অম্বুবাচী (আম্ববর্তী) কি? কেন অম্বুবাচী পালন করা হয়?
অম্বুবাচী হিন্দুধর্মের বাৎসরিক উৎসব। লোকবিশ্বাস মতে আষাড় মাসে মৃগ শিরা নক্ষত্রের তিনটি পদ শেষ হলে পৃথিবী বা ধরিত্রী মা ঋতুময়ী হয়। এই সময়টিতে অম্বুবাচী পালন করা হয়।
আমাবতি কি?
হিন্দু শাস্ত্রে ধরিত্রীকে মা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। জননী মাতা, দেশ মাতা, ধরিত্রী মাতা।অম্বুবাচীর তিন দিন পর্যন্ত কোনো ধরনের মাংগলিক কার্য করা যায়না। চতুর্থ দিন থেকে মঙ্গলিক কাজে কোনো বাধা থাকেনা। অম্বুবাচীর সময় হাল ধরা, গৃহ প্রবেশ, বিবাহ ইত্যাদি শুভ কাজ করা নিষিদ্ধ থাকে ।
ঐতিহাসিক দিক থেকে দেখতে গেলে এই অম্বুবাচীর সঙ্গে কৃষিকাজের সম্পর্ক সম্পূর্ণ ভাবে জড়িত রয়েছে । গ্রীষ্মের প্রখর তাপ প্রবাহের পর শুষ্ক ধরিত্রী কে বর্ষার জলসিঞ্চন এর মাধ্যমে উর্বর করার জন্য কিছুদিন বিশ্রাম প্রদান করা হয়। মৃত্তিকা হয়ে ওঠে উর্বর । উর্বর মৃত্তিকাই প্রদান করতে পারে উৎকৃষ্ট মানের ফসলের। শুধু ঐতিহাসিক নয় তান্ত্রিক মতে ও এই ধারনাই মান্যতা পায়।
শস্য শ্যামল উর্বর পৃথিবীর জন্য সন্তানগণ ধরণী মায়ের নিকট এই তিনদিন প্রার্থনা করেন। যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তার বুক থেকে উৎপন্ন শস্য খাদ্য হিসাবের গ্রহণ করে দুধে ভাতে বেচে থাকতে পারে।
পৃথিবীর প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করার জন্য ১৯৭০ সাল থেকে ২২ এপ্রিল প্রতিবছর ১৯৩ টি দেশ World Earth Day পালন করে থাকে । কিন্তু এই বিশ্ব মাতৃকার প্রতি ,ধরণী মাতার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ও তাকে রক্ষার সংকল্প হিন্দু জাতি সেই সুপ্রাচীন কাল থেকেই করে আসছেন এই অম্বুবাচী পালনের মাধ্যম দিয়ে।
৭ থেকে ১১ আষাঢ় (নিরয়ণ পঞ্জিকা মতে) চার দিন গ্রাম-বাংলার মহিলারা এই অনুষ্ঠান পালন করেন। চাষ বাসের কাজ এই সময় বন্ধ থাকে। বলা হয় এই তিনদিন পৃথিবী সিক্ত হয় তাই ধরত্রীতে বুকে কোন কৃষি কাজ করা হয় না।
অম্বুবাচীর আগের দিন রান্না করা খাবার তারা তিন দিন ধরে খান। ঐ তিন দিন তারা কোন গরম খাবার খান না। এই তিন দিন কামরুপ কামাখ্যায় পূজা হয়। সমস্ত দেবী মন্দির বন্ধ থাকে।
ওড়িশায় এই পার্বণকে সরাসরি 'রজ উৎসব' বলে বর্ণনা করা হয়েছে। পঞ্চ ভূত এই দিয়ে প্রকৃতির প্রতিটি জিনিস তৈরি । পঞ্চভূত হল-মৃত্তিকা, জল ,অগ্নি , বায়ু , ,শূন্য ।মৃত্যুর পর প্রতিটি মানুষ প্রতিটি জীব এই পঞ্চভূতে লীন হয় ।পঞ্চভূতে গড়া এই পৃথিবীতে মাতৃজ্ঞানে সেবা করা আমাদের একান্ত কর্তব্য।
কারণ বসুধা মাথা কখনো নিজের ভালোর চিন্তায় নিমগ্ন থাকেন না। তিনি নিজেকে সর্বৈব নিজের সন্তানদের কল্যাণের জন্য উৎসর্গ করে চলেছেন । গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, যিনি সর্বভূতহিতেরতা , তিনি তার পরম বন্ধু অর্থাৎ যিনি নিজের স্বার্থ চিন্তা না করে বসুধার নেয় প্রতিটি জীবকুলের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করবেন তিনি পরমেশ্বরের প্রিয় পাত্র।
অম্বুবাচীর সময় হিন্দু ধর্মীয় লোকেরা শক্তি পূজার স্থানগুলোতে এই সময় অম্বুবাচী মেলার আয়োজন করে থাকে। তবে এদের মধ্যে সবেচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভারতের অসম রাজ্যের গুয়াহাটি শহরের কামাখ্যা দেবীর মন্দিরকে ঘিরে প্রতি বৎসর অম্বুবাচী মেলার আয়োজন করা হয়। অম্বুবাচী শুরুর প্রথম দিন থেকে কামাখ্যা দেবীর দ্বার বন্ধ রাখা হয় ফলে অম্বুবাচীর সময় দেবী দর্শন নিষিদ্ধ থাকে।
চতুর্থ দিন দেবীর স্নান ও পূজা সম্পূর্ণ হওয়ার পর কামাখ্যা মাতার দর্শন করার অনুমতি দেওয়া হয়।
🌺অম্বুবাচী 🌺🌺সময়সূচী,পালনের নিয়মসহ বিস্তারিত তথ্য🌺
🌺 কথিত আছে, 'কিসের বার, কিসের তিথি, আষাঢ়ের ৭ তারিখ অম্বুবাচী।' সেই অনুযায়ী ১৪২৯ বঙ্গাব্দের ৭ আষাঢ়, ইংরেজি ২২ জুন অম্বুবাচি। রাত ৮টা ১৯ মিনিটে অম্বুবাচী শুরু। আবার রবিবার ১১ আষাঢ় অর্থাৎ ইংরেজি ২৬ জুন সকাল ৮টা ৪৩ মিনিটে অম্বুবাচী সমাপ্ত।
🌺জ্যোতিষ শাস্ত্রে বলা হয়েছে, সূর্য যে বারের যে সময়ে মিথুন রাশিতে গমন করেন, তার পরবর্তী সেই বারের সেই কালে অম্বুবাচী হয়। অর্থাৎ, পৃথিবী এই সময়ে ঋতুমতী হন।
🌺অম্বুবাচীর তিন দিন পর্যন্ত কোনো ধরনের মাংগলিক কার্য করা যায়না। চতুর্থ দিন থেকে মঙ্গলিক কাজে কোনো বাধা থাকেনা। অম্বুবাচীর সময় হাল ধরা, গৃহ প্রবেশ, বিবাহ ইত্যাদি শুভ কাজ করা নিষিদ্ধ থাকে🌺৭ থেকে ১১ আষাঢ় (নিরয়ণ পঞ্জিকা মতে) চার দিন গ্রাম-বাংলার মহিলারা এই অনুষ্ঠান পালন করেন। চাষ বাসের কাজ এই সময় বন্ধ থাকে। এই অনুষ্ঠান উপলক্ষে পিঠা-পায়েস বানাবার রীতি আছে। এই অনুষ্ঠানে বিধবা মহিলারা তিন দিন ধরে ব্রত রাখে। অম্বুবাচীর আগের দিন রান্না করা খাবার তারা তিন দিন ধরে খান। ঐ তিন দিন তারা কোন গরম খাবার খান না। এই তিন দিন কামরুপ কামাখ্যায় পূজা হয়। সমস্ত দেবী মন্দির বন্ধ থাকে। কামরুপ কামাহ্মায় মন্দিরের গরভ গৃহ থেকে লাল রং এর তরল (ভক্ত রা বলে মা এর রজস্রাবের রক্ত) বের হয়।
অম্বুবাচীতে কি করণীয় ও কি করা উচিত নয় দেখুন
🌺১। অম্বুবাচীতে ভূমিকর্ষণ ও বৃক্ষরোপণ নিষেধ। কারণ এই সময় ধরণী ঋতুমতী হয়।
🌺২। এই সময়ে গৃহপ্রবেশ, বিবাহ ও অন্যান্য শুভ কাজ করা নিষিদ্ধ। এই সব কাজ করলে তা অশুভ হবে বলে মনে করা হয়।
🌺৩। এই সময়ে কোনও বিশেষ পূজা রাখবেন না। তবে কোনও বছর যদি এই সময় জগন্নাথদেবের রথযাত্রা পড়ে, তবে তা নির্দিষ্ট নিয়ম মেনেই হতে পারে। কেননা এই সময়ে নিত্যকর্ম হবে, কাম্য কর্ম হবে না। রথযাত্রা নিত্যকর্ম।
🌺৪। যাঁরা আদি শক্তির বিভিন্ন রূপ, যথা কালী, দুর্গা, জগদ্ধাত্রী, বিপত্তারিণী, শীতলা, চণ্ডীর মূর্তি বা পট পূজা করেন, তাঁরা মূর্তি বা পট লাল কাপড়ে ঢেকে রাখবেন।
🌺৫। দেবী পূজার সময় কোনও মন্ত্র পাঠ করবেন না, কেবল ধূপ-দীপ দেখিয়ে প্রণাম করলেই হবে।
🌺৬। অম্বুবাচীতে ভুলেও মূর্তি বা পট স্পর্শ করবেন না। অম্বুবাচীর নিবৃত্তির পর আচ্ছাদন খুলে আসন ধুয়ে দেবীকে স্নান করিয়ে পূর্বের মতো পূজা ও আম-দুধ নিবেদন করবেন।
🌺৭। তুলসি গাছের গোড়া এই সময় মাটি দিয়ে উঁচু করবেন। যাঁরা শাক্তমন্ত্রে দীক্ষিত, তাঁরা জপ করতে পারবেন। কারণ জপে কোনও দোষ নেই।
🌺৮। অম্বুবাচীতে গুরুপূজা চলবে। গুরু যদি নারী হন, অর্থাৎ গুরুমা হন, তা হলেও পূজা চলবে।
অম্বুবাচীর সময় যে কোনও সম্প্রদায়ের দীক্ষিত ব্যক্তিরা মেনে চলুন উল্লিখিত নিয়মগুলি। অত্যাশ্চর্য ফল মিলবে:
🌺১। অম্বুবাচীতে গুরু প্রদত্ত নিজ ইষ্টমন্ত্র যত বেশি সম্ভব জপ করুন।
🌺২। অম্বুবাচীতে সৌভাগ্যকুণ্ডের ধারে গণেশ বিগ্রহ দর্শন করুন ও ভক্তি ভরে পূজা করুন। সৌভাগ্যকুণ্ডের পশ্চিম পাড়ে বিধিপূর্বক স্নান ও তর্পণ করুন।
🌺৩। অম্বুবাচীতে বিধিপূর্বক অগ্নিস্থাপন করে নিজ ইষ্ট মন্ত্রে হোম করুন।
🌺৪। মধ্যরাতে কাঙ্ক্ষিত ফল লাভের জন্য মনে মনে প্রার্থনা জানান দেবী কামাক্ষ্যাকে। এতে মনস্কামনা পূরণ হয়।
সনাতন ধর্ম সম্পর্কে জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন-
আরো জানুনঃ
কেন প্রসাদভোজী হবেন? সমস্ত বৈদিক শাস্ত্র (বেদ,সংহিতা, মহাভারত, গীতা,ভাগবত,পুরাণ,উপনিষদ) থেকে প্রমান দেওয়া হলো...
চার যুগ-সত্য,ত্রেতা,দ্বাপর ও কলির সময় পরিমাণ ও বৈশিষ্ট্যসমূহঃ
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর কিছু অমৃত বাণী
মহাভারতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কিছু বাণী ও উপদেশ
মনুষ্য দেহের কথা আলোচনা
আপনি কি অনেক হতাশায় ভুগছেন? সকল সমস্যাগুলোর সমাধান খুজে পান!!!!!!!!!!
ভগবান বিষ্ণুর গাত্র বর্ণ নীল কেন?
এই জগতে প্রকৃত জ্ঞানী,কে এই জগতে প্রকৃত সুখী,আর কে-ই বা প্রকৃত দুঃখী ?
অনাচার কাকে বলে ও কয় প্রকার?
কলিযুগের মানুষদের ভগবানের নামে রুচি নেই কেন ?
ঘট কিসের প্রতীক?
সনাতন ধর্মের বৈদিক শাস্ত্রে জন্ম ও মৃত্যুযোগ অশৌচ কি?
মহাভারত পড়ার সময় না থাকলেও এর মূল সূত্রগুলি আমাদের জীবনে কার্যকর প্রমাণ করতে পারে-----------------------
মহাভারতের কিছু বাণী
শ্রীমদভগবদগীতায় উচ্চারিত ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সকল নামের অর্থ ও মাহাত্ম্য
প্রকৃত ভালোবাসার খোঁজে..........
রাধাকৃষ্ণের প্রেম-কাহিনীর প্রকৃত রহস্য
ভক্তি কি ?
মায়া কি? মায়া থেকে পরিত্রাণের উপায় কি?
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কেন মাথায় ময়ূরপালক/পুচ্ছ পরিধান করতেন?
রাজা পুরঞ্জনের কেন পরবর্তী জন্মে নারী হয়ে জন্ম হয়েছিল ?
আরো পড়ুন.....
0 মন্তব্যসমূহ