গলায় তুলসীমালা কেন তিন প্যাঁচ দিয়ে পরতে হয়? এক প্যাঁচ দিয়ে পরতে নেই কেন? Why is Tulsimala worn with three punches around the neck? Why not wear one punch?

গলায় তুলসীমালা কেন তিন প্যাঁচ দিয়ে পরতে হয়? এক প্যাঁচ দিয়ে পরতে নেই কেন? Why is Tulsimala worn with three punches around the neck? Why not wear one punch?


তুলসী মালা কণ্ঠে ধারন করার তাৎপর্যঃ

সনাতন ধর্মে দেবী তুলসী মহারাণী হচ্ছেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রিয়। নমঃ তুলসী কৃষ্ণ প্রিয়সী নমঃ নমঃ যে তোমার স্মরণ লয় তাহার বাঞ্ছা পূর্ণ হয়।
 তুলসীর মালা কণ্ঠে ধারণ করলে তিনটি জিনিস থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। যথা:

🌺 ব্রজর্পাত মৃত্যুর হাত থেকে রহ্মা পাওয়া যায়।

🌺 বিষ্ঠাঘাত থেকে রহ্মা পাওয়া যায়।

🌺 সর্প ছোবল থেকে রহ্মা পাওয়া যায়,যেমন সাপুড়িয়া যখন সাপের খেলা দেখাই তখন সাপুড়িয়ার হাতে একটা তুলসী কাঠের ডাল থাকে তুলসীর ডালের কারণে সর্প মাথা উচু করতে পারেনা ।

রাতে বা দিনে ঘোমানোর পর অামরা বাজে স্বপ্ন বা ভয়ানক স্বপ্ন দেখি,যা দেখে ভয় পেয়ে অামাদের হাত পা কাপতে থাকে। যার ফলে প্যারালাইজ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেইটার হাত থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়। অারও অনেক উপকার পাওয়া যায় ।

যদি তুলসীর মালা গলাই দিয়ে কোন ব্যক্তির মৃত্যু হয়,সে যদি ভক্ত নাও হয়ে থাকে তবুও তার নরকগামী হতে হবে না।
যেমন কুকুরের গলায় যদি লাল ফিতে বাধা থাকে সেই কুকুরকে কিন্তুু কেউ মারতে পারে না তার কারণ তার গলায় লাল ফিতে বাধা অাছে ,সে হচ্ছে পালিত কুকুর তার মালিক আছে। সেই কুকুরকে কেউ মারলে তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয় । আর পৌরসভার লোক জনও তাকে মারতে পারবে না। তাই যার গলায় তুলসী কাঠের মালা থাকে তাকে যমেও স্পর্শ করতে পারবে না, দূর থেকে সেই তুলসী মালা ধারিকে দেখে প্রণাম করে চলে যাবেন । তার কারণ সে ভগবানের ভক্ত তার নাম ভগবানের খাতাই লিখা হয়ে গেছে।
 আর যদি তুলসীর মালা ধারণ করে মায়াতে পরে কৃষ্ণ কে ভুলে যায় তবুও তাকে নরকগামী হতে হবে না, তার সৎগতি হবে কিন্তুু পরের জন্মে ভগবান তাকে ভক্তে ঘরে জন্ম দিয়ে সুযোগ করে দিবে পাপ মুক্ত হইবার অার যদি তুলসীর মালা গলায় থাকে যদি প্রতিদিন স্নান করে সে মালার জলে স্পর্শে শরীর এমনি এমনি পবিত্র হয়ে যায়।

 আবার অনেকে বলে তুলসীর মালা গলায় ধারণ করলে মিথ্যা কথা বলা যাবে না। যদি তাই হয় তাহলে তো শাস্ত্রে লিখা অাছে মিথ্যা কথা বলাই মহাপাপ। তুলসীর মালা কণ্ঠে ধারণ না করলে মিথ্যা কথা বলা যাবে এই কথাটি কোন শাস্ত্রগ্রন্থে লিখা আছে বলবেন কি ?

তুলসী মালা ধারণ না করেও মিথ্যা বলা মহা পাপ হয়,তাহলে কোনটা ভাল? তুলসী মালা ধারণ করে মিথ্যা কথা বলায় ভালো,কারণ যেখানে অামি ১০০% মিথ্যা কথা বলতাম তখন তুলসী মহা-রাণীর কৃপাই অল্প অল্প করে মিথ্যা কথা কমতে থাকবে। আর এক সময় অামি অার মিথ্যা কথা বলবো না তুলসী মহারানীর কৃপায় যদি তার মৃত্যুও হয় তাহলে তাকে আর নরকগামী হতে হবে না ও তার সৎ গতি হইবে।

অাবার কেউ কেউ বলে থাকেন তুলসীর মালা ধারণ করে মাছ,মাংস,অামিষ খেলে মহাপাপ হয়,হাঁ কথাটি সত্য কিন্তুু ভাগবতে ভগবান বলেছেন যে,অামার চেয়ে অামার নাম বড়,নামের চেয়ে অামার ভক্ত বড়,ভক্তের চেয়ে ভক্তের চরণ ধূলি আরও বড়,ভগবান তার ভক্তকে সব সময় উপরেই রেখেছে। যে শুদ্ধ ভক্ত ভগবানের নাম প্রচার করে,তার হাতের তুলসীর মালা কণ্ঠে ধারণ করলে অাপনার পাপ সেই শুদ্ধ ভক্তের ম্যাধমে ভগবান পরিত্রাণ করে থাকে।

মহাপাপি দুরাচারী ও যদি হয় ভগবান তাকেও ফেলে রাখেনা তারাও সৎগতি ভগবান করে থাকেন আর যদি সে ভক্তির পথে অাসতে চায় আসুক তুলসীর মালা কণ্ঠে ধারন করতে চায় করুক তাতে কোন অসুবিধা নাই । তাই আসুন আমরা ৮ বছর বয়স থেকে বাধ্যতা মূলক তুলসীর মালা কণ্ঠে ধারণ করি ও মুখে হরিনাম করি তাহলে সদগতি ভগবান আমাদের করবেই করবে।

তাই ভক্তি পথে কেউ একবারে সব ছেড়ে অাসতে পারে না, ধীরে ধীরে এই পারমার্থিক পথ অবলম্বন করে।সব কথার মূল কথা হল যে কেউ ভগবানকে যত কিছুই রান্না করে দেননা কেন সেই প্রসাদে যদি একটি তুলসী পত্র না থাকে সেই প্রসাদের কিছু ভগবান গ্রহন করবেনা, অার যার কন্ঠে তুলসীর মালা নেই এমন ব্যাক্তির হাতের কোন কিছুই ভগবান গ্রহণ করে না।

অাবার অনেকে বলে থাকেন ভক্তি থাকলে ভগবান সব কিছুই গ্রহণ করে থাকেন। হাঁ কথা সত্য বলছেন, কিন্তুু অাপনি কি বলতে পারবেন, আমার ভক্তি অাছে সব সময় কৃষ্ণ নামে মগ্ন থাকি-? অাপনি বৈদিক কোন কর্ম করে থাকেন তুলসী পত্র লাগবেই লাগবে। এমন কি মৃত্যুর পরেও মৃতদেহের চোখের উপরই তুলসীর পাতা আমরা দিয়ে থাকি। কেননা অনেক গাছের পাতায়ই তো অাছে যেমন বট পাতা,কাঠাল পাতা মতো আরো অনেক সুন্দর সুন্দর পাতা আছে চোখে দিলেইতো পারতো কিন্তুু কেন আমরা করিনা ?

শেষ বিদায় দিন কিন্তুু সকলের সঙ্গে তুলসীবৃক্ষই যাবে। একবার চিন্তা করে দেখুন,যে ব্যক্তি কখনো কণ্ঠে তুলসীর মালা ধারণ করে নাই,সাধুরা গিয়ে তাকে তুলসীর মালা পড়বার কথা বলেছে সে সাধুদেরকে উল্টাজ্ঞান দিয়েছে। সাধুদের সাথে খারাপ অাচরণ করছে আর টিটকারি করে বলেছে আমার এখনও বয়স হয় নাই মালা পড়ার ,তারা কত বড় মহাপুরুষ যে তারা মৃত্যুকে জানে এবং বোঝে যে অামার এখন মৃত্যু হবে না। তারা কিন্তুু মূর্খ, হরিভজন করতে বয়স লাগে না। যে কোন বয়সে হরিভজন করা যায় ।

মৃত্যুর সময় চোখে তুলসী পাতা দিয়ে কোন লাভ নাই।অাত্মা তখন দেহ থেকে চলে গেছে,মরা দেহের মধ্যে তুলসী দিয়ে কি লাভ? জীবিত থাকতে সাধুরা অনেক বলেছে মালা ধারন করতে কিন্তুু করেননি নিজেকে বড় পণ্ডিত ভেবেছেন। কিন্তুু মৃত্যুর পর অাপনার পণ্ডিত গিরি শেষ। তাই আসুন সময় থাকতে মহামন্ত্র কৃষ্ণ নাম জপ করি ও তুলসী কাঠের মালা কণ্ঠে ধারণ করি ।

হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।

🌻🌻জয় তুলসী মহারাণী কি!!জয় 🌻🌻

প্রশ্ন:- গলায় তুলসীমালা কেন তিন প্যাঁচ দিয়ে পরতে হয়? এক প্যাঁচ দিয়ে পরতে নেই কেন?
উত্তর:-
স্কন্দপুরাণে বলা হয়েছে,—
"যৎকন্ঠে তুলসী নাস্তি,তে নরা মুঢ় মানসাঃ।"
সুনো বিষ্ঠা সমং চান্নং জলং চ মদিরা সমং॥"
যে ব্যক্তি নিজের গলায় তুলসী মালা ধারন করেনা, ওই মুঢ় ব্যক্তি যদি জল স্পর্শ করে তাহলে ঐ জল মদের সমান হয়ে যায়,আর যদি অন্ন স্পর্শ করে তাহলে সেই অন্ন রাজহংসের বিষ্ঠা (মল) সম হয়ে যায়।" তাই প্রত্যেক মানুষের তুলসী মালা পরিধান করা একান্ত কর্তব্য।
পদ্মপুরানে বলা হয়েছে,—
"স্নানকালে তু যস্যাঙ্গে,দৃশ্য তে তুলসী শুভাঃ।
সর্ব তীর্থেসু স্নানং,ভবতি তে ন ন সংশয়॥"
যখন কোন মানুষ গলায় তুলসী মালা ধারণ করে স্নান করে তখন ওই তুলসীকে স্পর্শ করে জল সর্বাঙ্গে স্নাত হয়, ঐ ব্যক্তির এই পৃথিবীর সর্ব তীর্থ স্নানের পূণ্যফল প্রাপ্তি হয়ে যায়।" শ্রীল ব্যাসদেব পদ্মপুরানে এই সত্য লিখেছেন এতে কোনো সন্দেহ থাকতে পারেনা।
এইবার তুলসী মালা কেন তিন প্যাঁচ দিয়ে গলায় ধারণ করা উচিত তা নিয়ে আলোচনা করা যাক!
শাস্ত্র-সম্মতভাবে গলায় তিন প্যাঁচ দিয়েই তুলসী মালা ধারণ করা কর্তব্য, কারণ স্মৃতিশাস্ত্রে তিন প্যাঁচ দিয়ে তুলসীমালা ধারণ করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
তিন প্যাঁচ দিয়ে তুলসী মালা ধারণ করার সময় তিনটি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হয়,—
১)প্রথম প্যাঁচ দিয়ে বলতে হয় "আমি নিজেকে উদ্ধার করিব হরিনামের দ্বারা।"
২)দ্বিতীয় প্যাঁচ দিয়ে বলতে হয়- - "আমি আমার পরিবারকে উদ্ধার করিব হরিনামের দ্বারা।"
৩)তৃতীয় প্যাঁচ দিয়ে বলতে হয়,"আমি যাহাকে দেখিব, তাহাকে বলিব হরিনাম, উদ্ধার হইবে সে হরিনামের দ্বারা।"
তুলসীমালার প্রথম প্যাঁচে নির্দেশ করে "সম্বন্ধ তত্ত্ব" অর্থাৎ "জীবের স্বরূপ হয় কৃষ্ণের নিত্য দাস"। কৃষ্ণের সঙ্গে যে আমার নিত্য সম্বন্ধ রয়েছে সেই সম্বন্ধকে স্মরণ করে গভীর প্রেমের বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে।
 তুলসীমালার দ্বিতীয় প্যাঁচ নির্দেশ করে, "অভিধেয় তত্ত্ব" অর্থাৎ কৃষ্ণের সঙ্গে যে একমাত্র সম্বন্ধ রয়েছে তাকে পাওয়ার একমাত্র উপায় হল "ভক্তি"। সমস্ত বৈদিক শাস্ত্র তাই ভগবদ্ভক্তির পন্থাকে "অভিধেয়" বলে বর্ণনা করা হয়েছে! তাই এই তুলসীর দ্বিতীয় প্যাঁচ দিয়ে আমি যেন সেই ভক্তি লাভ করতে পারি।*_
তুলসীমালার তৃতীয় প্যাঁচ নির্দেশ করে, "প্রয়োজন তত্ত্ব"। সমস্ত জীবের একমাত্র প্রয়োজন হল "কৃষ্ণপ্রেম" লাভ করা!

★☞প্রশ্নঃ- গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী পূজায় তুলসীপাতা ব্যবহার করা যাবে কি? দেবদেবীর পূজা যদি আবশ্যক হয়, তবে একই মানুষের পক্ষে ৩৩ কোটি দেবদেবীর পূজা কীভাবে সম্ভব?
★☞উত্তরঃ- তুলসী কৃষ্ণপ্রেয়সী, তাই একমাত্র শ্রীভগবানের তথা বিষ্ণুতত্ত্বের চরণেই তুলসী অর্পণ করা যায় (এমনকি শ্রীমতি রাধারাণীর চরণেও নয়)।
শ্রীহরিভক্তিবিলাসের সপ্তম বিলাসে বৃহন্নারদীয় পুরাণের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি তুলসীপত্র দ্বারা শ্রীবিষ্ণু ব্যতীত অন্য দেবতার পূজা করে, সে ব্যক্তি গোঘাতী, ব্রহ্মঘাতী, গুরুপত্নীগামীর তুল্য পাপী হয়। তাই কোনো দেবদেবী বা গুরুদেবের চরণে কেউ তুলসী অর্পণ করলে অনন্তকাল নরক বাস হয়।
দেবদেবীর পূজা আবশ্যক বলে শাস্ত্রে কোথাও উল্লেখ নেই। তবে জড় বিষয়ের পরিবর্তে ভগবদ্ভক্তির অনুকূল বিষয় কামনা করে কেউ যদি তাদের পূজা করে, তা দোষের নয়।
যেমন, ব্রজগোপিকাগণ শ্রীকৃষ্ণকে পাওয়ার জন্য কাত্যায়নী দেবীর পূজা করেছিলেন। পদ্মপুরাণে মহাদেব পার্বতীকে বলেন, আরাধনানাং সর্বেষাং বিষ্ণোরারাধনং পরম। অর্থাৎ সমস্ত আরাধনা তথা দেবতাদের আরাধনা অপেক্ষা বিষ্ণুর আরাধনা শ্রেষ্ঠ। আর বিষ্ণু হলেন শ্রীকৃষ্ণের অংশ বা কলা অবতার। শ্রীচৈতন্য চরিতামৃতে (আদি ৫/১৪২) বলা হয়েছে,
একেলা ঈশ্বর কৃষ্ণ আর সব ভৃত্য।
যারে যৈছে নাচায় সে তৈছে করে নৃত্য ॥ অর্থাৎ একমাত্র শ্রীকৃষ্ণই হচ্ছেন পরমেশ্বর এবং অন্য সকলেই তার সেবক। তিনি যেভাবে নির্দেশ দেন, তারা সেভাবেই নৃত্য করেন।
গাছের গোড়ায় জল দিলে যেমন শাখা-প্রশাখা আপনা থেকেই পুষ্ট হয়, প্রত্যেক শাখা-প্রশাখা এবং পত্রে পৃথকভাবে জল সেচনের প্রয়োজন হয় না। একইভাবে কেউ যদি সরাসরি শ্রীকৃষ্ণের পূজা করেন, তাহলে পৃথক ভাবে ৩৩ কোটি দেবদেবীর পূজা করার প্রয়োজন হয় না।
শুধু কৃষ্ণের পূজা করার দ্বারা সকল দেবদেবীকে তুষ্ট করা যায়। তাই ভগবদ্গীতায় (১৮/৬৫) ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন-
মন্মনা ভব মডক্তো মদ্যাজী মাং নমস্কুরু।
মামেবৈষ্যসি সত্যং তে প্রতিজানে প্রিয়োহসি মে।
অর্থাৎ তুমি আমাতে চিত্ত অর্পণ করো, আমার ভক্ত হও, আমার পূজা করো এবং আমাকে নমস্কার করো। তাহলে তুমি অবশ্যই আমাকে প্রাপ্ত হবে। এজন্য আমি তোমার কাছে সত্যই প্রতিজ্ঞা করছি, যেহেতু তুমি আমার অত্যন্ত প্রিয়।
সকালে সূর্যোদয়ের আগে কিংবা সন্ধায় সূর্যাস্তের পরে, এবং দ্বাদশী তিথিতে কখন ও তুলসীপত্র চয়ন করতে নেই। আগের কিংবা সকালে তোলা তুলসীপত্র শুকিয়ে গেলেও, তা শ্রীবিগ্রহ অর্চ্চনায় ব্যবহার করা চলে। সকালে ভক্তের উচিত কয়েকটি তুলসী গাছ রাখা। তবে খুব সতর্কতার সাথে এগুলোর যত্ন করতে হবে।

  কেন তুলসীকে জলদান কর্তব্য?

বৈশাখ মাসে যেহেতু সূর্যের তাপ বৃদ্ধি পায়, তাই বিষ্ণুভক্তগণকে জলদান করা হলে শ্রীহরি অতিশয় প্রিয় হন। শ্রীহরির কৃপাপূর্বক তাঁর থেকে অভিন্ন শ্রীতুলসীবৃক্ষে জলদানেরও অপ্রাকৃত এক সুযোগ প্রদান করেন।
কিন্তু কেন তুলসীকে জলদান কর্তব্য?
তুলসী শ্রীকৃষ্ণপ্রেয়সী, তাঁর কৃপার ফলেই আমরা শ্রীকৃষ্ণের সেবার সুযোগ লাভ করতে পারি। তুলসীদেবী সম্বন্ধে বলা হয়েছে, তুলসী দর্শনেই পাপসমূহ নাশ হয়, জলদান করলে যম ভয় দূর হয়, রোপণ করলে তাঁর কৃপায় কৃষ্ণভক্তি বৃদ্ধি পায় এবং শ্রীহরির চরণে অর্পণ করা হলে কৃষ্ণপ্রেম লাভ হয়। পদ্মপুরাণের সৃষ্টিখণ্ডে (৬০.১০৫) বৈষ্ণবশ্রেষ্ঠ শ্রীমহাদেব পুত্র কার্তিককে বলেন,
সর্বেভ্যঃ পত্রপুষ্পেভ্যঃ সত্তমা তুলসী শিবা।
সর্বকামপ্রদা শুদ্ধা বৈষ্ণবী বিষ্ণুসুপ্রিয়া ॥
সমস্ত পত্র ও পুষ্পের মধ্যে তুলসী হচ্ছেন শ্রেষ্ঠা। তুলসী সর্বকামপ্রদা, মঙ্গলময়ী, শুদ্ধা, মুখ্যা, বৈষ্ণবী, বিষ্ণুর প্রেয়সী এবং সর্বলোকে পরম শুভা। ভগবান শিব বলেন,
যো মঞ্জরীদলৈরেব তুলস্যা বিষ্ণুমর্চয়েঃ।
তস্য পুণ্যফলং স্কন্দ কথিতুং নৈব শক্যতে ॥
তত্র কেশবসান্নিধ্যং যত্রাস্তি তুলসীবনম্।
তত্র ব্রহ্মা চ কমলা সর্বদেবগণৈঃ সহ ॥
(৬০.১১৭-১৮)
হে কার্তিক! যে ব্যক্তি ভক্তিসহকারে প্রতিদিন তুলসীমঞ্জরি দিয়ে শ্রীহরির আরাধনা করে, এমনকি আমিও তার পুণ্য বর্ণনা করতে অক্ষম। যেখানে শ্রীতুলসীর বন আছে, শ্রীগোবিন্দ সেখানেই বাস করেন। আর গোবিন্দের সেবার উদ্দেশ্যে লক্ষ্মী, ব্রহ্মা প্রভৃতি সমস্ত দেবতা সেখানেই বাস করেন। মূলত শ্রীকৃষ্ণই জগতে আবদ্ধ জীবগণকে তাঁর সেবা করবার সুযোগ প্রদান করার জন্য শ্রীতুলসীরূপে আবির্ভূত হয়েছেন এবং তুলসীবৃক্ষকে সর্বাপেক্ষা প্রিয় রূপে গ্রহণ করেছেন। পাতালখ-ে ঐ বিপ্রের নিকটে শ্রীযম তুলসীর মহিমা কীর্তন করেন। বৈশাখে তুলসীপত্র দ্বারা শ্রীহরির সেবা প্রসঙ্গে তিনি বলেন,
"যে ব্যক্তি সম্পূর্ণ বৈশাখ মাস অনন্য ভক্তিসহকারে তুলসী দ্বারা ত্রিসন্ধ্যা শ্রীকৃষ্ণের অর্চনা করেন, তার আর পুনর্জন্ম হয় না।"
তুলসীদেবীর অনন্তমহিমা অনন্ত শাস্ত্রে বিস্তৃত। কিন্তু এই মহিমা হচ্ছে অশেষ। ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণের প্রকৃতিখণ্ডে (২২.৪২-৪৪) বর্ণিত হয়েছে-
শিরোধার্যাঞ্চ সর্বেসামীপ্সিতাং বিশ্বপাবনীম্।
জীবন্মুক্তাং মুক্তিদাঞ্চ ভজে তাং হরিভক্তিদাম্ ॥
যিনি সকলের শিরোধার্যা, উপাস্যা, জীবন্মুক্তা, মুক্তিদায়িনী এবং শ্রীহরিভক্তি প্রদায়িনী, সেই সমগ্র বিশ্বকে পবিত্রকারিণী বিশ্বপাবনী তুলসীদেবীকে সতত প্রণাম করি। সমগ্র বৈদিক শাস্ত্রের সংকলক তথা সম্পাদক শ্রীব্যাসদেব তুলসীর মহিমা বর্ণনা করতে গিয়ে পদ্মপুরাণের সৃষ্টিখণ্ডে(৬০.১২৭-২৮) বলেছেন,
পূজনে কীর্তনে ধ্যানে রোপণে ধারণে কলৌ।
তুলসী দহতে পাপং স্বর্গং মোক্ষং দদাতি ॥
উপদেশং দিশেদস্যাঃ স্বয়মাচরতে পুনঃ।
স যাতি পরমং স্থানং মাধবস্য নিকেতনম্ ॥
শ্রীতুলসীদেবীর পূজা, কীর্তন, ধ্যান, রোপণ ও ধারণে সমস্ত পাপ নাশ হয় এবং পরমগতি লাভ হয়। যে ব্যক্তি অন্যকে তুলসী দ্বারা শ্রীহরির অর্চনার উপদেশ দেন, এবং নিজেও অর্চনা করেন, তিনি শ্রীমাধবের আলয়ে গমন করেন। শুধু শ্রীমতী তুলসীদেবীর নাম উচ্চারণ করলেই শ্রীহরি প্রসন্ন হন। ফলে পাপসমূহ নাশ হয় এবং অক্ষয় পুণ্যার্জিত হয়।
পদ্মপুরাণের ব্রহ্মখণ্ডে বলা হয়েছে,
গঙ্গাদ্যাঃ সরিতঃ শ্রেষ্ঠা বিষ্ণুব্রহ্মামহেশ্বরাঃ।
দেবৈস্তীর্থৈঃ পুষ্করাদ্যৈস্তিষ্ঠান্ত তুলসীদলে ॥ ৬.২২
গঙ্গাদি সমস্ত পবিত্র নদী এবং ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর, পুষ্করাদি সমস্ত তীর্থ সর্বদাই তুলসীদলে বিরাজ করেন। ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে নির্দেশিত হয়েছে যে, সমগ্র পৃথিবীতে সাড়ে তিন কোটি তীর্থ আছে। তুলসী উদ্ভিদের মূলে সমস্ত তীর্থই অবস্থান করে। তুলসীদেবীর কৃপায় ভক্তবৃন্দ কৃষ্ণভক্তি লাভ করেন এবং বৃন্দাবনে বসবাসের যোগ্যতা অর্জন করেন। বৃন্দাদেবী তুলসী সমগ্র বিশ্বকে পাবন করতে সক্ষম এবং সর্বত্রই পূজিতা। সমগ্র পুষ্পের মধ্যে তিনি শ্রেষ্ঠ এবং শ্রীহরি, দেবসকল, ব্রাহ্মণ এবং বৈষ্ণবগণের আনন্দবর্ধনকারিণী। তিনি অতুলনীয়া এবং কৃষ্ণের জীবনস্বরূপিনী। যিনি নিত্য তুলসী সেবা করেন তিনি সমসত ক্লেশ হতে মুক্ত গয়ে অভীষ্ঠ সিদ্ধি লাভ করেন। অতএব শ্রীহরির অত্যন্ত প্রেয়সী তুলসীকে জলদান অবশ্যই কর্তব্য। এছাড়াও এসময়ে ভগবানের অভিন্ন প্রকাশ শ্রীশালগ্রাম শিলায়ও জলদানের ব্যবস্থা করা হয়।
শাস্ত্রে তুলসীদেবীকে জলদান করা হলে তুলসীমূলে যে জল অবশিষ্ট থাকে তারও বিশেষ মাহাত্ম্য কীর্তন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে একটি কাহিনী বলা হয়েছে যে, কোনো এক সময় এক বৈষ্ণব তুলসীদেবীকে জলপ্রদান ও পরিক্রমা করে গৃহে গমন করেন। কিছুক্ষণ পর এক ক্ষুধার্ত কুকুর সেখানে এসে তুলসীদেবীর মূলে অবশিষ্ট জল পান করে। কিন্তু তখনই এক ব্যাধ এসে তাকে বলতে লাগল, 'দুষ্ট কুকুর! তুই কেন আমার বাড়িতে খাবার চুরি করেছিস? চুরি করেছিস ভালো, কিন্তু মাটির হাড়িটি কেন ভেঙে রেখে এসেছিস? তোর উচিত শাস্তি কেবল মৃত্যুদ-।" অতপর ব্যাধ ঐ কুকুরটিকে তখন বধ করে। তখন যমদূতগণ ঐ কুকুরকে নিতে আসে। কিন্তু তৎক্ষণাৎ বিষ্ণুদূতগণ সেখানে এসে তাদের বাধা দিলে শ্রীবিষ্ণুদূতগণ বলেন, "এই কুকুর পূর্বজন্মে জঘন্য পাপ করার কারণে নানাবিধ শাস্তি পাওয়ার যোগ্য ছিল। কিন্তু শুধু তুলসী তরুমূলের জল পান করার ফলে এর সমস্ত পাপ নাশ হয়েছে, এমনকি সে বিষ্ণুলোকে গমনের যোগ্যতাও অর্জন করেছে।" অতঃপর সেই কুকুর সুন্দর দেহ লাভ করে বৈকুণ্ঠের দূতগণের সাথে ভগবৎধামে গমন করে। জগৎজীবকে কৃপা করবার উদ্দেশ্যেই ভগবানের অন্তরঙ্গা শক্তি শ্রীমতি রাধারাণীর প্রকাশ বৃন্দা-তুলসীদেবী এ জগতে প্রকটিত হয়েছেন, তেমনি ভগবান শ্রীহরিও বদ্ধজীবসমূহকে মায়ার বন্ধন থেকে মুক্ত করার জন্য বিচিত্র লীলার মাধ্যমে অভিন্ন-স্বরূপ শালগ্রাম শিলারূপে প্রকাশিত হয়েছেন। চারিবেদ অধ্যয়নে লোকে যে ফল প্রাপ্ত হয়, কেবল শালগ্রাম শিলার অর্চনাতে সেই ফল প্রাপ্ত হওয়া সম্ভব। যিনি শালগ্রামশিলা-স্নানজল; চরণামৃত নিত্য পান করেন, তিনি মহাপবিত্র হন এবং জীবনান্তে ভগবৎধামে গমন করেন।

সনাতন ধর্ম সম্পর্কে জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন-

আরো জানুনঃ

কেন প্রসাদভোজী হবেন? সমস্ত বৈদিক শাস্ত্র (বেদ,সংহিতা, মহাভারত, গীতা,ভাগবত,পুরাণ,উপনিষদ) থেকে প্রমান দেওয়া হলো...

চার যুগ-সত্য,ত্রেতা,দ্বাপর ও কলির সময় পরিমাণ ও বৈশিষ্ট্যসমূহঃ

শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর কিছু অমৃত বাণী

মহাভারতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কিছু বাণী ও উপদেশ

মনুষ্য দেহের কথা আলোচনা

আপনি কি অনেক হতাশায় ভুগছেন? সকল সমস্যাগুলোর সমাধান খুজে পান!!!!!!!!!!

ভগবান বিষ্ণুর গাত্র বর্ণ নীল কেন?

এই জগতে প্রকৃত জ্ঞানী,কে এই জগতে প্রকৃত সুখী,আর কে-ই বা প্রকৃত দুঃখী ?

অনাচার কাকে বলে ও কয় প্রকার?

কলিযুগের মানুষদের ভগবানের নামে রুচি নেই কেন ? 

ঘট কিসের প্রতীক? 

সনাতন ধর্মের বৈদিক শাস্ত্রে জন্ম ও মৃত্যুযোগ অশৌচ কি?

মহাভারত পড়ার সময় না থাকলেও এর মূল সূত্রগুলি আমাদের জীবনে কার্যকর প্রমাণ করতে পারে----------------------- 

মহাভারতের কিছু বাণী

শ্রীমদভগবদগীতায় উচ্চারিত ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সকল নামের অর্থ ও মাহাত্ম্য

প্রকৃত ভালোবাসার খোঁজে.......... 

রাধাকৃষ্ণের প্রেম-কাহিনীর প্রকৃত রহস্য

ভক্তি কি ?

 মায়া কি? মায়া থেকে পরিত্রাণের উপায় কি? 

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কেন মাথায় ময়ূরপালক/পুচ্ছ পরিধান করতেন?

রাজা পুরঞ্জনের কেন পরবর্তী জন্মে নারী হয়ে জন্ম হয়েছিল ?

 
আরো পড়ুন.....


 
হিন্দুদের কেন গো মাংস খাওয়া উচিত না? গো মাতা কেন সনাতন ধর্মে পূজনীয় ? Why Hindus should not eat beef? Why is Go Mata revered in traditional religion?
অম্বুবাচী (আম্ববর্তী) কি? কেন অম্বুবাচী পালন করা হয়? What is Ambubachi? Why is Ambubachi celebrated?
একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তির নতুন বছরের প্রতিজ্ঞাগুলো ঠিক এরকমই হওয়া উচিত--That's the decent thing to do, and it should end there.
শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন সর্ব কারণের পরম কারণ এবং লীলা পুরুষােত্তম স্বয়ং ভগবান । Lord Krishna is the ultimate cause of all causes and Leela is the best man himself.
মা লক্ষ্মীর কৃপালাভের কিছু মন্ত্র ও আচার-অনুষ্ঠান ! Some mantras and rituals of mother Lakshmi's grace!
ছাত্র-ছাত্রীদের আট প্রকার প্রবণতা বিদ‍্যা অর্জনে বিশেষ বাধা-স্বরূপ: The eight types of tendency of students to acquire knowledge are special obstacles:
 
সনাতন  ধর্মের মূল গ্রন্থসমূহ:Original texts of traditional religion:
গীতার ১৮ টি নামের মাহাত্ব্যঃ Greatness of 18 names of Gita:
কেনো মহাপ্রসাদ আহার করা উচিত?Why should Mahaprasad be eaten?
অক্ষয় তৃতীয়া মাহাত্ম্যঃ Akshay titiya Mahatmyah
শ্রীরাম নবমী তাৎপর্য ও মহিমাঃ Sriram-Nabami-meaning-and-glory
মা মনসার ধ্যান মন্ত্র প্রণাম মন্ত্রঃ মনসা অঞ্জলি : Ma Manasa Dhyana Mantra Pranam Mantra: Manasa Anjali:
রাশি বা লগ্ন অনুসারে জেনে নিন আপনার বৈশিষ্ঠ্য...........
মহা বারুণী স্নান মাহাত্ম্য
চৈত্র সংক্রান্তি Chaitra Sankranti
 
বাসন্তী পূজা
দোল পূর্ণিমা এবং ভগবান শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর আবির্ভাব তিথি -গৌর পূর্ণিমা
রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের জীবনী ও শিক্ষাঃ
দেবাদিদেব মহাদেব শিব চতুর্দশী ব্রত মাহাত্ম্য এবং শিবরাত্রি পূজার সময়সূচি ও নিয়মাবলি
শ্রীমদ্ভগবদগীতা কি? কেন গীতা পড়বেন?
 
অশ্বিনীকুমার ব্রত মাহাত্ম্য
দামোদর মাস ও ব্রত...মাহাত্ম্য
দুর্গাপূজার তাৎপর্য, মহিমা ও  বিভিন্ন তিথির আনুষ্ঠানিকতা এবং সময় নির্ঘণ্টঃ
পিতৃপক্ষ এবং দেবীপক্ষ বিশেষ তাত্‍পর্য্য
 
একাদশী ব্রত পালনের তাৎপর্য ও নিয়মাবলিঃ
শয়ন একাদশী মাহাত্ম্য
আমলকী একাদশী মাহাত্ম্য
 
পবিত্রারোপণী একাদশী মাহাত্ম্য Pobitrarohini Ekadashi Mahatmya
অন্নদা একাদশী মাহাত্ম্য Annada Ekadashi Mahatmya
পার্শ্ব একাদশী এর মাহাত্ম্য Parsha Ekadashi Mahatmya
ইন্দিরা একাদশী মাহাত্ম্য Indira Ekadashi Mahatmya
 
সফলা একাদশী মাহাত্ম্য Safala Ekadashi Mahatmya
পুত্রদা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য Putrada Ekadashi Brata Mahatmya
ষটতিলা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য Shattila Ekadashi Brata Mahatmya
পাপমোচনী একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য Paapmochani Ekadashi Brata Mahatmya
 
প্রথম অধ্যায়  অর্জুন বিষাদ-যোগ
দ্বিতীয় অধ্যায়  সাংখ্য-যোগ
তৃতীয় অধ্যায়  কর্মযোগ
 
একাদশ-অধ্যায় বিশ্বরূপ-দর্শন-যোগ
দ্বাদশ-অধ্যায় ভক্তিযোগ
প্রকৃতি-পুরুষ বিবেকযোগ
 
শিব কল্প তরু শ্রী শ্রীমৎ স্বামী অদ্বৈতানন্দ পুরী মহারাজ Shiva Kalpa Taru Sri Srimat Swami Advaitananda Puri Maharaj
শ্রী অদ্বৈত আচার্য
শ্রীগদাধর পণ্ডিত : মহাপ্রভুর ছায়া
 
সংঘাত নিরসনের পন্থা
হরি নামের মহিমা
কামকে কিভাবে জয় করবেন ?
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রিয় হতে চান এই গুনগুলোর চর্চা করুনঃ If you want to be dear to Lord Krishna, practice these qualities:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ