বেদ শাস্ত্রে বলা হয়েছেঃ
-------------------------------
আহার শুদ্ধৌ সত্ত্ব শুদ্ধি সত্ত্ব শুদ্ধৌ।ধ্রুবাস্মৃতি স্মৃতিলম্ভে সর্বগ্রন্থিনাং বিপ্রমোক্ষ।। (ছান্দোগ্য উপনিষদ ৭/২৬/২)
অর্থাৎ- ভগবানকে নিবেদন করার ফলে আহায্য দ্রব্য শুদ্ধ হয় এবং তা আহার করার ফলে জীবের সত্ত্বা শুদ্ধ হয়। সত্ত্বাশুদ্ধ হওয়ার ফলে স্মৃতি শুদ্ধ হয়। তখন সে মোক্ষ লাভের পথ খুঁজে পায়।
শ্রীমদ্ভগবদগীতায় বলা হয়েছে-
অন্নাত্ ভবন্তি ভূতানি পর্জন্যাত্ অন্ন সম্ভবঃ ।
যজ্ঞাত্ ভবতী পর্জন্যঃ যজ্ঞঃ কর্ম সমুদ্ভব ।। ভঃগীঃ৩/১৪
অর্থ-অন্ন খেয়ে প্রাণীগন জীবন ধারন করেন, বৃষ্টি হওয়ার ফলে অন্ন উত্পাদন হয়, যজ্ঞ অনুষ্ঠান করার ফলে বৃষ্টি হয়, শাস্ত্রক্ত কর্ম থেকে যজ্ঞ উত্পন্ন হয়।
মনুসংহিতায় মাংসাহার সম্পর্কে বলা হয়েছে যে-
ন মাংসভক্ষণে দোষো ন মদ্যে ন চ মৈথুনে।
প্রবৃত্তিরেষা ভূতানাং নিবৃত্তি তু মহাফলা।। (মনুসংহিতা ৫/৫৬)
অর্থাৎঃ মাংসাহার,মদ্যপান ও মৈথুনাচার সকল বদ্ধজীবদের স্বাভাবিক প্রবণতা।এ ধরনের কার্যকলাপ শাস্ত্রবিধি অনুসারে অনুষ্ঠিত হলে ততোটা দোষাবহ নয়।তবে এসব কার্য থেকে নিবৃত্ত হওয়াই মহাফলদায়ক।
মনুসংহিতায় প্রানী হত্যায় ছয় ধরনের ব্যক্তির দন্ডনীয় পাপ হয়ঃ
অনুমন্তা বিশসিতা নিহন্তা ক্রয়বিক্রয়ী।
সংস্কর্তা চোপহর্তা চ খাদকশ্চেতি ঘাতকাঃ।। (মনুসংহিতা ৫/৫১)
১. যে হত্যার অনুমতি দেয়।
২. যে হত্যা করে।
৩. যে হত্যাকর্মে সাহায্য করে।
৪. যে ক্রয় করে।
৫. যে রান্না করে।
৬. যে ভোজন করে।
এ ছয় ব্যক্তি সমানভাবে অপরাধি।
গীতায় ভগবান কৃষ্ণ বলেছেন-
যত্করোষি যদশ্নাসি যজ্জুহোষি দদাসি যত্৷
যত্তপস্যসি কৌন্তেয় তত্কুরুষ্ব মদর্পণম্৷৷ (গীতা৯/২৭)
অর্থ-হে কৌন্তেয়, তুমি যা অনুষ্ঠান কর, যা আহার কর, যা হোম কর, যা দান কর এবং যে তপস্যা কর, সেই সমস্তই আমাকেই অর্পণ কর।
এভাবে আমাকে অর্পন করে তুমি কর্ম ফলের বন্ধন থেকে মুক্ত হবে। "
শুভাশুভফলৈরেবং মোক্ষ্যসে কর্মবন্ধনৈঃ৷
সন্ন্যাসযোগযুক্তাত্মা বিমুক্তো মামুপৈষ্যসি৷৷ (গীতা৯/২৮)
অর্থ: - এই ভাবে আমাকে সমস্ত কর্ম অর্পণ দ্বারা শুভ এবং অশুভ ফল বিশিষ্ট কর্মের বন্ধন থেকে মুক্ত হবে। এই ভাবে সন্ন্যাস যোগে যুক্ত হয়ে তুমি মুক্ত হবে এবং আমাকেই প্রাপ্ত হবে।
সকল জীবের প্রতি সমভাবাপন্ন থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। " সমঃ অহম্ সর্বভতেষু " তাই কোন জীব হত্যার কথা সনাতন ধর্মে দেয়া হয়নি।
এখন ভগবদ্গীতায় ভগবান কি খাদ্য গ্রহন করে তা দেখব,
ভগবান গীতায় বলেছেন,
"পত্রং পুস্পং ফলং তোয়াং যো মে ভক্ত্যা প্রযচ্ছতি।
তদহং ভক্ত্যুপহৃতম্ অশ্নামী প্রযতাত্মনঃ।। (ভঃগীঃ ৯/২৭)
অর্থাৎঃ যে বিশুদ্ধচিত্ত নিস্কাম ভক্ত ভক্তি সহকারে আমাকে পত্র, পুস্প, ফল ও জল অর্পন করেন আমি তাঁর সেই ভক্তিপ্লুত উপহার প্রীতি সহকারে গ্রহন করি।
"প্রসাদে সর্বদুঃখ বিনাশনং " অর্থাৎ মহা প্রসাদে জীবের সকল দুঃখ দুর হয়।
শ্রীমদ্ভবদগীতায় আরও বলা হয়েছেঃ
ইষ্টান ভোগান হি বঃ দেবাঃ দাস্যন্তে যজ্ঞ ভাবিতাঃ ।
তৈঃ দত্তান অপ্রদায় এভ্যঃ যঃ ভূঙক্তে স্তেনঃ এব সঃ ।। (ভঃগীঃ৩/১২)
অর্থ-যজ্ঞের ফলে সন্তুষ্ট হয়ে দেবতারা তোমাদের প্রতি বাঞ্চিত ভোগ্যবস্তু প্রদান করবেন। সুতরাং দেবতাদের দেওয়া বস্তু তাদের নিবেদন না করে যিনি ভোগ করেন তিনি নিশ্চয় চোর।
যারা ভগবানকে ও দেবদেবীকে অাহার্য বস্তু নিবেদন না করে ভক্ষণ করে শাস্ত্রে তাদেরকে চোর বলা হয়েছে।
পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গীতার ৩/১৩ শ্লোকে বলেছেন,
" যজ্ঞশিষ্টাশিন সন্তো মুচ্যন্তে সর্বকিল্বিষৈঃ।
ভুঞ্জতে তে ত্বঘং পাপা যে পচন্ত্যাত্মকারনাৎ।।"
-------------------------------------------------------------
অর্থাৎঃ ভগবদ্ভক্তেরা সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হন, কারন তাঁরা যজ্ঞাবশিষ্ট অন্নাদি গ্রহন করেন। যারা কেবল স্বার্থপর হয়ে নিজেদের ইন্দ্রিয়ের তৃপ্তির জন্য অন্নাদি পাক করে, তারা কেবল পাপই ভোজন করে।
তাই ভগবানের প্রসাদ ছাড়া আমাদের কিছু আহার করা উচিত নয়।
কোন জীবকে হত্যা করা বা তার মাংস খাওয়া নিষেধ সনাতন ধর্মে তার শত শত প্রনাম রয়েছে,
যেমনঃ(মহাভারত ১১৪/১১৫অঃ)
গঙ্গা পুত্র ভিস্মদেব যুধিষ্ঠির মহারাজকে বলেছেন যে"পিতা মাতার কাছে শুধু নিজের সন্তান ই নয় অন্য জীবের গর্ভের সন্তানো নিজ সন্তানের মত। যে ব্যক্তি মোহ গ্রস্ত হয়ে পুত্র মাংশ তুল্য অন্য প্রানীর মাংশ আহার করে,সে অত্যন্ত নিচু জাত বলে গন্য হয়। তাকে বহু বহু পাপ যোনিতে জন্ম নিতে হবে। অন্যের শরীরের মাংশ খেয়ে নিজ শরীরের মাংশ পুস্ট করতে যে ইচ্ছে করে তার প্রতি জন্মে উদ্বিগ্ন চিত্তে কাল যাপন করতেহয়"
ব্রহ্মা পুত্র কর্দমমুনিকে গৃহস্থজীবনে প্রবেশের সময় ভগবান গৃহস্থ জীবনের ধর্মাচারন সম্পর্কে বলেছিলেন,
"ক্রিত্বা দয়াঞ্চ জীবেষু দত্ত্বা চাভয়মাত্মবান। "
অর্থাৎ সকল জীবের প্রতি দয়া প্রদর্শন কর এবং সকলকে অভয় প্রদান কর। (ভাগবত ৩/১১/৩১) তাই আমাদের উচিত ভগবানের আদেশ পালন করা।
তাই মাংস খেয়ে যদি ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি উদিত হতো বা প্রেম থাকতো তাহলে ছান্দোগ্য উপনিষদে আহার শুদ্ধতা কথা বলা হতো না।কারণ যার আহার শুদ্ধ নয় তার দেহ শুদ্ধ হবে কি করে? যার দেহই শুদ্ধ নয় তার চিত্ত শুদ্ধ কখনও সম্ভব নয়।তাই উপনিষদ শাস্ত্রে সবার জন্য ।যদি আহার শুদ্ধ না হয়ে ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি উদয় হতো তবে ছান্দোগ্য উপনিষদের মন্ত্র মিথ্যা প্রমাণ হতো।কিন্তু তা কখনও সম্ভব নয়।
তাই যারা ভক্তি জীবনযাপন করে তাহলে অবশ্যই বৈদিক শাস্ত্র মেনে ভগবান কৃষ্ণের মহাপ্রসাদ আহার করা উচিত।
সনাতন ধর্ম সম্পর্কে জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন-
আরো জানুনঃ
কেন প্রসাদভোজী হবেন? সমস্ত বৈদিক শাস্ত্র (বেদ,সংহিতা, মহাভারত, গীতা,ভাগবত,পুরাণ,উপনিষদ) থেকে প্রমান দেওয়া হলো...
চার যুগ-সত্য,ত্রেতা,দ্বাপর ও কলির সময় পরিমাণ ও বৈশিষ্ট্যসমূহঃ
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর কিছু অমৃত বাণী
মহাভারতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কিছু বাণী ও উপদেশ
মনুষ্য দেহের কথা আলোচনা
আপনি কি অনেক হতাশায় ভুগছেন? সকল সমস্যাগুলোর সমাধান খুজে পান!!!!!!!!!!
ভগবান বিষ্ণুর গাত্র বর্ণ নীল কেন?
এই জগতে প্রকৃত জ্ঞানী,কে এই জগতে প্রকৃত সুখী,আর কে-ই বা প্রকৃত দুঃখী ?
অনাচার কাকে বলে ও কয় প্রকার?
কলিযুগের মানুষদের ভগবানের নামে রুচি নেই কেন ?
ঘট কিসের প্রতীক?
সনাতন ধর্মের বৈদিক শাস্ত্রে জন্ম ও মৃত্যুযোগ অশৌচ কি?
মহাভারত পড়ার সময় না থাকলেও এর মূল সূত্রগুলি আমাদের জীবনে কার্যকর প্রমাণ করতে পারে-----------------------
মহাভারতের কিছু বাণী
শ্রীমদভগবদগীতায় উচ্চারিত ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সকল নামের অর্থ ও মাহাত্ম্য
প্রকৃত ভালোবাসার খোঁজে..........
রাধাকৃষ্ণের প্রেম-কাহিনীর প্রকৃত রহস্য
ভক্তি কি ?
মায়া কি? মায়া থেকে পরিত্রাণের উপায় কি?
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কেন মাথায় ময়ূরপালক/পুচ্ছ পরিধান করতেন?
রাজা পুরঞ্জনের কেন পরবর্তী জন্মে নারী হয়ে জন্ম হয়েছিল ?
আরো পড়ুন.....
0 মন্তব্যসমূহ