শ্রীমদ্ভাগবত কখন আবির্ভুত হয়? When does Srimadbhagavata appear?


শ্রীমদ্ভাগবত কখন আবির্ভুত হয়? When does Srimadbhagavata appear?

শ্রীমদ্ভাগবতের আবির্ভাব-দেবর্ষি-মহর্ষি-সংবাদ


মহর্ষি কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস। দ্বাপর ও কলির সন্ধিক্ষণে তাঁহার আবির্ভাব। এই জাতিকে বাঁচাইবার জন্যই তিনি জন্মিয়াছিলেন। পুরাতন কথা লোকে শুনিতে চায় না। ইহা যুগসন্ধিক্ষণের এক দুর্লক্ষণ। অথচ পুরাতনের সঙ্গে সংযোগ হারাইলে জাতি বাঁচে না। শিকড় কাটিলে গাছ বাঁচে না।

অতীত ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্বন্ধ-শূন্য হইলে জাতীয় জীবনে মৃত্যু আসে। এই কারণে পৃথিবীর পৃষ্ঠ হইতে রোম, গ্রীস, মিশর, ব্যবিলন প্রভৃতি দেশের বিরাট সভ্যতার অস্তিত্ব প্রায় লুপ্ত হইয়াছে।

এই বিরাট আর্য্যসভ্যতাকে রক্ষা করিবার জন্য কৃষ্ণদ্বৈপায়ন প্রাচীন শাস্ত্র সকলের যুগোপযোগী নূতন রূপ দান করেন। তাঁহার গ্রন্থগুলির নাম পুরাণ। পুরাপি নব—চির পুরাতন কথা, কিন্তু শুনিলে মনে হইবে অভিনব। পুরাণকার বেদব্যাসের সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ

 মহাভারতের মধ্যে বিরাজমান অতুলনীয় শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা। শ্রীকৃষ্ণার্জুন-সংবাদের মধ্যে রাখিয়াছেন নিখিল বেদ-উপনিষদের নিৰ্য্যাস।

এত লিখিয়াও বেদব্যাসের চিত্তে প্রশান্তি আসিল না। জগজ্জীবের মহাকল্যাণকল্পে এত গ্রন্থ করিলেন তথাপি কেন আত্মতৃপ্তি আসিল না? চিন্তাকুল বেদব্যাস বসিয়া আছেন সরস্বতী তীরে। ভাবিতেছেন, কেন চিত্তের এই অপ্রশান্তি?

এমন সময় আসিলেন দেবর্ষি নারদ। দুইজনে বহু মূল্যবান্ কথাবার্তা আর্য্য-সংস্কৃতির দুই মধ্যমণি দেবর্ষি ও মহর্ষি। মহর্ষি চিত্তের ভাব সম্যক্ জানিয়া দেবর্ষি কহিলেন, "বেদব্যাস! তুমি বলিয়াছ সকল কথাই, কিন্তু সকল শাস্ত্র-কথা সার্থক হইয়াছে যে মহাজীবনের মধ্যে, সেই জীবন-কথা বল নাই।

সকল শাস্ত্রের মহাদান প্রাণবন্ত হইয়াছে যে মহানায়কের লীলানাট্যে, তুমি তাঁহার কথা বিস্তারে বল নাই। শ্রীকৃষ্ণের শ্রীমুখের বাণী শ্রীগীতা তুমি বলিয়াছ কিন্তু তাঁহার লীলাকাহিনী শ্রীমদ্ভাগবত তুমি বল নাই। তাহা বলিলেই তোমার চিত্তে পরাতৃপ্তি আসিবে।

তাহা শুনিলেই বিশ্বজীবের পরমা শান্তি লাভ হইবে।" দেবর্ষি নারদ মহর্ষিকে দিলেন বাসুদেব-মন্ত্র আর দিলেন চতুঃশ্লোকী। এই শ্লোকগুলি তিনি পাইয়াছিলেন শ্রীব্রহ্মার নিকট। ব্রহ্মাকে দিয়াছিলেন নারায়ণ স্বয়ং অন্তরে অন্তরে, যখন তিনি ধ্যানস্থ ছিলেন তাঁর নাভি-কমলে।

মন্ত্র ও শ্লোক পাইয়া মহর্ষি ধ্যানমগ্ন হইলেন। তখন অপরোক্ষ অনুভূতিতে শ্রীকৃষ্ণের সমগ্র লীলা তিনি দর্শন করিলেন। দ্রষ্টা বেদব্যাসের লেখনী হইতে স্বউৎসারিত হইল শ্রীমদ্ভাগবত।

ব্যাস ও শুক-সংবাদ

শ্রীভাগবত প্রকটিত হইলেন। এখন তাহা দেশময় প্রত্যেক নরনারীর কাছে পৌঁছাইয়া দিবার উপায় কি? বেদব্যাস ভাবিলেন, কোন ছাত্রকে ভাগবত পড়াইব। সে দেশে দেশে গিয়া সজ্জন সভায় পাঠ করিবে, তবেই প্রচারণ হইবে।

ভাগবত এমন তত্ত্ব ও রসের পরিবেশন করিয়াছেন, যাহা আস্বাদন করিতে হইলে আজন্ম ঊর্ধ্বরেতা ব্রহ্মচারী প্রয়োজন। বেদব্যাস এইরূপ ছাত্র পাইলেন না। তাই নিজে যোগ্য সন্তানের পিতা হইবার সংকল্প করিলেন। পিতার তপস্যায় মাতৃগর্ভে সন্তান আসিলেন। দীর্ঘ দিনেও সন্তান ভূমিষ্ঠ না হওয়ায় বেদব্যাস মহামায়ার তপস্যা করিয়া তাঁহার অনুগ্রহে পৃথিবীকে ক্ষণাৰ্দ্ধ সময় মায়াস্পর্শশূন্য করাইলেন। সেইক্ষণে ভূমিষ্ঠ হইলেন শ্রীশুকদেব।

উপবীতাদি হইবার পূর্বেই শুকদেব তপস্যায় চলিলেন। বেদব্যাস হা পুত্র, হা পুত্ৰ বলিয়া পিছনে ডাকিলেন। বন হইতে ডাকের প্রতিধ্বনি আসিল, পুত্র কিন্তু সাড়া দিলেন না। আজন্ম তপস্বী শুকদেব হইলেন ব্রহ্মজ্ঞানী। "ব্রহ্মভূতঃ প্রসন্নাত্মা ন শোচতি ন কাঙ্ক্ষতি। সমঃ সর্বেষু ভূতেষু" — এই হইল শুকদেবের অবস্থা। তখনও "মদ্ভক্তিং লভতে পরাম্" হয় নাই, কারণ ভাগবতে প্রবেশ হয় নাই।

বেদব্যাস পুত্রকে ভাগবতে টানিলেন। সে এক অপূর্ব কাহিনী। বনে ব্রহ্মধ্যানে মগ্ন শুকদেব। কখনও অন্তর্দশা কখনও অৰ্দ্ধবাহ্যদশা। অৰ্দ্ধবাহ্যদশায় শুনিতে পাইলেন ভাগবতের এক শ্লোক—

অহো বকী ষং স্তনকালকুটং জিঘাংসয়াপায়য়দপ্যসাধ্বী।

লেভে গতিং ধাক্রাচিতাং ততোহন্যং কং বা দয়ালুং শরণং ব্রজেম৷

শ্লোক শুনিয়া বিস্ময়াবিষ্ট হইলেন শ্রীশুকদেব। এই মন্ত্রের দ্রষ্টা কে, অনুসন্ধানে জানিয়া, আসিলেন পুনঃ পিতার তপোবনে। আকুল আগ্রহ জানাইলেন ভাগবতীর তত্ত্বরসের আস্বাদনের জন্য। প্রবল লালসা দেখিয়া ব্যাসদেব পুত্রকে ভাগবত দিলেন। তীব্র লালসাই এই বস্তু প্রাপ্তির মূল্য—একান্ত আগ্রহ-মূল্যে শুকদেব ভাগবতধন পাইলেন পিতার নিকট। "তত্র লৌল্যমপি মূল্যমেকলম্"।

ভাগবত পাইয়া শ্ৰীশুকদেব হইলেন ভাগবতপুরুষ, জীবন্ত ভাগবত, চলন্ত ভাগবত। চলিতে চলিতে আসিলেন তিনি হরিদ্বারে ব্রহ্মকুণ্ডের তীরে। সেখানে বিরাট জনসভা। মধ্যস্থলে মহারাজ পরীক্ষিৎ। সাত দিন অনশন সংকল্পে উপবিষ্ট।

এইবার সেই কাহিনী বলি। পরীক্ষিৎ অর্জুনের পৌত্র, অভিমন্যুর পুত্র। তিনি তৎকালে ভারতের সম্রাট্। তাঁহার রাজত্বকালে কলির আগমন হয়। পরীক্ষিৎ রাজা কলিকে স্থান দিতে রাজী হন না। কলি পরীক্ষিতের দেহে পাপের রন্ধ্র খুঁজিতে থাকে।

পরীক্ষিত ও শুক-সংবাদ

"প্রাচীং সরস্বতীম্।" পূর্ববাহিনী সরস্বতী। তীর ধরিয়া চলিয়াছেন মহারাজ পরীক্ষিৎ। দেখিলেন এক অদ্ভুত দৃশ্য। একটি শুভ্র বৃষ। একটি কৃশা গাভী। একজন দণ্ডহস্ত ধূর্ত ব্যক্তি। বৃষটি একপদে দণ্ডায়মান, ভয়ে কম্পমান (বেপমানং পদৈকেন)। গাভীটি মৃতবৎসার ন্যায় রোরুদ্যমানা (বিবৎসামশ্রুবদনাং)। ধূর্তব্যক্তিটি রাজচিহ্নধারী (নৃপলাঞ্ছনম্), লগুড় দ্বারা পুনঃ পুনঃ আঘাত করিতেছে গোমিথুনের গাত্রে।

দূর্বলের উপর অত্যাচার। পরীক্ষিৎ মহারাজ অগ্নিমূর্তি। অমনি ধনুকে বাণ যোজনা করিয়া (সমারোপিতকার্শ্বকঃ) গম্ভীর স্বরে কহিলেন—"দুঃখিতের দুঃখ দূর করাই রাজধর্ম (আৰ্ত্তানামাত্তি নিগ্রহঃ)। আমি অর্জুনের পৌত্র, শ্রীকৃষ্ণের দাস। তুমি রাজবেশী পরপীড়ক। বধ করিব তোমাকে এখনই।" ধূর্ত ব্যক্তি ভয়ে জড়সড় হইল।

আপনারা কে? পরিচয় চাহিলেন উত্তরানন্দন। বৃষ কহিলেন, আমি ধর্ম। সত্যযুগে চারি পা ছিল। "তপঃ শৌচং দয়া সত্যং।" এখন কোন প্রকারে এক পায়ে চলি। তাহাও ভাঙিয়া দিতে চাহিতেছে এই হীন কলি ধূর্ততার আঘাতে। ইনি ধরণী দেবী। ইনি হইয়াছেন কৃষ্ণহারা, তদুপরি কলির প্রহারে লক্ষ্মীছাড়া। অনন্যোপায়া হইয়া রোদনপরা।'


উদ্যত হইলেন ক্রোধে অভিমন্যুনন্দন কলির বধসাধনে। চরণে শরণাগত হইল কলি (পাদয়োঃ পতিতং)। পরীক্ষিৎ ভাবিলেন, শরণাগত অবধ্য। বধ করিলে পাছে সেই ছিদ্রপথে কলি প্রবেশ করে। তাই কহিলেন, "তোমাকে বধ করিব না। তবে তাড়াইয়া দিব এই রাজ্য হইতে।"

করজোড়ে কলি কহিল, "যদি জীবন দান করিলেন মহারাজ, একটু স্থান দান করুন মাথা গুঁজিবার।" পরীক্ষিৎ কহিলেন, যাও, সেইখানে বাস কর গিয়া, যেখানে "দ্যূতং পানং স্ট্রিয়ঃ সূনাঃ" এই চারি অধর্ম। জুয়াখেলা, মদ্যপান, ব্যভিচার ও প্রাণিহিংসা। কাতর কণ্ঠে কলি কহিল, "মহারাজ, আপনার রাজত্বে ত এই সকল নাই।"

"তবে দূর হও" উত্তর দিলেন পাণ্ডব-বংশতিলক। নিগৃহীত কলি মিনতি করিতে রাজা আরও স্থান দিলেন, সুবর্ণ (ধন)। তৎসঙ্গে আসিবে পাঁচটি অনর্থ — মিথ্যা, মদ, কাম, হিংসা ও শত্রুতা। রাজাদেশে রাজ্যের নরনারী সতর্ক — কোন ফাঁকে কলি না প্রবেশ করে।

একদিন পরীক্ষিৎ গিয়াছেন মৃগয়ায়। মৃগের পশ্চাতে ধাবন করিবার ফলে হইয়াছেন "মৃগাননুগতঃ শ্ৰান্তঃ ক্ষুধিতস্তৃষিতো ভৃশম্", ক্লান্ত ক্ষুধার্ত তৃষাযুক্ত। প্রবেশ করিলেন এক আশ্রমপদ দেখিয়া। দেখিলেন, "শান্তং মীলিতনোচনম্" শমীক ঋষিকে। শুষ্ক কণ্ঠে জল চাহিলেন। উত্তর না পাইয়া হইলেন ক্রুদ্ধ। এরূপ ক্রোধ হয় নাই তাঁহার জীবনেও।

বুঝি বা ক্ষুব্ধ কলি অসতর্ক ক্ষণের সুযোগ খুঁজিতেছে। ক্রোধের অভিব্যক্তি হইল—ধ্যানস্থ ঋষির গলদেশে এক মৃতসর্প জড়াইয়া দিলেন পরীক্ষিৎ তাঁহার ধনুকের অগ্রভাগ দ্বারা। মহদবমাননা এক মহাব্যভিচার। কলি পাইল প্রশস্ত পথ প্রবেশ করিবার।

অভিসম্পাতে কৃপাসম্পাত

শমীক ঋষির আত্মজ শৃঙ্গী। খেলার সাথীদের মুখে শুনিলেন ধ্যানস্থ পিতার অমর্য্যাদার কথা। ক্রোধে আরক্তলোচন ঋষিকুমার কৌশিকী নদীর জলে আচমন করিয়া অভিসম্পাত দিলেন বজ্রতুল্য "বাঞ্চজ্রং বিসসৰ্জ্জ হ।" মর্য্যাদালঙ্ঘনকারী কুলাঙ্গারকে অদ্য হইতে সপ্তম দিবসে দংশন করিবে বিষধর তক্ষক। "ইতি লঙ্ঘিত-মৰ্য্যাদাং তক্ষকঃ সপ্তমেহহনি, দঙ্ক্ষ্যতি স্ম কুলাঙ্গারম্" শাপ দিয়া ঋষিকুমার করস্থ জল ভুমিতে নিক্ষেপ করিলেন। পৃথিবী কম্পিতা হইয়া উঠিলেন।

ঋষির ধ্যান ভাঙ্গিল। শুনিলেন সকল কথা। দুঃখে মুহ্যমান হইলেন। হায় হায় করিতে করিতে পুত্রকে কহিলেন—লঘু পাপে (অল্পীয়সি দ্রোহে) গুরুদণ্ড (উরুদমঃ) অতীব বিগর্হিত কাৰ্য্য। পরীক্ষিৎ পৃথিবীর রত্ন। যাহাকে বক্ষে দোলাইতে হয়, তাঁহাকে পদদলিত করিয়াছ। শ্রীকৃষ্ণ তোমাকে ক্ষমা করুন।

ব্যথাহত ঋষিবর গৌরমুখ নামে এক শিষ্যকে পাঠাইয়া দিলেন রাজভবনে, রাজাকে এই মর্মান্তিক সংবাদটা জানাইয়া দিতে। পরীক্ষিৎ মহারাজও গৃহে ফিরিয়া দগ্ধীভূত হইতেছেন তীব্র অনুপাতের জ্বালায়। "অহো ময়া নীচমনার্য্যবৎ কৃতং" "অহো! আমি নরাধম, কী হীনকার্য্যই করিলাম।" কলির আক্রোশেই বা এমন হইয়া থাকিবে। পাত্র, অমাত্য, মন্ত্রী, জননী উত্তরা সবাইকে ডাকিয়া ডাকিয়া আৰ্ত কণ্ঠে কহিতে লাগিলেন — "আমার কী গতি হইবে?"

এমন সময় আসিলেন গৌরমুখ মুনি। জানাইলেন অভিশাপের কথা। অতি প্রশান্ত মনে গ্রহণ করিলেন মহারাজ পরীক্ষিৎ তাঁহার বাক্য। তক্ষকের বিষাগ্নিকে তিনি মনে করিলেন হিতসাধনকারী, "স সাধু মেনে তক্ষকানলম্"। ভাবিলেন, বিস্ফোটকে অস্ত্রোপচার হইয়া গেল। ইহাতে অপরাধ যাইবে। বিষয়াসক্তিও দূর হইবে।

এখন কী কর্তব্য? ভক্ত-শিরোমণি কর্তব্য স্থির করিলেন মুহূর্ত মধ্যে। পুত্র জনমেজয়ের উপরে প্রজাপালন-ভার অর্পণ করতঃ (স্বসুতন্যস্তভারঃ) গঙ্গাতীরে প্রায়োপবেশনে শ্রীকৃষ্ণপাদপদ্ম সেবাই এখন একমাত্র করণীয়। তাহাই করিলেন। উপাবিশৎ প্রায়মমৰ্ত্তনদ্যাম্। ১।১৯।৫ ভাগ,

কৃষ্ণাঙ্ঘি-সেবামধিমন্যমান সকল ভক্তগণের হৃদয়তন্ত্র একসুরে বাঁধা। একস্থানে আঘাত পড়িলে ঝঙ্কার উঠে সর্বত্র। মহারাজ পরীক্ষিৎ গঙ্গাতীরে প্রায়োপবেশন করিয়াছেন। অমনি নিখিল সাধু-হৃদয়ে সাড়া পড়িল। আসিতে লাগিলেন দিব্যমূর্তি ঋষি মুনিগণ।

অত্রি, বশিষ্ঠ, চাবন, শরদ্বান্, অরিষ্টনেমি, ভৃগু, অঙ্গিরা, পরাশর, বিশ্বামিত্র, পরশুরাম, উতথ্য, ইন্দ্রপ্রমদ, সুবাহু, মেধাতিথি, দেবল, ভরদ্বাজ, গৌতম, পিপ্পলাদ, মৈত্রেয়, ঔব্য, কবর, অগস্ত্য, বৎসদেব, নারদ—আর কত নাম বলিব। যত দেবর্ষি, মহর্ষি, ব্রহ্মর্ষি, রাজর্ষি, যোগী, মুনি, তপস্বী সকলেই আসিলেন।

তাঁহারা স্থির করিলেন, সাতদিনই তাঁহারা মহারাজের সন্নিধানে গঙ্গাতটে থাকিবেন। আনন্দোৎফুল্ল পরীক্ষিৎ মহারাজ! কী মহাভাগ্য সমুপস্থিত! ভাবিলেন, কই এতকাল রাজধানীতে তো এত মহতের পদধূলি একই সময় লাভ করিবার ভাগ্য হয় নাই। আহা!

 

ঋষির অভিসম্পাতের মধ্য দিয়াও কত কৃপাসম্পাত, নিশ্চয়ই স্বয়ং ব্রহ্মণ্যদেব ব্রহ্মশাপরূপে আমাকে কৃতার্থ করিয়াছেন। জনে জন দণ্ডবৎ করিয়া সকলের পদধুলি মাথায় তুলিয়া, হর্ষে কহিলেন রাজর্ষি পরীক্ষিৎ—ঋষি-মুনিগণ, "গায়ত বিষ্ণুগাথাঃ" আপনারা গোবিন্দ নাম কীর্তন করুন। আমি তক্ষকদংশনের ভাবনা আর ভাবি না।

আমি এখন শ্রীগোবিন্দ চরণাশ্রিত। আপনারা ও সুরধুনী আমাকে শ্রীচরণে স্থান দিন। মরিতে আর ভয় নাই। শুধু একটি প্রার্থনা, যেখানেই জন্মিনা কেন, যেন শ্রীকৃষ্ণে রতি থাকে (অনন্তে রতিঃ), তাঁহার ভক্তে প্রীতি থাকে (মহৎত্সু প্রসঙ্গঃ), আর থাকে সর্বজীবে সখ্যভাব (মৈত্রং তু সর্বত্র)। মহারাজের অন্তরের সাধকে মনে হয় কবি বিদ্যাপতি ভাষা দিয়াছেন,

কিয়ে মানুষ, পশু পাখী জনমিয়ে, অথবা কীট পতঙ্গে। করম বিপাকে, গতাগতি পুনঃ পুনঃ, মতি রহু তুয়া পরসঙ্গে ৷৷ সাতদিনই কৃষ্ণকথায় কাটাইবেন ইহা মহারাজের অন্তরের অভিলাষ। আহার নিদ্রা ত্যাগ করিয়া কৃষ্ণকথা শুনিবেন। একাসনেই শুনিবেন। কিন্তু বলিবেন কে? সাতদিন অবিশ্রাম কৃষ্ণকথা শুনাইবেন কার আছে এমন যোগ্যতা, এমন মহাভক্তি সম্পদ। কৃষ্ণকথা যদি মূর্তি ধরিয়া আসেন তবে হয়ত ইহা সম্ভব!

তখন শ্রীশুকদেবের আগমন ঘঠিল, তিনি পরিক্ষিৎ মহারাজকে সাত দিবস শ্রীমদ্ভাগবত কথা শ্রবণ করিয়াছিলেন।

সনাতন ধর্ম সম্পর্কে জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন-

আরো জানুনঃ

কেন প্রসাদভোজী হবেন? সমস্ত বৈদিক শাস্ত্র (বেদ,সংহিতা, মহাভারত, গীতা,ভাগবত,পুরাণ,উপনিষদ) থেকে প্রমান দেওয়া হলো...

চার যুগ-সত্য,ত্রেতা,দ্বাপর ও কলির সময় পরিমাণ ও বৈশিষ্ট্যসমূহঃ

শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর কিছু অমৃত বাণী

মহাভারতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কিছু বাণী ও উপদেশ

মনুষ্য দেহের কথা আলোচনা

আপনি কি অনেক হতাশায় ভুগছেন? সকল সমস্যাগুলোর সমাধান খুজে পান!!!!!!!!!!

ভগবান বিষ্ণুর গাত্র বর্ণ নীল কেন?

এই জগতে প্রকৃত জ্ঞানী,কে এই জগতে প্রকৃত সুখী,আর কে-ই বা প্রকৃত দুঃখী ?

অনাচার কাকে বলে ও কয় প্রকার?

কলিযুগের মানুষদের ভগবানের নামে রুচি নেই কেন ? 

ঘট কিসের প্রতীক? 

সনাতন ধর্মের বৈদিক শাস্ত্রে জন্ম ও মৃত্যুযোগ অশৌচ কি?

মহাভারত পড়ার সময় না থাকলেও এর মূল সূত্রগুলি আমাদের জীবনে কার্যকর প্রমাণ করতে পারে----------------------- 

মহাভারতের কিছু বাণী

শ্রীমদভগবদগীতায় উচ্চারিত ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সকল নামের অর্থ ও মাহাত্ম্য

প্রকৃত ভালোবাসার খোঁজে.......... 

রাধাকৃষ্ণের প্রেম-কাহিনীর প্রকৃত রহস্য

ভক্তি কি ?

 মায়া কি? মায়া থেকে পরিত্রাণের উপায় কি? 

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কেন মাথায় ময়ূরপালক/পুচ্ছ পরিধান করতেন?

রাজা পুরঞ্জনের কেন পরবর্তী জন্মে নারী হয়ে জন্ম হয়েছিল ?

 
আরো পড়ুন.....


 
হিন্দুদের কেন গো মাংস খাওয়া উচিত না? গো মাতা কেন সনাতন ধর্মে পূজনীয় ? Why Hindus should not eat beef? Why is Go Mata revered in traditional religion?
অম্বুবাচী (আম্ববর্তী) কি? কেন অম্বুবাচী পালন করা হয়? What is Ambubachi? Why is Ambubachi celebrated?
একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তির নতুন বছরের প্রতিজ্ঞাগুলো ঠিক এরকমই হওয়া উচিত--That's the decent thing to do, and it should end there.
শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন সর্ব কারণের পরম কারণ এবং লীলা পুরুষােত্তম স্বয়ং ভগবান । Lord Krishna is the ultimate cause of all causes and Leela is the best man himself.
মা লক্ষ্মীর কৃপালাভের কিছু মন্ত্র ও আচার-অনুষ্ঠান ! Some mantras and rituals of mother Lakshmi's grace!
ছাত্র-ছাত্রীদের আট প্রকার প্রবণতা বিদ‍্যা অর্জনে বিশেষ বাধা-স্বরূপ: The eight types of tendency of students to acquire knowledge are special obstacles:
 
সনাতন  ধর্মের মূল গ্রন্থসমূহ:Original texts of traditional religion:
গীতার ১৮ টি নামের মাহাত্ব্যঃ Greatness of 18 names of Gita:
কেনো মহাপ্রসাদ আহার করা উচিত?Why should Mahaprasad be eaten?
অক্ষয় তৃতীয়া মাহাত্ম্যঃ Akshay titiya Mahatmyah
শ্রীরাম নবমী তাৎপর্য ও মহিমাঃ Sriram-Nabami-meaning-and-glory
মা মনসার ধ্যান মন্ত্র প্রণাম মন্ত্রঃ মনসা অঞ্জলি : Ma Manasa Dhyana Mantra Pranam Mantra: Manasa Anjali:
রাশি বা লগ্ন অনুসারে জেনে নিন আপনার বৈশিষ্ঠ্য...........
মহা বারুণী স্নান মাহাত্ম্য
চৈত্র সংক্রান্তি Chaitra Sankranti
 
বাসন্তী পূজা
দোল পূর্ণিমা এবং ভগবান শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর আবির্ভাব তিথি -গৌর পূর্ণিমা
রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের জীবনী ও শিক্ষাঃ
দেবাদিদেব মহাদেব শিব চতুর্দশী ব্রত মাহাত্ম্য এবং শিবরাত্রি পূজার সময়সূচি ও নিয়মাবলি
শ্রীমদ্ভগবদগীতা কি? কেন গীতা পড়বেন?
 
অশ্বিনীকুমার ব্রত মাহাত্ম্য
দামোদর মাস ও ব্রত...মাহাত্ম্য
দুর্গাপূজার তাৎপর্য, মহিমা ও  বিভিন্ন তিথির আনুষ্ঠানিকতা এবং সময় নির্ঘণ্টঃ
পিতৃপক্ষ এবং দেবীপক্ষ বিশেষ তাত্‍পর্য্য
 
একাদশী ব্রত পালনের তাৎপর্য ও নিয়মাবলিঃ
শয়ন একাদশী মাহাত্ম্য
আমলকী একাদশী মাহাত্ম্য
 
পবিত্রারোপণী একাদশী মাহাত্ম্য Pobitrarohini Ekadashi Mahatmya
অন্নদা একাদশী মাহাত্ম্য Annada Ekadashi Mahatmya
পার্শ্ব একাদশী এর মাহাত্ম্য Parsha Ekadashi Mahatmya
ইন্দিরা একাদশী মাহাত্ম্য Indira Ekadashi Mahatmya
 
সফলা একাদশী মাহাত্ম্য Safala Ekadashi Mahatmya
পুত্রদা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য Putrada Ekadashi Brata Mahatmya
ষটতিলা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য Shattila Ekadashi Brata Mahatmya
পাপমোচনী একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য Paapmochani Ekadashi Brata Mahatmya
 
প্রথম অধ্যায়  অর্জুন বিষাদ-যোগ
দ্বিতীয় অধ্যায়  সাংখ্য-যোগ
তৃতীয় অধ্যায়  কর্মযোগ
 
একাদশ-অধ্যায় বিশ্বরূপ-দর্শন-যোগ
দ্বাদশ-অধ্যায় ভক্তিযোগ
প্রকৃতি-পুরুষ বিবেকযোগ
 
শিব কল্প তরু শ্রী শ্রীমৎ স্বামী অদ্বৈতানন্দ পুরী মহারাজ Shiva Kalpa Taru Sri Srimat Swami Advaitananda Puri Maharaj
শ্রী অদ্বৈত আচার্য
শ্রীগদাধর পণ্ডিত : মহাপ্রভুর ছায়া
 
সংঘাত নিরসনের পন্থা
হরি নামের মহিমা
কামকে কিভাবে জয় করবেন ?
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রিয় হতে চান এই গুনগুলোর চর্চা করুনঃ If you want to be dear to Lord Krishna, practice these qualities:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ