প্রশ্নঃ মায়া কি? মায়া থেকে পরিত্রাণের উপায় কি?
মায়া হল মোহ। আপনি যদি কোন বিষয়ের প্রতি অত্যধিক মোহিত হন, তাহলে সেটাই হল মায়া। মায়া ভগবানেরই বহিরঙ্গা শক্তি আর এই জগৎটা এই বহিরঙ্গা শক্তির দ্বারাই পরিচালিত হয়। মায়ার কাজই হলো পরীক্ষা করা।
ধরুন, আপনি কোন রাজার বন্ধু। আপনি তার প্রাসাদে যেতে চান, কিন্তু গিয়ে দেখলেন প্রাসাদের গেটের সামনে কিছু কুকুর! এবং তারা আপনাকে দেখামাত্রই ঘেউ ঘেউ করতে লাগল। কিছুক্ষণ পর আপনার বন্ধু আপনাকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে আসলো, আর তখন কুকুরগুলো তাদের ঘেউ ঘেউ বন্ধ করে দিয়ে আপনাকে প্রণাম করতে লাগলো।
মায়া ঠিক তেমনি, আপনি ভগবানের প্রতি কতটুকু শরণাগত হয়েছেন মায়া তা পরীক্ষা করবেই। মায়া হল ছায়ার মত। কেউ যদি ছায়ার পেছনে দৌড়ায় তাহলে সে কখনোই সেটাকে ধরতে পারবে না। ঠিক তেমনি, আপনি ভাবতে পারেন সুন্দরী স্ত্রী, টাকা-পয়সা, বাড়ি-গাড়ি আপনাকে সুখ দেবে, কিন্তু না! আপনি কখনোই এগুলোর দ্বারা সুখী হতে পারবেন না।
কৃষ্ণ ভুলি যেই জীব অনাদি বহির্মুখ
অতএব মায়া তারে দেয় সংসার দুঃখ।
অর্থাৎ, "শ্রীকৃষ্ণকে ভুলে জীব অনাদিকাল ধরে জড়া প্রকৃতির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে রয়েছে। তাই, মায়া তাকে এই জগতে নানা প্রকার দুঃখ প্রদান করছে।"
(সূত্রঃ শ্রীচৈঃ চঃ, মধ্যলীলা-২০/১১৭)
মায়া থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে আমাদেরকে সদ্গুরু মাধ্যমে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিকট শরণাপন্ন হতে হবে। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলছেন—
দৈবী হ্যেষা গুণময়ী মম মায়া দুরত্যয়। মামেব যে প্ৰপদ্যন্তে মায়ামেতাং তরন্তিতে।।
অর্থাৎ, "আমার এই দৈবী মায়া ত্রিগুণাত্মিকা এবং তা দুরতিক্রমণীয়া। কিন্তু যাঁরা আমাতে প্রপত্তি করেন, তাঁরাই এই মায়া উত্তীর্ণ হতে পারেন।"
(সূত্রঃ শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা-৭/১৪)
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বলেছেন—
কৃষ্ণ সূর্য্যসম, মায়া হয় অন্ধকার।
যাহা কৃষ্ণ, তাহা নাহি মায়ার অধিকার।।
অর্থাৎ, "শ্রীকৃষ্ণকে সূর্যের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে এবং মায়াকে অন্ধকারে সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। সূর্যকিরণের প্রকাশ হলে যেমন আর সেখানে অন্ধকার থাকতে পারে না, তেমনি কেউ যদি কৃষ্ণভক্তির পন্থা অবলম্বন করেন তখন মায়ার অন্ধকার তৎক্ষণাৎ সেখান থেকে দূর হয়ে যায়।"
(সূত্রঃ শ্রীচৈঃ চঃ, মধ্যলীলা-২২/৩১)
তাতে কৃষ্ণ ভজে, করে গুরুর সেবন।
মায়াজাল ছুটে, পায় কৃষ্ণের চরণ।।
অর্থাৎ, "বদ্ধ জীব যদি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রতি ভক্তি-পরায়ণ হয় এবং গুরুদেবের সেবা করে, তাহল তিনি মায়াজাল থেকে মুক্ত হয়ে কৃষ্ণপাদপদ্ম লাভ করে।"
(সূত্রঃ শ্রীচৈঃ চঃ, মধ্যলীলা-২২/২৫)
------------------------------------------------------------------------------
সদা সর্বদা শ্রী শ্রী রাধা ও কৃষ্ণের পাদপদ্মের কথা স্মরণ করুন, তাহলে শ্রীকৃষ্ণের দ্বারা আপনার জন্য বরাদ্দকৃত কার্য সম্পাদন করতে কোনও অসুবিধা অনুভব করতে হবে না।
জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শ্রীকৃষ্ণের কৃপার প্রতি অগাধ বিশ্বাস ও ভরসা রাখতে হবে।
শ্রীকৃষ্ণের পবিত্র নামটিতে অসাধারণ আধ্যাত্মিক শক্তি রয়েছে কারণ শ্রীকৃষ্ণের নাম স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণের থেকে আলাদা নয় ....
ঐকান্তিক ভালবাসা এবং নিষ্ঠার সাথে এই নামগুলি জপ করুন তবেই আপনি চিণ্ময় আনন্দ অনুভব করবেন:
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে ...(১০৮ বার)
হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করুন এবং সুখী হন ...
দয়া করে পোস্টটির নিজস্ব মতামত জানান, এবং আপনার নিকটতম এবং প্রিয় ব্যক্তিদের সাথে লাইক ও শেয়ার করুন যাতে তারা ও কৃষ্ণভাবনাময় হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হয়...
সনাতন ধর্ম সম্পর্কে জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন-
আরো জানুনঃ
কেন প্রসাদভোজী হবেন? সমস্ত বৈদিক শাস্ত্র (বেদ,সংহিতা, মহাভারত, গীতা,ভাগবত,পুরাণ,উপনিষদ) থেকে প্রমান দেওয়া হলো...
চার যুগ-সত্য,ত্রেতা,দ্বাপর ও কলির সময় পরিমাণ ও বৈশিষ্ট্যসমূহঃ
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর কিছু অমৃত বাণী
মহাভারতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কিছু বাণী ও উপদেশ
মনুষ্য দেহের কথা আলোচনা
আপনি কি অনেক হতাশায় ভুগছেন? সকল সমস্যাগুলোর সমাধান খুজে পান!!!!!!!!!!
ভগবান বিষ্ণুর গাত্র বর্ণ নীল কেন?
এই জগতে প্রকৃত জ্ঞানী,কে এই জগতে প্রকৃত সুখী,আর কে-ই বা প্রকৃত দুঃখী ?
অনাচার কাকে বলে ও কয় প্রকার?
কলিযুগের মানুষদের ভগবানের নামে রুচি নেই কেন ?
ঘট কিসের প্রতীক?
সনাতন ধর্মের বৈদিক শাস্ত্রে জন্ম ও মৃত্যুযোগ অশৌচ কি?
মহাভারত পড়ার সময় না থাকলেও এর মূল সূত্রগুলি আমাদের জীবনে কার্যকর প্রমাণ করতে পারে-----------------------
মহাভারতের কিছু বাণী
শ্রীমদভগবদগীতায় উচ্চারিত ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সকল নামের অর্থ ও মাহাত্ম্য
প্রকৃত ভালোবাসার খোঁজে..........
রাধাকৃষ্ণের প্রেম-কাহিনীর প্রকৃত রহস্য
ভক্তি কি ?
মায়া কি? মায়া থেকে পরিত্রাণের উপায় কি?
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কেন মাথায় ময়ূরপালক/পুচ্ছ পরিধান করতেন?
রাজা পুরঞ্জনের কেন পরবর্তী জন্মে নারী হয়ে জন্ম হয়েছিল ?
আরো পড়ুন.....
0 মন্তব্যসমূহ