পবিত্রারোপণী একাদশী মাহাত্ম্য Pobitrarohini Ekadashi Mahatmya

 

 
পবিত্রারোপণী একাদশী মাহাত্ম্য
একদিন মহারাজ যুধিষ্ঠির ভগবান শ্ৰীকৃষ্ণকে জিজ্ঞাসা করলেন হে প্ৰভু ! শ্ৰাবণ মাসের শুক্লপক্ষের একাদশীর নাম কি তা কৃপা করে আমাকে বলুন । শ্ৰীকৃষ্ণ বললেন - হে মহারাজ ! এখন আমি সেই পবিত্ৰ ব্ৰত মাহাত্ম্য বৰ্ণনা করছি , মনোযোগ দিয়ে তা শ্ৰবণ করুন । যা শোনামাত্ৰেই বাজপেয় যজ্ঞের ফল লাভ হয়।
.
প্ৰাচীন কালে দ্বাপর যুগের শুরুতে মহিজীৎ নামে এক বিখ্যাত রাজা ছিলেন । তিনি মাহিম্মতি নগরে রাজত্ব করতেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে তার মনে বিন্দুমাত্ৰ সু- শাস্তি ছিল না । কেননা তিনি ছিলেন অপুত্ৰক ।
পুত্ৰহীনের ইহলোক পরলোক কোথাও সুখ হয় না "। এইরুপ চিন্তা করতে করতে বহুদিন কেটে গেল । কিন্তু তবুও পুত্ৰমুখ দশনে রাজা বঞ্চিতই রইলেন । নিজেকে অত্যন্ত দুৰ্ভাগা মনে করে রাজা চিন্তাগ্ৰস্ত হলেন । প্ৰজাদের সামনে গিয়ে বলতে লাগলেন, হে প্ৰজাবৃন্দ । তোমরা শোন । আমি এই জন্মে তো কোন পাপকাজ করিনি , অন্যায়ভাবে আমার রাজকোষ বৃদ্ধি করিনি , ব্ৰাহ্মণ বা দেবতাদের সম্পদ কখনও গ্ৰহণ করিনি উপরন্তু প্ৰজাদেরকে পুত্রের মতো পালন করেছি , ধৰ্ম অনুযায়ী পৃথিবী শাসন করেছি। দুষ্টদের যথানুরুপ দণ্ড দিয়েছি , সজ্জন ব্যক্তিদের যথাযোগ্য সন্মান করতেও কখনও অবহেলা করিনি ।
.
তাই হে ব্ৰাহ্মণগণ , এই প্ৰকার ধৰ্মপথ অবলম্বন করা সত্ত্বেও কেন আমার পুত্ৰ লাভ হল না , তা আপনারা কৃপা করে অনুসন্ধান করন। রাজার এই প্ৰকার কাতর উক্তি শ্ৰবণে ব্যথিত রাজভক্ত পুরোহিত ব্ৰাহ্মণগণ রাজার মঙ্গলের জন্য গভীর বনে ত্ৰিকালজ্ঞ মুনিঋষির কাছে যেতে মনস্থ করলেন ।বনের মধ্যে ঋষিদের আশ্ৰমসকল দেখতে দেখতে তারা এক মুনির সন্ধান পেলেন । তিনি দীৰ্ঘায়ু , নীরোগ নিরাহারে ঘোর তপস্যায় মগ্ন ছিলেন । সর্বশাস্ত্ৰ বিশারদ ধৰ্মতত্ত্বজ্ঞ ও ত্রিকালজ্ঞ সেই মহামুনি লোমশ নামে পরিচিত । ব্ৰহ্মার এক কল্প অতিবাহিত হলে মুনিবরের গায়ের একটি লোম পরিত্যক্ত হোত । এই কাণে এই মহামুনির নাম লোমশ । তাকে দেখে সকলেই ধন্য হলেন । তারা পরস্পর বলতে লাগলেন যে , আমাদের বহু জন্মের সৌভাগ্যের ফলে আজ আমরা এই মুনিবরের সাক্ষাৎ লাভ করলাম ।
.
তারপর মুনিবর তাদের সম্বোধন করে বললেন কি কারণে আপনারা এখানে এসেছেন এবং কেনই বা আমার এত প্ৰশংসা করছেন , তা স্পষ্ট করে বলুনা আপনাদের যাতে মঙ্গল হয় , আমি নিশ্চয়ই তার চেষ্টা করব ।
ব্ৰাহ্মণেরা বললেন হে ঋষিবর । আমরা যে উদ্দেশ্যে এখানে এসেছি আপনি তা কৃপা করে শুনুন । এ পৃথিবীতে আপনার মতো শ্ৰেষ্ঠ ব্যক্তি আর কোথাও নেই । মহীজিৎ নামে এক রাজা নিঃসন্তান হওয়ায় অতি দুঃখে দিনযাপন করছে । আমরা তার প্রজা , তিনি আমাদেরকে পুত্রের মতো পালন করেন । কিন্তু তিনি পুত্ৰহীন বলে আমরা সবাই মর্মাহত। তার দুঃখ দূর করতে আমরা এই বনে প্ৰবেশ করেছি । হে ব্ৰাহ্মণশ্ৰেষ্ঠ রাজা যাতে পুত্রের মুখ দৰ্শন করতে পারেন , কৃপা করে তার কোন উপায় আমাদের বলুন । তাদের কথা গুনে মুনিবার ধ্যানমগ্ন হলেন । কিছু সময় পরে রাজার পূর্বজন্মবৃত্তান্ত বলতে লাগলেন ।
.
এই রাজা পূৰ্ব্বজন্মে এক দরিদ্র বৈশ্য ছিলেন । একবার তিনি একটি অন্যায় কাৰ্য করে ফেলেন । ব্যবসা করবার জন্য তিনি এক গ্ৰাম থেকে অন্য গ্ৰামে যাতায়াত করতেন। এক সময় তিনি শুক্লাপক্ষের দশমীর দিনে কোথাও যাওয়ার পথে তিনি অত্যন্ত তৃষার্ত হয়ে পড়েন । গ্ৰাম প্ৰান্তে একটি জলাশয় দেখতে পান । সেখানে জলপানের জন্য যান । সেই সময় একটি গাভী নানা জলপান করছিল । তাদেরকে তাড়িয়ে দিয়ে তিনি নিন জলপান কাজে লাগলেন। এই পাপকর্মের ফলে তিনি পুত্ৰসুখ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন । কিন্তু পূৰ্ব্বজন্মের কোন পুণ্যের ফলে তিনি এইরকম নিষ্কণ্টক রাজ্য লাভ করেছেন।
.
হে মুনিবর। শাস্ত্ৰে আছে যে পুণ্য দ্বারা পাপক্ষয় হয়। তাই আপনি এমন একটি পুন্য ব্রতের উপদেশ করুন যাতে তার পারব্দ পাপ দূর হয় এবং আপনার অনুগ্রহে তিনি পুত্ৰসন্তান লাভ করতে পারেন। লোমশ মুনি বললেন শ্ৰাবণ মাসের শুক্লপক্ষের পবিত্ৰারোপণী একাদশী ব্ৰত অভিষ্ট ফল প্ৰদান করে । আপনারা যথাবিধি তা সকলে পালন করুন । লোমশ মুনির উপদেশ শুনে আনন্দ চিত্তে গৃহে প্ৰত্যাবর্তন করে তঁরা রাজাকে সে সকল কথা জানালেন । তারপর সকলে মিলে মুনির নিৰ্দেশ অনুসারে ব্ৰত পালন করলেন । তাদের সকলের পুণ্যফল রাজ্যকে প্ৰদান করলেন ।সেই পুণ্য প্ৰভাবে রাজমহিষী গৰ্ভবতী হলেন । উপযুক্ত সময়ে বলিষ্ঠ , সৰ্বাঙ্গসুন্দর এক পুত্ৰসন্তানের জন্ম দান করলেন । ভবিষোত্তরপুরাণে এই মাহাত্ম্য বৰ্ণিত হয়েছে । এই ব্ৰত মাহাত্মা যিনি পাঠ বা শ্ৰবণ করবেন তিনি সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হবেন এবং পুত্ৰসুখ ভোগ করে অবশেষে দিব্যধাম প্ৰাপ্ত হবেন।
জয়~পবিত্রারোপন একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য কি!!

 





সনাতন ধর্ম সম্পর্কে জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন-

আরো জানুনঃ

কেন প্রসাদভোজী হবেন? সমস্ত বৈদিক শাস্ত্র (বেদ,সংহিতা, মহাভারত, গীতা,ভাগবত,পুরাণ,উপনিষদ) থেকে প্রমান দেওয়া হলো...

চার যুগ-সত্য,ত্রেতা,দ্বাপর ও কলির সময় পরিমাণ ও বৈশিষ্ট্যসমূহঃ

শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর কিছু অমৃত বাণী

মহাভারতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কিছু বাণী ও উপদেশ

মনুষ্য দেহের কথা আলোচনা

আপনি কি অনেক হতাশায় ভুগছেন? সকল সমস্যাগুলোর সমাধান খুজে পান!!!!!!!!!!

ভগবান বিষ্ণুর গাত্র বর্ণ নীল কেন?

এই জগতে প্রকৃত জ্ঞানী,কে এই জগতে প্রকৃত সুখী,আর কে-ই বা প্রকৃত দুঃখী ?

অনাচার কাকে বলে ও কয় প্রকার?

কলিযুগের মানুষদের ভগবানের নামে রুচি নেই কেন ?  

ঘট কিসের প্রতীক? 

সনাতন ধর্মের বৈদিক শাস্ত্রে জন্ম ও মৃত্যুযোগ অশৌচ কি?

মহাভারত পড়ার সময় না থাকলেও এর মূল সূত্রগুলি আমাদের জীবনে কার্যকর প্রমাণ করতে পারে----------------------- 

মহাভারতের কিছু বাণী

শ্রীমদভগবদগীতায় উচ্চারিত ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সকল নামের অর্থ ও মাহাত্ম্য

প্রকৃত ভালোবাসার খোঁজে.......... 

রাধাকৃষ্ণের প্রেম-কাহিনীর প্রকৃত রহস্য

ভক্তি কি ?

 মায়া কি? মায়া থেকে পরিত্রাণের উপায় কি? 

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কেন মাথায় ময়ূরপালক/পুচ্ছ পরিধান করতেন?

রাজা পুরঞ্জনের কেন পরবর্তী জন্মে নারী হয়ে জন্ম হয়েছিল ?


 
আরো পড়ুন.....

আমাদের সমস্ত দুঃখের কারণ অজ্ঞনতা। সুতরাং জানতে হলে পড়তে হবে।

 

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা পড়তে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন.......

 এখানে ক্লিক করুন


শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার আলোকে  মানব জীবনের গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্বজিজ্ঞাসা প্রশ্ন-উত্তরে জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন.......

 এখানে ক্লিক করুন

 একাদশী ব্রত পালনের তাৎপর্য ও নিয়মাবলি এবং বছরের সব একাদশির মাহাত্ম্য সম্পর্কে জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন.......

 এখানে ক্লিক করুন

পূজা-পার্বনের তাৎপর্য ও মহিমা সম্পর্কে জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন.......

এখানে ক্লিক করুন

 

আরতি-উপসনা-প্রার্থনা সম্পর্কে জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন.......

 এখানে ক্লিক করুন



সনাতন পারমার্থিক জ্ঞান সম্পর্কে জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন.......

 এখানে ক্লিক করুন

গুরুতত্ত্ব সম্পর্কে জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন.......

 এখানে ক্লিক করুন


অডিও ভিডিও ভজন-আরতি-নামকীর্তন শুনুন এবং ডাউনলোড করুন নিচের লিংকে ক্লিক করে...

 এখানে ক্লিক করুন


 
 
সনাতন ধর্ম সম্পর্কে নিজে জানুন অন্যকে জানার ‍সুযোগ করে দিতে অবশ্যই সকলকে শেয়ার করুন..........................................



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ