দামোদর মাস ও ব্রত...মাহাত্ম্য
গৌরাব্দ মাসের একটি মাসের নাম দামোদর মাস।
এই দামোদর মাসে মা যশোদা দড়ি দিয়ে শ্রীকৃষ্ণের উদরে বেধেঁছিলেন। এই মাসটি শ্রীহরির অতি প্রিয় মাস, কেননা, এটি তার নিত্যসঙ্গিনী শ্রীমতি রাধারানীর নামাঙ্গিত, তিনি কার্ত্তিকাদেবী। তিনি ভক্তজনের অন্তরে দিব্য ভক্তিভাব সঞ্চারিত করে তাঁদের হৃদয় নির্মল করেন।
এই ব্রতমাসে যে কোন আধ্যাত্মিক চর্চা অতি সামান্য হলেও বিপুল পারমার্থিক অগ্রগতি সাধন করে। পদ্মপুরাণে উল্লেখ করা হয়েছে যে, কার্ত্তিক ব্রত বা দামোদর পূজা পালনের ফল শত জন্ম স্থায়ী হয়। সে জন্য সারা বিশ্বজুড়ে এই মাসে ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে ঘৃত প্রদীপ নিবেদনের দ্বারা আরাধনা করা হয় এবং আন্তরিকভাবে এই শুভাশীষ প্রার্থনা করা হয় যে, তিনি যেন আমাদের এমন শুদ্ধ প্রেমভক্তি প্রদান করেন যা আমাদের বিষয়াসক্ত অন্তরকে বিগলিত করে।
যাঁরা গৃহে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে সাদরে অভ্যর্থনা করে তাঁকে ঘৃত প্রদীপ নিবেদন ও দামোদরাষ্টকম্ কীর্ত্তন করে তাঁর প্রতিবিধান করেন, তাদের জন্য সেটি অত্যন্ত মঙ্গলপ্রদ। এই দিব্য উৎসবের সময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দামোদর লীলামৃত আলোচনার ফলে তাঁর প্রতি আমাদের ভক্তি বিকশিত হয়। আপনার নিজ গৃহকে ভগবানের জন্য উন্মুক্ত করে এই মধুর লীলার প্রকটিত ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রতি প্রেমভক্তির দিব্য তরঙ্গ অনুভব করুন।
এবারের দামোদর মাসে দামোদরের প্রীতির জন্য ঘৃত প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত করুন এবং সারা বছর আপনার গৃহকে মঙ্গলময় করে রাখুন। এ উৎসবকে পারিবারিক মিলনের একটি উপলক্ষ করে তুলুন এবং স্বজন ও বন্ধুবর্গ মিলিত হয়ে এই মহিমান্বিত দামোদর উৎসব পালন করে আপনার গৃহকে আনন্দমুখর করে তুলুন।
দামোদর প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাহাত্ম্যঃ
স্কন্দপুরাণে কার্তিক মাহাত্ম্য,
কার্তিকে নিমেষার্দ্ধকাল দীপদান ফলে কোটিকল্প অর্জিত বহু পাপ বিলুপ্ত হয়। হে বিপ্রেন্দ্র! কার্তিকে কেশবপ্রিয় দীপদানের মাহাত্ম্য শ্রবণ কর, দীপদান দ্বারা পৃথিবীতে আর পুনর্জন্ম হয় না। কুরুক্ষেত্রে সূর্যগ্রহণে, চন্দ্রগ্রহণে নর্মদাতে যে ফল, কার্তিকে দীপদানে তার কোটিগুণ ফল হয়। কার্তিকে যার দ্বীপ, ঘৃত বা তিলতৈল দ্বারা প্রজ্জ্বলিত হয়, হে মুনিবর তার অশ্বমেধ যজ্ঞে কি ফল? কার্তিকে জনার্দনে দীপদান ফলে মন্ত্রহীন, ক্রিয়াহীন, শৌচহীন সকলই সম্পূর্ণতা প্রাপ্ত হয়।
কার্তিকে কেশবের অগ্রে যিনি দীপ দান করেন, তার সর্বযজ্ঞ দ্বারা যজন ও সর্বতীর্থে স্নান হয়।কার্তিকে কেশবের যে পর্যন্ত দীপজ্যোতি প্রজ্জ্বলিত না হয়, সে পর্যন্ত পূণ্যসমূহ স্বর্গে, মর্ত্যে ও রসাতলে গর্জন করে। হে দ্বিজ ! পুরাকালীয় পিতৃগণগাথা কীর্তিত হতে শোনা যায় আমাদের কুলে পৃথিবীতে পিতৃভক্ত পুত্র জন্মগ্রহণ করবে, যে পুত্র কার্তিকে কেশবকে দীপদান দ্বারা প্রসন্ন করবে এবং চক্রপাণির প্রসাদে আমরা নিশ্চয়ই মুক্তি পাব।
মেরু ও মন্দর পর্বত সদৃশ অশেষ পাপসমূহ করলেও কার্তিকে দীপদান প্রভাবে সর্বপাপ দগ্ধ হয়- এতে কোন সন্দেহ নাই। কার্তিকে বাসুদেবের সম্মূখে গৃহে বা আয়তনে দীপদানে মহাফল বৈকুন্ঠলোক প্রাপ্ত হয়। যিনি কার্তিক মাসে মদূসুদনের অগ্রে দীপদান করেছেন, তিনিই মনুষ্যলোকে জন্ম সার্থক করেছেন। তিনি ধন্য, তিনি কীর্তিমান।
কার্তিকে অতি অল্পকাল মাত্র দীপদানের যে ফল, যজ্ঞশত দ্বারা বা তীর্থশত স্নান দ্বারা প্রাপ্য নয়। অগ্রে দীপদান করেছেন, তিনিই মনুষ্যলোকে জন্ম সার্থক করেছেন। তিনি ধন্য, তিনি কীর্তিমান। কার্তিকে অতি অল্পকাল মাত্র দীপদানের যে ফল, যজ্ঞশত দ্বারা বা তীর্থশত স্নাান দ্বারা প্রাপ্য নয়।ব্রত মহিমা/ফলাফল
দামোদর ব্রতকালীন সময়ে কোন ভক্ত যদি ভগবান দামোদরের উদ্দেশ্যে একটি ঘৃত প্রদীপ অর্পণ করে, তাহলে তাঁর শত সহস্র জন্মের পাপরাশি চোঁখের অর্ধ-পলকেই নষ্ট হয়ে যায়।
কোন ব্যক্তি যদি কার্তিক মাসে ভগবান দামোদরের উদ্দেশ্যে প্রদীপ নিবেদন করে। তিনি ইতিমধ্যে সমস্ত যাগ-যজ্ঞ সম্পন্ন করেন এবং সকল তীর্থ স্থানের ফল প্রাপ্ত হন।
যিনি অন্যের নিবেদনের জন্য ঘৃত প্রদীপ প্রজ্জলন করেন, ভগবান দামোদর তাঁকেও মহিমান্বিত করেন। কার্তিক মাসে যাঁরা শ্রদ্ধাভরে ভগবান দামোদরের অপ্রাকৃত লীলা শ্রবণ করেন, তাঁরা শত গো-দানের ফল লাভ করেন।
যে ভক্ত কার্তিক মাসে ঐকান্তিকভাবে কায়-মন-বাক্যে ভগবান দামোদরের অপ্রাকৃত লীলা শ্রবণ করেন, সে শত পূর্ব পুরুষকে অনায়াসে মুক্ত করতে পারে।
কিভাবে এই ব্রত আমি পালন করব ?
দামোদর মাসে প্রতিদিন ভগবান শ্রীদামোদরের চিত্রপটের উদ্দেশ্যে ঘৃতপ্রদীপ নিবেদনে সকলকে উৎসাহিত করতে হবে।
কে ঘৃত প্রদীপ নিবেদন করতে পারেঃ ছেলে-মেয়ে, যুবক-বৃদ্ধ নির্বিশেষে সকলে ঘৃত প্রদীপ নিবেদন করতে পারে।
কখনঃ ভোরে অথবা সন্ধ্যায় অথবা উভয় সময়ে ঘৃত প্রদীপ নিবেদন করা যাবে।
কোথায়ঃ ভগবান শ্রীদামোদরের বিগ্রহ/চিত্রপট আপনার গৃহের মূল মন্দির বা সুবিধাজনক স্থানে স্থাপন করে এই ব্রত পালন করা যাবে।
ঘৃত প্রদীপ নিবেদনের বিধিঃ
শলিতা প্রজ্জলনের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ঘি ব্যবহার করা উচিত অথবা তিল তৈল, তবে অন্য কোন তৈল ব্যবহার করা উচিত নয়। পূজা চলাকালীন সময় সহজ ভজন-কীর্তন করতে পারে। পরিবারের সকলে পূজায় অংশগ্রহণ করলে সবচেয়ে ভাল হয়। বামহাতে ঘন্টা বাজাতে বাজাতে ঘৃত প্রদীপটি ভগবান শ্রী দামোদরের চিত্রপটের উদ্দেশ্যে চরণে ৪ বার, নাভি দেশে ২ বার, মুখ মন্ডলে ৩ বার এবং সর্বাঙ্গে ৭ বার ঘড়ির কাটার মতো ঘুরিয়ে নিবেদন করতে হবে।
পঞ্চতত্ত্ব ও শ্রীল গুরু দেবের উদ্দেশ্যে ৩ বার দেখাতে হবে। তারপর প্রদীপটি পাশে রেখে দিতে হবে এবং তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত জ্বলবে। এছারাও তা দিয়ে আকাশ প্রদিপ দেখানো যেতে পারে। বাড়ির সকলকে দিয়ে একই পদ্ধতিতে ক্রমান্বয়ে ঘৃত প্রদীপ নিবেদন করতে হবে। প্রদীপ নিবেদনের সময় দামোদর অষ্টকম কীর্তন খুবই ফলপ্রদ যদিও বাধ্যতামূলক নয়।
পূজার পূর্বে বা পরে ভগবান দামোদরের অপ্রাকৃত লীলা পাঠ করাও মাহাত্মপূর্ণ যদিও বাধ্যতামূলক নয়। পূজা শেষে প্রসাদ বিতরণ করাকে প্রবলভাবে উৎসাহিত করা হয় যদিও বাধ্যতামূলক নয়। মাটির প্রদীপ পুনরায় ব্যবহার করা উচিত নয়। প্রতিদিন নতুন প্রদীপ ও শলিতা ব্যবহার করতে হবে।
দামোদর ব্রত পালন l
কার্ত্তিক মাস শ্রীহরির সেবার মাস, কার্তিক মাস বা দামোদর মাসএই দামোদর মাসে মা যশোদা দড়ি দিয়ে শ্রীকৃষ্ণের উদরে বেধেঁছিলেন। এই মাসটি শ্রীহরির অতি প্রিয় মাস, কেননা, এটি তার নিত্যসঙ্গিনী শ্রীমতি রাধারানীর নামাঙ্গিত, তিনি কার্ত্তিকাদেবী। তিনি ভক্তজনের অন্তরে দিব্য ভক্তিভাব সঞ্চারিত করে তাঁদের হৃদয় নির্মল করেন।
এই ব্রতমাসে যে কোন আধ্যাত্মিক চর্চা অতি সামান্য হলেও বিপুল পারমার্থিক অগ্রগতি সাধন করে। পদ্মপুরাণে উল্লেখ করা হয়েছে যে, কার্ত্তিক ব্রত বা দামোদর পূজা পালনের ফল শত জন্ম স্থায়ী হয়। সে জন্য সারা বিশ্বজুড়ে এই মাসে ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে ঘৃত প্রদীপ নিবেদনের দ্বারা আরাধনা করা হয় এবং আন্তরিকভাবে এই শুভাশীষ প্রার্থনা করা হয় যে, তিনি যেন আমাদের এমন শুদ্ধ প্রেমভক্তি প্রদান করেন যা আমাদের বিষয়াসক্ত অন্তরকে বিগলিত করে।
যাঁরা গৃহে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে সাদরে অভ্যর্থনা করে তাঁকে ঘৃত প্রদীপ নিবেদন ও দামোদরাষ্টকম্ কীর্ত্তন করে তাঁর প্রতিবিধান করেন, তাদের জন্য সেটি অত্যন্ত মঙ্গলপ্রদ। এই দিব্য উৎসবের সময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দামোদর লীলামৃত আলোচনার ফলে তাঁর প্রতি আমাদের ভক্তি বিকশিত হয়। আপনার নিজ গৃহকে ভগবানের জন্য উন্মুক্ত করে এই মধুর লীলার প্রকটিত ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রতি প্রেমভক্তির দিব্য তরঙ্গ অনুভব করুন।
এবারের দামোদর মাসে দামোদরের প্রীতির জন্য ঘৃত প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত করুন এবং সারা বছর আপনার গৃহকে মঙ্গলময় করে রাখুন। এ উৎসবকে পারিবারিক মিলনের একটি উপলক্ষ করে তুলুন এবং স্বজন ও বন্ধুবর্গ মিলিত হয়ে এই মহিমান্বিত দামোদর উৎসব পালন করে আপনার গৃহকে আনন্দমুখর করে তুলুন।
দামোদর প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাহাত্ম্যঃ
স্কন্দপুরাণে কার্তিক মাহাত্ম্য,
কার্তিকে নিমেষার্দ্ধকাল দীপদান ফলে কোটিকল্প অর্জিত বহু পাপ বিলুপ্ত হয়। হে বিপ্রেন্দ্র! কার্তিকে কেশবপ্রিয় দীপদানের মাহাত্ম্য শ্রবণ কর, দীপদান দ্বারা পৃথিবীতে আর পুনর্জন্ম হয় না। কুরুক্ষেত্রে সূর্যগ্রহণে, চন্দ্রগ্রহণে নর্মদাতে যে ফল, কার্তিকে দীপদানে তার কোটিগুণ ফল হয়। কার্তিকে যার দ্বীপ, ঘৃত বা তিলতৈল দ্বারা প্রজ্জ্বলিত হয়, হে মুনিবর তার অশ্বমেধ যজ্ঞে কি ফল? কার্তিকে জনার্দনে দীপদান ফলে মন্ত্রহীন, ক্রিয়াহীন, শৌচহীন সকলই সম্পূর্ণতা প্রাপ্ত হয়।
কার্তিকে কেশবের অগ্রে যিনি দীপ দান করেন, তার সর্বযজ্ঞ দ্বারা যজন ও সর্বতীর্থে স্নান হয়।কার্তিকে কেশবের যে পর্যন্ত দীপজ্যোতি প্রজ্জ্বলিত না হয়, সে পর্যন্ত পূণ্যসমূহ স্বর্গে, মর্ত্যে ও রসাতলে গর্জন করে। হে দ্বিজ ! পুরাকালীয় পিতৃগণগাথা কীর্তিত হতে শোনা যায় আমাদের কুলে পৃথিবীতে পিতৃভক্ত পুত্র জন্মগ্রহণ করবে, যে পুত্র কার্তিকে কেশবকে দীপদান দ্বারা প্রসন্ন করবে এবং চক্রপাণির প্রসাদে আমরা নিশ্চয়ই মুক্তি পাব।
মেরু ও মন্দর পর্বত সদৃশ অশেষ পাপসমূহ করলেও কার্তিকে দীপদান প্রভাবে সর্বপাপ দগ্ধ হয়- এতে কোন সন্দেহ নাই। কার্তিকে বাসুদেবের সম্মূখে গৃহে বা আয়তনে দীপদানে মহাফল বৈকুন্ঠলোক প্রাপ্ত হয়। যিনি কার্তিক মাসে মদূসুদনের অগ্রে দীপদান করেছেন, তিনিই মনুষ্যলোকে জন্ম সার্থক করেছেন। তিনি ধন্য, তিনি কীর্তিমান।
কার্তিকে অতি অল্পকাল মাত্র দীপদানের যে ফল, যজ্ঞশত দ্বারা বা তীর্থশত স্নান দ্বারা প্রাপ্য নয়। অগ্রে দীপদান করেছেন, তিনিই মনুষ্যলোকে জন্ম সার্থক করেছেন। তিনি ধন্য, তিনি কীর্তিমান। কার্তিকে অতি অল্পকাল মাত্র দীপদানের যে ফল, যজ্ঞশত দ্বারা বা তীর্থশত স্নাান দ্বারা প্রাপ্য নয়।ব্রত মহিমা/ফলাফল
দামোদর ব্রতকালীন সময়ে কোন ভক্ত যদি ভগবান দামোদরের উদ্দেশ্যে একটি ঘৃত প্রদীপ অর্পণ করে, তাহলে তাঁর শত সহস্র জন্মের পাপরাশি চোঁখের অর্ধ-পলকেই নষ্ট হয়ে যায়।
কোন ব্যক্তি যদি কার্তিক মাসে ভগবান দামোদরের উদ্দেশ্যে প্রদীপ নিবেদন করে। তিনি ইতিমধ্যে সমস্ত যাগ-যজ্ঞ সম্পন্ন করেন এবং সকল তীর্থ স্থানের ফল প্রাপ্ত হন।
যিনি অন্যের নিবেদনের জন্য ঘৃত প্রদীপ প্রজ্জলন করেন, ভগবান দামোদর তাঁকেও মহিমান্বিত করেন। কার্তিক মাসে যাঁরা শ্রদ্ধাভরে ভগবান দামোদরের অপ্রাকৃত লীলা শ্রবণ করেন, তাঁরা শত গো-দানের ফল লাভ করেন।
যে ভক্ত কার্তিক মাসে ঐকান্তিকভাবে কায়-মন-বাক্যে ভগবান দামোদরের অপ্রাকৃত লীলা শ্রবণ করেন, সে শত পূর্ব পুরুষকে অনায়াসে মুক্ত করতে পারে।
কিভাবে এই ব্রত আমি পালন করব ?
দামোদর মাসে প্রতিদিন ভগবান শ্রীদামোদরের চিত্রপটের উদ্দেশ্যে ঘৃতপ্রদীপ নিবেদনে সকলকে উৎসাহিত করতে হবে।
কে ঘৃত প্রদীপ নিবেদন করতে পারেঃ ছেলে-মেয়ে, যুবক-বৃদ্ধ নির্বিশেষে সকলে ঘৃত প্রদীপ নিবেদন করতে পারে।
কখনঃ ভোরে অথবা সন্ধ্যায় অথবা উভয় সময়ে ঘৃত প্রদীপ নিবেদন করা যাবে।
কোথায়ঃ ভগবান শ্রীদামোদরের বিগ্রহ/চিত্রপট আপনার গৃহের মূল মন্দির বা সুবিধাজনক স্থানে স্থাপন করে এই ব্রত পালন করা যাবে।
ঘৃত প্রদীপ নিবেদনের বিধিঃ
শলিতা প্রজ্জলনের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ঘি ব্যবহার করা উচিত অথবা তিল তৈল, তবে অন্য কোন তৈল ব্যবহার করা উচিত নয়। পূজা চলাকালীন সময় সহজ ভজন-কীর্তন করতে পারে। পরিবারের সকলে পূজায় অংশগ্রহণ করলে সবচেয়ে ভাল হয়। বামহাতে ঘন্টা বাজাতে বাজাতে ঘৃত প্রদীপটি ভগবান শ্রী দামোদরের চিত্রপটের উদ্দেশ্যে চরণে ৪ বার, নাভি দেশে ২ বার, মুখ মন্ডলে ৩ বার এবং সর্বাঙ্গে ৭ বার ঘড়ির কাটার মতো ঘুরিয়ে নিবেদন করতে হবে।
পঞ্চতত্ত্ব ও শ্রীল গুরু দেবের উদ্দেশ্যে ৩ বার দেখাতে হবে। তারপর প্রদীপটি পাশে রেখে দিতে হবে এবং তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত জ্বলবে। এছারাও তা দিয়ে আকাশ প্রদিপ দেখানো যেতে পারে। বাড়ির সকলকে দিয়ে একই পদ্ধতিতে ক্রমান্বয়ে ঘৃত প্রদীপ নিবেদন করতে হবে। প্রদীপ নিবেদনের সময় দামোদর অষ্টকম কীর্তন খুবই ফলপ্রদ যদিও বাধ্যতামূলক নয়।
পূজার পূর্বে বা পরে ভগবান দামোদরের অপ্রাকৃত লীলা পাঠ করাও মাহাত্মপূর্ণ যদিও বাধ্যতামূলক নয়। পূজা শেষে প্রসাদ বিতরণ করাকে প্রবলভাবে উৎসাহিত করা হয় যদিও বাধ্যতামূলক নয়। মাটির প্রদীপ পুনরায় ব্যবহার করা উচিত নয়। প্রতিদিন নতুন প্রদীপ ও শলিতা ব্যবহার করতে হবে।
দামোদর ব্রত পালন l
ভক্তগণের কাছে অতীব মাহাত্ম্যপূর্ণ একটি মাস। কেননা এই মাসে হরিভক্তির অনুকূল যে কোন কার্যই সহস্রগুণ অধিক ফলদান করে। ভক্তিভরে স্বল্প পরিমাণ ভগবদ্ সেবা সম্পাদন করলেও ভগবান শ্রীহরি অতিশয় প্রীত হন। বিশেষ করে কার্তিক মাসের অন্যতম একটি ভগবৎ সেবা হচ্ছে ভগবানের মন্দিরে বা গৃহমন্দিরে ভগবানের উদ্দেশ্যে দীপদান।এই সম্বন্ধে বিভিন্ন শাস্ত্রে বলা হয়েছে যে, এই মাসে শ্রীহরি মন্দিরে দীপ দান করলে তাকে আর এই জন্ম মৃত্যুময় জগতে ফিরে আসতে হয় না। "শ্রীহরিভক্তিবিলাস" গ্রন্থের ১৬শ বিলাস অধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে যে, কার্তিক মাসে দেবালয়ে ভক্তিভাবে দীপদান, অখন্ড দীপাবলীর আয়োজন,বাড়িতে বাড়িতেয় দীপমালা সজ্জা ও আকাশ প্রদীপ দান করলে ভগবান শ্রীহরি প্রীতিলাভ করেন। । নিয়ম সেবার কাল ও অক্ষয় পূণ্য অর্জনের মাস। এ মাসে সকলেরই নিরামিষ ভোজন করা উচিত।প্রতিদিন ভাগবতের প্রথম স্কন্ধের দামবন্ধন লীলী পাঠ করা উচিত। দিনের বেলা ভোগরাগ, প্রসাদ গ্রহণ করা উচিত।স্কন্দ পুরাণে বলা হয়েছে — - "অব্রতেন ক্ষিপেদ যন্ত মাসং দামোদর - প্রিয়ম। তির্যগমোনীমবাপ্ লোতি সর্ব ধর্ম বহিস্কৃতঃ।।স ব্রহ্মহ স গোঘ্নশ্চ স্বর্ণস্তেয়ী সদানুতী। নকরোতি মুণিশ্রেষ্ঠ যো নঃ কার্ত্তিকে ব্রতম।। হে মুণিশ্রেষ্ঠ নারদ! ভগবান শ্রী দামোদরের প্রিয় কার্ত্তিক মাস যে ব্যক্তি বীণা নিয়মে অতিবাহিত করে সে সর্বধর্ম বহিস্কৃত ও তীর্যক যোনী প্রাপ্ত হয়ে থাকে।যে ব্যক্তি কার্ত্তিক ব্রত পালন করে না, সে ব্রহ্মঘাতী, গো ঘাতী,স্বর্ণ অপহারী ও সদা মিথ্যাবাদী হয়ে থাকে। দামোদর আরতি নিবেদনের নিয়ম : ঘৃত বা তিলের তৈল যুক্ত কর্পূর মিশ্রিত প্রদীপ দ্বারা ভক্তি সহকারে ভগবানের চরণে চার বার,নাভি দেশে দুই বার, মুখ ম-লে তিনবার এবং সর্বাঙ্গে সাতবার ডানদিক থেকে প্রদীপ ঘুরিয়ে আরতি করুন। মাটির প্রদীপ একবারই ব্যবহারযোগ্য। এ প্রসঙ্গে আর একটি কাহিনী আছে-কোন এক মুষিকা (স্ত্রী ইঁদুর) কার্তিক বা দামোদর মাসে একাদশীর দিনে ঘটনাক্রমে অন্যের জ্বালানো প্রদীপের তেল খেতে গিয়ে তার মুখের সাহায্যে প্রদীপের শৈলত্যে জাগিয়ে দেয়। ফলে প্রায় নিভে যাওয়া প্রদীপের আলো আরো উজ্জ্বল হয়ে উঠে এবং এই সুকৃতির ফলে তার বৈকুণ্ঠ গতি লাভ হয়। শাস্ত্রে আরো বলা হয়েছে, যদি কেউ প্রদীপ দেখাতে নাও পারে শুধুমাত্র প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত বিষ্ণু মন্দির দর্শন করেন তবে সেই বংশের কেউ নরকগামী হন না। কার্তিক বা দামোদর মাসের গুরুত্ব আরোপ করতে গিয়ে শ্রীল প্রভুপাদ বলেন এই পবিত্র মাসে যারা ভগবান শ্রীদামোদরের উদ্দেশ্যে ভক্তিসহকারে ভগবানের আনন্দ বিধানের জন্য প্রদীপ নিবেদন করে তাদের অজ্ঞান অন্ধকার দূরীভূত হয়ে হৃদয়ে জ্ঞানপ্রদীপ প্রজ্জ্বলিত হয় এবং সমস্ত কলুষতা থেকে মুক্ত হয়। অবশেষে মানব জীবনের চরম উদ্দেশ্য কৃষ্ণভক্তি লাভ করে গোলোকে গতি লাভ হয়।দামোদরব্রত মাহাত্ম্য গ্রন্থ অাছে যেকোন ইসকন মন্দির থেকে কিনে নিবেন।।।
দামোদর ব্রতের মাহাত্ম্য স্কন্দ ও পদ্মপুরাণে দামোদর ব্রতের মাহাত্ম্য প্রসঙ্গে বলা হয়েছে :-
সর্বতীর্থে যে স্নান, সর্বদানের যে ফল, কার্তিক মাসের কোটি অংশের একাংশেরও সমান হয় না।
কার্তিকের সমান মাস নাই, সত্যযুগের সমান যুগ না, বেদের সমান শাস্ত্র নাই, গঙ্গার সমান তীর্থ নাই।
যে মানব কার্তিকে শ্রীবিষ্ণু মন্দির প্রদক্ষিণ করে সে পদে পদে অশ্বমেধ যজ্ঞের ফল ভাগী হয়।
যে মানব কার্তিকে শ্রীহরির সম্মুখে নৃত্য,গীত,বাদ্য,ভক্তিসহ করে,সে অক্ষয়পদ বিষ্ণুধাম প্রাপ্ত হয়।
হে মুনিবর ! কার্তিকে যিনি হরিকথা শ্রবণ করেন, তিনি শতকোটি জন্মের আপদসমূহ থেকে নিস্তার পান।
কার্তিকে নিমেষার্দ্ধকাল দীপদান ফলে সহস্রকোটিকল্প অর্জিত বহু পাপ বিলুপ্ত হয়।
মেরু ও মন্দর পর্বত সদৃশ অশেষ পাপ করলেও কার্তিকে দীপদান প্রভাবে সর্বপাপ দগ্ধ হয় -এতে সন্দেহ নাই।
এছাড়া আরো অনেক মাহাত্ম্য পুরাণে বর্নিত আছে :
বন্ধুদের অনুরোধ করব,আপনারা দামোদর ব্রত পালন করুন এবং মানব জীবন ধন্য করুন। এই মাসে বেশি করে হরিনাম জপ করুন এবং প্রতিদিন সন্ধ্যায় ভগবান দামোদরকে দীপদান করুন।
দামোদর মাস মানেই ১০০০ গুণ বোনাসের মাস :
৩০০০ বার বিষ্ণু নামে ১ বার কৃষ্ণ নামের সমান হয়। আর এই দামোদর মাসে মাত্র ১ বার কৃষ্ণ নাম নিলে ১০০০ বার কৃষ্ণ নামের সমান হয়।
আমরা জানি, প্রতিদিন ১৬ মালা করে ১ কোটি মহামন্ত্র জপ করতে প্রায় ১৬ বছর সময় লাগে। কিন্তু এই দামোদর মাসে ভগবান আমাদেরকে একটি বিশেষ বোনাস উপহার দিচ্ছেন। মাত্র ১ বার কৃষ্ণ নাম নিলে ১০০০ বার কৃষ্ণ নামের সমান হবে। অর্থাৎ ১০০০ গুণ বেশি ফল পাওয়া যাবে।
যদি কেউ প্রতিদিন ১৬ মালা জপ করেন তাহলে অনায়াসে সে এই ৩০ দিনেই প্রায় ৫ কোটি মহামন্ত্র জপের সমান ফল পাবেন। অর্থাৎ প্রায় ৮০ বছরের ফল পাচ্ছেন মাত্র এই ১ মাসে।
তাই এই দামোদর মাসকে ভগবানের বিশেষ বোনাসের মাসও বলা হয়।
সনাতন ধর্ম সম্পর্কে জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন-
আরো জানুনঃ
কেন প্রসাদভোজী হবেন? সমস্ত বৈদিক শাস্ত্র (বেদ,সংহিতা, মহাভারত, গীতা,ভাগবত,পুরাণ,উপনিষদ) থেকে প্রমান দেওয়া হলো...
চার যুগ-সত্য,ত্রেতা,দ্বাপর ও কলির সময় পরিমাণ ও বৈশিষ্ট্যসমূহঃ
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর কিছু অমৃত বাণী
মহাভারতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কিছু বাণী ও উপদেশ
মনুষ্য দেহের কথা আলোচনা
আপনি কি অনেক হতাশায় ভুগছেন? সকল সমস্যাগুলোর সমাধান খুজে পান!!!!!!!!!!
ভগবান বিষ্ণুর গাত্র বর্ণ নীল কেন?
এই জগতে প্রকৃত জ্ঞানী,কে এই জগতে প্রকৃত সুখী,আর কে-ই বা প্রকৃত দুঃখী ?
অনাচার কাকে বলে ও কয় প্রকার?
কলিযুগের মানুষদের ভগবানের নামে রুচি নেই কেন ?
ঘট কিসের প্রতীক?
সনাতন ধর্মের বৈদিক শাস্ত্রে জন্ম ও মৃত্যুযোগ অশৌচ কি?
মহাভারত পড়ার সময় না থাকলেও এর মূল সূত্রগুলি আমাদের জীবনে কার্যকর প্রমাণ করতে পারে-----------------------
মহাভারতের কিছু বাণী
শ্রীমদভগবদগীতায় উচ্চারিত ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সকল নামের অর্থ ও মাহাত্ম্য
প্রকৃত ভালোবাসার খোঁজে..........
রাধাকৃষ্ণের প্রেম-কাহিনীর প্রকৃত রহস্য
ভক্তি কি ?
মায়া কি? মায়া থেকে পরিত্রাণের উপায় কি?
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কেন মাথায় ময়ূরপালক/পুচ্ছ পরিধান করতেন?
রাজা পুরঞ্জনের কেন পরবর্তী জন্মে নারী হয়ে জন্ম হয়েছিল ?
আরো পড়ুন.....
সনাতন ধর্ম সম্পর্কে নিজে জানুন অন্যকে জানার সুযোগ করে দিতে অবশ্যই সকলকে শেয়ার করুন..........
0 মন্তব্যসমূহ