বাসন্তী পূজা
দূর্গাপূজা বা দূর্গোৎসব, সনাতনী হিন্দু সম্প্রদায়ের দেবী দূর্গাকে কেন্দ্র করে প্রচলিত এক বৃহৎ উৎসব। এই দূর্গাপূজা সমগ্র হিন্দু সমাজেরই প্রচলিত উৎসব। তবে বাঙালি হিন্দু সমাজে এটি অন্যতম বিশেষ ধর্মীয় ও প্রধান সামাজিক উৎসব। আশ্বিন বা চৈত্রমাসের শুক্লপক্ষে দুর্গাপূজা করা হয়। আশ্বিন মাসের দুর্গাপূজা শারদীয়া দুর্গাপূজা এবং চৈত্র মাসের দুর্গাপূজা বাসন্তী দুর্গাপূজা নামে পরিচিত। শারদীয়া দুর্গাপূজার জনপ্রিয়তা বেশি। বাসন্তী দুর্গাপূজা মূলত কয়েকটি পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ। আর কয়েকদিন পরে বাসন্তী পূজা, তাই প্রিয় ভক্তসুধী; আজ আপনাদের সমীপে এই দেবীর দূর্গাপূজা নিয়ে আলাপচারিতা করবো।
দেবী দূর্গার তত্ত্ব পরিচিতি
দেবনাগরীঃ- পার্বতী
লিপ্যন্তরঃ- দূর্গা
অন্তর্ভুক্তিঃ- মহাশক্তি
আবাসঃ- কৈলাস
মন্ত্রঃ- ওঁ দুর্গে দুর্গে রক্ষণি স্বাহা
অস্ত্রঃ- ত্রিশূল, খর্গ, চক্র, বাণ, শক্তি, ঢাল, ধনুক, ঘণ্টা, পরশু, নাগপাশ
সঙ্গীঃ- শিব
বাহনঃ- সিংহ, বাঘ
দুর্গা অর্থাৎ "যিনি দুর্ভোগ বা সংকট থেকে রক্ষা করেন তিনি দেবী দূর্গা। যে দেবী অগম্যা, দুষ্প্রাপা বা যাকে সহজে পাওয়া যায় না এই অর্থে-দূর্গা। দূর্গ নামক দৈত্যকে দমন করে ইনি দূর্গা নাম প্রাপ্ত হন। সনাতন ধর্মমতে-পরমা প্রকৃতি স্বরূপা মহাদেবী, মহাদেবের পত্নী। মার্কেণ্ডেয় পুরাণের মতে-ইনি মহামায়া, পরমবিদ্যা, নিত্যস্বরূপা, যোগনিদ্রা। ইনি জন্মমৃত্যু-রহিতা। আদিকালে বিষ্ণু যখন যোগনিদ্রায় ছিলেন, তখন মধু ও কৈটভ [মধুকৈটভ] নামক দুটি ভয়ঙ্কর দৈত্য ব্রহ্মাকে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছিল। এই সময় ব্রহ্মা যোগনিদ্রারূপী এই দেবীকে বন্দনা করেন। পরে এই দেবীর দ্বারা বিষ্ণু বলিয়ান হয়ে ঐ দৈত্যদের সাথে যুদ্ধ করার ক্ষমতা অর্জন করেছিলেন। আবার এই দেবীর প্রভাবে দৈত্যরা বিষ্ণুর সাথে যুদ্ধ করতে সমর্থ হয়েছিলেন। হিন্দুশাস্ত্রে "দূর্গা" শব্দটিকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলা হয়েছে যে:-
"দৈত্যনাশার্থবচনো দকারঃ পরিকীর্তিতঃ।
উকারো বিঘ্ননাশস্য বাচকো বেদসম্মত।।
রেফো রোগঘ্নবচনো গশ্চ পাপঘ্নবাচকঃ।
ভয়শত্রুঘ্নবচনশ্চাকারঃ পরিকীর্তিত।।"
অর্থাৎ, দ:- দৈত্য বিনাশ করে,
উ-কার:- বিঘ্ন নাশ করে,
রেফ:- রোগ নাশ করে,
গ:- পাপ নাশ করে এবং
অ-কার:- শত্রু নাশ করে
এর পরিপূর্ণ অর্থ হলো যে= দৈত্য, বিঘ্ন, রোগ, পাপ ও শত্রুর হাত থেকে যিনি রক্ষা করেন, তিনিই দুর্গা।
অন্যদিকে শব্দকল্পদ্রুম বলেছে,
"দুর্গং নাশয়তি যা নিত্যং সা দুর্গা বা প্রকীর্তিতা"।
অনুবাদ:- যিনি দূর্গ নামক অসুরকে বধ করেছিলেন, তিনি সব সময় দুর্গা নামে পরিচিত।
শ্রীশ্রীচণ্ডী বা দেবীমাহাত্ম্যেম্ অনুসারে যে দেবী:-
দূর্গাপূজা বা দূর্গোৎসব, সনাতনী হিন্দু সম্প্রদায়ের দেবী দূর্গাকে কেন্দ্র করে প্রচলিত এক বৃহৎ উৎসব। এই দূর্গাপূজা সমগ্র হিন্দু সমাজেরই প্রচলিত উৎসব। তবে বাঙালি হিন্দু সমাজে এটি অন্যতম বিশেষ ধর্মীয় ও প্রধান সামাজিক উৎসব। আশ্বিন বা চৈত্রমাসের শুক্লপক্ষে দুর্গাপূজা করা হয়। আশ্বিন মাসের দুর্গাপূজা শারদীয়া দুর্গাপূজা এবং চৈত্র মাসের দুর্গাপূজা বাসন্তী দুর্গাপূজা নামে পরিচিত। শারদীয়া দুর্গাপূজার জনপ্রিয়তা বেশি। বাসন্তী দুর্গাপূজা মূলত কয়েকটি পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ। আর কয়েকদিন পরে বাসন্তী পূজা, তাই প্রিয় ভক্তসুধী; আজ আপনাদের সমীপে এই দেবীর দূর্গাপূজা নিয়ে আলাপচারিতা করবো।
দেবী দূর্গার তত্ত্ব পরিচিতি
দেবনাগরীঃ- পার্বতী
লিপ্যন্তরঃ- দূর্গা
অন্তর্ভুক্তিঃ- মহাশক্তি
আবাসঃ- কৈলাস
মন্ত্রঃ- ওঁ দুর্গে দুর্গে রক্ষণি স্বাহা
অস্ত্রঃ- ত্রিশূল, খর্গ, চক্র, বাণ, শক্তি, ঢাল, ধনুক, ঘণ্টা, পরশু, নাগপাশ
সঙ্গীঃ- শিব
বাহনঃ- সিংহ, বাঘ
দুর্গা অর্থাৎ "যিনি দুর্ভোগ বা সংকট থেকে রক্ষা করেন তিনি দেবী দূর্গা। যে দেবী অগম্যা, দুষ্প্রাপা বা যাকে সহজে পাওয়া যায় না এই অর্থে-দূর্গা। দূর্গ নামক দৈত্যকে দমন করে ইনি দূর্গা নাম প্রাপ্ত হন। সনাতন ধর্মমতে-পরমা প্রকৃতি স্বরূপা মহাদেবী, মহাদেবের পত্নী। মার্কেণ্ডেয় পুরাণের মতে-ইনি মহামায়া, পরমবিদ্যা, নিত্যস্বরূপা, যোগনিদ্রা। ইনি জন্মমৃত্যু-রহিতা। আদিকালে বিষ্ণু যখন যোগনিদ্রায় ছিলেন, তখন মধু ও কৈটভ [মধুকৈটভ] নামক দুটি ভয়ঙ্কর দৈত্য ব্রহ্মাকে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছিল। এই সময় ব্রহ্মা যোগনিদ্রারূপী এই দেবীকে বন্দনা করেন। পরে এই দেবীর দ্বারা বিষ্ণু বলিয়ান হয়ে ঐ দৈত্যদের সাথে যুদ্ধ করার ক্ষমতা অর্জন করেছিলেন। আবার এই দেবীর প্রভাবে দৈত্যরা বিষ্ণুর সাথে যুদ্ধ করতে সমর্থ হয়েছিলেন। হিন্দুশাস্ত্রে "দূর্গা" শব্দটিকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলা হয়েছে যে:-
"দৈত্যনাশার্থবচনো দকারঃ পরিকীর্তিতঃ।
উকারো বিঘ্ননাশস্য বাচকো বেদসম্মত।।
রেফো রোগঘ্নবচনো গশ্চ পাপঘ্নবাচকঃ।
ভয়শত্রুঘ্নবচনশ্চাকারঃ পরিকীর্তিত।।"
অর্থাৎ, দ:- দৈত্য বিনাশ করে,
উ-কার:- বিঘ্ন নাশ করে,
রেফ:- রোগ নাশ করে,
গ:- পাপ নাশ করে এবং
অ-কার:- শত্রু নাশ করে
এর পরিপূর্ণ অর্থ হলো যে= দৈত্য, বিঘ্ন, রোগ, পাপ ও শত্রুর হাত থেকে যিনি রক্ষা করেন, তিনিই দুর্গা।
অন্যদিকে শব্দকল্পদ্রুম বলেছে,
"দুর্গং নাশয়তি যা নিত্যং সা দুর্গা বা প্রকীর্তিতা"।
অনুবাদ:- যিনি দূর্গ নামক অসুরকে বধ করেছিলেন, তিনি সব সময় দুর্গা নামে পরিচিত।
শ্রীশ্রীচণ্ডী বা দেবীমাহাত্ম্যেম্ অনুসারে যে দেবী:-
সকল দেবতার সম্মিলিত শক্তির প্রতিমূর্তি, তিনিই দুর্গা।
🌺দেবী দূর্গার মূর্তিতত্ত্ব পরিচিতি🌺
বাংলায় দেবী দুর্গার যে মূর্তিটি সচরাচর দেখা যায় সেটি পরিবার সমন্বিতা বা স্বপরিবার দুর্গার মূর্তি। এই মূর্তির মধ্যস্থলে দেবী দুর্গা সিংহবাহিনী ও মহিষাসুর মর্দিনী, তাঁর মুকুটের উপরে শিবের ছোট মুখ, দেবীর ডানপাশে দেবী লক্ষ্মী ও গণেশ, বামপাশে দেবী সরস্বতী ও কার্তিকেয়। হিন্দুরা দেবী দূর্গাকে মহাশক্তির একটি উগ্র রূপ মনে করেন। দেবী দুর্গার অনেকগুলি হাত। বিশেষত দেবী দূর্গার অষ্টাদশভূজা, ষোড়শভূজা, দশভূজা, অষ্টভূজা ও চতুর্ভূজা মূর্তি দেখা যায়। তবে দেবী দূর্গার স্বপরিবার দশভূজা রূপটিই বেশি জনপ্রিয়। আবার দেবীর এই দশভূজা স্বপরিবার মূর্তির সর্বপ্রথম কলকাতায় সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার ১৬১০ সালে প্রচলন করেন। তাঁরা কার্তিকেয়র রূপ দেন জমিদার পুত্রের, যা তৎপূর্বে ছিলো সম্রাট সমুদ্রগুপ্তের আদলে যুদ্ধের দেবতা রূপে। এগুলি ছাড়াও বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে দেবী দুর্গার বিভিন্ন রকমের স্বতন্ত্র মূর্তিও চোখে পড়ে। তবে দুর্গার রূপকল্পনা বা কাঠামো বিন্যাসে যতই বৈচিত্র থাকুক, বাংলায় দুর্গোৎসবে প্রায় সর্বত্রই দেবী দুর্গা স্বপরিবারে পূজিতা হন।
🌺দেবী দূর্গার পূজাকাল ও প্রণালী পরিচিতি🌺
আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষটিকে বলা হয় "দেবীপক্ষ"। দেবীপক্ষের সূচনা হয় অমাবস্যায় এবং এই অমাবস্যাটির নাম হলো মহালয়া, এই দিন হিন্দুরা তর্পণ করে তাঁদের পূর্বপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধানিবেদন করে। দেবীপক্ষের শেষ দিনটি হল কোজাগরী পূর্ণিমা। এই দিন সনাতনী হিন্দুদের দেবী লক্ষ্মীর পূজা করা হয়।
🌺দেবী দূর্গার পূজা উদযাপন রীতি🌺
প্রথানুসারে:- পনেরো, দশ বা পাঁচ দিন
পালন শাস্ত্রীয়:- দুর্গাষষ্ঠী: বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস;
মহাসপ্তমী:- নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপন, সপ্তম্যাদিকল্পারম্ভ, সপ্তমীবিহিত পূজা
মহাষ্টমী:- মহাষ্টম্যাদিকল্পারম্ভ, কেবল মহাষ্টমীকল্পারম্ভ, মহাষ্টমীবিহিত পূজা, বীরাষ্টমী ব্রত, মহাষ্টমী ব্রতোপবাস, কুমারী পূজা, অর্ধরাত্রবিহিত পূজা, মহাপূজা ও মহোৎসবযাত্রা, সন্ধিপূজা
মহানবমী:- কেবল মহানবমী কল্পারম্ভ, মহানবমী বিহিত পূজা
বিজয়াদশমী:- বিজয়াদশমী বিহিত বিসর্জনাঙ্গ পূজা, বিসর্জন, বিজয়াদশমী কৃত্য ও কুলাচারানুসারে বিসর্জনান্তে অপরাজিতা পূজা।
শুরু সাধারণত:- মহাষষ্ঠী (ক্ষেত্রবিশেষে কুলাচার অনুসারে, ভাদ্রকৃষ্ণানবমী বা আশ্বিন শুক্লা প্রতিপদ)
সমাপ্তি:- বিজয়াদশমী, অপরাজিতা পূজার মাধ্যমে
পূজাকাল তিথি:-আশ্বিন শুক্লপক্ষ তিথি বা চৈত্র শুক্লপক্ষ তিথি।
🌺দূর্গা পূজার আবাহন ও পূজার নিয়মাবলী প্রকাশ ও সনাতনী আচরণ বিধি ও কর্তব্য পরিচিতি🌺
卐 মহালয়ার পূর্বে পিতৃপক্ষ 卐
পূর্বপুরুষের তর্পণাদির জন্য প্রশস্ত এক বিশেষ একটি পক্ষ, যেমন বিস্তারিত:-
পালনকারী:- সনাতনী হিন্দু
উদযাপন:- ১৬ চান্দ্র দিবস
পালন:- পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে জলপ্রদান
শুরু:- ভাদ্র পূর্ণিমা তিথি
সমাপ্তি:-মহালয়া (সর্বপিতৃ অমাবস্যা তিথি) সম্পর্কিত পূর্বপুরুষ পূজা
সনাতন ধর্ম মতে, পিতৃপক্ষ পূর্বপুরুষের তর্পণাদির জন্য প্রশস্ত এক বিশেষ পক্ষ। এই পক্ষ পিত্রুপক্ষ, ষোলা শ্রাদ্ধ, কানাগাত, জিতিয়া, মহালয়া পক্ষ ও অমরপক্ষ নামেও পরিচিত। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, যেহেতু পিতৃপক্ষে প্রেতকর্ম (শ্রাদ্ধ), তর্পণ ইত্যাদি মৃত্যু-সংক্রান্ত আচার-অনুষ্ঠান পালিত হয়, সেইহেতু এই পক্ষ শুভকার্যের জন্য প্রশস্ত নয়। দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতে ও বাংলাদেশে গণেশ উৎসবের পরবর্তী পূর্ণিমা (ভাদ্রপূর্ণিমা) তিথিতে এই পক্ষ সূচিত হয় এবং সমাপ্ত হয় সর্বপিতৃ অমাবস্যা, মহালয়া অমাবস্যা বা মহালয়া দিবসে। উত্তর ভারত ও নেপালে ভাদ্রের পরিবর্তে আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষকে পিতৃপক্ষ বলা হয়।卐 পৌরাণিক মতে শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা卐
সনাতনী পুরাণ অনুযায়ী, জীবিত ব্যক্তির পূর্বের তিন পুরুষ পর্যন্ত পিতৃলোকে বাস করেন। এই লোক স্বর্গ ও মর্ত্যের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত। পিতৃলোকের শাসক মৃত্যুদেবতা যম। তিনিই সদ্যমৃত ব্যক্তির আত্মাকে মর্ত্য থেকে পিতৃলোকে নিয়ে যান। পরবর্তী প্রজন্মের একজনের মৃত্যু হলে পূর্ববর্তী প্রজন্মের একজন পিতৃলোক ছেড়ে স্বর্গে গমন করেন এবং পরমাত্মায় (ঈশ্বর) লীন হন এবং এই প্রক্রিয়ায় তিনি শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের ঊর্ধ্বে উঠে যান। এই কারণে, কেবলমাত্র জীবিত ব্যক্তির পূর্ববর্তী তিন প্রজন্মেরই শ্রাদ্ধানুষ্ঠান হয়ে থাকে; এবং এই শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে যম একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সনাতনী মহাকাব্য (যা সনাতনী শাস্ত্রের মধ্যে ইতিহাস নামে পরিচিত) অনুযায়ী, সূর্য কন্যারাশিতে প্রবেশ করলে পিতৃপক্ষ সূচিত হয়। লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, এই সময় পূর্বপুরুষগণ পিতৃলোক পরিত্যাগ করে তাঁদের উত্তরপুরুষদের গৃহে অবস্থান করেন। এর পর সূর্য বৃশ্চিক রাশিতে প্রবেশ করলে, তাঁরা পুনরায় পিতৃলোকে ফিরে যান। পিতৃগণের অবস্থানের প্রথম পক্ষে হিন্দুদের পিতৃপুরুষগণের উদ্দেশ্যে তর্পণাদি করতে হয়।
卐 মহাভারত কথা অনুযায়ী পিতৃপক্ষের কিংবদন্তী ষোল দিনের প্রকাশ 卐
মহাভারত অনুযায়ী, প্রসিদ্ধ দাতা কর্ণের মৃত্যু হলে তাঁর আত্মা স্বর্গে গমন করলে, তাঁকে স্বর্ণ ও রত্ন খাদ্য হিসেবে প্রদান করা হয়। কর্ণ ইন্দ্রকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে ইন্দ্র বলেন, কর্ণ সারা জীবন স্বর্ণই দান করেছেন, তিনি পিতৃগণের উদ্দেশ্যে কোনোদিন খাদ্য প্রদান করেননি। তাই স্বর্গে তাঁকে স্বর্ণই খাদ্য হিসেবে প্রদান করা হয়েছে। কর্ণ বলেন, তিনি যেহেতু তাঁর পিতৃগণের সম্পর্কে অবহিত ছিলেন না, তাই তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে পিতৃগণকে স্বর্ণ প্রদান করেননি। এই কারণে কর্ণকে ষোলো দিনের জন্য মর্ত্যে গিয়ে পিতৃলোকের উদ্দেশ্যে অন্ন ও জল প্রদান করার অনুমতি দেওয়া হয়। এই পক্ষই পিতৃপক্ষ নামে পরিচিত হয়।
বিঃদ্র:- এই কাহিনীটি কোনো কোনো পুরাণে বা পাঠান্তরে, ইন্দ্রের বদলে যমকে দেখা যায়।
卐 মহালয়ার পনেরো তিথি পরিচিতি 卐
মহালয়া পক্ষের পনেরোটি তিথির নাম হলো:- প্রতিপদ, দ্বিতীয়া, তৃতীয়া, চতুর্থী, পঞ্চমী, ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী, দশমী, একাদশী, দ্বাদশী, ত্রয়োদশী, চতুর্দশী ও অমাবস্যা। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, যে ব্যক্তি তর্পণে ইচ্ছুক হন, তাঁকে তাঁর পিতার মৃত্যুর তিথিতে তর্পণ করতে হয়।
卐 মহালয়া 卐
মহালয়ার দিন থেকে মূলত দুর্গা পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। তবে এ দিনটির তাৎপর্য মূলত ভিন্ন। এ তিথিকে পিতৃপক্ষও বলা হয়ে থাকে। এ দিনে পিতৃপক্ষের শেষ এবং দেবী পক্ষের শুরু হয়। এই মহালয়া তিথিতে যারা পিতৃ-মাতৃহীন তারা তাদের পূর্বপুরুষের স্মরণ করে, পূর্বপুরুষের আত্নার শান্তি কামনা করে অঞ্জলি প্রদান করেন। সনাতন ধর্ম অনুসারে এই দিনে প্রয়াত আত্মাদের মত্যে পাঠিয়ে দেয়া হয়, প্রয়াত আত্মার যে সমাবেশ হয় তাহাকে মহালয় বলা হয়। মহালয় থেকে মহালয়া। পিতৃপক্ষেরও শেষদিন এটি। মহালয়াতে যারা গঙ্গায় অঞ্জলি প্রদান করেন পূর্বদের আত্মার শান্তির জন্য, তাহারা শুধু পূর্বদের নয়, পৃথিবীর সমগ্র কিছুর জন্য প্রার্থনা ও অঞ্জলি প্রদান করেন। যাদের পুত্র নেই, যাদের কেউ নেই আজ স্মরণ করার তাদের জন্যও অঞ্জলি প্রদান করতে হয়।
卐 নবপত্রিকা পরিচিতি 卐
নবপত্রিকা বাংলার দুর্গাপূজার একটি বিশিষ্ট অঙ্গ। নবপত্রিকা শব্দটির আক্ষরিক অর্থ নয়টি গাছের পাতা। তবে বাস্তবে নবপত্রিকা নয়টি গাছের পাতা নয়, নটি উদ্ভিদ। এগুলি হলো:-
১:- কদলী বা রম্ভা (কলা)
২:- কচু
৩:- হরিদ্রা (হলুদ)
৪:- জয়ন্তী
৫:- বিল্ব (বেল)
৬:- দাড়িম্ব (দাড়িম) বা(ডমরু)
৭:- অশোক
৮:- মান
৯:- ধানএকটি সপত্র কলাগাছের সঙ্গে অপর আটটি সমূল সপত্র উদ্ভিদ একত্র করে একজোড়া বেল সহ শ্বেত অপরাজিতা লতা দিয়ে বেঁধে লালপাড় সাদা শাড়ি জড়িয়ে ঘোমটা দেওয়া বধূর আকার দেওয়া হয়। তারপর তাতে সিঁদুর দিয়ে স্বপরিবার দেবী প্রতিমার ডান দিকে দাঁড় করিয়ে পূজা করা হয়। প্রচলিত ভাষায় নবপত্রিকার নাম কলাবউ। নবপত্রিকার নয়টি উদ্ভিদ আসলে দেবী দুর্গার নয়টি বিশেষ রূপের প্রতীকরূপে কল্পিত হয়। এই নয় দেবী হলেন:-
১:- রম্ভাধিষ্ঠাত্রী ব্রহ্মাণী
২:- কচ্বাধিষ্ঠাত্রী কালিকা
৩:- হরিদ্রাধিষ্ঠাত্রী উমা
৪:- জয়ন্ত্যাধিষ্ঠাত্রী কার্তিকী
৫:- বিল্বাধিষ্ঠাত্রী শিবা,
৬:- দাড়িম্বাধিষ্ঠাত্রী রক্তদন্তিকা,
৭:- অশোকাধিষ্ঠাত্রী শোকরহিতা,
৮:- মানাধিষ্ঠাত্রী চামুণ্ডা ও
৯:- ধান্যাধিষ্ঠাত্রী লক্ষ্মী
এই নয় দেবী একত্রে "নবপত্রিকাবাসিনী নবদুর্গা" নামে নবপত্রিকাবাসিন্যৈ নবদুর্গায়ৈ নমঃ মন্ত্রে পূজিতা হন। মহাসপ্তমীর দিন সকালে নিকটস্থ নদী বা কোনো জলাশয়ে (নদী বা জলাশয়ে না থাকলে কোনো মন্দিরে) নিয়ে যাওয়া হয়। পুরোহিত নিজেই কাঁধে করে নবপত্রিকা নিয়ে যান। তাঁর পিছন পিছন ঢাকীরা ঢাক বাজাতে বাজাতে এবং মহিলারা শঙ্খ ও উলুধ্বনি করতে করতে যান। শাস্ত্রবিধি অনুযায়ী স্নান করানোর পর নবপত্রিকাকে নতুন শাড়ি পরানো হয়। তারপর পূজামণ্ডপে নিয়ে এসে নবপত্রিকাকে দেবীর ডান দিকে একটি কাষ্ঠসিংহাসনে স্থাপন করা হয়। পূজামণ্ডপে নবপত্রিকা প্রবেশের মাধ্যমে দুর্গাপূজার মূল অনুষ্ঠানটির প্রথাগত সূচনা হয়। নবপত্রিকা প্রবেশের পর দর্পণে দেবীকে মহাস্নান করানো হয়। এরপর বাকি দিনগুলিতে নবপত্রিকা প্রতিমাস্থ দেবদেবীদের সঙ্গেই পূজিত হতে থাকে। বিশেষভাবে লক্ষণীয় হল, নবপত্রিকা প্রবেশের পূর্বে পত্রিকার সম্মুখে দেবী চামুণ্ডার আবাহন ও পূজা করা হয়। পত্রিকাস্থ অপর কোনো দেবীকে পৃথকভাবে পূজা করা হয় না।
卐 দেবী দূর্গার মহাস্নান 卐
দুর্গাপূজার একটি বিশেষ অনুষ্ঠান হল মহাস্নান। মহাসপ্তমীর দিন নবপত্রিকা স্নানের পর মহাস্নান অনুষ্ঠিত হয়। মহাষ্টমী ও মহানবমীর দিনও পূজার মূল অনুষ্ঠান শুরুর আগে মহাস্নান অনুষ্ঠিত হয়। দুর্গাপ্রতিমার সামনে একটি দর্পণ বা আয়না রেখে সেই দর্পণে প্রতিফলিত প্রতিমার প্রতিবিম্বে বিভিন্ন জিনিস দিয়ে স্নান করানো হয়। মহাস্নানের সময় শুদ্ধজল, নদীর জল, শঙ্খজল, গঙ্গাজল, উষ্ণ জল, সুগন্ধি জল, পঞ্চগব্য, কুশ ঘাসের দ্বারা ছেটানো জল, ফুলে দ্বারা ছেটানো জল, ফলের জল, মধু, দুধ, নারকেলের জল, আখের রস, তিল তেল, বিষ্ণু তেল, শিশিরের জল, রাজদ্বারের মাটি, চৌমাথার মাটি, বৃষশৃঙ্গ মৃত্তিকা, গজদন্তমৃত্তিকা, বেশ্যাদ্বারমৃত্তিকা, নদীর দুই তীরের মাটি, গঙ্গামাটি, সব তীর্থের মাটি, সাগরের জল, ঔষধি মেশানো জল, বৃষ্টিজল, সরস্বতী নদীর জল, পদ্মের রেণু মেশানো জল, ঝরনার জল ইত্যাদি দিয়ে দেবী দূর্গাকে স্নান করানো হয়।卐 কুমারী পূজা পরিচিতি 卐
কুমারী পূজা হলো তন্ত্র শাস্ত্রমতে অনধিক ষোলো বছরের অরজঃস্বলা কুমারী মেয়ের পূজা। বিশেষত দুর্গাপূজার অঙ্গরূপে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়। অবশ্য বর্তমানে কুমারী পূজার প্রচলন কমে গেছে।বাংলাদেশে সূদূর অতীত থেকেই কুমারী পূজার প্রচলন ছিলো এবং তার প্রমাণ পাওয়া যায় কুমারীপূজা প্রয়োগ গ্রন্থের পুথি থেকে।বর্তমানে বাংলাদেশে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, সিলেট, হবিগঞ্জ ও দিনাজপুর জেলা শহরে প্রতিষ্ঠিত রামকৃ্ষ্ণ মিশন ও ঋষিধামে কুমারী পূজার প্রচলন রয়েছে। প্রতিবছর দুর্গাপূজার মহাষ্টমী পূজার শেষে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয় তবে মতান্তরে নবমী পূজার দিনও এ পূজা অনুষ্ঠিত হতে পারে।
卐 সন্ধিপূজা পরিচিতি 卐
দূর্গাপূজার একটি বিশেষ অধ্যায় হল সন্ধিপূজা। দূর্গাপূজার অষ্টমীর দিন হয় এই বিশেষ পূজা, এই পূজার সময়কাল ৪৮ মিনিট। অষ্টমী তিথির শেষ ২৪ মিনিট ও নবমী তিথির প্রথম ২৪ মিনিট মোট ৪৮ মিনিটের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় এই পূজা। যেহেতু অষ্টমী ও নবমী তিথির সংযোগ স্থলে এই পূজা হয় তাই এই পূজার নাম সন্ধিপূজা অর্থ্যাৎ সন্ধি-কালিন পূজা। এই পূজা দূর্গাপূজার একটি বিশেষ অঙ্গ, এইসময় দেবী দূর্গাকে চামুন্ডা রূপে পূজা করা হয়ে থাকে।
卐 অপরাজিতা পূজা পরিচিতি 卐
অপরাজিতা পূজা দুর্গাপূজার একটি অঙ্গ। দুর্গার অপর নাম অপরাজিতা। তবে এই দেবীর মূর্তি অন্যরকম। ইনি চতুর্ভূজা, দেবীর হাতে শঙ্খ, চক্র, বর ও অভয়মুদ্রা থাকে এবং গায়ের রং নীল, দেবী ত্রিনয়না ও মাথায় চন্দ্রকলা। বিজয়া দশমীর দিন বিসর্জনের পর পূজামণ্ডপের ঈশানকোণে অষ্টদল পদ্ম এঁকে অপরাজিতার লতা রেখে এই দেবীর পূজা করা হয়। শক্তিপুরাণ ও মার্কেণ্ডপুরাণ মতে, ইনি বৈষ্ণবী শক্তি বিষ্ণুমায়া ও শিবশক্তি শিবানীর মিশ্রণে কল্পিতা।
🌺 দেবীর স্বপরিবার মূর্তির বর্ণনা ও বাহনের বিভিন্ন পৌরানিক পরিচিতি বর্ণনা 🌺
卐 সিংহ 卐
দুর্গার বাহন সিংহ। শ্রীশ্রীচণ্ডী-তে সিংহকে "মহাসিংহ", "বাহনকেশরী", "ধূতসট" ইত্যাদি বিশেষণে ভূষিত করা হয়েছে। দুর্গাপূজার সময় সিংহকেও বিশেষভাবে পূজা করা হয়। দেবীপুরাণ-এ উল্লিখিত সিংহের ধ্যানে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে বিষ্ণু, শিব, দুর্গা প্রমুখ দেবদেবীরা অবস্থান করেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অপর একটি ধ্যান মন্ত্রে সিংহকে বিষ্ণুর একটি রূপ বলা হয়েছে।কালীবিলাস তন্ত্রে দুর্গার বাহনকে বলা হয়েছে বিষ্ণুরূপী সিংহ। কালিকাপুরাণ অনুসারে, দুর্গার বাহন হওয়ার জন্য শিব শবদেহ, ব্রহ্মা রক্তপদ্ম ও বিষ্ণু সিংহের মূর্তি ধারণ করেছিলেন। মার্কণ্ডেয় পুরাণ অনুসারে, হিমালয় দুর্গাকে সিংহ দেন।শিবপুরাণ অনুসারে, শুম্ভ-নিশুম্ভকে বধ করার জন্য ব্রহ্মা দুর্গাকে সিংহ দেন।পদ্মপুরাণে আছে, দুর্গার ক্রোধ থেকে সিংহের জন্ম হয়। দেবীপুরাণ অনুযায়ী, বিষ্ণু দুর্গার বাহন সিংহকে নির্মাণ করেছিলেন এবং সেই সিংহে সকল দেবতার অধিষ্ঠান হয়েছিল। সিংহ রজোগুণের এক প্রচণ্ড শক্তির উচ্ছ্বাসের প্রতীক।
卐 মহিষাসুর 卐
মহিষাসুর অসুর, অর্থাৎ দেবদ্রোহী। তাই দেবীপ্রতিমায় দেবীর পদতলে দলিত এই অসুর 'সু' এবং 'কু'- এর মধ্যকার চিরকালীন দ্বন্দে অশুভ শক্তির উপর শুভশক্তির বিজয়ের প্রতীক। তবে অসুর হলেও দুর্গোৎসবে মহিষাসুরেরও পূজার চল আছে মার্কেণ্ডপুরাণ ও কালিকাপুরাণ অনুসারে, মৃত্যুর কিছুকাল পূর্বে নিজের মৃত্যুদৃশ্য স্বপ্নে দেখে ভীত মহিষাসুর ভদ্রকালীকে তুষ্ট করেছিলেন। ভদ্রকালী তাঁকে রক্ষার প্রতিশ্রুতি না দিলেও তাঁর ভক্তিতে তুষ্ট হয়ে বরদান করতে ইচ্ছুক হন। মহিষাসুর দেবতাদের যজ্ঞভাগ বর চাইলে দেবী সেই বর দিতে অস্বীকৃত হন; কিন্তু মহিষাসুরকে এই বর দেন যে যেখানেই দেবী পূজিতা হবেন, সেখানেই তাঁর চরণতলে মহিষাসুরেরও স্থান হবে এবং মহিষাসুর পূজিত হবে এমনকী দেবী আরো বলেন যে মহিষাসুর পূজা ব্যতীত দেবীর পূজা কখনও পরিপূর্ণ বা গ্রহন যোগ্যতা হবে না।
卐 গণেশ 卐
গণেশ কার্যসিদ্ধির দেবতা। সনাতনী পুরাণের নিয়ম অনুসারে, অন্যান্য দেবতার আগে গণেশের পূজা করতে হয়। গণেশের পূজা আগে না করে অন্য কোনো দেবতার পূজা করা শাস্ত্রে নিষিদ্ধ। স্কন্ধপুরাণ, পদ্মপুরাণ, মার্কেণ্ডপুরাণ, বিষ্ণুপুরাণ ও শিবপুরাণ মতে, "গণশক্তি যেখানে ঐক্যবদ্ধ সেখানে কর্মের সকল প্রকার বাধাবিঘ্ন দূরীভূত হয়। দেবাসুর-যুদ্ধে দেবতারা যতবারই ঐক্যবদ্ধ হয়ে অসুরদের সঙ্গে লড়াই করেছেন ততবারই তাঁরা জয়ী হয়েছেন। গণেশের আর এক নাম বিঘ্নেশ, অর্থাৎ বিঘ্ননাশকারী। বিঘ্নেশ প্রসন্ন থাকলে সিদ্ধি নিশ্চিত।"卐 মুষিক 卐
গণেশের বাহন মূষিক বা ইঁদুর। ইঁদুর মায়া ও অষ্টপাশ ছেদনের প্রতীক। "অথর্বশীর্ষের সায়নভাষ্যে উক্ত হইয়াছে মুষ্ণাতি অপহরতি কর্মফলানি ইতি মূষিকঃ। জীবের কর্মফলসমূহ অজ্ঞাতসারে অপহরণ করে বলিয়া ইহার নাম মূষিক। প্রবল প্রতিবন্ধক স্বরূপ কর্মফল বিদ্যমান থাকিতে সিদ্ধিলাভ হয় না। তাই, কর্মফল হরণের উপর সিদ্ধি প্রতিষ্ঠিত।"
卐 লক্ষ্মী 卐
শ্রী লক্ষ্মী, সমৃদ্ধি, বিকাশ ও অভ্যুদয়ের প্রতীক। শুধু ধনৈশ্বর্যই নয়, লক্ষ্মী চরিত্রধনেরও প্রতীক। পৌরানিক ভাষায় "ধন, জ্ঞান ও শীল - তিনেরই মহনীয় বিকাশ দেবী লক্ষ্মীর চরিত্র মাহাত্ম্যে। সর্বাত্মক বিকাশের অধিষ্ঠাত্রী দেবতা বলেই তিনি কমলা। কমল বা পদ্মের ন্যায়ই তিনি সুন্দরী; তদীয় নেত্রদ্বয় পদ্মের ন্যায় আয়ত। তাঁর শুভ করে প্রস্ফুটিত পদ্মকুসুম; পদ্মবনেই তাঁর বসবাস।
卐 পেচক 卐
লক্ষ্মীর বাহন পেচক বা প্যাঁচা। রূপে ও গুণে অতুলনীয় এই দেবীর এমন কিম্ভূত বাহন কেন, সে নিয়ে বেশ কয়েকটি মত প্রচলিত। প্রথমেই স্মরণে রাখা কর্তব্য, সনাতনী শাস্ত্রে কোথাও পেচককে লক্ষ্মীর বাহনের মর্যাদা দান করা হয়নি। এই বিশ্বাস একান্তই বাঙালি লোকবিশ্বাস। প্যাঁচা দিবান্ধ। মনে করা হয়, যাঁরা দিবান্ধ অর্থাৎ তত্ত্ববিষয়ে অজ্ঞ, তাঁরাই পেচকধর্মী। মানুষ যতকাল পেচকধর্মী থাকে ততদিনই ঐশ্বর্যের দেবী লক্ষ্মীর আরাধনা করে সে। "পেচক মুক্তিকামী সাধককে বলে, সকলে যখন ঘুমায় তুমি আমার মতো জাগিয়া থাকো। আর সকলে যখন জাগ্রত তখন তুমি আমার মতো ঘুমাইতে শিখ, তবেই সাধনে সিদ্ধি। কৈবল্যধন লাভ।পরমার্থধনাভিলাষী সাধক পেঁচার মতো রাত্রি জাগিয়া সাধন করে। লোকচক্ষুর অন্তরালে নির্জনে থাকে। লক্ষ্মীমার বাহন রূপে আসন লইয়া পেচকের যে ভাষণ তাহা বিভিন্ন স্তরের বিভিন্ন প্রকার সাধকের উপাদেয় সম্পদ।
卐 সরস্বতী 卐
সরস্বতী বাণীরূপিণী বাগদেবী, তিনি জ্ঞানশক্তির প্রতীক। "দেবীর হাতে পুস্তক ও বীণা। পুস্তক বেদ শব্দব্রহ্ম। বীণা সুরছন্দের প্রতীক নাদব্রহ্ম। শুদ্ধ সত্ত্বগুণের পূর্তি, তাই সর্বশুক্লা। শ্বেতবর্ণটি প্রকাশাত্মক। সরস্বতী শুদ্ধ জ্ঞানময়ী প্রকাশস্বরূপা। জ্ঞানের সাধক হইতে হইলে সাধককে হইতে হইবে দেহে মনে প্রাণে শুভ্র-শুচি শ্বেতবর্ণা।
卐 হংস 卐
সরস্বতীর বাহন হংস। হংস হিন্দুদের নিকট একটি পবিত্র প্রতীক। "সরস্বতী-ব্রহ্মবিদ্যা। যে সাধক দিবারাত্র অজপা মন্ত্রে সিদ্ধ তিনিই হংসধর্মী। মানুষ সুস্থ শরীরে দিবারাত্র মধ্যে একুশ হাজার ছয়শত 'হংস' এই অজপা মন্ত্র জপরূপে শ্বাস-প্রশ্বাস করিয়া থাকে। মানুষ যতদিন এই স্বাভাবিক জপ উপলব্ধি করিতে না পারে, ততদিন 'হংসধর্মী' হইতে পারে না; সুতরাং ব্রহ্মবিদ্যারও সন্ধান পায় না।
卐 কার্তিকেয় 卐
দেবসেনাপতি কার্তিকেয় বা কার্তিক সৌন্দর্য ও শৌর্যবীর্যের প্রতীক। "যুদ্ধে শৌর্য-বীর্য প্রদর্শন একান্ত প্রয়োজনীয়। তাই সাধক-জীবনে এবং ব্যবহারিক জীবনে কার্তিকেয়কে প্রসন্ন করতে পারলে শৌর্য-বীর্য আমাদের করতলগত হয়।
卐 ময়ূর 卐
কার্তিকেয়ের বাহন ময়ূর। সৌন্দর্য ও শৌর্য - কার্তিকেয়ের এই দুই বৈশিষ্ট্যই তাঁর বাহন ময়ূরের মধ্যে বিদ্যমান।
🌺 বিভিন্ন পৌরানিক মতে ব্রহ্মাণ্ডে প্রথম দূর্গা পূজোর ইতিহাস বর্ণনা 🌺
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ মতে, কৃষ্ণকে দুর্গাপূজার প্রবর্তক বলা হয়েছে। বিভিন্ন দেবদেবীরা কিভাবে দুর্গাপূজা করেছিলেন, তার একটি তালিকা এই পুরাণে পাওয়া যায়। তবে এই প্রসঙ্গে কোনো পৌরাণিক গল্পের বিস্তারিত বর্ণনা এই পুরাণে দেওয়া হয়নি। বলা হয়েছে:-প্রথমে পূজিতা সা চ কৃষ্ণেন পরমাত্মনা।
বৃন্দাবনে চ সৃষ্ট্যাদ্যৌ গোলকে রাসমণ্ডলে।।
মধুকৈটভভীতেন ব্রহ্মণা সা দ্বিতীয়তঃ।
ত্রিপুরপ্রেষিতেনৈব তৃতীয়ে ত্রিপুরারিণা।।
ভ্রষ্টশ্রিয়া মহেন্দ্রেন শাপাদ্দুর্বাসসঃ পুরা।
চতুর্থে পূজিতা দেবী ভক্ত্যা ভগবতী সতী।।
তদা মুনীন্দ্রৈঃ সিদ্ধেন্দ্রৈর্দেবৈশ্চ মুনিমানবৈঃ।
পূজিতা সর্ববিশ্বেষু বভূব সর্ব্বতঃ সদা।।
অর্থাৎ, সৃষ্টির প্রথম যুগে পরমাত্মা কৃষ্ণ বৈকুণ্ঠের আদি-বৃন্দাবনের মহারাসমণ্ডলে প্রথম দুর্গাপূজা করেন, সেই দূর্গা পূজার পর দেবী দূর্গা কাত্যায়নী নামে প্রসিদ্ধ হয় এবং দ্বাপর যুগে কৃষ্ণনের অবতারী লীলায় দেবী কাত্যায়নী ব্রজে(বৃন্দাবন) মায়ার প্রবল বেগ ধারণ করে ও কৃষ্ণনের বেণুওমাতল করে তুলে। এরপর মধু ও কৈটভ নামে দুই অসুরের ভয়ে ব্রহ্মা দ্বিতীয় দুর্গাপূজা করেছিলেন। ত্রিপুর নামে এক অসুরের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে শিব বিপদে পড়ে তৃতীয় দুর্গাপূজার সম্পাদন করেন। দুর্বাসা মুনির অভিশাপে লক্ষ্মীকে হারিয়ে ইন্দ্র স্বর্গপুরীতে যে পূজার আয়োজন করেছিলেন, সেটি ছিল চতুর্থ দুর্গাপূজা। এরপর থেকেই পৃথিবীতে মুনিঋষি, সিদ্ধপুরুষ, দেবতা ও মানুষেরা নানা দেশে নানা সময়ে দুর্গাপূজা করে আসছে। শাক্তধর্মের অন্যতম প্রধান ধর্মগ্রন্থ দেবীভাগবত পুরাণ অনুসারে, ব্রহ্মার মানসপুত্র মনু পৃথিবীর শাসক হয়ে ক্ষীরোদসাগরের তীরে দুর্গার মাটির মূর্তি তৈরি করে পূজা করেন। এই সময় তিনি "বাগ্ভব" বীজ জপ করতেন এবং আহার ও শ্বাস গ্রহণ ত্যাগ করে এক পায়ে দাঁয়ে একশো বছর ধরে ঘোর তপস্যা করেন। এর ফলে তিনি শীর্ণ হয়ে পড়লেও, কাম ও ক্রোধ জয় করতে সক্ষম হন এবং দুর্গানাম চিন্তা করতে করতে সমাধির প্রভাবে স্থাবরে পরিণত হন। তখন দুর্গা প্রীত হয়ে তাঁকে বর দিতে আসেন। মনু তখন দেবতাদেরও দুর্লভ একটি বর চাইলেন। দুর্গা সেই প্রার্থনা রক্ষা করেন। সেই সঙ্গে দুর্গা তাঁর রাজ্য শাসনের পথ নিষ্কণ্টক করেন এবং মনুকে পুত্রলাভের বরও দেন।
🌺 দেবীমাহাত্ম্যম্ অনুসারে মত্যলোকে (পৃথিবীতে) দেবী দূর্গা পূজার প্রচলন ইতিহাস 🌺
দুর্গা ও দূর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে যতগুলি পৌরাণিক কাহিনী প্রচলিত আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় কাহিনীটি পাওয়া যায় শ্রীশ্রীচণ্ডী বা দেবীমাহাত্ম্যম্-এ। এই কাহিনীটি হিন্দুরা এতটাই মান্য করে যে শ্রীশ্রীচণ্ডীর পাঠ দূর্গাপূজার একটি অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে গিয়েছে। দেবীমাহাত্ম্যম্ আসলে মার্কণ্ডেয় পুরাণ-এর একটি নির্বাচিত অংশ। এতে তেরোটি অধ্যায়ে মোট সাতশোটি শ্লোক আছে। এই বইতে দূর্গাকে নিয়ে প্রচলিত তিনটি কাহিনী ও দূর্গাপূজা প্রচলনের একটি কাহিনী রয়েছে। প্রতিটি কাহিনীতে দূর্গাই কেন্দ্রীয় চরিত্র। আর মার্কেণ্ড পুরাণের ঐ কাহিনী তিনটি হলো:-
#= সুরথরাজা ও সমাধি বৈশ্য
#= মধু ও কৈটভ
#= মহিষাসুর
মার্কেণ্ড পুরাণের ঐ কাহিনী তিনটি হলো:-
#= সুরথরাজা ও সমাধি বৈশ্য
#= মধু ও কৈটভ
#= মহিষাসুর
卐 মার্কেণ্ডপুরাণ মতে সুরথরাজার কাহিনী 卐
সুরথ নামে এক ধর্ম পরায়ণ, নিষ্ঠাবান, প্রজা প্রেয়সী, বীরযোদ্ধা, মহাত্মা ও আত্মজ্ঞানী রাজা ছিল। সুরথ রাজা জন্মগত ক্ষত্রিয় ছিল এবং তাঁর জীবনের কোন যুদ্ধে পরাজয় হয়নাই। সুরথ রাজার রাজ্যের মধ্যে সুখ ও সমৃদ্ধি পরিপূর্ণ রুপে ভরপুর। সুরথ রাজা রাজ্যের মঙ্গলের জন্য প্রায় সময় যজ্ঞের আয়োজন করত। কিন্তু সুরথ রাজার রাজ্যের পাশে যবন জাতি রাজ্য নামে এক রাজ্য ছিল, যে রাজ্য সুরথ রাজার রাজ্যের সাথে হিংসাত্মক আচরণ করতো। একদিন যবন রাজ্য সুরথ রাজার রাজ্যের সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করলো, তা শুনে সুরথ রাজা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি শুরু করলো। তারপর মাঘী পূর্ণিমার তৃতীয়াতে যুদ্ধের দিন ধার্য করা হলো এবং যথাক্রমে পূর্ণিমার তৃতীয়াতে যুদ্ধ শুরু হয়। কিন্তু যুদ্ধে যবন জাতির হাতে তাঁর(সুরথের) পরাজয় ঘটে। সেই সুযোগে তাঁর মন্ত্রী ও সভা সদস্যরা তাঁর ধনসম্পদ ও সেনাবাহিনীর দখল করে নেন। সুরথ রাজা তাঁর রাজ্য সভার সদস্যদের এই কৃত্যকলাপ দেখে হতভম্ব হয়ে গেলেন, তিনি চিন্তা করলেন ঘর শত্রুর থেকে যবন জাতি অনেক ভালো ছিল; অন্তত পক্ষে সামনে এসে আক্রমণ করেছে সুযোগের সদ্ব্যবহার তো করেনি। তখন সুরথ রাজা মনের দুঃখে বনে চলে আসেন, কারণ যুদ্ধে তিনি পরাজিত এবং রাজ্য দুষ্কৃতী কারীদের হাতে দায়বদ্ধ, যদি সে রাজ্য ফিরে যায় তাহলে তাঁকে হত্যা করা হবে। বনের মধ্যে ঘুরতে ঘুরতে তিনি মেধা নামে এক ঋষির আশ্রমে এসে উপস্থিত হন। মেধা রাজাকে সমাদর করে নিজের আশ্রমে আশ্রয় দেন। কিন্তু বনে থেকেও রাজার মনে সুখ ছিল না। সব সময় তিনি তাঁর হারানো রাজ্যের ভালমন্দের কথা ভেবে শঙ্কিত হতেন। এমন সময় একদিন বনের মধ্যে সুরথ সমাধি নামে এক বৈশ্যের দেখা পেলেন। তাঁর সঙ্গে কথা বলে সুরথ জানতে পারলেন, সমাধির স্ত্রী ও ছেলেরা তাঁর সব টাকাপয়সা ও বিষয়সম্পত্তি কেড়ে নিয়ে তাঁকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু তাও তিনি সব সময় নিজের স্ত্রী ও ছেলদের কল্যাণ-অকল্যাণের কথা চিন্তা করে শঙ্কিত হন। তাঁদের মনে প্রশ্ন জাগল, যারা তাঁদের সব কিছু কেড়ে নিয়েছে, তাদের প্রতি তাঁদের রাগ হচ্ছে না কেন? কেনই বা তাঁরা সেই সব লোকেদের ভালমন্দের কথা চিন্তা করে করে শঙ্কিত হচ্ছেন? দুজনে মেধা ঋষিকে এই কথা জিজ্ঞাসা করলেন, ঋষি বললেন, পরমেশ্বরী মহামায়ার প্রভাবেই এমনটা হচ্ছে। সুরথ তাঁকে মহামায়ার কথা জিজ্ঞাসা করলে, তিনি একে একে তাঁকে তিনটি গল্প বলেন (এই গল্প গুলিই হলো শ্রীশ্রীচণ্ডী-র মূল আলোচ্য বিষয়)। মেধার ঋষির গল্প শুনে সুরথ ও সমাধি নদীর তীরে তিন বছর কঠিন তপস্যা করলেন। তপস্যায় প্রসন্ন হয়ে মহামায়া আবির্ভূত হইলেন, দেবী বললেন পুত্র তোমাদের তপস্যায় আমি প্রসন্ন বলো কি বর চাও? কিন্তু সুরথ ও সমাধি বর না চেয়ে তাঁরা দুজনে তাদের মনের গ্লানি মহামায়ার সামনে তুলে ধরলেন। তখন দেবী মহামায়া তাদের মুখবাণী শুনে সুরথ রাজাকে তাঁর হারানো রাজ্য ফিরিয়ে দিলেন এবং বৈশ্য সমাধিকে তত্ত্বজ্ঞান দিলেন। বৈশ্য সমাধি তত্ত্বাজ্ঞান পেয়ে নিজ জীবনযাত্রায় ফিরে যায়। কিন্তু সুরথ রাজা রাজ্য ফিরে পেয়েও নিজের মনের তৃপ্তি অপূর্ণ মনে হচ্ছিল। তখন সুরথ রাজা আবার বনে এসে মেধা মুনির আশ্রমে মুনির সাথে দেখা করলেন, তিনি নিজের অতৃপ্তির কথা মেধা মুনির সামনে উপস্থাপন করলেন। রাজার কথা শুনে, মেধা মুনি সুরথকে মহামায়ার পূজা করার পরামর্শ দিলেন। তখন সুরথ রাজা মনস্থির করলেন, যে দেবীর কল্যাণে তিনি রাজ্যভার ফিরে পেয়েছেন তিনি সেই মহামায়ার পূজা করবেন এবং সৃষ্টিকে মায়ের কৃপান্নিত করবেন। তখন সুরথ রাজা মেধা মুনিকে জিজ্ঞাসা করলেন কখন মায়ের পূজা করবেন? মেধা মুনি বললেন চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষে ষষ্ঠী তিথিতে মায়ের বোধনেই পূজা আরম্ভ হবে। রাজা মুনিকে জিজ্ঞাসা করলেন পূজার প্রচলন কিরকম হবে? তখন মেধা মুনি বললেন, শাস্ত্রীয় মতে :-
# দুর্গাষষ্ঠী := বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস।
# মহাসপ্তমী := নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপন, সপ্তম্যাদিকল্পারম্ভ, সপ্তমীবিহিত পূজা।
# মহাষ্টমী := মহাষ্টম্যাদিকল্পারম্ভ, কেবল মহাষ্টমীকল্পারম্ভ, মহাষ্টমীবিহিত পূজা, বীরাষ্টমী ব্রত, মহাষ্টমী ব্রতোপবাস, কুমারী পূজা, অর্ধরাত্রবিহিত পূজা, মহাপূজা ও মহোৎসবযাত্রা, সন্ধিপূজা।
# মহানবমী := কেবল মহানবমীকল্পারম্ভ, মহানবমী বিহিত পূজা।
# বিজয়াদশমী := বিজয়াদশমী বিহিত বিসর্জনাঙ্গ পূজা, বিসর্জন, বিজয়াদশমী কৃত্য ও কুলাচারানুসারে বিসর্জনান্তে অপরাজিতা পূজা।
সব নিয়মাবলী জানার পর চৈত্র মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে মেধা মুনির আশ্রমে সুরথ রাজা প্রথম দূর্গা পূজার প্রচলন শুভারম্ভ করে। তারপরের বছর হতে সুরথ রাজা দূর্গা পূজা নিজ রাজ প্রাসাদে করে। কিন্তু অত্র পূজায় তিনি মহাষ্টমীর সন্ধিপুজোর পর বলির প্রথা আরম্ভ করে। এভাবে সুরথ রাজা শতবর্ষে দূর্গা পূজায় একলক্ষ পাঁঠাবলি দেয়। এর কিছু বছর পর সুরথ রাজা দেহত্যাগ করে। দেহত্যাগের পরে রাজা স্বর্গে যাচ্ছিল, এমন সময় তিনি দেখলেন স্বর্গের দ্বারে লক্ষ লোক খর্গ হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে। সুরথ রাজাকে দেখে ঐ লক্ষ লোক খর্গ হাতে নিয়ে রাজাকে তাড়া করে। এই দেখে রাজা দৌড়াচ্ছে আর দৌড়াতে দৌড়াতে রাজা কৈলাসে গিয়ে উপস্থিত। রাজাকে দেখে দেবী মহামায়া ও মহাদেব বললেন, কি হয়েছে তুমি দৌড়াচ্ছ কেন? রাজা বলেন মাতা, আমি মত্যলোকে আপনার পূজায় যে বলি প্রদান করেছি এখন তাঁরা সবাই মিলে খর্গ হাতে নিয়ে আমাকে বলি করার জন্য দৌড়াচ্ছে। তখন দেবী মহামায়া বললেন, পুত্র মেধা মুনি তোমার মনের গ্লানি দূরীকরণের জন্য আমার পূজা করতে বলেছিলেন কিন্তু সন্ধিপুজোয় বলি দিতে তো বলেননি। রাজা বললেন মাতা, আমি আপনাকে আরও বেশি প্রসন্ন করার জন্য বলি প্রদান করেছি। দেবী মহামায়া বললেন, পুত্র সৃষ্টি আমার আর সৃষ্টির প্রত্যেকটি জীব ও তথা মানব আমার সন্তান। আজ পর্যন্ত শুনেছ মায়ের সন্তানকে মায়ের কাছে বলি দিয়ে কেউ মাতৃকৃপা পেয়েছে বা কোনো মা নিজ সন্তানের বলি চেয়েছেন। সব শুনে এবং নিজের ভুল বুঝে সুরথ রাজা বললেন, মা আমাকে ক্ষমা প্রদান করুন। দেবী মহামায়া বলেন, পুত্র তোমাকে ক্ষমা করার মতো অধিকার আমার নেই ঐ লক্ষ পাঁঠাই তোমাকে ক্ষমা প্রদান করতে পারবে। সুরথ রাজা মহামায়াকে বলেন, মা এখন আমি কি করবো? মহামায়া বলেন তুমি অতিসীগ্র বৈকুণ্ঠে বিষ্ণুদেবের সান্নিধ্যে যাও তিনিই তোমাকে উদ্ধার করতে পারবে। অতঃপর রাজা বৈকুণ্ঠে প্রস্থান করলেন, তিনি বৈকুণ্ঠে বিষ্ণুদেবের কাছে গিয়ে বললেন, প্রভু আমাকে রক্ষা করুন। বিষ্ণুদেব বললেন, বৎস তুমি পূর্ণ মহাত্মা কিন্তু তোমার ঐ একটি পাপ খন্ডন করতে হলে তোমাকে বলি হতে হবে? তখন রাজা বললেন, প্রভু যদি বলিতেই আমার উদ্ধার হয় তবে তাই হোক। অতঃপর লক্ষ পাঁঠা এসে বৈকুণ্ঠে হাজির। তখন লক্ষ পাঁঠা বিষ্ণুদেবকে বললেন প্রভু আমরা সুরথ রাজাকে বলি করতে এসেছি। তখন বিষ্ণুদেব বললেন, দেখ তোমরা লক্ষ জন কিন্তু রাঁজা এক আর লক্ষ জন লক্ষ বার তো বলি করতে পারবে না? তখন পাঁঠারা বললেন, তাহলে প্রভু আমরা কি করব? বিষ্ণুদেব বললেন, তোমরা লক্ষ খর্গ এককরে সবাই ঐ খর্গ একত্রে হাতে নিয়ে রাজাকে বলি কর। তখন বিষ্ণুদেবের কথা মতো লক্ষ পাঁঠা লক্ষ খর্গ একত্রিত করে সবাই এক হাতে নিয়ে সুরথ রাজাকে ঐখানে বলিকরে। অতঃপর সুরথ রাজা ঐখানেই উদ্ধার হয়ে স্বর্গে যায়। সেইদিনের পর থেকে দূর্গা পূজায় বলি বন্ধ হয়ে যায়।# দুর্গাষষ্ঠী := বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস।
# মহাসপ্তমী := নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপন, সপ্তম্যাদিকল্পারম্ভ, সপ্তমীবিহিত পূজা।
# মহাষ্টমী := মহাষ্টম্যাদিকল্পারম্ভ, কেবল মহাষ্টমীকল্পারম্ভ, মহাষ্টমীবিহিত পূজা, বীরাষ্টমী ব্রত, মহাষ্টমী ব্রতোপবাস, কুমারী পূজা, অর্ধরাত্রবিহিত পূজা, মহাপূজা ও মহোৎসবযাত্রা, সন্ধিপূজা।
# মহানবমী := কেবল মহানবমীকল্পারম্ভ, মহানবমী বিহিত পূজা।
# বিজয়াদশমী := বিজয়াদশমী বিহিত বিসর্জনাঙ্গ পূজা, বিসর্জন, বিজয়াদশমী কৃত্য ও কুলাচারানুসারে বিসর্জনান্তে অপরাজিতা পূজা।
卐 মার্কেণ্ডপুরাণ মতে মধুকৈটভ কাহিনী 卐
শ্রীশ্রীচণ্ডী গ্রন্থের প্রথম অধ্যায়ে সংক্ষেপে মধুকৈটভের উপাখ্যানটি বর্ণিত হয়েছে: প্রলয়কালে পৃথিবীর এক বিরাট আকার-সমুদ্রে পরিণত হলে বিষ্ণু সেই সমুদ্রের উপর অনন্তনাগকে শয্যা করে যোগনিদ্রায় মগ্ন হলেন। এই সময় বিষ্ণুর কর্ণমল থেকে মধু ও কৈটভ নামে দুই দৈত্য নির্গত হয়ে বিষ্ণু নাভিপদ্মে স্থিত ব্রহ্মাকে বধ করতে উদ্যত হল। ভীত হয়ে ব্রহ্মা বিষ্ণুকে জাগরিত করবার জন্যে তাঁর নয়নাশ্রিতা যোগনিদ্রার স্তব করতে লাগলেন। এই স্তবটি গ্রন্থে উল্লিখিত চারটি প্রধান স্তবমন্ত্রের অন্যতম। এই স্তবে সন্তুষ্টা দেবী বিষ্ণুকে জাগরিত করলে তিনি(বিষ্ণু) পাঁচ হাজার বছর ধরে মধু ও কৈটভের সঙ্গে মহাসংগ্রামে রত হলেন। মহামায়া শেষে ঐ দুই অসুরকে বিমোহিত করলে তারা বিষ্ণুকে বলে বসে, "আপনার সঙ্গে যুদ্ধ করে আমরা প্রীত; তাই আপনার হাতে মৃত্যু হবে আমাদের শ্লাঘার বিষয়। পৃথিবীর যে স্থান জলপ্লাবিত নয়, সেখানে আপনি আমাদের উভয়কে বিনাশ করতে পারেন।" বিষ্ণু বললেন, "তথাস্তু" এবং অসুরদ্বয়ের মাথা নিজের জঙ্ঘার উপর রেখে তাদের বধ করলেন।卐 মার্কেণ্ডপুরাণ মতে মহিষাসুর কাহিনী 卐
মহিষাসুর নামক অসুর স্বর্গ থেকে দেবতাদের বিতারিত করে স্বর্গ অধিকার করলে, দেবতারা ব্রহ্মার শরণাপন্ন হন। ব্রহ্মা এর প্রতিকারের জন্য মহাদেব ও অন্যান্য দেবতাদের নিয়ে বিষ্ণুর কাছে উপস্থিত হন। মহিষাসুর পুরুষের অবধ্য ছিলেন বলে- বিষ্ণু দেবতাদের পরামর্শ দেন যে, -প্রত্যেক দেবতা নিজ নিজ তেজ ত্যাগ করে একটি নারীমূর্তি সৃষ্টি করবেন। এরপর সমবেত দেবতারা তেজ ত্যাগ করতে আরম্ভ করেন। যে যে দেবতার তেজ থেকে এই নারী মূর্তির শরীরের বিভিন্ন অংশ তৈরি হলো, তা এ রূপ- মহাদেবের তেজে মুখ, যমের তেজে চুল, বিষ্ণুর তেজে বাহু, চন্দ্রের তেজে স্তন, ইন্দ্রের তেজে কটিদেশ, বরুণের তেজে জঙ্ঘা ও উরু, পৃথিবীর তেজে নিতম্ব, ব্রহ্মার তেজে পদযুগল, সূর্যের তেজে পায়ের আঙ্গুল, বসুদের তেজে হাতের আঙ্গুল, কুবেরের তেজে নাসিকা, প্রজাপতির তেজে দাঁত, অগ্নির তেজে ত্রিনয়ন, সন্ধ্যার তেজে ভ্রূ, বায়ুর তেজে কান এবং অন্যান্য দেবতাদের তেজে শিবারূপী দুর্গার সৃষ্টি হলো। এরপর দেবতারা তাঁকে বস্ত্র, পোশাক ও অস্ত্র দান করলেন। এক্ষেত্রে যাঁরা যা দান করলেন, তা হলো- মহাদেব দিলেন ত্রিশূল, বিষ্ণু দিলেন চক্র, বরুণ দিলেন শঙ্খ, অগ্নি দিলেন শক্তি, বায়ু দিলেন ধনু ও বাণপূর্ণ তূণীর, ইন্দ্র দিলেন বজ্র, ঐরাবত দিলেন ঘণ্টা, যম দিলেন কালদণ্ড, বরুণ দিলেন পাশ, ব্রহ্মা দিলেন অক্ষমালা ও কমণ্ডলূ, সূর্য দিলেন রশ্মি, কালখর্গ ও নির্মল চর্ম, ক্ষিরোদ সাগর দিলেন অক্ষয়বস্ত্র সহ বিভিন্ন অলঙ্কার ও আভরণ, বিশ্বকর্মা দিলেন পরশুসহ নানাবিধ অস্ত্র, অভেদ্য কবচমালা, হিমালয় দিলেন সিংহ, কুবের দিলেন অমৃতের পানপাত্র, শেষ নাগ দিলেন নাগহার ও অন্যান্য দেবতারা তাঁদের সাধ্যমতো বিষয় উপহার দিলেন। এরপর দেবতারা সমবেতভাবে তাঁকে সম্মান দেখানোর সাথে সাথে দেবী অট্টহাস্য করতে লাগলেন। তাঁর হাসিতে পৃথিবী কম্পিত হতে লাগলো। অসুররা এই কম্পনের কারণ জানতে এসে দেবীকে দেখলো। এরপর দেবীর সাথে অসুরের যুদ্ধ আরম্ভ হলো। এই যুদ্ধে মহিষাসুরের পক্ষে যে যে সেনাপতি বিশাল বাহিনী নিয়ে অংশগ্রহণ করেছিল, তারা হলো-
চামর ও চিক্ষুর:- চতুরঙ্গ সৈন্য
মহাহনু:- অযুত হাজার রথ ও সৈন্য
অসিলোমা:- পঞ্চাশ নিযুত রথ ও সৈন্য
বাস্কল:- ষাট লক্ষ সৈন্য, সহস্র হাতি ও এক কোটি রথ।
বিড়ালাক্ষ:- অযুত সৈন্য ও পঞ্চাশ অযুত রথ
অন্যান্য ছোট খাট সেনাপতিরা তাঁদের সাধ্যমতো সেনাদল নিয়ে যুদ্ধে অংশ নিল। এই সময় মহিষাসুর নিজে কয়েক কোটি রথ হাতি, অশ্ব ও সৈন্য নিয়ে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। অসুরদল দুর্গাকে আক্রমণ করলে, ইনি তা অবলীলায় প্রতিহত করলেন। তারপর ইনি শ্বাস ত্যাগ করলে, শতসহস্র প্রমথ সৈন্য সৃষ্টি হলো। এই সৈন্যরা পরশু, পট্টিশ, অসি ও ভিন্দিপালের আঘাতে অসুরদের হত্যা করতে লাগলো। দেবী ত্রিশূল, গদা, শক্তি, ঋষ্টি, খর্গ ব্যবহার করে অসুরদের বিনাস করতে লাগলেন। ক্রমে সকল সৈন্য ও সেনাপতিরা নিহত হলে, মহিষাসুর নিজে মহিষের রূপ ধরে সারা পৃথিবী ক্ষুব্ধ করে দেবীর মুখোমুখী হলো, দেবী তাকে পাশ দিয়ে বেঁধে ফেললেন। এই অবস্থায় মহিষাসুর তার মহিষরূপ ত্যাগ করে, সিংহের রূপ ধারণ করলো। এই সময় দেবী তার শিরচ্ছেদ করলেন। সাথে সাথে অসুর খর্গধারী পুরুষ মূর্তিতে উপস্থিত হলো। এবার দেবী এই মূর্তিকে তার খর্গসহ কেটে ফেললে, অসুর হাতির রূপ ধরলো। তারপর শুড় দিয়ে দেবীর বাহন সিংহকে টানার চেষ্টা করলে, দেবী এঁর শুড় কেটে দিলেন। এবার অসুর পুনরায় মহিষের রূপ ধরে পুনরায় ত্রিলোক তছনছ করে বেড়াতে লাগলো। তখন অসুর অহঙ্কারে মত্ত হয়ে প্রবল গর্জন করল। দেবী তখন বললেন,:-"গর্জ গর্জ ক্ষণং মূঢ় মধু যাবৎ পিবাম্যহম।
ময়া ত্বয়ি হতেঽত্রৈব গর্জিষ্যন্ত্যাশু দেবতাঃ।।"
অনুবাদ:- রে মূঢ়, যতক্ষণ আমি মধুপান করি, ততক্ষণ তুই গর্জন করে নে। আমি তোকে বধ করলেই দেবতারা এখানে শীঘ্রই গর্জন করবেন। এরপর দেবী অমৃত পান করে ক্রোধে হাসতে লাগলেন। অসুর শিং দিয়ে পর্বত উত্তোলন করে দেবীর প্রতি নিক্ষেপ করলে, দেবী শর নিক্ষেপ করে তা চূর্ণ করে ফেললো। এরপর দেবী মধুপান করে মহিষাসুরের উপর লাফিয়ে উঠে পায়ের নিচে চেপে ধরলেন তারপর গলার উপর পা রেখে ত্রিশূল দ্বারা আঘাত করলেন। এরপর মহিষের মুখ থেকে অসুরের নিজ মূর্তির অধ্বাংশ বের হওয়ার সাথে সাথে, দেবী তাকে বেঁধে ফেললেন। এই অবস্থায় অসুর যুদ্ধ করতে থাকলে, দেবী খর্গ দিয়ে তার শিরশ্ছেদ করলেন। এরপর দেবতা ও ঋষিরা দেবীর বন্দনা করলেন। দেবতারা বললেন, তাঁরা এরূপ বিপদে পড়লে, দেবী যেন পুনরায় তাঁদের উদ্ধার করেন। দেবী সেই বর দিয়ে অন্তর্হিত হলেন। কথিত আছে, দুর্গা মহিষাসুরকে তিনবার হত্যা করেন। প্রথমবার ইনি অষ্টাভূজা উগ্রচণ্ডা রূপে, দ্বিতীয় ও তৃতীয়বার ভদ্রাকালী ও দশভূজা দুর্গারূপে। মহিষাসুরের অনুরোধে মহিষাসুর দুর্গার উক্ত তিন ধরনের মূর্তির সাথে পূজিত হয়ে থাকেন।
🌺স্কন্দপুরাণের মধ্যে দেবী দূর্গার অষ্টাদশভূজা মূর্তি রুপে শুম্ভ-নিশুম্ভ বধের একটি কাহিনী প্রচলিত আছে🌺
卐 স্কন্ধপুরাণ মতে শুম্ভ-নিশুম্ভ বধ 卐
রক্তবীজের হত্যার পর শুম্ভ-নিশুম্ভ নিজেরাই সসৈন্যে যুদ্ধক্ষেত্রে আসে। এই যুদ্ধে প্রাথমিকভাবে দেবীর শরাঘাতে নিশুম্ভ ভূপাতিত হলে, শুম্ভ তাঁকে আক্রমণ করে। কিন্তু কিছুক্ষণ যুদ্ধের পর শুম্ভ শূলের আঘাতে মূর্চ্ছিত হয়। পরে নিশুম্ভ চেতনা লাভ করে দেবীকে পুনরায় আক্রমণ করে। দেবী প্রথমে নিশুম্ভের বুকে শূলের আঘাত করলে, তার হৃদয় থেকে একটি পুরুষ মূর্তি নির্গত হয়। এরপর দেবী খর্গের আঘাতে এই পুরুষের শিরশ্ছেদ করেন। ফলে নিশুম্ভের মৃত্যু হয়। এরপর শুম্ভ চেতনা লাভ করে দেবীকে বলে যে, এই সব সহকারী শক্তির বলে যুদ্ধ করছে, মূলত দেবীর কোন শক্তি নেই। শুম্ভের এই কথা শুনে দেবী সকল সহকারী শক্তি তাঁর দেহের ভিতর টেনে নিয়ে এককভাবে শুম্ভের মুখোমুখী হন। এরপর শুম্ভ তাঁকে আক্রমণ করলে, দেবী সকল আক্রমণ প্রতিহত করলেন। এই সময় শুম্ভ দেবীকে আকাশে তুলে নিয়ে যুদ্ধ শুরু করেন। একসময় দেবী শুম্ভকে পৃথিবীতে নিক্ষেপ করে মাটিতে নেমে এলে, শুম্ভ মুষ্ঠিবদ্ধ হাতে দেবীকে আক্রমণ করে। কিন্তু দেবী শূলের আঘাতে শুম্ভকে হত্যা করেন।
সনাতন ধর্ম সম্পর্কে জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন-
আরো জানুনঃ
কেন প্রসাদভোজী হবেন? সমস্ত বৈদিক শাস্ত্র (বেদ,সংহিতা, মহাভারত, গীতা,ভাগবত,পুরাণ,উপনিষদ) থেকে প্রমান দেওয়া হলো...
চার যুগ-সত্য,ত্রেতা,দ্বাপর ও কলির সময় পরিমাণ ও বৈশিষ্ট্যসমূহঃ
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর কিছু অমৃত বাণী
মহাভারতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কিছু বাণী ও উপদেশ
মনুষ্য দেহের কথা আলোচনা
আপনি কি অনেক হতাশায় ভুগছেন? সকল সমস্যাগুলোর সমাধান খুজে পান!!!!!!!!!!
ভগবান বিষ্ণুর গাত্র বর্ণ নীল কেন?
এই জগতে প্রকৃত জ্ঞানী,কে এই জগতে প্রকৃত সুখী,আর কে-ই বা প্রকৃত দুঃখী ?
অনাচার কাকে বলে ও কয় প্রকার?
কলিযুগের মানুষদের ভগবানের নামে রুচি নেই কেন ?
ঘট কিসের প্রতীক?
সনাতন ধর্মের বৈদিক শাস্ত্রে জন্ম ও মৃত্যুযোগ অশৌচ কি?
মহাভারত পড়ার সময় না থাকলেও এর মূল সূত্রগুলি আমাদের জীবনে কার্যকর প্রমাণ করতে পারে-----------------------
মহাভারতের কিছু বাণী
শ্রীমদভগবদগীতায় উচ্চারিত ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সকল নামের অর্থ ও মাহাত্ম্য
প্রকৃত ভালোবাসার খোঁজে..........
রাধাকৃষ্ণের প্রেম-কাহিনীর প্রকৃত রহস্য
ভক্তি কি ?
মায়া কি? মায়া থেকে পরিত্রাণের উপায় কি?
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কেন মাথায় ময়ূরপালক/পুচ্ছ পরিধান করতেন?
রাজা পুরঞ্জনের কেন পরবর্তী জন্মে নারী হয়ে জন্ম হয়েছিল ?
আরো পড়ুন.....
0 মন্তব্যসমূহ