বলরাম জয়ন্তী
তবে বলরামকে অনন্তাবতার ও বলা হয় । এছাড়া ইনি বলভদ্র বা বলদেব নামেও পরিচিত ।
বাসুদেবের ঔরসে দেবকীর সপ্তম গর্ভসঞ্চার হলে- যোগমায়া সে গর্ভ সঙ্কর্ষণ করে রোহিণী নামক অপর এক নারীর গর্ভে এই সন্তান স্থাপন করেন । এই পুত্রই বলরাম । সঙ্কর্ষণের ফলে জন্ম হয়েছিল বলে- এঁর অপর নাম সঙ্কর্ষণ । উন্নত চরিত্রের ছিলেন বলে- এঁর অপর নাম বলভদ্র ।
বলরামের অস্ত্র ছিল হল বা লাঙ্গল । এর জন্য ইনি হলধর নামে পরিচিত হন । আর বয়সে কৃষ্ণের চেয়ে বড় ছিলেন বলে , এঁকে বলা হতো অচ্যুতাগ্রজ । কংসের হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য এঁকে গোকুলে পাঠানো হয় । সেখানে নন্দ এঁকে কৃষ্ণের সাথে প্রতিপালন করেন । কংসের হত্যার পর , সান্দীপন মুনির কাছে বলরাম এবং কৃষ্ণ বেদ , কলা , ধনু , ধর্ম ও নীতিশাস্ত্র অধ্য
য়ন করেন । ইনি গদা যুদ্ধে অদ্বিতীয় বলে চিহ্নিত ছিলেন । শিক্ষা সমাপ্তের পর কৃষ্ণ-বলরাম গুরুকে গুরুদক্ষিণা দিতে চাইলে- সান্দীপনি ' র পুত্রকে উদ্ধার করে দিতে বলেন । উল্লেখ্য পঞ্চজন ' নামক এক দৈত্য সান্দীপনি মুনির পুত্রকে হরণ করেছিলেন । কৃষ্ণ-বলরাম এই দৈত্যকে হত্যা করে গুরুপুত্রকে এনে গুরু দক্ষিণা দেন ।
বলরাম সর্বার্থে কৃষ্ণের সহকারী ছিলেন ।এঁরা একই সাথে গোকুলে গোচারণ ও খেলাধুলা করতেন । ইনি বাল্যকালে ধেনুকাসুর ও প্রলম্বকে হত্যা করেন । কৃষ্ণের মথুরা যাওয়ার সময় ইনি কৃষ্ণের সহকারী হিসাবে যান এবং কংস হত্যার সহায়তা করেন । এরপর পর জরাসন্ধ (কংসের শ্বশুর) মথুরা অবরোধ করলে কৃষ্ণ-বলরাম তাঁকে পরাজিত করেন ।
একবার বলরাম স্নান করতে গিয়ে যমুনা নদীকে তাঁর সাথে খেলা করতে বলেন । যমুনা এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে ইনি ক্রুদ্ধ হয়ে , তাঁর হল দ্বারা নদীকে তীরে এনে শাস্তির ব্যবস্থা করেন । ফলে যমুনা তাঁর স্বমূর্তিতে আবির্ভূতা হয়ে বলরামের কাছে ক্ষমা চেয়ে মুক্তি পান ।
বলরাম রাজা রৈবতের কন্যা রেবতীকে বিবাহ করেন । রেবতীর গর্ভে তাঁর দুটি পুত্র জন্মে । এঁরা ছিলেন নিশধ ও উল্মক ।
শ্রী বলরাম জয়ন্তী - ভগবান শ্রী বলরামের শুভ আবির্ভাব তিথি।
প্রণাম মন্ত্রঃ
নমস্তে বলিনাম শ্রেষ্ঠ নমস্তে ধরণীধর।
প্রলম্বারে নমস্তুতে ত্রাহি মাম কৃষ্ণপূর্বজ।।
বলরাম হলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জ্যেষ্ঠভ্রাতা।
তিনি বলদেব, বলভদ্র ও হলায়ুধ নামেও পরিচিত।
বলরাম হলেন সৎ-চিৎ-আনন্দের প্রতিমূর্তি।
শ্রাবণ পূর্ণিমা বা রাখী পূর্ণিমা তিথিতে মাতা রোহিণীর গর্ভে জন্মলাভ করেন বলরাম। রোহিণী হলেন শ্রীকৃষ্ণের পিতা বসুদেবের আর এক পত্নী ও নন্দের ভগিনী।
অত্যাচারী কংসের কারাগারে বন্দী বসুদেব ও দেবকীর সপ্তম গর্ভে বলরাম আসেন, কিন্তু কংসের হাত থেকে সেই শিশুকে বাঁচানোর জন্য শ্রীহরির আদেশে দেবী যোগমায়া দেবকীর সপ্তম গর্ভের ভ্রূণ সেখান থেকে নন্দগৃহে রোহিণীর গর্ভে স্থাপিত করেন। ফলে দেবকীর সপ্তম গর্ভ মৃত সন্তান জন্ম দেয় এবং রোহিণীর গর্ভে বলরামের জন্ম হয়।
কৃষ্ণ শ্যামবর্ণ হলেও বলরাম কিন্তু গৌরবর্ণধারী ।
অমিত বলশালী ও ভক্তদের শক্তি প্ৰদান করেন বলে তার নাম হয় বলরাম‚ বলভদ্র বা বলদেব, নামকরণ করেন ঋষি গর্গ । আর রাম শব্দের অর্থ পরম সুন্দর । কৃষির প্রতীক হাল তাঁর সঙ্গে থাকে বলে তিনি হলায়ুধ ।
অন্য নাম সঙ্কর্ষণ বা শেষনাগ নামেও পরিচিত ।
শৈশবে কংস প্রেরিত অসুর ধেনুকা এবং দুই মুষ্টিযোদ্ধা প্রলম্ব ও মুষ্টিকাকে বধ করেন বলরাম ।রাজা কংসকে বধ করতে কৃষ্ণ যখন মথুরা যান‚ সঙ্গী ছিলেন বলরামও । কৃষ্ণের সঙ্গে তিনিও শিক্ষাগ্রহণ করেন উজ্জয়িনীতে আচার্য সন্দীপনের আশ্রমে ।
তিনি ভ্রাতা শ্রীকৃষ্ণের সহিত অনেক অসুর বধ করেন ও ভাইয়ের সাথে এক মধুর সম্পর্কের আদর্শ স্থাপন করেন। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে বলরাম কোনও পক্ষ অবলম্বন করেননি। একজন আদর্শ ভ্রাতা হিসেবে বলরাম তুলনাহীন।
বলরাম স্ত্রী রেবতী, তাঁর দুই পুত্র, নিষ্ঠা এবং উল্মুক।
বলরাম পূর্বজন্মে ছিলেন রামের ভ্রাতা লক্ষ্মণ। তিনি অনুরোধ করেন তাঁকে যেন তাঁর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা হিসেবে একজন্ম কাটাতে দেওয়া হয়। বলরামের অস্ত্র এক বিশাল লাঙল। তিনি এ কারণে 'হলধারী' নামেও পরিচিত। তিনি সর্বদা নীলাম্বরধারী।
মহাভারতে আদিগুরু বলরাম দুর্যোধন এবং ভীমের গদাচালনার আচার্য/গুরু। বলরাম বা সঙ্কর্ষণ-ই পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সর্ব প্রথম অবতার।
সনাতন ধর্ম সম্পর্কে জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন-
আরো জানুনঃ
কেন প্রসাদভোজী হবেন? সমস্ত বৈদিক শাস্ত্র (বেদ,সংহিতা, মহাভারত, গীতা,ভাগবত,পুরাণ,উপনিষদ) থেকে প্রমান দেওয়া হলো...
চার যুগ-সত্য,ত্রেতা,দ্বাপর ও কলির সময় পরিমাণ ও বৈশিষ্ট্যসমূহঃ
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর কিছু অমৃত বাণী
মহাভারতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কিছু বাণী ও উপদেশ
মনুষ্য দেহের কথা আলোচনা
আপনি কি অনেক হতাশায় ভুগছেন? সকল সমস্যাগুলোর সমাধান খুজে পান!!!!!!!!!!
ভগবান বিষ্ণুর গাত্র বর্ণ নীল কেন?
এই জগতে প্রকৃত জ্ঞানী,কে এই জগতে প্রকৃত সুখী,আর কে-ই বা প্রকৃত দুঃখী ?
অনাচার কাকে বলে ও কয় প্রকার?
কলিযুগের মানুষদের ভগবানের নামে রুচি নেই কেন ?
ঘট কিসের প্রতীক?
সনাতন ধর্মের বৈদিক শাস্ত্রে জন্ম ও মৃত্যুযোগ অশৌচ কি?
মহাভারত পড়ার সময় না থাকলেও এর মূল সূত্রগুলি আমাদের জীবনে কার্যকর প্রমাণ করতে পারে-----------------------
মহাভারতের কিছু বাণী
শ্রীমদভগবদগীতায় উচ্চারিত ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সকল নামের অর্থ ও মাহাত্ম্য
প্রকৃত ভালোবাসার খোঁজে..........
রাধাকৃষ্ণের প্রেম-কাহিনীর প্রকৃত রহস্য
ভক্তি কি ?
মায়া কি? মায়া থেকে পরিত্রাণের উপায় কি?
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কেন মাথায় ময়ূরপালক/পুচ্ছ পরিধান করতেন?
রাজা পুরঞ্জনের কেন পরবর্তী জন্মে নারী হয়ে জন্ম হয়েছিল ?
আরো পড়ুন.....
সনাতন ধর্ম সম্পর্কে নিজে জানুন অন্যকে জানার সুযোগ করে দিতে অবশ্যই সকলকে শেয়ার করুন..........................................
0 মন্তব্যসমূহ