প্রকৃত ভালোবাসার খোঁজে.....In search of true love .....

 

প্রকৃত ভালোবাসার খোঁজে.....

 
প্রকৃত ভালোবাসার খোঁজে.......... 
.                                                               সময় নিয়ে পড়ার অনুরোধ রইল।
সাধারণত সবাই মনে করে যে, ভালোবাসা এমনিতেই হয়ে যায়, তাই এই বিষয়ে নতুন করে শেখার কোনো কিছুই নেই, আর কারও সেটা জানাও প্রয়োজন নেই। কিন্তু, প্রকৃতপক্ষে ভালোবাসা কি, সেটা শেখার চেষ্টা করব। পৃথিবী নামক গ্রহে এই ভালোবাসা বিষয়টি সর্বাপেক্ষা অধিক আলোচিত, অধিক প্রকাশিত এবং গণমাধ্যমগুলোতে অধিক সম্প্রচারিত অথচ সবচেয়ে কম বোধগম্য একটি বিষয়! কেউ কি গণনা করতে পারেন?
মানব সভ্যতার ইতিহাসে ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে এ পর্যন্ত কতগুলো বই লেখা হয়েছে, ওয়েবসাইট রয়েছে, গান লেখা হয়েছে কত চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে তা কেউই জানে না!
কিন্তু, আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি যে, 'ভালোবাসা' নামক বিষয়টি সবার কাছে এখনো গভীর অস্পষ্ট এবং রহস্যময় একটি বিষয়। তাই আমাদের প্রত্যেকের জীবনে "ভালোবাসা" নামক অধ্যায়টি প্রভাব বিস্তার করার পূর্বেই, প্রকৃতপক্ষে ভালোবাসা কি? এ সম্বন্ধে জেনে নেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আমরা কোনো একটি নির্দিষ্ট ব্যক্তি, বস্তু বা বিষয়কে ভালোবাসি এর প্রতিদানস্বরূপ সমপরিমাণ ভালোবাসা সেই ব্যক্তি বা বস্তু থেকে আশাও করি। আর এই প্রবৃত্তিটি আমাদের শৈশব থেকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত প্রকৃতিগত ও পরিস্থিতি সাপেক্ষে ক্রমেই বাড়তে থাকে। আমরা দেখতে পাই, শৈশবে একটি শিশু সাধারণত তার মাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে। যখন সে আরও বড় হয়, তখন সে স্কুল, কলেজ ও ইউনিভার্সিটি এভাবে ক্রমে ক্রমেই এই বিস্তার দেশপ্রেমের সাথে মিলত হয়ে সুপ্রসারিত রূপ লাভ করে। আর যদি প্রকৃতই কেউ বিবেকবান হয়, তাহলে তার ভালোবাসা শুধু মানবতার গণ্ডিতেই আবদ্ধ থাকবে না, সে ভালোবাসবে সৃষ্টির প্রতিটি জীবকে, তার সকল কর্মই সম্পাদিত হবে প্রতিটি জীবের কল্যাণে।
মূলত একটি শিশুর শৈশব থেকে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া পর্যন্ত উপর্যুক্ত ভালোবাসার ক্রমান্বয়ে প্রসারিত হওয়ার দৃষ্টান্ত থেকে আমরা সুষ্ঠভাবে ধারণা পাই যে, আমাদের ভালোবাসা সীমাহীনভাবে বর্ধিত হতে চায়, ঠিক যেমন জলের যেই জায়গায় এক টুকরা পাথর নিক্ষেপ করা হয়, সেই জায়গা থেকে জলের ছোট ছোট ঢেউগুলো ক্রমান্বয়ে প্রসারিত হতে থাকে। যতদূর পর্যন্ত কোন বাধার সম্মুখীন না হচ্ছে ঢেউগুলো বিস্তৃতই হতে থাকে, তেমনি আমাদের ভালোবাসার প্রবণতাও একই রকম। যদিও আমরা দেখতে পাই যে, এই ভালোবাসার প্রবণতা হচ্ছে সীমাহীনভাবে বর্ধিত হওয়া, কিন্তু এই জগতে প্রতিনিয়ত এগুলো বিভিন্ন রকম বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। তারপরও আমরা সকলেই ভালোবাসতে চাই। যদিও আমরা আমাদের ভালোবাসা উজাড় করে দিতে চেষ্টা করি, কিন্তু বাধার দ্বারা ভীত হয়ে আমরা সেই প্রবণতাকে চেপে রাখতে বাধ্য হই। আর সেই বাধাগুলি হল:
১. অস্বীকৃতি
২. প্রতারণা
৩. বহু প্রতিযোগী-ত্রিমাসিক ভালোবাসা
৪. যৌন সঙ্গের তীব্র আকাক্সক্ষা
৫. ভুল বোঝাবুঝি
৬. চারিত্রিক/ব্যক্তিত্বগত ত্রুটি
৭. বিচ্ছেদ/মৃত্যু
১-অস্বীকৃতি
ভালোবাসার প্রস্তাবে অস্বীকার করার বিষয়টি সকলের কাছেই ভীতিকর। যেমন "ভ্যালেন্টাইন'স ডে" তে কোনো ছেলে লাল গোলাপ নিয়ে কোন মেয়েকে প্রস্তাব করলে, মেয়েটি যদি তাকে সজোড়ে থাপ্পড় মেরে অস্বীকৃতি জানায়, তবে সেটা হবে তার জন্য তীব্র লজ্জার। অনেক সময় এর ফলাফল অনেক ভীতিকরও হয়ে দাঁড়ায়। কারণ, যখন কেউ তার বহু আকাঙ্ক্ষিত বা কাম্য বস্তু প্রাপ্তিতে বাধাগ্রস্থ হয়, তখন তার মধ্যে ক্রোধের উৎপত্তি হয় আর ক্রোধে অন্ধ হয়ে মানুষ অপরাধপ্রবণ হয়ে ওঠে। এমন কিছু করে যার ফলাফল তার ব্যক্তিগত ও সামাজিক সকল ক্ষেত্রে ক্ষতিকর হয়। এমন কি এটা ধ্বংসের মুখেও ঠেলে দিতে পারে। রামায়ণে বর্ণিত আছে, ভগবান শ্রীরাম ও লক্ষ্মণকে শূর্পনখা যখন প্রেমের প্রস্তাবে অস্বীকৃত হয়, তখন সে রেগে গিয়ে তার রাক্ষসরূপে ফিরে এসে মাতা সীতাকে হত্যা করতে উদ্যত হয়, তখন লক্ষ্মণ তার নাক কেটে তাকে তীব্র অপমান করেন, তারপর সে ফিরে গিয়ে সীতার প্রতি তার ভাই রাবণকে প্রলুব্ধ করে এবং তার ফলে রাবণ সীতাকে হরণ করে। আর ভগবান শ্রীরাম রাবণসহ লঙ্কার অসুরদের নাশ করে সীতাকে উদ্ধার করেন। এভাবে শূর্পনখা ভালোবাসায় অস্বীকৃত হওয়ার কারণে ক্রোধের বশবর্তী হয়ে এতটা হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছিল যে, তার ঐ ভুল পদক্ষেপ সমগ্র রাক্ষস জাতির সর্বনাশ ডেকে আনল। সুতরাং, ভালোবাসার ক্ষেত্রে অস্বীকৃতি যেমন লজ্জার, তেমনি ভীতিকরও।২-প্রতারণা
সাধারণত এক্ষেত্রে দেখা যায়, আমরা যাকে ভালোবাসি, সে হয়তো আমাদেরকে ভালো না বেসে অন্য কাউকে ভালোবেসে ফেলে, কিংবা অন্যের হাত ধরে চলে যায়। আবার এমনও হতে পারে যে সে হয়তো আমাদের সামনে আসলে ভালোবাসার অভিনয় করছে, কিন্তু মনে মনে অন্যজনকে ভালোবাসে।
অনেকদিন আগে ভর্ক্রহরি নামক একজন রাজা, যিনি তার প্রাণাধিক প্রিয় পত্নীর উদ্দেশ্যে ভালোবাসার স্মারক হিসেবে একশত লাইনের "শৃঙ্গার শতক" নামক একটি কবিতা লিখেছিলেন। এক সাধু ব্যক্তি মহারাজকে একটি বিশেষ মণিযুক্ত আংটি প্রদান করে বললেন, মহারাজ যেন এই আংটি এমন একজনকে দেন, যাকে তিনি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন। তাহলে তাদের সম্পর্ক আরও মধুর হবে। প্রসঙ্গত মহারাজ সেই আংটি তাঁর পত্নীকেই দিলেন। কয়েকমাস অতিবাহিত হওয়ার পর হঠাৎ একদিন রাজসভায় এক পতিতা এসে রাজাকে ঐ একই আংটি দিয়ে বলল, "আমি শুনেছি এই আংটি আমি তাকেই দিতে পারব, যাকে আমি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি।" মহারাজ আংটি হাতে নিয়ে বুঝতে পারলেন, এটা তিনি তাঁর পত্নীকে কয়েকমাস আগে দিয়েছিলেন।
দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর তিনি স্পষ্টভাবে বুঝতে পারলেন যে, তিনি তাঁর পত্নীকে প্রাণাধিক ভালোবাসা সত্ত্বেও তাঁর পত্নী তাঁকে ভালো না বেসে অন্য আরেকজনকে ভালোবেসে ঐ আংটি উপহার দেয়। রাজা তখনই খুবই ক্রোধান্বিত হন, কিন্তু তখন তাঁর কিছুই করার ছিল না। তিনি মনে গভীর কষ্ট ও হতাশা থেকে একশত লাইনের আরেকটি কবিতা লিখেন। সেটির নাম দিলেন "বৈরাগ্য শতক"। সুতরাং প্রতারণারূপ বাধাটি হল ভালোবাসার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেদনাদায়ক।

৩-বহু প্রতিযোগী বা ত্রিমাত্রিক ভালবাসা
সাম্প্রতিক সময়ে ত্রিমাত্রিক ভালোবাসা Circle of drama নিয়ে অনেক ব্যয়বহুল চলচ্চিত্র নির্মিত হচ্ছে। তাছাড়া এগুলো বহুল প্রচলিত ও ব্যবসা - সফলও হচ্ছে। কিন্তু শুধু চলচ্চিত্র পর্দার কাল্পনিক জগতেই নয়, এই ত্রিমাত্রিক বা বহু প্রতিযোগিতামূলক ভালোবাসা আমাদের বাস্তব জীবনেও প্রভাব ফেলছে। সাধারণত আমরা এমন কাউকে ভালোবাসতে কিংবা বিয়ে করতে চাই, যে অনেক বেশি যোগ্যতা সম্পন্ন বা যার রূপ অতুলনীয়, কিন্তু এটা ভুলে যাই যে, তাকে পাওয়ার সাথে সাথেই আমাদের চারপাশে প্রতিযোগীদের দ্বারা মুখরিত হয়ে উঠতে পারে। কোনো ছেলে যদি মনে করে যে, বিশ্ব সুন্দরীর মতো রূপবতী কোনো মেয়েকে বিয়ে করতে পারলেই তার জীবন স্বার্থক হয়ে যাবে, তবে তার কল্পনা-সম্পূর্ণই নিরর্থক। প্রকৃতপক্ষে, সেদিন থেকে তার সুখের জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটবে। ধনী যেমন তার বহু মূল্যবান ধনসম্পদের সুরক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন, ঠিক তেমনি রূপবতী পত্নীর সুরক্ষা নিয়েও তার স্বামীর একই রকম উৎকণ্ঠা ও উদ্বিগ্নতায় পরিপূর্ণ থাকতে হয়। তাই চাণক্য পণ্ডিত বলেছেন, "ভার্যা রূপবতী শত্রুঃ", অর্থাৎ রূপবতী পত্নী একজন পুরুষের শত্রু। কারণ, এর থেকে সৃষ্টি হতে পারে বহু ভায়নক সমস্যা, যেমন-বিবাহ বিচ্ছেদ, দাম্পত্য কলহ ইত্যাদি। আর সে কারণেই এই ত্রিমাত্রিক ভালোবাসা নিয়ে বহু বেদনাদায়ক কাহিনিও রয়েছে। যাদের প্রত্যেকটির পরিসমাপ্তি ঘটে আত্মহত্যা ও খুনের মতো অনেক অপরাধপ্রবণ কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে, আর যার ফলাফলও হয় অনেক ভয়ানক।

৪-যৌনসঙ্গের তীব্র আকাঙ্ক্ষা
ভালোবাসার সফলতা সম্পূর্ণ মানসিক অবস্থার উপর নির্ভর করে। কিন্তু বর্তমানে যুবক-যুবতীরা দেহগত আকর্ষণকে প্রাধান্য দেয়। তারা মনে করে শারীরিক সম্পর্কই পারে ভালোবাসায় সফলতা বয়ে আনতে। আর তাই যৌনসঙ্গ হচ্ছে স্ত্রী-পুরুষের সম্পর্কের অঙ্গীকারনামা স্বরূপ। এটা ছাড়া কোন সম্পর্কের কথা বর্তমানে চিন্তাই করা যায় না স্ত্রী-পুরুষের সম্পর্ক মূলত গঠিত হয়, এই যৌনতাকে কেন্দ্র করেই। এমনকি দাম্পত্য জীবন সুখী না দুঃখী সেটাও বর্তমানে নির্ধারিত হয়, স্বামী-স্ত্রীর যৌনক্ষমতার উপর। আর যা ভালোবাসার প্রতিবন্ধকতাস্বরূপ।
৫-ভুল বোঝাবুঝি
প্রতিটি মানুষকেই জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে ভুল বোঝাবুঝির মতো পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। আমরা যখনই এর সম্মুখীন হয়, তখন আমাদের প্রিয়জনদের অন্তত একবার একথা বলি "আমাকে আসলে তোমরা বুঝতে পারলে না" এটা হাওয়াটা বিচিত্র নয় কারণ, এই জগতে একেক জনের মানসিক অবস্থা একেক রকম। আর মানসিক অবস্থার অসামঞ্জস্যতার কারণেই শুরু হয় ভুল বোঝাবুঝি।
৫-চারিত্রিক/ব্যক্তিত্বগত ত্রুটি
তারপর রয়েছে আমাদের চরিত্রগত বা ব্যক্তিত্বগত ত্রুটি। স্বাভাবিকভাবে যেটা ঘটে যে, যখন কোনো একজন ব্যক্তি প্রেমে পড়ে, তখন অনেক সময় সে অতি আবশ্যক বিষয়গুলো দেখার প্রয়োজন বোধ করে না, কারণ কথায় বলে যে, "ভালোবাসা অন্ধ"। কিন্তু এটাও সত্য যে, বিয়ের মাধ্যমে আমাদের চোখ খুলে যায়। যখন কোনো ছেলে একটি মেয়ের প্রেমে পড়ে, সে বলে যে আমি তোমার জন্য আকাশের চাঁদ, তারা ছিনিয়ে আনতে পারি। মেয়েটি যদি বলে ঠিক আছে এনে দাও। তাহলে কি সেই ছেলেটি এটা আনতে পারবে? এটি শুধু মুখেই বলা যায়, বাস্তবে তা সম্ভব হয় না। তাই পটভূমিতে যখন যুক্তি চলে আসে, ভালোবাসা সেখান থেকে পালায়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কোনো ছেলে বা মেয়ে বিয়ের পর তারা যখন একে অপরের খুব সান্নিধ্যে থাকছে, তখন উভয়ের কাছে তাদের নিজেদের চারিত্রিক দোষগুলো স্পষ্ট হয়ে উঠে। তখন তারা দুজনই তখন কষ্ট পায়।৬-বিচ্ছেদ/মৃত্যু
অনেকে বলে আমাদের ভালোবাসা চিরন্তন। ভালো, কিন্তু তারপর প্রায় যেটা আসে তা হচ্ছে তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ। সেটা ভুল বোঝাবুঝি থেকে হোক কিংবা ভাবের আদান-প্রদানের অভাব থেকে হোক। আর যদি তা না হয়, তাহলে মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। আমরা কোনো একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে চিরদিনের জন্য ভালোবাসতে চাই। এমনকি সময়ের বাধাটিও আমরা চাই না। এটিই আমাদের স্বাভাবিক প্রবণতা। কিন্তু, বিচ্ছেদকারক তীক্ষ্ম তলোয়ার রূপে মৃত্যু আমাদের সামনে আসে। আমাদের ভালোবাসার গাঁট যত শক্ত করে লাগানোই হোক না কেন, এটি তা আলগা করে দেয়। মহাভারতে ব্যাসদেব বলেছেন, "জলের স্রোতধারায় যেমন দুটি খড়কুটা কিছুক্ষণের জন্য একত্রিত হয়, আবার পরক্ষণেই ঢেউয়ের ধাক্কায় আলাদা হয়ে যায়, এই জগতের প্রাণীদের মধ্যে সম্পর্কও ঠিক তেমনি"। কিছু সময়ের জন্য একগুচ্ছ জীব জগতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে একত্রিত হয়ে ক্ষণস্থায়ী একটি সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং এটি খুব অল্প সময়ের জন্য স্থায়ী হয়, যা আবার মহাকালরূপ খড়গের আঘাতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং অনেক ক্ষেত্রে তারা আর কখনোই মিলিত হয় না। সুতরাং মৃত্যু একটি প্রধান প্রতিবন্ধকতা।
বিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রথমে কোন সমস্যাকে ভালো করে চিহ্নিত করতে হয়, তাহলে সেটাকে সমাধান করাটা সহজ হয়ে যায়। এতক্ষণ আমরা ভালোবাসার প্রতিবন্ধকতারূপ সমস্যা নিয়ে আলোচনা করলাম। এখন এর সমাধানের উপর আলোকপাত করব।

প্রকৃতপক্ষে এই কাম কি
বৈদিক শাস্ত্রে বলা হয়েছে "আনন্দময়োহভ্যাস্যাৎ" (বেদান্তসূত্র ১/১১/২)। আত্মার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আনন্দ। প্রকৃতিগতভাবে, আত্মা জ্ঞানময় এবং আনন্দময়। এই আনন্দের উৎস হচ্ছে ভালোবাসা এবং জীবনের অত্যাবশ্যক প্রয়োজনও এই ভালোবাসা। যদি আমাদের জীবনে ভালোবাসা থাকে, তবে আমরা যেকোনো অবস্থায় সুখী এবং সেটি যদি আমাদের না থাকে তবে আমরা দুঃখী, একাকী ও হতাশ হয়ে যাই। আত্মার স্বভাব হচ্ছে সর্বাকর্ষক ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে ভালোবাসা। যখন আমরা ভগবানের প্রতি আত্মার চিরন্তন ভালোবাসার কথা ভুলে যাই এবং এই জগতের ক্ষণস্থায়ী বস্তু থেকে আনন্দ অন্বেষণের প্রচেষ্টা করি, তখন সেই বিকৃত ভালোবাসাই হচ্ছে কাম।
প্রেম ও কামের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে সোনা এবং লোহার মধ্যে পার্থক্যের ন্যায়। যখন আমাদের ভালোবাসার স্বাভাবিক প্রবণতা ভগবানের প্রতি নিবিষ্ট হয়, তখন আমরা সীমাহীন আনন্দ লাভ করি। কিন্তু যখন একই প্রবণতা আমাদের দেহাত্মবোধের কারণে ক্ষণস্থায়ী ইন্দ্রিয়ের বিষয়ের প্রতি প্রবৃত্ত হয়, তখন এটি কামে পর্যবসিত হয়।
জরিপ করে দেখা যায় যে, সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের ৩টি সফল ব্যবসা (অস্ত্র ও ঔষধ ব্যবসা সহ) এর মধ্যে অন্যতম এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের অনুসন্ধানের বিষয়বস্তুর মধ্যে প্রথম হচ্ছে "পর্নোগ্রাফি" বা অবাধ যৌনতায় পরিপূর্ণ ওয়েবসাইটসমূহ। বর্তমানে যুব সমাজ কাম প্রবণতা বা ইন্দ্রিয়-তৃপ্তিকে পূরণ করতে একেবারে উন্মত্ততার চরম পর্যায়ে অবস্থান করছে। আর এই নিম্নস্তরের পশুবৃত্তিমূলক প্রবণতামূলক চরিতার্থ করতে তারা আধুনিক প্রযুক্তিসহ সকল সুযোগ-সুবিধার ব্যবহার করছে। তাই শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছেন-"এই কাম খুবই শক্তিশালী যে, এটি প্রত্যেকের অভ্যন্তরে সুপ্তাবস্থায় থাকে এবং কোন নির্দিষ্ট অবস্থায় এটি প্রকাশিত হয়।" কিন্তু, আমরা সেটাকে ভুলবশত ভালোবাসা বলি। আর সত্যিকার অর্থে, এটি হচ্ছে আমাদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা এক শক্তিশালী শত্রু কাম। কাম এতই শক্তিশালী যে, এই জগতের বিখ্যাত শক্তিশালী ব্যক্তিত্বদেরও এর সামনে মাথা নত করতে হয়েছে। সুপ্রাচীন কাহিনিগুলোতে এর প্রমাণ পাওয়া যায়।
পৌরাণিক কাহিনিগুলোর উল্লেখযোগ্য অংশ জুড়ে আছেন দেবরাজ ইন্দ্র। একবার দেবরাজ ইন্দ্র, গৌতম মুনির পত্নী অহল্যার রূপে মোহিত হয়ে যান। অহল্যাকে ভোগ করার জন্য ইন্দ্র চন্দ্রদেবের সহায়তা নেন। ইন্দ্রের আদেশের চন্দ্র নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ভোর হওয়ার ইঙ্গিত প্রদান করলে গৌতম মুনি তাঁর আশ্রম থেকে প্রাতঃস্নানের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন, আর তখন ইন্দ্র গৌতম মুনির রূপ ধারণ করে অহল্যার নিকট উপস্থিত হয়ে তাকে ভোগ করতে লিপ্ত হন। গৌতম মুনি যখন গঙ্গা স্নানে গিয়ে বুঝতে পারলেন এই ষড়যন্ত্রের কথা। ঘটনাস্থলে দেবরাজ ইন্দ্র ও অহল্যাকে পেয়ে অত্যন্ত ক্রোধান্বিত হয়ে অভিশাপ দেন। আর তাঁর অভিশাপে ইন্দ্রের সম্পূর্ণ শরীর শত সহস্র চোখ দিয়ে ঢেকে যায় এবং অহল্যা পাথরে পরিণত হন। যে ইন্দ্রের অধীনস্থ সকল দেবতারা, সহস্র অপ্সরারা যাঁর সেবায় নিয়োজিত, সেই ইন্দ্রকেই কিনা ইন্দ্রিয়-তৃপ্তির জন্য আসতে হল অহল্যার কাছে! আর পরাজিত হতে হল কাম নামক শত্রুর কাছে।" সুতরাং এই কাহিনিগুলো থেকে  আমরা কামের শক্তি সম্পর্কে ধারণা পাই।টাইটানিক জাহাজের কথা যদি বলা হয়, তাহলে আমরা দেখব টাইটানিক জলের একরূপ তরলতা দ্বারাই সমুদ্রে ভেসেছিল, আর অন্যরূপ কঠিন বরফ দ্বারাই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল। ঠিক তেমনি ইচ্ছা যদি ভগবানের প্রীতি সাধনের জন্য ব্যবহৃত হয়, তখন সেটা আমাদের উন্নতির দিকে ধাবিত করে। কিন্তু, যদি ভগবান থেকে স্বতন্ত্র হয়ে ইন্দ্রিয়-তৃপ্তির কাজে ব্যবহত হয়, তখন সেটা আমাদেরকে টাইটানিকের মতোই ডুবিয়ে দেয়, অর্থাৎ ধ্বংস করে দেয়।
কামের আবাসস্থল
কোনো শত্রুকে ভালভাবে জানতে হলে সর্ব প্রথম তার অবস্থান জানাটা খুবই প্রয়োজন। তাই পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গীতায় (৩/৪০) কাম সম্পর্কে সতর্ক করার পাশাপাশি অর্জুনকে এর আবাসস্থল সম্পর্কেও অবগত করেন।
"ইন্দ্রিয়সমূহ, মন ও বুদ্ধি এই কামের আশ্রয়স্থল। এই ইন্দ্রিয়াদির দ্বারা কাম জীবের প্রকৃত জ্ঞানকে আচ্ছন্ন করে তাকে বিভ্রান্ত করে। কামরূপী শত্রুর আবাসস্থল মূলত ইন্দ্রিয়সমূহ (৫টি কর্মেন্দ্রিয় ও ৫টি জ্ঞানেন্দ্রিয়), মন ও বুদ্ধিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে। যার ফলে একজন সম্পূর্ণরূপে উন্মত্ত ও বিভ্রান্ত হয়ে যায়।"
কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামী শ্রীচৈতন্য চরিতামৃতে (আদি ৪/১৬৫) উল্লেখ করেছেন-
নিজের ইন্দ্রিয়-তৃপ্তির বাসনাকে বলা হয় "কাম", কৃষ্ণের ইন্দ্রিয় প্রীতিকে বলা হয় "প্রেম"। টাইটানিক জাহাজের কথা যদি বলা হয়, তাহলে আমরা দেখব টাইটানিক জলের একরূপ তরলতা দ্বারাই সমুদ্রে ভেসেছিল, আর অন্যরূপ কঠিন বরফ দ্বারাই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল। এখানে জল একই, কিন্তু একরূপে টাইটানিককে ভাসতে সাহায্য করেছিল, আর অন্যরূপে তাকে ডুবিয়ে সম্পূর্ণ ধ্বংস করেছিল। ঠিক তেমনি ইচ্ছা যদি ভগবানের প্রীতি সাধনের জন্য ব্যবহৃত হয়, তখন সেটা আমাদের উন্নতির দিকে ধাবিত করে। কিন্তু, যদি ভগবান থেকে স্বতন্ত্র হয়ে ইন্দ্রিয়-তৃপ্তির কাজে ব্যবহত হয়, তখন সেটা আমাদেরকে টাইটানিকের মতোই ডুবিয়ে দেয়, অর্থাৎ ধ্বংস করে দেয়!
যদি তথাকথিত ভালোবাসা 'কাম' হয়,
তাহলে প্রকৃত 'ভালোবাসা' কোথায়!
মরীচিকা যেমন জলের অস্তিত্বকে ইঙ্গিত করে এবং আলো যেমন আলোর অস্তিত্বকে নির্দেশ করে, তেমনি আমাদের ভালোবাসার প্রবণতা, কোথাও না কোথাও প্রকৃত যে ভালোবাসা রয়েছে, তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। তাহলে সেটা কোথায়?
ভগবান এ জগতের সকল সমস্যার যথার্থ সমাধান প্রকৃতির মাধ্যমে সরবরাহ করেছেন। যেমন- তৃষ্ণার জন্য জল, ক্ষুধার জন্য খাদ্য ইত্যাদি। ঠিক তেমনি আমাদের যে মূল সমস্যা, সেটা হল আমরা কাউকে সীমাহীন ও কোনো বাধার ভয়মুক্ত হয়ে ভালোবাসতে চাই, কিন্তু ভগবান এর সমাধান সরবরাহ করা সত্ত্বেও আমাদের পক্ষে সেটা সম্ভব হয় না, কারণ আমরা সেটা বারবার ভুল জায়গায় খুঁজছি। শাস্ত্রে বলা হয়েছে, এ জড় জগত হচ্ছে চিন্ময় জগতের বিকৃত প্রতিবিম্ব। চিন্ময় জগতে যা হয়, এ জড় জগতে ঠিক তার বিপরীত হয়।
চিন্ময় জগতের সম্পর্কগুলোর মূল কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, আর এ জগতে সকল সম্পর্কই গড়ে উঠে কোন না কোনভাবে প্রত্যেকের স্বার্থ ও ইন্দ্রিয়-তৃপ্তিকে কেন্দ্র করে। এখন আমরা সেই সম্পর্কগুলের তুলনামূলক অবস্থান দেখব।
চিন্ময় জগতের নিত্য সম্পর্ক (প্রকৃত)
১. শান্ত রস: ভগবানের ঐশ্বর্য ও ভগবত্তা দেখে ভক্তরা ভগবানকে সম্মান প্রদর্শন করেন। যেমন: চিৎ জগতের পাহাড়, পর্বত, বৃক্ষরাজি, পশু-পাখি ইত্যাদি।
২. দাস্য রস: ভগবানের চরণে সম্পূর্ণরূপে নিবেদিত হয়ে দাস হয়ে কোনো হেতু বা কারণ ছাড়াই তার সেবা করা। এ স্তরের ভক্তকে আদেশ করতে হয় না। তারা হৃদয় থেকেই ভগবান কি চাইছেন সেটা অনুভব করতে পারেন। যেমন: হনুমান।
৩. সখ্য রস: স্বয়ং ভগবান তাঁর ভক্তদের বন্ধু হিসেবে সম্পর্কিত হওয়ার সুযোগ দান করেন, এমনকি কখনও কখনও তাদের সেবাও করেন। যেমন: অর্জুন, শ্রীদাম, সুদাম প্রমুখ।
৪. বাৎসল্য রস: এ স্তরের ভক্তদের ভগবান তাঁর অভিভাবকরূপে গ্রহণ করেন এবং তাঁদের সেবা করেন। যেমন: নন্দ মহারাজ ও যশোদা মাতা।
৫. মাধুর্য রস: এটা সর্বোচ্চ স্তরের সম্পর্ক। এখানে ভক্ত ভগবানের সঙ্গে নিত্য প্রেমের সম্পর্ক যুক্ত হন। এ স্তরে ভগবানের সন্তুষ্টিই হচ্ছে ভক্তদের একমাত্র উদ্দেশ্য। যেমন: শ্রীমতি রাধারাণী, গোপীরা।
জড় জগতের অনিত্য সম্পর্ক (বিকৃত)
১. শান্ত রস: কোনো ক্ষমতাশালী বা বিখ্যাত ব্যক্তিকে সম্মান প্রদর্শন করা। যেমন: কোন রাজনীতিবিদ, অভিনেতা-অভিনেত্রী প্রভৃতির প্রতি তাদের ভক্তদের শ্রদ্ধা।
২. দাস্য রস: অধিক যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের তত্ত্বাবধানে থেকে কম যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তির শ্রম দেওয়ার প্রবণতা (ভাল সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার জন্য)। যেমন: উচ্চ পদস্থ অফিস কর্মকর্তা ও অফিস কর্মচারী। ৩. সখ্য রস: পারিপার্শ্বিক বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে সম্পর্ক, যেখানে স্বার্থে ব্যাঘাত ঘটলে বন্ধুত্ব শক্রতায় পরিণত হয়।
৪. বাৎসল্য রস: মা-বাবা ও সন্তানের মধ্যকার সম্পর্ক, যা শুধুমাত্র কোন নির্দিষ্ট সময় বা নির্দিষ্ট জন্মের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
৫. মাধুর্য রস: জড় জগতের স্ত্রী-পুরুষের ভালোবাসা, যা প্রতিনিয়ত বাধার সম্মুখীন ও ইন্দ্রিয়-তৃপ্তিতে পরিপূর্ণ।
মূলত এই ৫টি সম্পর্ক জড় জগতের যেকোনো সম্পর্কের ভিত্তি। কিন্তু চিন্ময় জগতের প্রতিবিম্ব হওয়ায় এগুলো স্বভাবতই বিকৃত এবং এর ফলাফলও বিকৃতই হয়। আমরা সকলে ভালোবাসার অনুসন্ধান করছি, কিন্তু সেই অনুসন্ধান হচ্ছে ভুল বস্তুর সমন্বয়ে। আমাদের অবস্থা হচ্ছে বনে গিয়ে মাছের অনুসন্ধানের ন্যায়। আমরা গাছে আরোহণ করছি ফলের আশায়। আনন্দ রয়েছে কিন্তু, তা এই জড় জগতে নেই, আনন্দ রয়েছে চিন্ময় জগতে। আমরা এখানে যা প্রত্যক্ষ করি, তা হচ্ছে চিন্ময় আনন্দের প্রতিফলন মাত্র। যদি নদীর তীরে আম গাছ থাকে, আপনি জলে গাছটির প্রতিবিম্ব দর্শন করবেন এবং প্রতিবিম্বে কিছু আম দেখতে পাবেন। আমগুলি পাওয়ার জন্য আপনি জলে ঝাঁপ দিতে পারেন। কিন্তু, জলের ভিতরে সেই আমগুলি পাওয়ার কোন সম্ভাবনা আছে কি? প্রকৃতপক্ষে সম্ভাবনা শূন্য। প্রত্যেকে সাঁতার কাটছে এবং আমগুলি খোঁজার চেষ্টা করছে।
যৌনসঙ্গের তীব্র আকাঙ্ক্ষা
শাস্ত্র অনুযায়ী, চিন্ময় জগতে কাম তো দূরের কথা কাম এর গন্ধও প্রবেশ করতে পারে না। কিন্তু, তারপরও জাগতিক মানুষ রাধাকৃষ্ণের রাসলীলা নিয়ে নানা অপরাধমূলক মনোভাব পোষণ করে থাকে। তারা যেমন কামরূপ শক্রর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে ও সর্বদা ইন্দ্রিয়- তর্পণ ছাড়া কিছুই ভাবতে পারে না। তেমনি চিৎজগতের সম্পর্ককেও তারা স্ত্রী- পুরুষের সম্পর্কের মতো মনে করে। আমাদের চোখে যখন যে রঙের চশমা দ্বারা আবৃত থাকে, তখন বাহিরের জগতকে তেমনি মনে হয়। ঠিক সেরকম এ জগতের মানুষের ইন্দ্রিয়গুলিও কাম দ্বারা আবৃত, তাই সর্বত্রই তারা কামকেই দর্শন করে।
এজগত জুড়ে পারস্পারিক সম্পর্কের মধ্যে এত দ্বন্দ্ব ও বিচ্ছেদের মূল কারণ হল, আমরা সবাই কেন্দ্র করে পারিপার্শ্বিক জগতটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাই। আমরা সকলেই যদি পরম নিয়ন্তা শ্রীকৃষ্ণকেই কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে মেনে নেই, তাহলে কোন দ্বন্দ্ব বিদ্বেষ থাকবে না। মূলত, সকলে হিংসা ও হানাহানির পরিসমাপ্তি ঘটে, পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে ভালোবাসার মাধ্যমেই।
বর্তমান জগতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন- ভালোবাসা ও সহানুভূতি: অর্থ ও প্রযুক্তি নয়। আমাদের যৌবন সময়টা প্রায়ই নষ্ট হয়। যখন আমরা বয়স্ক হতে শুরু করি, তখন আমরা উপলদ্ধি করি যে, সময় কত দ্রুত অতিক্রান্ত হয়। আমাদের রয়েছে তারুণ্যে ভরা শক্তি এবং বুদ্ধিমত্তা। সুতরাং জীবনের শুরুতেই আমাদের যাচাই করতে হবে, আমরা পারমার্থিক আদর্শের অনুসরণ করছি কি না? আমরা কি পরম সত্যের অনুসন্ধান করছি? নাকি অজ্ঞানতায় আচ্ছন্ন হয়ে মরুভূমিতে মরীচিকার পেছনে ছুটছি? বিনয় ও সহানুভূতির মতো গুণ আমাদের অর্জনের চেষ্টা করা উচিত।
সর্বোপরি কাম প্রবৃত্তিকে সংযত করার জন্য তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্রঃ প্রথমত ভক্তসঙ্গ কারণ শাস্ত্রে আছে, "ভক্তি প্রজায়তে সাধুসঙ্গে" অর্থাৎ ভক্তির জন্ম হয় সাধু সঙ্গের ফলেই। দ্বিতীয়ত হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপের দ্বারা অশান্ত মনকে আমরা ভষ্মীভূত করতে পারি। ঠিক যেমন, বীণার শব্দ সাপকে বশীভূত করে এবং তৃতীয়ত চারটি বিধিনিষেধ (দ্যুতক্রীড়া, নেশা, আমিষাহার ও অবৈধ যৌনকর্ম বর্জন) যখন দর্পন একবার মার্জিত হয়, তখন এটিও গুরুত্বপূর্ণ যে, কোনো ধূলো যেন আর পতিত না হয়। এজন্য আমাদের চারটি নিয়ম অনুসরণ করতে হবে।
কাম প্রবৃত্তিতে জয় করতে হলে কাম আশ্রয়স্থল ইন্দ্রিসমূহ, মন এবং বুদ্ধিকে আমাদের বিবেচনায় আনতেই হবে। আমাদের অবশ্যই অজ্ঞানতা দূর করে, কামরূপ পরম শক্রকে জয় করতে হবে। আর, এর জন্য প্রয়োজন হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ, করার মাধ্যমে চিত্তরূপ দর্পনকে মার্জন করতে হবে, চারটি বিধিনিষেধ অনুসরণ করতে হবে এবং ভগবানের শুদ্ধভক্তদের সঙ্গ করতে হবে। আর এটিই হচ্ছে প্রকৃত ভালোবাসা পাওয়ার উপায়।

সনাতন ধর্ম সম্পর্কে জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন-

আরো জানুনঃ

কেন প্রসাদভোজী হবেন? সমস্ত বৈদিক শাস্ত্র (বেদ,সংহিতা, মহাভারত, গীতা,ভাগবত,পুরাণ,উপনিষদ) থেকে প্রমান দেওয়া হলো...

চার যুগ-সত্য,ত্রেতা,দ্বাপর ও কলির সময় পরিমাণ ও বৈশিষ্ট্যসমূহঃ

শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর কিছু অমৃত বাণী

মহাভারতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কিছু বাণী ও উপদেশ

মনুষ্য দেহের কথা আলোচনা

আপনি কি অনেক হতাশায় ভুগছেন? সকল সমস্যাগুলোর সমাধান খুজে পান!!!!!!!!!!

ভগবান বিষ্ণুর গাত্র বর্ণ নীল কেন?

এই জগতে প্রকৃত জ্ঞানী,কে এই জগতে প্রকৃত সুখী,আর কে-ই বা প্রকৃত দুঃখী ?

অনাচার কাকে বলে ও কয় প্রকার?

কলিযুগের মানুষদের ভগবানের নামে রুচি নেই কেন ? 

ঘট কিসের প্রতীক? 

সনাতন ধর্মের বৈদিক শাস্ত্রে জন্ম ও মৃত্যুযোগ অশৌচ কি?

মহাভারত পড়ার সময় না থাকলেও এর মূল সূত্রগুলি আমাদের জীবনে কার্যকর প্রমাণ করতে পারে----------------------- 

মহাভারতের কিছু বাণী

শ্রীমদভগবদগীতায় উচ্চারিত ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সকল নামের অর্থ ও মাহাত্ম্য

প্রকৃত ভালোবাসার খোঁজে.......... 

রাধাকৃষ্ণের প্রেম-কাহিনীর প্রকৃত রহস্য

ভক্তি কি ?

 মায়া কি? মায়া থেকে পরিত্রাণের উপায় কি? 

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কেন মাথায় ময়ূরপালক/পুচ্ছ পরিধান করতেন?

রাজা পুরঞ্জনের কেন পরবর্তী জন্মে নারী হয়ে জন্ম হয়েছিল ?

 
আরো পড়ুন.....


 
হিন্দুদের কেন গো মাংস খাওয়া উচিত না? গো মাতা কেন সনাতন ধর্মে পূজনীয় ? Why Hindus should not eat beef? Why is Go Mata revered in traditional religion?
অম্বুবাচী (আম্ববর্তী) কি? কেন অম্বুবাচী পালন করা হয়? What is Ambubachi? Why is Ambubachi celebrated?
একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তির নতুন বছরের প্রতিজ্ঞাগুলো ঠিক এরকমই হওয়া উচিত--That's the decent thing to do, and it should end there.
শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন সর্ব কারণের পরম কারণ এবং লীলা পুরুষােত্তম স্বয়ং ভগবান । Lord Krishna is the ultimate cause of all causes and Leela is the best man himself.
মা লক্ষ্মীর কৃপালাভের কিছু মন্ত্র ও আচার-অনুষ্ঠান ! Some mantras and rituals of mother Lakshmi's grace!
ছাত্র-ছাত্রীদের আট প্রকার প্রবণতা বিদ‍্যা অর্জনে বিশেষ বাধা-স্বরূপ: The eight types of tendency of students to acquire knowledge are special obstacles:
 
সনাতন  ধর্মের মূল গ্রন্থসমূহ:Original texts of traditional religion:
গীতার ১৮ টি নামের মাহাত্ব্যঃ Greatness of 18 names of Gita:
কেনো মহাপ্রসাদ আহার করা উচিত?Why should Mahaprasad be eaten?
অক্ষয় তৃতীয়া মাহাত্ম্যঃ Akshay titiya Mahatmyah
শ্রীরাম নবমী তাৎপর্য ও মহিমাঃ Sriram-Nabami-meaning-and-glory
মা মনসার ধ্যান মন্ত্র প্রণাম মন্ত্রঃ মনসা অঞ্জলি : Ma Manasa Dhyana Mantra Pranam Mantra: Manasa Anjali:
রাশি বা লগ্ন অনুসারে জেনে নিন আপনার বৈশিষ্ঠ্য...........
মহা বারুণী স্নান মাহাত্ম্য
চৈত্র সংক্রান্তি Chaitra Sankranti
 
বাসন্তী পূজা
দোল পূর্ণিমা এবং ভগবান শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর আবির্ভাব তিথি -গৌর পূর্ণিমা
রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের জীবনী ও শিক্ষাঃ
দেবাদিদেব মহাদেব শিব চতুর্দশী ব্রত মাহাত্ম্য এবং শিবরাত্রি পূজার সময়সূচি ও নিয়মাবলি
শ্রীমদ্ভগবদগীতা কি? কেন গীতা পড়বেন?
 
অশ্বিনীকুমার ব্রত মাহাত্ম্য
দামোদর মাস ও ব্রত...মাহাত্ম্য
দুর্গাপূজার তাৎপর্য, মহিমা ও  বিভিন্ন তিথির আনুষ্ঠানিকতা এবং সময় নির্ঘণ্টঃ
পিতৃপক্ষ এবং দেবীপক্ষ বিশেষ তাত্‍পর্য্য
 
একাদশী ব্রত পালনের তাৎপর্য ও নিয়মাবলিঃ
শয়ন একাদশী মাহাত্ম্য
আমলকী একাদশী মাহাত্ম্য
 
পবিত্রারোপণী একাদশী মাহাত্ম্য Pobitrarohini Ekadashi Mahatmya
অন্নদা একাদশী মাহাত্ম্য Annada Ekadashi Mahatmya
পার্শ্ব একাদশী এর মাহাত্ম্য Parsha Ekadashi Mahatmya
ইন্দিরা একাদশী মাহাত্ম্য Indira Ekadashi Mahatmya
 
সফলা একাদশী মাহাত্ম্য Safala Ekadashi Mahatmya
পুত্রদা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য Putrada Ekadashi Brata Mahatmya
ষটতিলা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য Shattila Ekadashi Brata Mahatmya
পাপমোচনী একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য Paapmochani Ekadashi Brata Mahatmya
 
প্রথম অধ্যায়  অর্জুন বিষাদ-যোগ
দ্বিতীয় অধ্যায়  সাংখ্য-যোগ
তৃতীয় অধ্যায়  কর্মযোগ
 
একাদশ-অধ্যায় বিশ্বরূপ-দর্শন-যোগ
দ্বাদশ-অধ্যায় ভক্তিযোগ
প্রকৃতি-পুরুষ বিবেকযোগ
 
শিব কল্প তরু শ্রী শ্রীমৎ স্বামী অদ্বৈতানন্দ পুরী মহারাজ Shiva Kalpa Taru Sri Srimat Swami Advaitananda Puri Maharaj
শ্রী অদ্বৈত আচার্য
শ্রীগদাধর পণ্ডিত : মহাপ্রভুর ছায়া
 
সংঘাত নিরসনের পন্থা
হরি নামের মহিমা
কামকে কিভাবে জয় করবেন ?
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রিয় হতে চান এই গুনগুলোর চর্চা করুনঃ If you want to be dear to Lord Krishna, practice these qualities:
 
 
সনাতন ধর্ম সম্পর্কে নিজে জানুন অন্যকে জানার ‍সুযোগ করে দিতে অবশ্যই সকলকে শেয়ার করুন..........................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ