যুধিষ্ঠি
বললেন-হে কৃষ্ণ!! পৌষ মাসের শুক্লপক্ষের একাদশীর নাম কি? বিধিই বা কি,কোন
দেবতা ঐ দিনে পূজিত হন এবং আপনি কার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে সেই ব্রতফল প্রদান
করেছিলেন কৃপা করে আমাকে সবিস্তারে বলুন!!
.
শ্রীকৃষ্ণ
বললেন–হে মহারাজ!! এই একাদশী “পুত্রদা” নামে প্রসিদ্ধ। সর্বপাপবিনাশিনী ও
কামদা এই একাদশীর অধিষ্ঠাত্রী দেবতা হলেন সিদ্ধিদাতা নারায়ণ!! ত্রিলোকে এর
মত শ্রেষ্ঠ ব্রত নেই! এই ব্রতকারীকে নারায়ণ বিদ্বান ও যশস্বী করে তোলেন!এখন
আমার কাছে এ-ই ব্রতের মাহাত্ম্য শ্রবণ কর। ভদ্রাবতী পুরীতে সুকেতুমান নামে
এক রাজা ছিলেন!তাঁর রানীর নাম ছিল শৈব্যা!! রাজদম্পতি বেশ সুখেই দিনযাপন
করছিলেন!!
.
বংশরক্ষার জন্য বহুদিন ধরে ধর্মকর্মের অনুষ্ঠান করেও যখন পুত্রলাভ হল না!!তখন রাজা দুশ্চিন্তায় কাতর হয়ে পড়লেন।
তাই
সকল ঐশ্বর্য্যবান হয়েও পুত্রহীন রাজার মনে কোন সুখ ছিল না!! তিনি
ভাবতেন–পুত্রহীনের জন্ম বৃথা ও গৃহশূন্য। পিতৃ–দেব –মনুষ্যলোকের কাছে যে ঋণ
শাস্ত্রে উল্লেখ আছে,তা পুত্র বিনা পরিশোধ হয় না! পুত্রবানজনের এ জগতে
যশলাভ ও উত্তম গতি লাভ হয় এবং তাদের আয়ু,আরোগ্য ,সম্পত্তি প্রভৃতি বিদ্যমান
থাকে!! নানা দুশ্চিন্তাগ্রস্থ রাজা আত্মহত্যা করবেন বলে স্থির করলেন।
কিন্তু পরে বিচার করে দেখলেন – ‘আত্মহত্যা মহাপাপ,এর ফলে কেবল দেহের
বিনাশমাত্র হবে!!
.
কিন্তু
আমার পুত্রহীনতা তো দূর হবে না।তারপর একদিন রাজা নিবিড় বনে গমন করলেন!!বন
ভ্রমণ করতে করতে দ্বিপ্রহর অতিক্রান্ত হলে রাজা ক্ষুধা-তৃষ্ণায় অত্যন্ত
কাতর হলেন!! এদিক ওদিক জলাদির অনুসন্ধান করতে লাগলেন। তিনি চক্রবাক,রাজহংস
এবং নানারকম মাছে পরিপূর্ণ একটি মনোরম সরোবর দেখতে পেলেন!!সরোবরের কাছে
মুনিদের একটি আশ্রম ছিল।তিনি সেখানে উপস্থিত হলেন। সরোবর তীরে মুনিগণ
বেদপাঠ করছিলেন!!মুনিবৃন্দের শ্রীচরণে তিনি দণ্ডবৎ প্রণাম করলেন। মুনিগণ
রাজাকে বললেন–হে মহারাজ!!
.
আমরা
আপনার প্রতি প্রসন্ন হয়েছি। আপনার কি প্রার্থনা বলুন। রাজা বললেন–আপনারা
কে এবং কি জন্যই বা এখানে সমবেত হয়েছেন? মুনিগণ বললেন–হে মহারাজ! আমরা
‘বিশ্বদেব’ নামে প্রসিদ্ধ। এই সরোবরে স্নান করতে এসেছি!!আজ থেকে পাঁচদিন
পরেই মাঘ মাস আরম্ভ হবে। আজ পুত্রদা একাদশী তিথি। পুত্র দান করে বলেই এই
একাদশীর নাম ‘পুত্রদা’ তাঁদের কথা শুনে রাজা বললেন–হে মুনিবৃন্দ!! আমি
অপুত্রক।
.
তাই
পুত্র কামনায় অধীর হয়ে পড়েছি। এখন আপনাদের দেখে আমার হৃদয়ে আশার সঞ্চার
হয়েছে!!এ দুর্ভাগা পুত্রহীনের প্রতি অনুগ্রহ করে একটি পুত্র প্রদান করুন।
মুনিগণ বললেন–হে মহারাজ! আজ সেই পুত্রদা একাদশী তিথি!!তাই এখনই আপনি এই
ব্রত পালন করুন। ভগবান শ্রীকেশবের অনুগ্রহে অবশ্যই আপনার পুত্র লাভ
হবে!!মুনিদের কথা শোনার পর যথাবিধানে রাজা কেবল ফলমূলাদি আহার করে সেই ব্রত
অনুষ্ঠান করলেনদ্বাদশী দিনে উপযুক্ত সময়ে শস্যাদি সহযোগে পারণ করলেন!!
.
মুনিদের
প্রণাম নিবেদন করে নিজগৃহে ফিরে এলেন। ব্রতপ্রভাবে রাজার যথাসময়ে একটি
তেজস্বী পুত্র লাভ হল!! হে মহারাজ!এ ব্রত সকলেরই পালন করা কর্তব্য। মানব
কল্যাণ কামনায় আপনার কাছে আমি এই ব্রত কথা বর্ণনা করলাম!!
নিষ্ঠাসহকারে
যারা এই পুত্রদা একাদশী ব্রত পালন করবে,তারা ‘পুত’ নামক নরক থেকে পরিত্রাণ
লাভ করবে!!আর এই ব্রত কথা শ্রবণ–কীর্তনে অগ্নিষ্টোম যজ্ঞের ফল পাওয়া যায়।
ব্রহ্মাণ্ড পুরাণে এই মাহাত্ম্য বর্ণনা করা হয়েছে।
যেকোন একাদশির মাহাত্ম্য সম্পর্কে জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন- |
-
একাদশী ব্রত পালনের তাৎপর্য ও নিয়মাবলি
- যোগিনী একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
- শয়ন একাদশী মাহাত্ম্য
- কামিকা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
- পবিত্রারোপণী একাদশী মাহাত্ম্য
- অন্নদা একাদশী মাহাত্ম্য
- পার্শ্ব একাদশীর মাহাত্ম্য
- ইন্দিরা একাদশী মাহাত্ম্য
- পাশাঙ্কুশা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
- রমা একাদশীর ব্রত মাহাত্ম্য
- উত্থান একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
- উৎপন্না একাদশী মাহাত্ম্য
- মোক্ষদা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
- সফলা একাদশী মাহাত্ম্য
- পুত্রদা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
- ষটতিলা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
- পান্ডবা (নির্জলা) একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য .
- বিজয়া একাদশী মাহাত্ম্য
- আমলকী একাদশী মাহাত্ম্য
- পাপমোচনী একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
- কামদা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
- বরুথিনী একাদশী মাহাত্ম্য
- মোহিনী একাদশীর ব্রত মাহাত্ম্য
- অপরা একাদশী ব্রতমাহাত্ম্য
- পদ্মিনী একাদশী মাহাত্ম্য
- পরম পবিত্র পরমা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
- সনাতন জ্ঞান ভান্ডারের হোম পেইজে ফিরে যান
সনাতন ধর্ম সম্পর্কে জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন-
আরো জানুনঃ
কেন প্রসাদভোজী হবেন? সমস্ত বৈদিক শাস্ত্র (বেদ,সংহিতা, মহাভারত, গীতা,ভাগবত,পুরাণ,উপনিষদ) থেকে প্রমান দেওয়া হলো...
চার যুগ-সত্য,ত্রেতা,দ্বাপর ও কলির সময় পরিমাণ ও বৈশিষ্ট্যসমূহঃ
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর কিছু অমৃত বাণী
মহাভারতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কিছু বাণী ও উপদেশ
মনুষ্য দেহের কথা আলোচনা
আপনি কি অনেক হতাশায় ভুগছেন? সকল সমস্যাগুলোর সমাধান খুজে পান!!!!!!!!!!
ভগবান বিষ্ণুর গাত্র বর্ণ নীল কেন?
এই জগতে প্রকৃত জ্ঞানী,কে এই জগতে প্রকৃত সুখী,আর কে-ই বা প্রকৃত দুঃখী ?
অনাচার কাকে বলে ও কয় প্রকার?
কলিযুগের মানুষদের ভগবানের নামে রুচি নেই কেন ?
ঘট কিসের প্রতীক?
সনাতন ধর্মের বৈদিক শাস্ত্রে জন্ম ও মৃত্যুযোগ অশৌচ কি?
মহাভারত পড়ার সময় না থাকলেও এর মূল সূত্রগুলি আমাদের জীবনে কার্যকর প্রমাণ করতে পারে-----------------------
মহাভারতের কিছু বাণী
শ্রীমদভগবদগীতায় উচ্চারিত ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সকল নামের অর্থ ও মাহাত্ম্য
প্রকৃত ভালোবাসার খোঁজে..........
রাধাকৃষ্ণের প্রেম-কাহিনীর প্রকৃত রহস্য
ভক্তি কি ?
মায়া কি? মায়া থেকে পরিত্রাণের উপায় কি?
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কেন মাথায় ময়ূরপালক/পুচ্ছ পরিধান করতেন?
রাজা পুরঞ্জনের কেন পরবর্তী জন্মে নারী হয়ে জন্ম হয়েছিল ?
আরো পড়ুন.....
0 মন্তব্যসমূহ