঁ ক্রুতুস্তৃপ্যতাং, ওঁ প্রচেতাস্তৃপ্যতাং, ওঁ বশিষ্ঠস্তৃপ্যতাং,
ওঁ ভৃগুস্তৃপ্যতাং, ওঁ নারদস্তৃপ্যতাং।
।। দিব্য-পিতৃ-তর্পণ।।
বামদিকে ঘুরিয়া দক্ষিণ মুখে, পৈতা দক্ষিণ স্কন্ধে লইয়া নিম্নোক্ত সাতটি মন্ত্র পড়ায়া প্রত্যেককে এক অঞ্জলি সতিল জল দিবেন ।
১। ওঁ অগ্নিষ্বত্তাঃ পিতরস্তৃপ্যন্তা-মেতৎ সতিল-গঙ্গোদকং তেভ্যঃ স্বধাঃ ।
২। ওঁ সৌম্যাঃ পিতরস্তৃপ্যন্তা-মেতৎ সতিল-গঙ্গোদকং তেভ্যঃ স্বধাঃ ।
৩। ওঁ হবিষ্মন্তঃ পিতরস্তৃপ্যন্তা-মেতৎ সতিল-গঙ্গোদকং তেভ্যঃ স্বধাঃ ।
৪। ওঁ উষ্মপাঃ পিতরস্তৃপ্যন্তা-মেতৎ সতিল-গঙ্গোদকং তেভ্যঃ স্বধাঃ ।
৫। ওঁ সুকালিনঃ পিতরস্তৃপ্যন্তা-মেতৎ সতিল-গঙ্গোদকং তেভ্যঃ স্বধাঃ ।
৬। ওঁ বর্হিষদঃ পিতরস্তৃপ্যন্তা-মেতৎ সতিল-গঙ্গোদকং তেভ্যঃ স্বধাঃ ।
৭। ওঁ আজ্যপাঃ পিতরস্তৃপ্যন্তা-মেতৎ সতিল-গঙ্গোদকং তেভ্যঃ স্বধাঃ ।
।।যম- তর্পণ।।
নিম্নলিখিত মন্ত্রস্থ নামগুলির প্রত্যেকের যথাক্রমে পিতৃতীর্থদ্বারা দক্ষিণ-মুখে প্রাচীনাবীতি হইয়া ওঁ যমায় নমঃ বলিয়া এইভাবে তিন অঞ্জলি করিয়া স-তিল জল দিবেন ।—
ওঁ নমঃ যমায় ধর্ম্মরাজায়, মৃত্যবে চান্তকায় চ, বৈবস্বতায় কালায়, সর্ব্বভূতক্ষয়ায় চ ।
ঔডুম্বরায় দধ্নায়, নীলায় পরমেষ্ঠিনে, বৃকোদরায় চিত্রায়, চিত্রগুপ্তায় বৈ নমঃ ।।
।। পিতৃ- আবাহন।।
তর্পণ সমাপ্তি পর্য্যন্ত দক্ষিণ মুখে প্রাচীনাবীতী অবস্থায় পরম ভক্তিসহকারে করপুটে বলিবেন -
ওঁ আগচ্ছন্তু মে পিতরঃ ইমং গৃহ্ণন্ত্বপোহঞ্জলিং । ( গৃহ্ণন্তু অপঃ অঞ্জলিং )
বাংলা অনুবাদ- হে আমার পিতৃগণ ( পূর্ব্বপুরুযগণ ) আসুন, এই অঞ্জলি পরিমিত জল গ্রহণ করুন।
———
আবাহনের পরে পিতৃতীর্থযোগে নিম্নলিখিত প্রকারে গৌত্র, সম্বন্ধ ও নাম উল্লেখ করতঃ ভক্তিসহকারে পিতা, পিতামহ, প্রপিতামহ, মাতামহ, প্রমাতামহ, বৃদ্ধপ্রমাতামহ, মাতা, পিতামহী, প্রপিতামহী, এই নয়জনের প্রত্যেককে তিন অঞ্জলি করিয়া সতিল জল দিবেন, মন্ত্রও যথাক্রমে তিনবার পিঠ করিবেন ।
পরে মাতামহী, প্রমাতামহী, বৃদ্ধপ্রমাতামহী, প্রভৃতিকে এক এক অঞ্জলি জল দিয়া, গুরু, জ্যেঠা, খুড়া, বিমাতা, ভ্রাতা, ভগ্নী, জ্যেঠী, খুড়ী, পিসি,মাসী, মাতুল, মাতুলানী, শ্বশুর, শাশুড়ী, ভগ্নিপতি, জ্ঞাতি, প্রভৃতি প্রত্যেককে এক অঞ্জলি সতিল-জল ।গঙ্গাজলে তর্পণ করিলে '' এতৎ সতিল-গঙ্গোদকং'' বলিবেন নচেৎ সতিলোদকং বলিতে হইবে ।
বিষ্ণুরোঁ অমুক গোত্রঃ পিতা অমুক দেবশর্ম্মা তৃপ্যতামেতৎ সতিলগঙ্গোদকং তস্মৈ স্বধা।
" " " পিতামহ " " " " " "
" " " প্রপিতামহ " " " " " "
" " " মাতামহ " " " " " "
" " " প্রমাতামহ " " " " " "
" " " বৃদ্ধপ্রমাতামহ " " " " " "
" " গোত্রা মাতা অমুকী দেবী " " " "
" " " পিতামহী " " " " " "
" " " প্রপিতামহী " " " " " "
" " " মাতামহী " " " " " "
" " " প্রমাতামহী " " " " " "
" " " বৃদ্ধপ্রমাতামহী " " " " " "
বিশেষ উল্লেখযোগ্য এই যে উপরি লিখিত দ্বাদশ জনের কেহ জীবিত থাকিলে তাঁহাকে বাদদিয়ে তৎ-ঊর্দ্ধ্ব্রতন ব্যক্তিকে ধরিয়া দ্বাদশ সংখ্যা পূরণ করিতে হইবে ।
অতঃপর নিম্নলিখিত মন্ত্র পাঠ পূর্ব্বক অঞ্জলিত্রয় সতিল জল, জলাভাবে একবার মাত্র সতিল জল দিবেন, যথা- ওঁ নমঃ অগ্নিদদগ্ধাশ্চ যে জীবা, যেহপ্যদগ্ধাঃ কুলে মম ।
ভূমৌ দত্তেন তৃপ্যন্তু, তৃপ্তা যান্ত পরাং গতিং ।।
বাংলা অনুবাদ- আমার বংশে যে সকল জীব অগ্নিদ্বারা দগ্ধ হইয়াছেন, ( অর্থাৎ যাঁহাদের দাহাদি সংস্কার হইয়াছে ) এবং যাঁহারা দগ্ধ হন নাই ( অর্থাৎ কেহই তাঁহাদের দাহাদি-সংস্কার কার্য্য করেনাই ) তাঁহারা তৃপ্ত হউন ও স্বর্গ লাভ করুন ।
ওঁ নমঃ যে বান্ধবা অবান্ধবা বা, যে অন্য জন্মনি বান্ধবাঃ ।
তে তৃপ্তিং অখিলাং যান্ত, যে চ অস্মৎ তোয়-কাঙ্খিণঃ ।।
বাংলা অনুবাদ-যাঁহারা আমাদের বন্ধু ছিলেন, এবং যাঁহারা বন্ধু নহেন, যাঁহারা জন্ম-জন্মান্তরের আমাদিগের বন্ধু ছিলেন, এবং যাঁহারা আমাদের নিকট হইতে জলের প্রতাশা করেন , তাঁহারা সম্পূর্ণরূপে তৃপ্তিলাভ করুন ।
।। ভীষ্ম- তর্পণ।।
ইহা ''পিতৃ-তর্পণের '' পরে করিবেন এবং পরে কৃতাঞ্জলি হইয়ি প্রার্থনা করিবেন। যথা —
ওঁ নমঃ বৈয়াঘ্রপদ্য- গোত্রায়, সাঙ্কৃতিপ্রবরায় চ ।
অপুত্রায় দদাম্যেতৎ সলিলং ভীষ্মবর্ম্মণে ।।
এই মন্ত্র পাঠ করিয়া উক্তরূপে এক অঞ্জলি সতিল- গঙ্গোদক দিবেন এবং পরে কৃতাঞ্জলি হইয়া প্রার্থনা করিবেন । যথা— ওঁ নমঃ ভীষ্মঃ শান্তনবো বীরঃ , সত্যবাদী জিতেন্দ্রিয়ঃ ।
আভিরদ্ভি- রবাপ্নোতু, পুত্র-পৌত্রৌচিতাং ক্রিয়াং ।।
বাংলা অনুবাদ— বৈয়াঘ্রপদ্য যাঁহার গোত্র,সাঙ্কৃতি যাঁহার প্রবর, সেই অপুত্রক ভীষ্মবর্ম্মাকে এই জল দিতেছি।
শান্তনু-তনয় বীর, সত্যবাদী, জিতেন্দ্রিয় ভীষ্মবর্ম্মা এই জল দ্বারা পুত্র-পৌত্রচিত তর্পণাদি-ক্রিয়া-জনিত তৃপ্তি লাভ করুন ।।। রাম-তর্পণ ।।
সম্পূর্ণ তর্পণে অশক্ত হইলে , এই তর্পণ করতে হয় । বনবাসকালে শ্রীরামচন্দ্র এই মন্ত্রে তর্পণ করিতেন ।
তিনবার জল দিবেন, গঙ্গাজলে তর্পণ করিলে তোয়েন স্থলে গঙ্গোদকং বলিবেন । এর পরে এই মন্ত্র —
ওঁ নমঃ আ-ব্রহ্মভুবনাল্লোকা, দেবর্ষি-পিতৃ-মানবাঃ ,
তৃপ্যন্তু পিতরঃ সর্ব্বে , মাতৃ-মাতামহাদয়ঃ ।
অতীত-কুলকোটীনাং, সপ্তদ্বীপ-নিবাসিনাং ।
ময়া দত্তেন তোয়েন, তৃপ্যন্তু ভুবনত্রয়ং ।।
বাংলা অনুবাদ- ব্রহ্মলোক অবধি যাবতীয় লোক সমীপে অবস্থিত জীবগণ , ( যক্ষ, নাগাদি ) , দেবগণ, ( ব্রহ্মা , বিষ্ণু, শিব প্রভৃতি ) , ঋষিগণ ( মরীঢি, অত্রি, অঙ্গিরাদি ), পিতৃগণ ( দিব্য- পিতৃগণ অর্থাৎ অগ্নিষ্বাত্তাদি ), মনুষ্যগণ ( সনক, সনন্দ প্রভৃতি ), পিতৃ-পিতামহাদি এবং মাতামহাদি সকলে তৃপ্ত হউন ।
আমার কেবল এক জন্মের নহে এবং কেবল আমারও নহে , আমার বহুকোটিকুল, বহু জন্মান্তরে গত হইয়াছেন, সেই সেই কুলের পিতৃ-পিতামহাদি , ও সপ্তদ্বীপবাসী ( জম্বু, প্লক্ষ, শাল্মলি, কুশ, ক্রৌঞ্চ, শাক, পুষ্কর, এই সপ্তদ্বীপ ) সমুদয় মানবগণের পিতৃ-পিতামহাদি এবং ত্রিভুবনের যাবতীয় পদার্থ ( স্থাবর-জঙ্গমাদি ) আমার প্রদত্ত জলে তৃপ্ত হউক ।
।। লক্ষণ-তর্পণ ।।
রাম-তর্পণেও অশক্ত হইলে সকলে এই তর্পণ করিবেন, কারণ বনবাসকালে রাম ও সীতার শুশ্রূষায় নিযুক্ত থাকায় সময়াভাবে, লক্ষণ এই বলিয়া তর্পণ করিতেন । তিনবার সতিল জল দিলেই হবে ।
বলতে হবে—ওঁ নমঃ আব্রহ্মস্তস্বপর্য্যন্তং জগৎ তৃপ্যতু ।
বাংলা আনুবাদ—ব্রহ্মা হইতে তৃণ পর্ষ্যন্ত জগৎ , জগতের লোকে, স্থাবর জঙ্গমাদি, সকলে তৃপ্ত হউক ।
।। বস্ত্র-নিষ্পীড়নোদক ।।
স্নানের পরে বস্ত্র নিংড়ানো জল পয়ে দিতে নাই, যেহেতু বস্ত্র নিংড়ানো জলে যাঁহাদের কেহ কোথাও নাই তাঁহাদের তর্পণ করিতে হয়।
যথা—ওঁ নমঃ যে চাস্মাকং কুলে জাতা, অপুত্রা-গোত্রিণো মৃতাঃ ।
তে তৃপ্যন্তু ময়া দত্তং, বস্ত্র-নিষ্পীড়নোদকং ।।
বাংলা অনুবাদ—যাঁহারা আমাদের বংশে জন্মিয়া পুত্রহীন ও বংশহীন হইয়া গত হইয়াছেন, তাঁহারা মদ্দত্ত বস্ত্র-নিংড়ানো জলে তৃপ্ত হউন ।
উপরোক্ত মন্ত্র পাঠ করিয়া জল হইতে তীরে উঠিয়া স্থলে একবার মাত্র বস্ত্র নিংড়ানো জল দিবেন ।
।। পিতৃস্তুতি ।।
ওঁ নমঃ পিতা-স্বর্গঃ পিতা-ধর্ম্মঃ, পিতাহি পরমং তপঃ ।
পিতরি প্রীতি-মাপন্নে, প্রীয়ন্তে সর্ব্ব-দেবতা ।।
বাংলা অনুবাদ—(স্তুতি) পিতাই স্বর্গ, পিতাই ধর্ম্ম, পিতাই পরম তপস্যা (অর্থাৎ পিতা সেবাই তপস্যা ) পিতা প্রসন্ন হইলে সকল দেবতাই প্রীত হন ।
।। পিতৃপ্রণাম ।।
ওঁ নমঃ পিতৃন্নমস্যে দিবি যে চ মূর্ত্তাঃ,
স্বধাভুজঃ কাম্যফলাভিসন্ধৌ ।
প্রদানশক্তাঃ সকলেপ্সিতানাং, বিমুক্তিদা যেহনভিসংহাতেষু ।।
বাংলা অনুবাদ—যাঁহারা স্বর্গে মূর্ত্তি ধারণ করিয়া বিরাজ করিতেছেন, যাঁহারা শ্রাদ্ধান্ন ভোজন করেন, অভীষ্ট-ফলের কামনা করিলে যাঁহারা সকল বাঞ্ছিত-ফল দান করিতে সমর্থ এবং কোন ফলের কামনা না করিলে যাঁহারা মুক্তি প্রদান করেন , সেই পিতৃগণকে প্রণাম করি ।
।। সূর্য্যার্ঘ্য ।।
সূর্য্যদেবের উদ্দেশে পূর্ব্বদিকে মুখ করে একবার জল দিবেন ।
ওঁ নমো বিবস্বতে ব্রহ্মণ, ভাস্বতে বিষ্ণু তেজসে ।
জগৎসবিত্রে শুচয়ে, সবিত্রে কর্ম্মদায়িণে, ইদমর্ঘ্যং ওঁ শ্রীসূর্য্যায় নমঃ ।।
বাংলা অনুবাদ- হে পরম ব্রহ্মস্বরূপ সবিত্রিদেব ! আপনি তেজস্বী, দীপ্তিমান ; বিশ্বব্যাপী তেজের আধার, জগতের কর্ত্তা, পবিত্র, কর্ম্মপ্রবর্ত্তক; আপনাকে প্রণাম করি ।।
।। সূর্য্য-প্রণাম ।।
ওঁ নমঃ জবাকুসুম-সংঙ্কাশং, কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিং ।
ধ্বান্তারিং সর্ব্বপাপঘ্নং প্রণতোহস্মি দিবাকরং ।।
বাংলা অনুবাদ—জবাফুলের ন্যায় রক্তবর্ণ, কশ্যপের পুত্র, অতিশয় দীপ্তশালী, তমোনাশী, সর্ব্বপাপ নাশকারী দিবাকরকে প্রণাম করি ।।
।। অচ্ছিদ্রাবধারণ ।।
অর্থাৎ যে কর্ম্ম করা হইল, তাহা যে অচ্ছিদ্র অর্থাৎ ছিদ্রহীন, নির্দোষ হইল সেই বিষয়ে অবধারণ করাকে ( নিশ্চয় করাকে ) অচ্ছিদ্রাবধারণ বলে । সুতরাং করজোড়ে বলিবেন—
ওঁ কৃতৈতৎ তর্পণকর্ম্মাচ্ছিদ্রমস্তু।।
।। বৈগুণ্য-সমাধান ।।
অচ্ছিদ্রাবধারণের পরে বৈগুণ্য-সমাধান করিতে হয় । বামহস্তে সংযুক্ত দক্ষণ হস্তে জল, হরীতকী, কুশ স্পর্শ করিধা ( নদীতে তর্পণ করিলে, কেবল জল স্পর্শ করিবেন ), তারপরে বলিবেন—
বিষ্ণুরোঁ তৎসৎ অদ্য অমুক মাসে অমুক পক্ষে অমুক তিথৌ অমুক গৌত্রঃ শ্রী অমুক দেবশর্ম্মা কৃতেহহস্মিন্ তর্পণকর্ম্মণিষদ্বৈগুণ্যং জাতং তদ্দোষ প্রশমনায় শ্রীবিষ্ণু স্মরণষ্মহং করিষ্যে । এরপরে নিচের মন্ত্র দশবার জপ করবেন—-
ওঁ তদ্ বিষ্ণোঃ পরমং পদং, সদা পশ্যন্তি সূরয়ঃ । দিবীব চক্ষুরাততং । ওঁ বিষ্ণুঃ , ওঁ বিষ্ণুঃ , ওঁ বিষ্ণুঃ বলিধা দশবার জপ করিবেন । জয় গুরু জয় সীতারাম।
পিতৃপক্ষ ২০২১-র তারিখ
* পূর্ণিমা শ্রাদ্ধ - ২০ সেপ্টেম্বর
* প্রতিপদ শ্রাদ্ধ - ২১ সেপ্টেম্বর
* দ্বিতীয়া শ্রাদ্ধ - ২২ সেপ্টেম্বর
* তৃতীয়া শ্রাদ্ধ - ২৩ সেপ্টেম্বর
* চতুর্থী শ্রাদ্ধ - ২৪ সেপ্টেম্বর
* পঞ্চমী শ্রাদ্ধ - ২৫ সেপ্টেম্বর
* ষষ্ঠী শ্রাদ্ধ - ২৭ সেপ্টেম্বর
* সপ্তমী শ্রাদ্ধ - ২৮ সেপ্টেম্বর
* অষ্টমী শ্রাদ্ধ - ২৯ সেপ্টেম্বর
* নবমী শ্রাদ্ধ - ৩০ সেপ্টেম্বর
* দশমী শ্রাদ্ধ - ১ অক্টোবর
* একাদশী শ্রাদ্ধ - ২ অক্টোবর
* দ্বাদশী শ্রাদ্ধ - ৩ অক্টোবর
* ত্রয়োদশী শ্রাদ্ধ - ৪ অক্টোবর
* চতুর্দশী শ্রাদ্ধ - ৫ অক্টোবর
* অমাবস্যা শ্রাদ্ধ - ৬ অক্টোবর
সনাতন ধর্ম সম্পর্কে জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন-
আরো জানুনঃ
কেন প্রসাদভোজী হবেন? সমস্ত বৈদিক শাস্ত্র (বেদ,সংহিতা, মহাভারত, গীতা,ভাগবত,পুরাণ,উপনিষদ) থেকে প্রমান দেওয়া হলো...
চার যুগ-সত্য,ত্রেতা,দ্বাপর ও কলির সময় পরিমাণ ও বৈশিষ্ট্যসমূহঃ
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর কিছু অমৃত বাণী
মহাভারতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কিছু বাণী ও উপদেশ
মনুষ্য দেহের কথা আলোচনা
আপনি কি অনেক হতাশায় ভুগছেন? সকল সমস্যাগুলোর সমাধান খুজে পান!!!!!!!!!!
ভগবান বিষ্ণুর গাত্র বর্ণ নীল কেন?
এই জগতে প্রকৃত জ্ঞানী,কে এই জগতে প্রকৃত সুখী,আর কে-ই বা প্রকৃত দুঃখী ?
অনাচার কাকে বলে ও কয় প্রকার?
কলিযুগের মানুষদের ভগবানের নামে রুচি নেই কেন ?
ঘট কিসের প্রতীক?
সনাতন ধর্মের বৈদিক শাস্ত্রে জন্ম ও মৃত্যুযোগ অশৌচ কি?
মহাভারত পড়ার সময় না থাকলেও এর মূল সূত্রগুলি আমাদের জীবনে কার্যকর প্রমাণ করতে পারে-----------------------
মহাভারতের কিছু বাণী
শ্রীমদভগবদগীতায় উচ্চারিত ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সকল নামের অর্থ ও মাহাত্ম্য
প্রকৃত ভালোবাসার খোঁজে..........
রাধাকৃষ্ণের প্রেম-কাহিনীর প্রকৃত রহস্য
ভক্তি কি ?
মায়া কি? মায়া থেকে পরিত্রাণের উপায় কি?
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কেন মাথায় ময়ূরপালক/পুচ্ছ পরিধান করতেন?
রাজা পুরঞ্জনের কেন পরবর্তী জন্মে নারী হয়ে জন্ম হয়েছিল ?
সনাতন ধর্ম সম্পর্কে নিজে জানুন অন্যকে জানার সুযোগ করে দিতে অবশ্যই সকলকে শেয়ার করুন..........
0 মন্তব্যসমূহ