আভিধানিক অর্থে মায়া হলো মমতা, মোহ, শঠতা, চাতুরী, ইন্দ্রজাল, কুহক প্রভৃতি এবং অবিদ্যা, মিথ্যাবুদ্ধিত্ব হেতু অজ্ঞানতা। ইংরেজিতে মায়াকে প্রতিশব্দে বুঝানো হয়েছে Deception, Delusion, Deception বা মায়া, মোহ, বিভ্রান্তি। অভিধানের বাইরে সনাতনী ধর্মগ্রন্থাদি পর্যালোচনায় মায়াকে একরূপ শক্তি বলে চিহ্নিত করা হয়েছে —
সনাতনী 'মায়া' শক্তিই বিদ্যারূপে সংসারবন্ধন থেকে মুক্তি দেন, আবার অবিদ্যারূপে সংসারবন্ধনে বদ্ধ করেন।
মায়া, আবরিকাশক্তি কিন্তু অখিলেশ্বরী। দেহ—অভিমানী তাবত্ জীবগণকে জগতে তিনি মুগ্ধ করে রাখেন। এই যে অপরিমেয় শক্তির ধারক এই মায়া, তাও সনাতন ধর্মে ভগবত্ শক্তিরই তেজ হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে। ভগবান শ্রীমদ্ভগবদগীতাতেও তারই শক্তি 'মায়া'- কে এভাবে দুরতিক্রম্য বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন,
অর্থাত্, আমার ত্রিগুণময়ী মায়া নিতান্ত দুরতিক্রম্য। যেসব ব্যক্তি কেবল আমারই শরণাগত হয়ে ভজনা করে তারাই কেবল আমার এই দুস্তর মায়া থেকে উত্তীর্ণ হয়ে থাকে।
শ্রীমদ্ভগবদগীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ 'মায়া' শক্তির দুটো বৈশিষ্ট্য যোগ করে ভক্তকে সংশয় থেকে মুক্তি দিয়েছেন। 'দৈবী' বা অলৌকিক, আর 'গুণময়ী' বা ত্রিগুণময়ী (সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ)।
এই মায়াকে 'মহামায়া' বা 'যোগমায়া'র সঙ্গে জড়িয়ে ফেলার প্রবণতা থেকেও আমাদের তিনি মুক্ত করেছেন। 'অবিদ্যাময়' জগতে মায়া, 'বিদ্যাময়' জগতে মহামায়া আর 'ভগবানের লীলাময় চিত্ শক্তির প্রকাশে' যোগমায়া। 'অবিদ্যারূপে মায়া সবাইকে বেঁধে রেখেছেন, আবার 'বিদ্যা'রূপে কাউকে মুক্তি দিচ্ছেন। উপনিষদেও 'মায়াস্তু প্রকৃতিং বিদ্যা' বা 'অনাদি মায়য়া সুপ্তো যদা জীব প্রবুদ্ধতে' ইত্যাদি বাক্যে মায়ার বন্ধনশক্তিকেই জগত্সৃষ্টি বা জীবমোহন কালে মায়ার প্রভাব বলে বর্ণিত রয়েছে।
তবে মহামায়ার পরিচয় কী? একই প্রশ্ন শ্রীশ্রীচণ্ডতে সুরথ রাজার মুখে,
অর্থাত্ সেই জগন্মূর্তি মহামায়া নিত্যা, এই জগত্ ওই দেবী মহামায়ারই মূর্তিস্বরূপ, জন্মমৃত্যুরহিত। দেবগণের কার্যসিদ্ধির জন্য তিনি আবির্ভূত হন। এইটি নূতন সংবাদ। 'মায়া' স্বাভাবিকী, কিন্তু মহামায়া 'আবশ্যিকী'। 'বিমুখমোহিনী' মায়া আপামর সব জীবকে মুগ্ধ করে রেখেছেন। কিন্তু 'উন্মুখমোহিনী' মহামায়া দেবগণের কার্যসিদ্ধির জন্য 'আবশ্যিকভাবে প্রকাশিতা শক্তি। এই 'বিমুখ' আর 'উন্মুখ' শব্দ দুটি গভীর ব্যঞ্জনাপূর্ণ।
এই মহামায়াই বিদ্যারূপে জীবকে সংসারবন্ধন থেকে মুক্তি দেন। কিন্তু গুণময়ী মায়া অবিদ্যারূপে জীবকে সংসারে বেঁধেও রাখেন।
আরও একটু গভীরে অনুসন্ধান করলে মায়া আর মহামায়াতে গুণভেদ লক্ষ্য করা যায়—রজঃ আর তমঃ গুণের আধিক্যে 'মায়া' আর 'সত্ত্বগুণের আধিক্যে 'মহামায়া' শক্তির ক্রিয়া নিষ্পন্ন হয়'। জীব ভগবানের অংশ হওয়া সত্ত্বেও ভগবিবমুখীনতার জন্য মায়ার আবরণে 'আত্মা'কে জানতে পারে না। 'যয়া সংমোহিতো জীব আত্মানং ত্রিগুণাত্মকং' — ইত্যাদি বাক্যে শ্রুতিশাস্ত্র বিজ্ঞাপিত করছে মায়ার সম্মোহনী শক্তির কথা। বেদান্তশাস্ত্রেও ঈশ্বরোপাধি বা জীবোপাধিভেদে মায়ার দু'রকম প্রভেদ দেখা যায়।
অর্থাত্ বিশুদ্ধ সত্ত্বপ্রধানা এবং মলিন সত্ত্বপ্রধানাভেদে মায়া ও অবিদ্যা এই দুই নামে মায়ার প্রসিদ্ধি দেখা যায়। তারমধ্যে মায়া—প্রতিবিম্বিত চৈতন্য, মায়াকে স্ববশে রেখে জগত্ সৃষ্টি কাজ করে থাকেন আর জীবগণ অবিদ্যার বশবর্তী হয়ে বিবিধ সংসারদুঃখ ভোগ করে।এবার যোগমায়ার কথা। এ মায়া ভগবানের নিজ লীলা প্রকাশে সহায়িকাশক্তি।
ভাগবদ—বক্তা শ্রীশুকদেব বলছেন, 'শ্রীভগবান মল্লিকাদি বিবিধ শারদীয় ফুল প্রকাশে পরিশোভিত উত্ফুল্ল রাত্রি দেখে নিজ যোগমায়াশক্তি প্রকটিত করে রমণ করতে মানস করলেন।' শ্রীকৃষ্ণের রাসলীলা বর্ণনার প্রথম সূত্রপাত।
প্রথমে জীব, তারপর সত্ত্বগুণাশ্রয়ী দেবগণ, শেষে স্বয়ং ভগবানের কথা। একই পরম্পরায় মায়া, মহামায়া ও যোগমায়ার আরোহী তত্ত্ব। সনাতন ধর্মতত্ত্ব যেন নিজ ভাণ্ডারের সব গোপন রহস্য বিশ্বনিচয়ে জিজ্ঞাসু, অর্থার্থী ও জ্ঞানী মানুষের জন্য খুলে ধরেছে। রিচার্ড ডকিন্স যখন ঈশ্বরকে বলছেন Hallucination বা মায়া, যখন তিনি অন্ধকারে হাতড়িয়ে ভগবানের উদ্দেশ্য না পেয়ে বেগতিক দেখে ভগবদ্ভক্তের মায়া থেকে উত্তরণকে বলছেন — The Worship of holes তখন সনাতন শাস্ত্র তাকে ডেকে বলছেন, ওটা holes নয়। ওটা অজ্ঞানীর অন্ধকার। ক্ষিপ্ত, মূঢ়, বিক্ষিপ্ত চিত্তভূমিতে মায়ার আবরণে যাকে holes বলে মনে হয় — তাকেই একাগ্র বা নিরুদ্ধ চিত্তভূমিতে ভগবানের চিত্শক্তির লীলা বলে ধরা পড়ে। এই যোগমায়া শক্তির আভাস পেলে ওই holes বা শূন্যতা আর থাকে না। তখন হয় পরিপূর্ণ ব্রহ্মপদ! যোগমায়ায় শক্তি সমস্ত জ্ঞানের পরিপূর্ণতা। সেখানে মায়া বা অবিদ্যা, বিদ্যা বা মহামায়ার আপেক্ষিকতা নেই। যেখানে আপেক্ষিকতা দ্বৈততা, সেখানেই gaps। কোন বৈষয়িক উন্নতিতে holes পূরণ সম্ভব হবার নয়। তিনি বলেছেন, প্রায় একই নিঃশ্বাসে, holes recoil as science advances, and God is undermined with ultimately getting with lots but idle time and no where to stow away. বিজ্ঞানী ভাবছেন, আবিষ্কারের ফলে ওই holes বা অজ্ঞতা কমে যায়, পরিণামে 'ভগবানের' প্রয়োজন মিটে যায়, তার পালাবারও স্থান থাকে না। কী ভয়ংকর তর্কজাল। যা নতুন নতুন আবিষ্কার তার সবই তো বিশ্বব্রহ্মাণ্ডেরই অঙ্গীভূত। বিজ্ঞান যত এগোবে তত মায়া বা holes দূর হয়ে ভগবানই স্পষ্ট হয়ে উঠবেন। রাত যত এগোবে, দিন ততই স্পষ্ট হয়ে উঠবে। আর, রাতেও তো সূর্যের মৃত্যু হয় না। সূর্যকে তাই উপেক্ষা করা বিজ্ঞানীর বিজ্ঞানসুলভ মনোভাব নয়।
যাক সে কথা। ভগবানের চিন্ময়ী শক্তি এই যোগমায়া। তিনিই দুর্গা, একা, অনংশা প্রভৃতি নামে নানা শাস্ত্রে প্রসিদ্ধা। সর্ব শক্তিবরীয়সী, শ্রীভগবানের লীলাতত্ত্বজ্ঞা এবং মহাবিষ্ণুস্বরূপা। তার তত্ত্ব জানতে পারলে পরাত্পর দেবদেব শ্রীভগবানের শ্রীপাদপদ্মপ্রাপ্তি সুলভ হয়। তিনি প্রেমসর্বস্বভাবা ও গোকুলাধিষ্ঠাত্রী। প্রপঞ্চের অধিকারিনী মহামায়া তারই আবরণী শক্তি।
ব্রহ্মার বরে মহিষাসুরের দৌরাত্ম্যে বিশেষ করে দেবতাদের কাছে অপরাজেয় হয়ে উঠেছিল। ব্রহ্মার বর অনুযায়ী, শুধুমাত্র কোনও নারীশক্তির কাছেই তাঁর পরাজয় নিশ্চিত ছিল। ব্রহ্মার কাছ থেকে এমন বর পেয়ে মহিষাসুরের তাণ্ডব ক্রমশ বাড়তে থাকে। এমনকি বিশ্বব্রহ্মান্ডের অধীশ্বর হতে চেয়ে স্বর্গধাম থেকে সকল দেবতাদের বিতারিত করেছিলেন তিনি। পাশাপাশি অমর হওয়ার ইচ্ছেও তাঁকে আরও শক্তিশালী তৈরি করে তুলেছিল। মহিষাসুরকে বধ করতে তখন এক নারীশক্তির জন্ম দেন ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং মহেশ্বর। ত্রিশক্তির শক্তি দিয়ে তৈরি হয় মহামায়ারূপী মহিষাসুরমর্দিনী দেবী দুর্গা। তাঁর দশ হাতে দশ অস্ত্র সাজিয়ে দেন দেবতারা। অস্ত্র ও শক্তি দিয়ে যুদ্ধ করে মহিষাসুরকে বধ করেন তিনি। অশুভ শক্তির বিনাস ঘটিয়েছিলেন দেবী দূর্গা। তাই এই বিশষ দিনটিকে শুভ-শক্তির প্রতীক হিসেবে মহালয়া হিসেবে পালিত হয়।
পিতৃপক্ষের অবসান ঘটিয়ে মাতৃপক্ষের সূচনা হয় এই মহালয়ার দিন। শ্রী শ্রী চণ্ডী গ্রন্থের প্রথম অধ্যায়ের কাহিনি অনুসারে, প্রলয়কালে পৃথিবী এক বিরাট কারণ-সমুদ্রে পরিণত হলে শ্রীবিষ্ণু সেই সমুদ্রের উপর অনন্তনাগকে শয্যা করে যোগনিদ্রায় মগ্ন হলেন। এই সময় বিষ্ণুর কর্ণমল থেকে মধু ও কৈটভ নামে দুই দৈত্যে নির্গত হয়ে বিষ্ণুর নাভিপদ্মে স্থিত ব্রক্ষ্মাকে বধ করতে উদ্যত হল। ভীত হয়ে ব্রম্মা বিষ্ণুকে জাগরিত করবার জন্য তাঁর নয়নাশ্রিতা যোগনিদ্রাকে স্তব করতে লাগলেন। দেবীর রূপ ধরে শ্রীবিষ্ণুকে জাগরিত করলে তিনি পাঁচ হাজার বছর ধরে মধু ও কৈটভের সঙ্গে মহাযুদ্ধে রত হন।
পিতৃপক্ষ আর দেবীপক্ষের সন্ধীক্ষণ হচ্ছে মহালয়া। ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষে শুরু হয়ে পরর্বতী অমাবস্যা র্পযন্ত সময়কে পিতৃপক্ষ বলে। পুরাণ মতে ব্রহ্মার নির্দেশে পিতৃপুরুষরা এই ১৫ দিন মনুষ্যলোকের কাছাকাছি চলে আসেন। তাই এই সময় তাঁদের উদ্দেশ্যে কিছু র্অপণ করা হলে তা সহজেই তাঁদের কাছে পৌছায়। তাই গোটা পক্ষকাল ধরে পিতৃপুরুষদেব স্মরণ ও মননের মাধ্যমে তর্পন করা হয়। যার চূড়ান্ত প্রকাশ বা মহালগ্ন হল এই মহালয়া। অনেকেই এই দিনটিকে দেবীপক্ষের সূচনা বলে থাকেন। যদিও এটি একটি জনপ্রিয় ভ্রান্ত ধারণা। মহালয়া পিতৃপক্ষের শেষ দিন।পরের দিন শুক্লা প্রতিপদে দেবীপক্ষের সূচনা হয়। সেই দিন থেকে কোজাগরী র্পূণমিা পযন্ত ১৫ দিনই হল দেবীপক্ষ
এ সময় সূর্যের দক্ষিণায়ন চলে। অবশ্য অনেক জায়গায় বিশেষ করে অস্থায়ী মণ্ডপগুলোতে ষষ্ঠীর দিনই বেল গাছের ডাল পুঁতে ঘট স্থাপন করা হয়।
নবপত্রিকার নয়টি উদ্ভিদ আসলে দেবী দুর্গার নয়টি বিশেষ রূপের প্রতীকরূপে কল্পিত হয়ঃ
কদলী বা রম্ভা (কলা গাছ): কদলি গাছ এর অধিষ্টাত্রী দেবী ব্রহ্মাণী;
কচু (সাধারন): কচু গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী কালিকা;
হরিদ্রা (হলুদ গাছ): হরিদ্রা গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী উমা;
জয়ন্তী: জয়ন্তী গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী কার্তিকী;
বিল্ব (বেল গাছ): বিল্ব গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী শিবা;
দাড়িম্ব (ডালিম/বেদানা গাছ): দাড়িম্ব গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী রক্তদন্তিকা;
অশোক: অশোক গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী শোকরহিতা;
মানকচু: মানকচু গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী চামুণ্ডা;
ধান: ধান গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী লক্ষ্মী।
এই নয় দেবী একত্রে "নবপত্রিকাবাসিনী নবদুর্গা" নামে নবপত্রিকাবাসিন্যৈ নবদুর্গায়ৈ নমঃ মন্ত্রে পূজিতা হন।[১]
"রম্ভাধিষ্ঠাত্রী ব্রহ্মাণী, কচ্বাধিষ্ঠাত্রী কালিকা, হরিদ্রাধিষ্ঠাত্রী উমা, জয়ন্ত্যাধিষ্ঠাত্রী কার্তিকী, বিল্বাধিষ্ঠাত্রী শিবা,
দাড়িম্বাধিষ্ঠাত্রী রক্তদন্তিকা, অশোকাধিষ্ঠাত্রী শোকরহিতা, মানাধিষ্ঠাত্রী চামুণ্ডা ও ধান্যাধিষ্ঠাত্রী লক্ষ্মী
সপ্তমীর দিন নবপত্রিকা বা কলাবৌ স্নান করিয়ে মণ্ডপে তোলা হয় এবং গণেশের মূর্তির পাশে বসিয়ে পূজা করার মাধ্যমে মূল দুর্গাপূজা শুরু হয়।
সপ্তমীর দিন দেবীর মঙ্গলঘট বেলতলা থেকে মূল পূজামণ্ডপে আনা হয়। এদিনই দেবীর প্রাণ প্রতিষ্ঠা ও চক্ষুদানের মধ্য দিয়ে দেবীকে প্রতিমায় পূজা শুরু হয়। এরপর অষ্টমীর দিন দেবীর উদ্দেশ্যে যজ্ঞাহুতি দেয়া হয়। চালকুমড়ো বা আখ বলিদান হয়।
এদিন আরেকটি বিশেষ পূজা হয়, তা হলো সন্ধিপূজা। অষ্টমী তিথির শেষ ২৪ মিনিট ও নবমী তিথির শুরুর ২৪ মিনিটের মধ্যে সন্ধিপূজা শেষ করতে হয়। এই পূজায় মূলত দেবীকে কালীরূপে পূজা করা হয় । দেবীর চরণে ১০৮টি পদ্মফুল এবং ১০৮টি প্রদীপ নিবেদনের রীতি আছে।
দুর্গাপূজার সবচেয়ে মাহাত্ম্যপূর্ণ তিথি এই মহা অষ্টমী। নবমীর দিন দেবীর বিহিত পূজা, যজ্ঞ, চণ্ডী পাঠ ইত্যাদি হয়। বিজয়াদশমীর দিন সকালে দশমীবিহিত পূজা হয়। এই দিন একবারই পূজা ও অনুকল্প ভোগ দেওয়া হয় এবং কোনো অন্নভোগ দেওয়া হয় না, কারণ মা সকালেই পূজা শেষে চলে যাচ্ছেন। পুরোহিত মন্ত্র পড়েন, ঘট ও প্রতিমা নাড়া দিয়ে, ঘটের চারপাশে সুতার বন্ধনী কেটে দেবীকে মুক্ত করেন। জলে রাখা দর্পণে দেবীর মুখ ভেসে ওঠে। এভাবে দেবীর প্রতিকী বিসর্জন হয়ে যায়।
তারপর কিছু স্ত্রী-আচার ও লোকাচার আছে। যেমন, সিঁদুর খেলা দেবীকে বরণ করা, দেবী প্রতিমার মুখে মিষ্টি দেওয়া, কানে কানে 'আসছে বছর আবার এসো' বলা ইত্যাদি। সর্বদা রমণীরা নিজে সিঁথির সিঁদুর দেবীর পায়ে ছুঁইয়ে স্বামীর দীর্ঘায়ু কামনা করেন।
দুর্গাপুজা ২০২১ এর মহালয়ার সময়সূচী
প্রতি বছরের মত ২০২১ সালের (বাংলা ১৪২৮) দুর্গাপূজা শুরু হবে মহালয়ার মধ্য দিয়ে এবং শেষ হবে বিজয়া দশমীর মাধ্যমে। যারা মহালয়াতে পিতৃপিণ্ড দান করবেন তাদের জন্য মহালয়ার সঠিক দিন-তারিখ ও সময় জানা অত্যন্ত জরুরী। মহালয়ার অমবস্যা শুরু হবে বাংলা ১৮ই আশ্বিন, ১৪২৮ (ইং ৫ অক্টোবর, ২০২১), মঙ্গলবার, সন্ধ্যা ৬ টা ৩৪ মিনিট থেকে [06:34 PM] বাংলা ১৯শে আশ্বিন, ১৪২৮ (ইং ৬ অক্টোবর, ২০২১), বুধবার, সন্ধ্যা ৫ টা ১১ মিনিট পর্যন্ত [05:11 PM]। এবং সঙ্গত কারণেই ১৯শে আশ্বিন, ১৪২৮ (ইং ৬ অক্টোবর, ২০২১), বুধবার অনুষ্ঠিত হবে মহালয়ার সকল আনুষ্ঠানিকতা। এদিন সকাল ৮ঃ৩০ মিনিটের মধ্যে শ্রীশ্রী শারদীয়া দুর্গাপূজার অমবস্যাবিহিত পূজা প্রশস্তা।
[বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ মহালয়া অংশে উল্লেখিত সকল সময় ভারতীয় প্রমাণ সময় অনুযায়ী, বাংলাদেশ সময় নির্ণয়ের ক্ষেত্রে প্রদত্ব সময়ের সাথে অতিরিক্ত ৩০ মিনিট যোগ করতে হবে।]
২০২১ সালে (বাংলা ১৪২৮) কলকাতায় (পশ্চিমবঙ্গে)
শ্রী শ্রী শারদীয়া দুর্গাপূজার সময় নির্ঘণ্টঃ
(ভারতীয় প্রমাণ সময় অনুযায়ী)
দুর্গাপূজা ২০২১ (বাংলা ১৪২৮) পঞ্চমী ও ষষ্ঠীঃ
বাংলা ২৪শে আশ্বিন, ১৪২৮, ইংরেজী ১১ই অক্টোবর, ২০২১, সোমবার সকাল ৬টা ২৪ মিনিট পর্যন্ত মহাপঞ্চমী। এদিন সূর্যোদয় ৫ টা ৩৫ মিনিটে, সূর্যাস্ত ৫ টা ১৩ মিনিটে এবং পূর্বাহ্ন ৯ টা ২৮ মিনিট পর্যন্ত। একইদিন সকাল ৬টা ২৪ মিনিট থেকে শেষরাত্রি ৪টা ৪ মিনিট পর্যন্ত দুর্গাষষ্ঠী। দিবা ৮ টা ৩০ মিনিট গতে ও পূর্বাহ্নের মধ্যে শ্রী শারদীয়া দুর্গাদেবীর ষষ্ঠ্যাদিকল্পারম্ভ ও ষষ্ঠীবিহিত পূজা প্রশস্তা । সায়ংকালে শ্রী শ্রী দুর্গাদেবীর বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস।
২০২১ সালের শ্রী শ্রী দুর্গাপূজার মহা সপ্তমীঃ
বাংলা ২৫শে আশ্বিন, ১৪২৮, ইংরেজী ১২ই অক্টোবর, ২০২১, মঙ্গলবার রাত্রি ১টা ৪৮ মিনিট পর্যন্ত মহাসপ্তমী। এদিন সূর্যোদয় ৫ টা ৩৬ মিনিটে, সূর্যাস্ত ৫ টা ১১ মিনিটে এবং পূর্বাহ্ন ৯ টা ২৮ মিনিট পর্যন্ত। সকাল ৮ টা ৩০ মিনিট গতে ও পূর্বাহ্নের মধ্যে শ্রী শ্রী শারদীয়া দুর্গাদেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ, স্থাপন, সপ্তম্যাদিকল্পারম্ভ ও সপ্তমীবিহিত পূজা প্রশস্তা। দেবীর ঘোটকে আগমন। ফল – ছত্রভঙ্গ।
শ্রী শ্রী দুর্গাপূজার মহা অষ্টমীঃ
বাংলা ২৬শে আশ্বিন, ১৪২৮, ইংরেজী ১৩ই অক্টোবর, ২০২১, বুধবার রাত্রি ১১টা ৪৯ মিনিট পর্যন্ত মহাষ্টমী। এদিন সূর্যোদয় পাঁচটা বেজে ৩০ মিনিট, সূর্যাস্ত পাঁচটা বেজে ১১ মিনিট, এবং পূর্বাহ্ন ৯ টা ২৮ মিনিট পর্যন্ত। সকাল আটটা বেজে ৩০ মিনিটের মধ্যে শ্রী শ্রী শারদীয়া দুর্গাদেবীর মহাষ্টম্যাদিকল্পারম্ভ ও কেবল মহাষ্টমীকল্পারম্ভ এবং মহাষ্টমীবিহিত পূজা প্রশস্তা। এদিন পূর্বাহ্নের মধ্যেই বীরাষ্টমী ও মহাষ্টমীর ব্রত উপবাস। রাত্রি ১১ঃ০০ মিনিট গতে এবং ১১ঃ৪৮ এর মধ্যে শ্রীশ্রীদুর্গাদেবীর অর্ধরাত্রবিহিত পূজা। রাত্রি ১১ঃ২৫ গতে এবং ১২ঃ১৩ এর মধ্যে সন্ধিপূজা। রাত্রি ১১ঃ২৫ গতে সন্ধিপূজা আরম্ভ এবং ১১ঃ৪৯ গতে বলিদান। রাত্রি ১২ঃ১৩ মধ্যে সন্ধিপূজা সমাপন।
২০২১ সালের শ্রী শ্রী দুর্গাপূজার মহা নবমীঃ
বাংলা ২৭ শে আশ্বিন ১৪২৮, ইংরেজী ১৪ই অক্টোবর ২০২১, বৃহস্পতিবার রাত্রি ৯ টা ৫২ মিনিট পর্যন্ত মহানবমী । এদিন সূর্যোদয় ৫ঃ৩৭, সূর্যাস্ত ৫ঃ১১, এবং পূর্বাহ্ন ৯ টা ২৮ মিনিট পর্যন্ত । পূর্বাহ্নের মধ্যেই শ্রী শ্রী শারদীয়া দুর্গাদেবীর কেবল মহানবমীকল্পারম্ভ ও মহানবমীবিহিত পূজা প্রশস্তা এবং দেবীর নবরাত্রিক ব্রত সমাপন। এদিন পূর্বাহ্নের মধ্যেই বীরাষ্টমী ও মহাষ্টমী ব্রতের পারন।
শ্রী শ্রী দুর্গাপূজা ২০২১ এর বিজয়াদশমীঃ
বাংলা ২৮শে আশ্বিন ১৪২৮, ইংরেজী ১৫ই অক্টোবর ২০২১, শুক্রবার রাত্রি ৮ঃ২১ পর্যন্ত বিজয়া দশমী। এদিন সূর্যোদয় ৫ঃ৩৭, সূর্যাস্ত ৫ঃ২৮ এবং পূর্বাহ্ন ৯ টা ২৮ মিনিট পর্যন্ত । সকাল ৮ টা ৩০ মিনিটের মধ্যে শ্রী শ্রী শারদীয়া দুর্গাদেবীর দশমী বিহিত পূজা সমাপনান্তে বিসর্জন প্রশস্ততা ।দেবীর দোলায় গমন। ফল – মড়ক।
২০২১ সালে (বাংলা ১৪২৮) ঢাকায় (বাংলাদেশে)
শ্রী শ্রী দুর্গাপূজার সময় নির্ঘণ্টঃ
(বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী)
দুর্গাপূজা ২০২১ (বাংলা ১৪২৮) পঞ্চমী ও ষষ্ঠীঃ
বাংলা ২৪শে আশ্বিন, ১৪২৮, ইংরেজী ১১ই অক্টোবর, ২০২১, সোমবার সকাল ৬টা ৫৪ মিনিট পর্যন্ত মহাপঞ্চমী। এদিন সূর্যোদয় ৫ টা ৫৮ মিনিটে, সূর্যাস্ত ৫ টা ৩৩ মিনিটে এবং পূর্বাহ্ন ৯ টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত। একইদিন সকাল ৬টা ৫৪ মিনিট থেকে শেষরাত্রি ৪টা ৩৪ মিনিট পর্যন্ত দুর্গাষষ্ঠী। দিবা ৮ টা ৫৩ মিনিট গতে ও পূর্বাহ্নের মধ্যে শ্রী শারদীয়া দুর্গাদেবীর ষষ্ঠ্যাদিকল্পারম্ভ ও ষষ্ঠীবিহিত পূজা প্রশস্তা । সায়ংকালে শ্রী শ্রী দুর্গাদেবীর বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস।
২০২১ সালের শ্রী শ্রী দুর্গাপূজার মহা সপ্তমীঃ
বাংলা ২৫শে আশ্বিন, ১৪২৮, ইংরেজী ১২ই অক্টোবর, ২০২১, মঙ্গলবার রাত্রি ২টা ১৮ মিনিট পর্যন্ত মহাসপ্তমী। এদিন সূর্যোদয় ৫ টা ৫৮ মিনিটে, সূর্যাস্ত ৫ টা ৩২ মিনিটে এবং পূর্বাহ্ন ৯ টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত। সকাল ৮ টা ৫৩ মিনিট গতে ও পূর্বাহ্নের মধ্যে শ্রী শ্রী শারদীয়া দুর্গাদেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ, স্থাপন, সপ্তম্যাদিকল্পারম্ভ ও সপ্তমীবিহিত পূজা প্রশস্তা। দেবীর ঘোটকে আগমন। ফল – ছত্রভঙ্গ।
শ্রী শ্রী দুর্গাপূজার মহা অষ্টমীঃ
বাংলা ২৬শে আশ্বিন, ১৪২৮, ইংরেজী ১৩ই অক্টোবর, ২০২১, বুধবার রাত্রি ১২টা ১৯ মিনিট পর্যন্ত মহাষ্টমী। এদিন সূর্যোদয় ৫টা বেজে ৫৯ মিনিট, সূর্যাস্ত ৫টা বেজে ৩১ মিনিট, এবং পূর্বাহ্ন ৯ টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত। সকাল আটটা বেজে ৫৩ মিনিটের মধ্যে এবং পূর্বাহ্নের মধ্যে শ্রী শ্রী শারদীয়া দুর্গাদেবীর মহাষ্টম্যাদিকল্পারম্ভ ও কেবল মহাষ্টমীকল্পারম্ভ এবং মহাষ্টমীবিহিত পূজা প্রশস্তা। এদিন পূর্বাহ্নের মধ্যেই বীরাষ্টমী ও মহাষ্টমীর ব্রত উপবাস। রাত্রি ১১ঃ২৩ মিনিট গতে এবং ১২ঃ১১ এর মধ্যে শ্রীশ্রীদুর্গাদেবীর অর্ধরাত্রবিহিত পূজা। রাত্রি ১১ঃ৫৫ গতে এবং ১২ঃ৪৩ এর মধ্যে সন্ধিপূজা। রাত্রি ১১ঃ৫৫ গতে সন্ধিপূজা আরম্ভ এবং ১২ঃ১৯ গতে বলিদান। রাত্রি ১২ঃ৪৩ মধ্যে সন্ধিপূজা সমাপন।
২০২১ সালের শ্রী শ্রী দুর্গাপূজার মহা নবমীঃ
বাংলা ২৭ শে আশ্বিন ১৪২৮, ইংরেজী ১৪ই অক্টোবর ২০২১, বৃহস্পতিবার রাত্রি ৯ টা ৫২ মিনিট পর্যন্ত মহানবমী । এদিন সূর্যোদয় ৫ঃ৩৭, সূর্যাস্ত ৫ঃ১১, এবং পূর্বাহ্ন ৯ টা ২৮ মিনিট পর্যন্ত । পূর্বাহ্নের মধ্যেই শ্রী শ্রী শারদীয়া দুর্গাদেবীর কেবল মহানবমীকল্পারম্ভ ও মহানবমীবিহিত পূজা প্রশস্তা এবং দেবীর নবরাত্রিক ব্রত সমাপন। এদিন পূর্বাহ্নের মধ্যেই বীরাষ্টমী ও মহাষ্টমী ব্রতের পারন।
শ্রী শ্রী দুর্গাপূজা ২০২১ এর বিজয়াদশমীঃ
বাংলা ২৮শে আশ্বিন ১৪২৮, ইংরেজী ১৫ই অক্টোবর ২০২১, শুক্রবার রাত্রি ৮ঃ৫১ পর্যন্ত বিজয়া দশমী। এদিন সূর্যোদয় ৬ঃ০০, সূর্যাস্ত ৫ঃ৫১ এবং পূর্বাহ্ন ৯ টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত । সকাল ৮ টা ৫৪ মিনিটের মধ্যে শ্রী শ্রী শারদীয়া দুর্গাদেবীর দশমী বিহিত পূজা সমাপনান্তে বিসর্জন প্রশস্ততা ।দেবীর দোলায় গমন। ফল – মড়ক।
দুর্গাপূজা ২০২১ সকলেরই খুবই ভালো কাটুক, আনন্দে কাটুক। সনাতন জ্ঞান ভান্ডারের পক্ষ থেকে দুর্গাপূজা ২০২১ উপলক্ষে সকলকে জানাই অনেকে শুভেচ্ছা ও প্রীতি।
সনাতন ধর্ম সম্পর্কে জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন-
আরো জানুনঃ
কেন প্রসাদভোজী হবেন? সমস্ত বৈদিক শাস্ত্র (বেদ,সংহিতা, মহাভারত, গীতা,ভাগবত,পুরাণ,উপনিষদ) থেকে প্রমান দেওয়া হলো...
চার যুগ-সত্য,ত্রেতা,দ্বাপর ও কলির সময় পরিমাণ ও বৈশিষ্ট্যসমূহঃ
0 মন্তব্যসমূহ