মোক্ষদা একাদশী তিথি তথা গীতা জয়ন্তী মহোৎসব, তাই সকলকে জানাই শুভ মোক্ষদা
একাদশী তিথির ও গীতা জয়ন্তী মহোৎসবের
কৃষ্ণ প্রীতি শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন
গীতা জয়ন্তী
এই
তিথিতেই পরম পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা বীর
অর্জুনকে ৫১৫১ (৩১৩৯ খ্রীঃপূঃনভেম্বর ০২ তারিখ শুক্রবার) বছর আগে
কুরুক্ষেত্র (৬০ কিঃমিঃ) নামক স্থানে ভগবদ্গীতার জ্ঞান দান করেছিলেন । তাই
এই মহিমা মণ্ডিত তিথিকে গীতা জয়ন্তী তিথি বলা হয় ।
#শ্রীমদ্ভগদ্গীতা_জয়ন্তীতে আপনার করনীয় কি?
শ্রীমদ্ভগবৎগীতা
পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকষ্ণের মুখনিঃসৃত বাণী বা বাণীবির্গহ যা পরমেশ্বর
ভগবান থেকে অভিন্ন। যা আজ থেকে প্রায় ৫ হাজার বছর আগে কুরুক্ষেত্রের
রণাঙ্গনে অর্জুন মহাশয়কে কেন্দ্র করে তিনি জগৎজীবের কল্যাণের জন্য প্রদান
করেন।
আগামিকাল ১৪ ডিসেম্বর ২০২১ইং, মঙ্গল বার মোক্ষদা একাদশীর পূণ্যতিথীতে সেই মহিমান্বিত দিন আগত।
আপনি
এই মহিমান্বিত গীতা জয়ন্তী মহোৎসব আপনার বাড়িতেই করতে পারেন। সেক্ষেত্রে
আপনার নিত্যপাঠ্য শ্রীমদ্ভগবৎগীতা গ্রন্থটিকে বেদিতে রেখে বা কোন উচ্চ আসনে
রেখে পুষ্প-তুলশী -ভোগ অর্পণ করতঃ ধূপ ও দ্বীপের দ্বারা আরতি ও পরিক্রমা
করতে পারেন। সম্ভব হলে কয়েকজন মিলে শ্রীমদ্ভগবৎগীতার ৭শত শ্লোক পাঠ করতে
পারেন, বা গুরুত্বপূর্ণ ১০৮টি শ্লোক পাঠ করতে পারেন, বা যে কোন অধ্যায় বা
শ্লোক পাঠ করতে পারেন। এভাবে আপনার সাধ ও সাধ্যমত পাড়াপ্রতিবেশী সকলকে
নিমন্ত্রণ পূর্বক মহাসমারোহে মহোৎসব করতে পারেন।
এদিন
সম্ভব হলে আপনার পূর্বপুরুষগণ, পরিবারের বা নিজের পারমার্থিক উত্তরনের
জন্য গীতা দান করতে পারেন যা খুবই কল্যাণকর ও সুকৃতিদায়িনী।
আমরা আশা করি আপনি এই মহিমান্বিত পারমার্থিক সুযোগ লাভ করে ধন্য হবেন এবং জগৎজীবের কল্যাণে বর্তী হবেন। হরে কৃষ্ণ
গীতা সর্ম্পকে কিছু বহিরঙ্গা জ্ঞান
১। গীতা হচ্ছে সমস্ত শাস্ত্রের
সারতিসার এমনকি গীতায় এমন কিছু
আছে যা অন্যান্য কোন শাস্ত্রে
পাওয়া যায় না । যেমন – ৫ম পুরুষার্থ
২। মহাভারতের ভীষ্মপর্বের ২৫
থেকে ৪২ নং অধ্যায়ের এই ১৮ টি
অধ্যায় হল ভগবদগীতা বা
গীতোপনিষদ ।
৩। গীতায় আছে ৭০০ শ্লোক (কেউ
বলে ৭৪৫ শ্লোক) আছে । তার মধ্যে
ধৃতরাষ্ট্র বলেন ১টি শ্লোক, সঞ্জয়
বলেন ৪০টি শ্লোক, অর্জুন বলেন
৮৫টি শ্লোক, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেন
৫৭৪টি শ্লোক । আর পুরো গীতায়
৯৫৮০ টি সংস্কৃত শব্দ আছে ।
৪। গীতার ১৮টি অধ্যায়ের মধ্যে
প্রথম ৬টি অধ্যায়কে বলে কর্মষটক,
মাঝখানের ৬টি অধ্যায়কে বলে
ভক্তিষটক, আর বাকি ৬টি অধ্যায়কে
বলে জ্ঞানষটক ।
৫। গীতা পড়লে ৫টি জিনিষ
সর্ম্পকে জানা যায় – ঈশ্বর, জীব,
প্রকৃতি, কাল ও কর্ম ।
৬। যদিও গীতার জ্ঞান ৫০০০ বছর
আগে বলেছিল কিন্তু ভগবান চতুর্থ
অধ্যায় বলেছেন এই জ্ঞান তিনি এর
আগেও বলেছেন, মহাভারতের
শান্তিপর্বে (৩৪৮/৫২-৫২) গীতার
ইতিহাস উল্লেখ আছে । তার মানে
গীতা প্রথমে বলা হয় ১২,০৪,০০,০০০
বছর আগে, মানব সমাজে এই জ্ঞান
প্রায় ২০,০০,০০০ বছর ধরে বর্তমান,
কিন্তু কালের বিবর্তনে তা
হারিয়ে গেলে পুনরায় আবার তা
অর্জুনকে দেন ।
৭। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে মাত্র ৪০
মিনিটে এই গীতার জ্ঞান দেন ।
৮। গীতার মাহাত্ম্য অনেকে করে
গেছেন তার মধ্যে শ্রীশঙ্করাচার্য,
স্কন্দপুরাণ থেকে শ্রীল ব্যাসদেব,
শ্রীবৈষ্ণবীয় তন্ত্রসারে গীতা
মাহাত্ম্য আর আছে পদ্মপুরাণে
দেবাদিদেব শিব কর্তৃক ১৮টি
অধ্যায়ের মাহাত্ম্য বর্ণনা করেছেন
।
৯। গীতাতে অর্জুনের ২০টি নাম আর
কৃষ্ণের ৩৩টি নামের উল্লেখ করা
হয়েছে ।
১০। গীতাতে মাং এবং মামেব
কথাটি বেশি আছে, যোগ শব্দটি
আছে ৭৮ বার, যোগী আছে ২৮ বার
আর যুক্ত আছে ৪৯ বার ।
১১। গীতার ২য় অধ্যায়কে বলা হয়
গীতার সারাংশ ।
১২। ভগবান যখন বিশ্বরূপ দেখান তখন
কাল থেমে যায় ।
১৩। ভগবান শুধু যুদ্ধের আগেই গীতা
বলেনি ১৮ দিন যুদ্ধের মাঝখানেও
গীতা বলেছে ।
১৪। গীতায় অর্জুন ১৬টি প্রশ্ন করে আর
কৃষ্ণ তার উত্তর দেন, কৃষ্ণ তা ৫৭৪টি
শ্লোকের মাধ্যমে উত্তর দেন ।
১৫। পুরো গীতার সারমর্ম মাত্র ৪টি
শ্লোকে বর্ণনা করা হয়েছে, ১০
অধ্যায়ের ৮ থেকে ১১ নং শ্লোক ।
১৬। পুরো গীতায় অর্জুন ৪৫ নামে
কৃষ্ণকে সম্বধোন করছেন, আর কৃষ্ণ
অর্জুনকে ২১টি নামে সম্বধোন
করেছেন ।
১৭। গীতার ৫ম অধ্যায় ১৩ থেকে ১৬
নং শ্লোকে তিনজন কর্তার কথা
বলা হয়েছে ।
১৮। গীতায় ৩টি গুণ, ৩টি দুঃখ আর
৪টি আমাদের প্রধান সমস্যার কথা
বলেছে ।
১৯। ত্রিশ্লোকী গীতার জ্ঞান ঃ
যা বেদ ও বেদান্তের সার, ১৫
অধ্যায়ের ১৬ থেকে ১৮ নং শ্লোক ।
২০। গীতায় ২৬টি গুণের কথা বলা
হয়েছে আর ৬টি আসুরিক প্রবৃত্তির
কথা বলা হয়েছে।
২১। নরকের ৩টি দ্বারের কথা বলা
হয়েছে (কাম, ক্রোধ ও লোভ)
২২। গীতার ১৮ অধ্যায় ব্রাক্ষ্মনের
৯টি গুণ, ক্ষত্রিয়ের ৭টি গুণ, বৈশ্যের
৩টি গুণ আর শুদ্রের ১টি গুণ ।
২৩। ৩টি কর্মের প্রেরণা আর ৩টি
কর্মের আশ্রয়ের কথা বলা আছে ।
২৪। বেদান্ত শাস্ত্রের সিধান্ত
অনুসারে কর্মসমূহের সিদ্ধির
উদ্দেশ্যে ৫টি নির্দিষ্ট কারণ কথা
বলা হয়েছে ।
২৫। গুণ অনুসারে ৩ প্রকারের
ত্যাগের কথা বলা হয়েছে ।
২৬। ৩ প্রকারের আহার, যজ্ঞ, তপস্যা,
শ্রদ্ধা, পূজা ও দানের কথা বলা
হয়েছে ।
২৭। ২টি স্বভাবের জীবের কথা বলা
হয়েছে ।
২৮। ২ প্রকার জীবের কথা বলা
হয়েছে ।
২৯। ১৮টি আত্মজ্ঞানের সাধনার
গুনের কথা বলা হয়েছে ।
৩০। ব্রক্ষ্ম উপলব্ধির ৫টি স্তরের কথা
বলা হয়েছে ।
৩১। ভক্তদের ৩৬ টি গুণের কথা বলা
হয়েছে ।
৩২। গীতায় ২৫ জন সৃষ্টের কথা বলা
হয়েছে যারা স্থাবর, জঙ্গম ও সমস্ত
প্রজাদের সৃষ্টি করেছেন ।
৩৩। গীতায় নারীর ৭টি গুণের কথা
বলা হয়েছে ।
৩৪। ৪ প্রকার সুকৃতিবান ব্যক্তির কথা
বলা হয়েছে । আর ৪ প্রকার
দুষ্কৃতিবানের কথা
বলা হয়েছে ।
৩৫। জড়া প্রকৃতির ৮টি উপাদানের
কথা বলা হয়েছে ।
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার অধ্যায় ভিত্তিক সারসংক্ষেপঃ
অর্জুন বিষাদ-যোগ
কুরুক্ষেত্রের রণাঙ্গনে সেনা-পর্যবেক্ষণ:
রণাঙ্গনে প্রতীক্ষমাণ সেনাবাহিনীর মুখোমুখি
হয়ে, মহাযোদ্ধা অর্জুন উভয়
পক্ষের সৈন্যসজ্জার মধ্যে সমবেত তার অতি নিকট
আত্মীয়-পরিজন, আচার্যবর্গ ও
বন্ধু-বান্ধবদের সকলকে যুদ্ধে প্রস্তুত হতে এবং জীবন বিসর্জনে উন্মুখ
হয়ে থাকতে দেখেন। শোকে ও দুঃখে তার মন
মোহাচ্ছন্ন হল এবং তিনি যুদ্ধ করার
সংকল্প পরিত্যাগ করেন।
সাংখ্য যোগ
কৃষ্ণের কাছে তার শিষ্যরূপে অর্জুন আত্মসমর্পণ করেন এবং অনিত্য জড় দেহ ও
শাশ্বত চিন্ময় আত্মার মূলগত পার্থক্য নির্ণয়ের মাধ্যমে অর্জুনকে কৃষ্ণ
উপদেশ প্রদান করতে শুরু করেন। দেহান্তর প্রক্রিয়া, পরমেশ্বরের উদ্দেশ্যে
নিঃস্বার্থ সেবার প্রকৃতি এবং আত্মজ্ঞানলব্ধ মানুষের বৈশিষ্ট্যাদি সম্পর্কে
কৃষ্ণ ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেন।
কর্ম যোগ
এই জড় জগতে প্রত্যেককেই কোনও ধরনের কাজে নিযুক্ত থাকতে হয়। কিন্তু
কর্ম সকল মানুষকে এই জগতের বন্ধনে আবদ্ধ করতেও পারে, আবার তা থেকে মুক্ত
করে দিতেও পারে। স্বার্থচিন্তা ব্যতিরেকে, পরমেশ্বরের সন্তুষ্টি বিধানের
উদ্দেশ্যে কাজের মাধ্যমে, মানুষ তার কাজের প্রতিক্রিয়া জনিত কর্মফলের
বিধিনিয়ম থেকে মুক্তি পেতে পারে এবং আত্মতত্ত্ব ও পরমতত্ত্ব দিব্যজ্ঞান
অর্জন করতে সক্ষম হয়।
জ্ঞান যোগ
আত্মার চিন্ময় তত্ত্ব, ভগবৎ-তত্ত্ব এবং ভগবান ও আত্মার সম্পর্ক -এই সব
অপ্রাকৃত তত্ত্বজ্ঞান বিশুদ্ধ ও মুক্তিপ্রদায়ী। এই প্রকার জ্ঞান হচ্ছে
নিঃস্বার্থ ভক্তিমূলক কর্মের (কর্মযোগ) ফলস্বরূপ। পরমেশ্বর ভগবান গীতার
সুদীর্ঘ ইতিহাস, জড় জগতে যুগে যুগে তার অবতরণের উদ্দেশ্য ও তাৎপর্য এবং
আত্মজ্ঞানলব্ধ গুরুর সান্নিধ্য লাভের আবশ্যকতা ব্যাখ্যা করেছেন।
সন্ন্যাস-যোগ
বহিঃবিচারে সকল কর্তব্যকর্ম সাধন করলেও সেগুলির কর্মফল পরিত্যাগ করার
মাধ্যমে, জ্ঞানবান ব্যক্তি পারমার্থিক জ্ঞানতত্ত্বের অগ্নিস্পর্শে
পরিশুদ্ধি লাভ করে থাকেন, ফলে শান্তি, নিরাসক্তি, চিন্ময় অন্তর্দৃষ্টি এবং
শুদ্ধ আনন্দ লাভ করেন।
ধ্যানযোগ
নিয়মতান্ত্রিক ধ্যানচর্চার মাধ্যমে অষ্টাঙ্গযোগ অনুশীলন মন ও ইন্দ্রিয়
আদি দমন করে এবং অন্তর্যামী পরমাত্মার চিন্তায় মনকে নিবিষ্ট রাখে।এই
অনুশীলনের পরিণামে পরমেশ্বরের পূর্ণ ভাবনারূপ সমাধি অর্জিত হয়।
জ্ঞান-বিজ্ঞানযোগ
পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন পরমতত্ত্ব, সর্বকারণের পরম কারণ এবং
জড় ও চিন্ময় সর্ববিষয়ের প্রাণশক্তি। উন্নত জীবাত্মাগণ ভক্তি ভরে তার
কাছে আত্মসমর্পণ করে থাকেন, পক্ষান্তরে অধার্মিক জীবাত্মারা অন্যান্য
বিষয়ের ভজনায় তাদের মন বিক্ষিপ্ত করে থাকে।
অক্ষরব্রহ্ম-যোগ
আজীবন কৃষ্ণের চিন্তার মাধ্যমে এবং বিশেষ করে মৃত্যুকালে তাকে স্মরণ করে, মানুষ জড় জগতের ঊর্ধ্বে ভগবানের পরম ধাম লাভ করতে পারে।
রাজবিদ্যা-রাজগুহ্য যোগ
কৃষ্ণ হচ্ছেন পরমেশ্বর ভগবান এবং পরমারাধ্য বিষয়। অপ্রাকৃত ভগবত-সেবার
মাধ্যমে জীবাত্মা মাত্রই তার সাথে নিত্য সম্বন্ধযুক্ত। মানুষের শুদ্ধ ভক্তি
পুনরুজ্জীবিত করার ফলে শ্রীকৃষ্ণের পরম ধামে প্রত্যাবর্তন করা সম্ভব।
বিভূতি যোগ
জড় জগতের বা চিন্ময় জগতের শৌর্য, শ্রী, আড়ম্বর, উতকরশ-সমস্ত
ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিষয় কৃষ্ণের দিব্য শক্তি ও পরম ঐশ্বর্যাবলির আংশিক
প্রকাশ মাত্র অভিব্যক্ত হয়ে আছে। সর্বকারণের পরম কারণ, সর্ববিষয়ের আশ্রয়
ও সারাতিসার রূপে কৃষ্ণ সর্বজীবেরই পরমারাধ্য বিষয়।
বিশ্বরূপ দর্শন যোগ
কৃষ্ণ অর্জুনকে দিব্যদৃষ্টি দান করেন এবং সর্বসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষক তার
অনন্ত বিশ্বরূপ প্রকাশ করেন। এভাবেই তিনি তার দিব্যতত্ত্ব অবিসংবাদিতভাবে
সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। কৃষ্ণ প্রতিপন্ন করেছেন যে, তার স্বীয় অপরূপ
সৌন্দর্যময় মানবরূপী আকৃতিই ভগবানের আদিরূপ। একমাত্র শুদ্ধ ভগবত-সেবার
মাধ্যমেই মানুষ এই রূপের উপলব্ধি অর্জনে সক্ষম।
ভক্তিযোগ
চিম্নয় জগতের সর্বোত্তম প্রাপ্তি বিশুদ্ধ কৃষ্ণপ্রেম লাভের পক্ষে
ভক্তিযোগ বা কৃষ্ণের উদ্দেশ্য শুদ্ধ ভক্তি হচ্ছে সর্বোত্তম পন্থা। যারা এই
পরম পন্থার বিকাশ সাধনে নিয়োজিত থাকেন, তারা দিব্য গুণাবলীর অধিকারী হন।
ক্ষেত্র-ক্ষেত্রজ্ঞ-বিভাগ যোগ
দেহ, আত্মা এবং উভয়েরও ঊর্ধ্বে পরমাত্মার পার্থক্য যিনি উপলব্ধি করতে পারেন, তিনিই এই জড় জগৎ থেকে মুক্তি লাভে সক্ষম হন।
গুণত্রয়-বিভাগ-যোগ
সমস্ত দেহধারী জীবাত্মা মাত্রই সত্ত্ব, রজ ও তম—জড়া প্রকৃতির এই
ত্রিগুণের নিয়ন্ত্রণাধীন। পরমেশ্বর কৃষ্ণ এই ত্রিগুণাবলির স্বরূপ, আমাদের
ওপর সেগুলির ক্রিয়াকলাপ, মানুষ কিভাবে সেগুলিকে অতিক্রম করে এবং যে মানুষ
অপ্রাকৃত স্তরে অধিষ্ঠিত তার লক্ষণাবলী ব্যাখ্যা করেছেন।
পুরুষোত্তম-যোগ
বৈদিক জ্ঞানের চরম উদ্দেশ্য হচ্ছে জড়-জাগতিক বন্ধন থেকে মানুষের মুক্তি
লাভ এবং পরম পুরুষোত্তম ভগবানরূপে কৃষ্ণকে উপলব্ধি করা। যে মানুষ কৃষ্ণের
পরম স্বরূপ উপলব্ধি করে, সে তার কাছে আত্মসমর্পণ করে এবং ভক্তিমূলক সেবায়
আত্মনিয়োগ করে।
দৈবাসুর-সম্পদ-বিভাগযোগ
যারা আসুরিক গুণগুলি অর্জন করে এবং শাস্ত্রবিধি অনুসরণ না করে
যথেচ্ছভাবে জীবন যাপন করে থাকে, তারা হীনজন্ম ও ক্রমশ জাগতিক বন্ধনদশা লাভ
করে। কিন্তু যারা দিব্য গুণাবলির অধিকারী এবং শাস্ত্রীয় অনুশাসনাদি মেনে
বিধিবদ্ধ জীবন যাপন করেন, তারা ক্রমান্বয়ে পারমার্থিক সিদ্ধিলাভ করেন।
শ্রদ্ধাত্রয়-বিভাগ-যোগ
জড় প্রকৃতির ত্রিগুণাবলির থেকে উদ্ভূত এবং সেগুলির বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী
শ্রদ্ধা তিন ধরনের হয়ে থাকে। যাদের শ্রদ্ধা রাজসিক ও তামসিক, তারা
নিতান্তই অনিত্য জড়-জাগতিক ফল উৎপন্ন করে। পক্ষান্তরে, শাস্ত্রীয় অনুশাসন
আদি মতে অনুষ্ঠিত সত্ত্বগুণময় কার্যাবলি হৃদয়কে পরিশুদ্ধ করে এবং
পরিণামে পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণের প্রতি শুদ্ধ ভক্তি-শ্রদ্ধার পথে মানুষকে
পরিচালিত করে ভক্তিভাব জাগ্রত করে তোলে।
মোক্ষযোগ
কৃষ্ণ ব্যাখ্যা করেছেন ত্যাগের অর্থ এবং মানুষের ভাবনা ও কার্যকলাপের উপর
প্রকৃতির গুণাবলির প্রতিক্রিয়াগুলি কেমন হয়। তিনি ব্যাখ্যা করেছেন ব্রহ্ম
উপলব্ধি, ভগবদগীতার মাহাত্ম্য ও গীতার চরম উপসংহার- ধর্মের সর্বোচ্চ পন্থা
হচ্ছে পরমেশ্বর কৃষ্ণের উদ্দেশ্যে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ, যার ফলে সর্বপাপ
হতে মুক্তি লাভ হয়, সম্যক জ্ঞান-উপলব্ধি অর্জিত হয় এবং শাশ্বত চিন্ময়
পরম ধামে প্রত্যাবর্তন করা যায়।
ভগবদ গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ছয়টি প্রতিজ্ঞা
প্রথম প্রতিজ্ঞা
শ্রীকৃষ্ণ প্রতিজ্ঞা করেছেন “অতএব, হে
অর্জুন, সর্বদা আমাকে স্মরণ করে তোমার স্বভাব বিহিত যুদ্ধ কর। তাহলে আমাতে
তোমার মন ও বুদ্ধি অর্পিত হবে এবং নিঃসন্দেহে তুমি আমাকেই লাভ করবে।
(ভগবদগীতা ৮/৭)।
দ্বিতীয় প্রতিজ্ঞা
শ্রীকৃষ্ণ প্রতিজ্ঞা করেছেন “তোমার মনকে
আমার ভাবনায় নিযুক্ত করো, আমাকে প্রণাম করো এবং আমার পূজা কর।
সম্পূর্ণরূপে আমাকে আশ্রয় করো তুমি অবশ্যই আমাকে লাভ করবে।”
(ভগবদগীতা ৯/৩৪)।
তৃতীয় প্রতিজ্ঞা
শ্রীকৃষ্ণ প্রতিজ্ঞা করেছেন, “যারা
নিত্য ভক্তিযোগ দ্বারা প্রীতিপূর্বক আমরা ভজনা করেন, আমি তাদের
শুদ্ধজ্ঞানজনিত বুদ্ধিযোগ দান করি। যার দ্বারা তারা আমার কাছে ফিরে আসতে
পারে।
(ভগবদগীতা ১০/১০)।
চতুর্থ প্রতিজ্ঞা
শ্রীকৃষ্ণ প্রতিজ্ঞা করেছেন, “হে প্রিয়
অর্জুন, যিনি আমার সেবা করেন, আমার প্রতি নিঃস্বার্থ পরায়ণ, আমার ভক্ত,
জড়বিষয়ে সম্পূর্ণ আসক্তি রহিত এবং সমস্ত প্রাণীর প্রতি শত্রুভাব রহিত, তিনি
অবশ্যই আমার কাছে ফিরে আসেন।
(ভগবদগীতা ১১/৫৫)।
পঞ্চম প্রতিজ্ঞা
শ্রীকৃষ্ণ প্রতিজ্ঞা করেছেন, “অতএব
আমাতে তুমি মন সমাহিত করো, আমাতে বুদ্ধি নিবিষ্ট করো। তার ফলে নিশ্চয়ই
আমাকে প্রাপ্ত হবে, সে সম্বন্ধে কোন সন্দেহ নেই।
(ভগবদগীতা ১২/৮)।
ষষ্ঠ প্রতিজ্ঞা
শ্রীকৃষ্ণ প্রতিজ্ঞা করেছেন, “তুমি
আমাতে মন চিত্তস্থির করো এবং আমার ভক্ত হও। আমার পূজা করো এবং আমাকে
নমষ্কার করো। তুমি আমার অত্যন্ত প্রিয়। এইজন্যই আমি সত্যপ্রতিজ্ঞা করছি যে,
এভাবে তুমি আমাকে প্রাপ্ত হবে ।”
(ভগবদ্গীতা ১৮/৬৫)।
একং শাস্ত্রং দেবকীপুত্রগীতম্
একো দেবো দেবকীপুত্র এব৷
একো মন্ত্রস্তস্য নামানি যানি
কর্মাপ্যেকং তস্য দেবস্য সেবা॥
(গীতা মাহাত্ম্য~৭, শংকরাচার্য)
অর্থ:-
বর্তমান জগতে মানুষ আকুল ভাবে আকাংক্ষা করছে একটি শাস্ত্রের, একক ভগবানের,
একটি ধর্মের এবং একটি বৃত্তির৷ তাই, একং শাস্ত্রং দেবকীপুত্রগীতম্- সারা
পৃথিবীর মানুষের জন্য সেই একক শাস্ত্র হোক ভগবদ্ গীতা৷
একো
দেবো দেবকীপুত্র এব- সমগ্র বিশ্বচরাচরের একক ভগবান হোন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ৷
একো মন্ত্রস্তস্য নামানি- একক মন্ত্র, একক প্রার্থনা, একক স্তোত্র হোক তাঁর
নাম কীর্তন-
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে৷
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে॥
এবং কর্মাপ্যেকং তস্য দেবস্য সেবা- সমস্ত মানুষের একটিই বৃত্তি হোক- পরম পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সেবা করা৷
হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্রের মহিমা অনন্য এবং খুবই শক্তিশালী, কেননা পরমেশ্বর ভগবান শ্রী কৃষ্ণ এবং হরিনাম এক ও অভিন্ন, কোন পার্থক্য নেই
পরম আদরে এবং অনন্য ভক্তি সহকারে জপ করার ফলেই আমরা চিন্ময় আনন্দ অনুভব করতে পারব.
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।
হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করুন এবং সুখী হউন।
মোক্ষদা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
যুধিষ্ঠির
বললেন- হে বিষ্ণো! আপনাকে আমি বন্দনা করি। আপনি ত্রিলোকের সুখদায়ক,
বিশ্বেশ্বর, বিশ্বপালক ও পুরুষোত্তম। আমার একটি সংশয় আছে। অগ্রহায়ণ মাসের
শুক্লপক্ষের যে একাদশী তার নাম কি, বিধিই বা কি ও কোন দেবতা এই একাদশীতে
পূজিত হন, তা আমায় বলুন। শ্রীকৃষ্ণ বললেন – হে মহারাজ! আপনি উত্তম প্রশ্ন
জিজ্ঞাসা করেছেন, যার মাধ্যমে আপনার যশ চতুর্দিকে বিস্তৃত হবে। এখন এই
একাদশীর কথা আমি বর্ণনা করছি যা শোনা মাত্রই বাজপেয় যজ্ঞের ফল লাভ হয়।
.
অগ্রহায়ণ মাসের শুক্লপক্ষের এই একাদশী ‘মোক্ষদা’ নামে পরিচিত।
সর্বপাপনাশিনী ও ব্রত সর্বশ্রেষ্ঠা এই একাদশীর দেবতা শ্রীদামোদর। তুলসী,
তুলসী মঞ্জরী, ধূপ, দীপ, ইত্যাদি উপচারে শাস্ত্রবিধি অনুসারে শ্রীদামোদরের
পূজা করতে হবে। পূর্ববর্ণিত বিধি অনুসারে দশমী ও একাদশী পালন করতে হবে। এই
উপবাস দিনে স্তবস্তুতি, নৃত্য-গীত আদি সহ রাত্রিজাগরণ করা কর্তব্য। হে
মহারাজ! প্রসঙ্গক্রমে একটি অলৌকিক কাহিনী আমি বলছি। মনোযোগ দিয়ে এই ইতিহাস
শ্রবণ মাত্রই সর্বপাপ ক্ষয় হয়। যে পিতৃপুরুষেরা নিজ নিজ পাপে অধ:যোনি
প্রাপ্ত হয়েছে, এই ব্রত পালনের পুণ্যফল বিন্দু মাত্র তাদেরকে দান করলে
তারাও মুক্তিলাভের যোগ্য হন।
.
কোন এক সময় মনোরম চম্পক নগরে বৈখানস নামে এক রাজা ছিলেন। তিনি ছিলেন সমস্ত
বৈষ্ণব সদ্গুণে বিভূষিত। প্রজাদের তিনি পুত্রের মতো পালন করতেন। তাঁর
রাজ্যে বহু বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ বাস করতেন। রাজ্যের সকলেই ছিল বেশ সমৃদ্ধশালী।
একবার রাজা স্বপ্নে দেখলেন যে তার পিতা নরকে পতিত হয়েছেন। তা দেখে তিনি
অত্যন্ত বিস্মিত হলেন। পরদিন ব্রাহ্মণদের ডেকে বলতে লাগলেন- হে ব্রাহ্মণগণ।
গতরাত্রিতে স্বপ্নে নরকযাতনায় পিতাকে কষ্ট পেতে দেখে আমার হৃদয় বিদীর্ণ
হচ্ছে। তিনি আমাকে লক্ষ্য করে বলতে লাগলেন- ‘হে পুত্র, তুমি আমাকে
নরকসমুদ্র থেকে উদ্ধার কর।’ তাঁর সেই অবস্থা দেখে আমার অন্তরে সুখ নেই।
আমার এই বিশাল রাজ্য, স্ত্রী-পুত্র, কিছুতেই আমি শান্তি পাচ্ছি না। কি করি,
কোথায় যাই কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। আমার পূর্বপুরুষেরা মুক্তিলাভ করতে
পারেন এমন কোন পুণ্যব্রত, তপস্যা ও যোগের কথা আমাকে উপদেশ করুন। আমি তা
অনুষ্ঠান করব। আমার মতো পুত্র বর্তমান থাকা সত্ত্বেও যদি পিতামাতা
পূর্বপরুষেরা যদি নরকযন্ত্রণা ভোগ করতে থাকেন, তবে সে পুত্রের কি প্রয়োজন?
.
ব্রাহ্মণগণ বললেন- হে মহারাজ! আপনার রাজ্যের কাছেই মহর্ষি পর্বত মুনির
আশ্রম রয়েছে। তিনি ত্রিকালজ্ঞ। তাঁর কাছে আপনার মুক্তির উপায় জানতে পারবেন।
ব্রাহ্মণদের উপদেশ শ্রবণ করে মহাত্মা বৈখানস তাঁদের সঙ্গে নিয়ে সেই পর্বত
মুনির আশ্রমে গমন করলেন। তাঁরা দুর থেকে ঋষিবরকে সষ্টাঙ্গ প্রণাম করে তার
কাছে গেলেন। মুনিবর রাজার কুশলবার্তা জিজ্ঞাসা করলেন। রাজা বললেন- হে
প্রভু! আপনার কৃপায় আমার সবই কুশল। তবে আমি একদিন স্বপ্নযোগে পিতার
নরকযন্ত্রণা ও কাতর আর্তনাদ্ শুনে অত্যন্ত দু:খিত ও চিন্তাগ্রস্থ হয়েছি।
হে ঋষিবর। কোন পুণ্যের ফলে তিনি সেই দুর্দশা থেকে মুক্তি পাবেন, তার উপায়
জানতেই আপনার শরণাগত হয়েছি।
.
রাজার কথা শুনে পর্বত মুনি কিছুক্ষণ ধ্যানস্থ হয়ে বললেন- হে মহারাজ!
পূর্বজন্মে তোমার পিতা অত্যন্ত কামাচারী হওয়ায় তার এরকম অধোগতি লাভ হয়েছে।
এখন এই পাপ থেকে মুক্তির উপায় বর্ণনা করছি। অগ্রহায়ণ মাসের শুক্লপক্ষের
মোক্ষদা একাদশী পালন করে সেই পুণ্যফল পিতাকে প্রদান কর। সেই পুণ্য প্রভাবে
তোমার পিতার মুক্তি লাভ হবে। মুনির কথা শোনার পর রাজা নিজগৃহে ফিরে এলেন।
সেই পবিত্র তিথির আবির্ভাবে তিনি স্ত্রী-পুত্রাদিসহ যথাবিধি মোক্ষদা একাদশী
ব্রত পালন করলেন। ব্রতের পুণ্যফল পিতার উদ্দেশ্যে প্রদাণ করলেন। ঐ পুণ্যফল
দানের সঙ্গে সঙ্গে আকাশ থেকে পুষ্পবৃষ্টি হতে লাগল। ‘হে পুত্র তোমার মঙ্গল
হোক।’ এই বলতে বলতে বৈখানস রাজার পিতা নরক থেকে মুক্ত হয়ে স্বর্গে গমন
করলেন।
.
হে মহারাজ যুধিষ্ঠির! যে ব্যাক্তি এই মঙ্গলদায়িনী মোক্ষদা একাদশী ব্রত
পালন করে, তার সমস্ত পাপ বিনষ্ট হয় এবং মৃত্যুর পর মুক্তি লাভ করে। এই
ব্রতের পুণ্যসংখ্যা আমিও জানি না। চিন্তমণির মতো এই ব্রতটি আমার অত্যন্ত
প্রিয়। এই ব্রত কথা যিনি পাঠ করেন এবং যিনি শ্রবণ করেন, উভয়েই বাজপেয়
যজ্ঞের ফল প্রাপ্ত হন।
একাদশী ব্রত পালনের তাৎপর্য ও নিয়মাবলি
একসময় জৈমিনি ঋষি তার গুরুদেব মহর্ষি ব্যাসদেবকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে
গুরুদেব! একাদশী কী? একাদশীতে কেন উপবাস করতে হয়? একাদশী ব্রত করলে কী
লাভ? একাদশী ব্রত না করলে কী ক্ষতি? এ সব বিষয়ে আপনি দয়া করে বলুন।
মহর্ষি ব্যাসদেব তখন বলতে লাগলেন-সৃষ্টির প্রারম্ভে পরমেশ্বর ভগবান এই জড় সংসারে স্থাবর জঙ্গম সৃষ্টি...করলেন।
মর্ত্যলোকবাসী মানুষদের শাসনের জন্য একটি পাপপুরুষ নির্মাণ করলেনা।
সেই পাপপুরুষের অঙ্গণ্ডলো বিভিন্ন পাপ দিয়ে নির্মিত হল। পাপপুরুষের মাথাটি
ব্রহ্মহত্যা পাপ দিয়ে, চক্ষুদুটি মদ্যপান, মুখ স্বর্ণ অপহরণ, দুই
কর্ণ-ণ্ডরুপত্নী গমন, দুই নাসিকা-স্ত্রীহত্যা, দুই বাছ-গোহত্যা পাপ,
গ্রীবা-ধন অপহরণ, গলদেশ-ভ্রূণহত্যা, বক্ষ-পরস্ত্রী-গমন, উদর-আত্মীয়স্বজন
বধ, নাভি-শরণাগত বধ, কোমর-আত্মশ্লাঘা, দুই ঊরু-ণ্ডরুনিন্দা, শিশ্ন-কন্যা
বিক্রি, মলদ্বার-ণ্ডপ্তকথা প্রকাশ পাপ, দুই পা-পিতৃহত্যা, শরীরের রোম-সমস্ত
উপপাতক। এভাবে বিভিন্ন সমস্ত পাপ দ্বারা ভয়ঙ্কর পাপপুরুষ নির্মিত হল।
পাপপুরুষের ভয়ঙ্কর রূপ দর্শন করে ভগবান শ্রীবিষ্ণু মর্ত্যের মানব
জাতির দুঃখ মোচন করবার কথা চিন্তা করতে লাগলেন। একদিন গকড়ের পিঠে চড়ে
ভগবান চললেন যমরাজের, মন্দিরে। ভগবানকে যমরাজ উপযুক্ত স্বর্ণসিংহাসনে
বসিয়ে পাদ্য -অর্ঘ্য ইত্যাদি দিয়ে যথাবিধি তার পূজা করলেন।
যমরাজের সঙ্গে কথোপকথনকালে ভগবান শুনতে পেলেন দক্ষিণ দিক থেকে অসংখ্য জীবের আর্তক্রন্দন ধ্বনি। প্রশ্ন করলেন-এ আর্তক্রন্দন কেন?
যমরাজ বললেন, হে প্রভু, মর্ত্যের পাপী মানুষেরা নিজ কর্মদোষে নরকযন্ত্রণা ভোগ করছে। সেই যাতনার আর্ত চিৎকার শোনা যাচ্ছে।
যন্ত্রণাকাতর পাপাচারী জীবদের দর্শন করে করুণাময় ভগবান চিন্তা
করলেন--আমিই সমস্ত প্রজা সৃষ্টি করেছি, আমার সামনেই ওরা কর্ম দোষে দুষ্ট
হয়ে নরক যান্ত্রণা ভোগ করছে, এখন আমিই এদের সদগতির ব্যবস্থা করব।
ভগবান শ্রীহরি সেই পাপাচারীদের সামনে একাদশী তিথি রূপে এক
দেবীমূর্তিতে প্রকাশিত হলেন। সেই পাপীদেরকে একাদশী ব্রত আচরণ করালেন।
একাদশী ব্রতের ফলে তারা সর্বপাপ মুক্ত হয়ে তৎক্ষণাৎ বৈকুণ্ঠ ধামে গমন করল।
শ্রীব্যাসদেব বললেন, হে জৈমিনি! শ্রীহরির প্রকাশ এই একাদশী সমস্ত সুকর্মের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং সমস্ত ব্রতের মধ্যে উত্তম ব্রত।
কিছুদিন পরে ভগবানের সৃষ্ট পাপপুরুষ এসে শ্রীহরির কাছে করজোড়ে কাতর
প্রার্থনা জানাতে লাগল-হে ভগবান! আমি আপনার প্রজা। আমাকে যারা আশ্রয় করে
থাকে, তাদের কর্ম অনুযায়ী তাদের দুঃখ দান করাই আমার কাজ ছিল। কিন্তু
সম্প্রতি একাদশীর প্রভাবে আমি কিছুই করতে পারছি না, বরং ক্ষয়প্রাপ্ত
হচ্ছি। কেননা একাদশী ব্রতের ফলে প্রায় সব পাপাচারীরা বৈকুণ্ঠের বাসিন্দা
হয়ে যাচ্ছে। হে ভগবান, এখন আমার কী হবে? আমি কাকে আশ্রয় করে থাকব? সবাই
যদি বৈকুণ্ঠে চলে যায়, তবে এই মর্ত্য জগতের কী হবে? আপনি বা কার সঙ্গে এই
মর্ত্যে ক্রীড়া করবেন?
পাপপুরুষ প্রার্থনা করতে লাগল-হে ভগবান, যদি আপনার এই সৃষ্ট বিশ্বে
ক্রীড়া করবার ইচ্ছা থাকে তবে, আমার দুঃখ দূর করুন। একাদশী ভয় থেকে আমাকে
রক্ষা করুন। হে কৈটভনাশন, আমি একমাত্র একাদশীর ভয়ে ভীত হয়ে পলায়ন করছি।
মানুষ, পশুপাখি, কীট-পতঙ্গ, জলত-স্থল, বনপ্রান্তর, পর্বত-সমুদ্র, বৃক্ষ,
নদী, স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল সর্বত্রই আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্ত
একাদশীর প্রভাবে কোথাও নির্ভয় স্থান পাচ্ছি না দেখে আজ আপনার শরণাপন্ন
হয়েছি।
হে ভগবান, এখন দেখছি, আপনার সৃষ্ট অনন্ত কোটি ব্রহ্মাণ্ডের মধ্যে
একাদশীই প্রাধান্য লাভ করেছে, সেইজন্য আমি কোথাও আশ্রয় পেতে পারছি না।
আপনি কৃপা করে আমাকে একটি নির্ভয় স্থান প্রদান করুন।
পাপপুরুষের প্রার্থনা শুনে ভগবান শ্রীহরি বলতে লাগলেন-হে -পাপপুরুষ!
তুমি দুঃখ করো না। যখন একাদশী এই ত্রিভুবনকে পবিত্র করতে আবির্ভূত হবে,
তখন তুমি অন্ন ও রবিশস্যের মধ্যে আশ্রয় গ্রহণ করবে তা হলে আমার মূর্তি
একাদশী তোমাকে বধ করতে পারবে না।
একাদশী পালনের নিয়মাবলি
একাদশীর
মূল কাজ হল– নিরন্তর ভগবানকে স্মরণ করা। তাই আপনারা যে নিয়মে, যে সময়ে
পালন করুন না কেন, ভগবানকে ভক্তিভরে স্মরণ করাই যেন আপনারই মূল কাজ হয়।
একাদশী পালনের সাত্ত্বিক নিয়মগুলো হলো:
□ ১। সমর্থ পক্ষে দশমীতে একাহার, একাদশীতে নিরাহার, ও দ্বাদশীতে একাহার করতে হবে ।
□ ২। তা হতে অসমর্থ পক্ষে শুধুমাত্র একাদশীতে অনাহার।
□ ৩। যদি উহাতেও অসমর্থ হন, একাদশীতে পঞ্চ রবিশস্য বর্জন করে ফলমূলাদি অনুকল্প গ্রহণের বিধান রয়েছে।
□ সমর্থ পক্ষে রাত জাগরণের বিধি আছে, গৌড়ীয় ধারায বা
আচার্যবৃন্দের অনুমোদিত পঞ্জিকায় যে সমস্ত একাদশী নির্জলা (জল ব্যতীত)
পালনের নির্দেশ প্রদান করেছেন, সেগুলি সেমতে পালন করলে সর্বোত্তম হয়।
নিরন্তর কৃষ্ণভাবনায় থেকে নিরাহার থাকতে অপারগ হলে নির্জলাসহ অন্যান্য
একাদশীতে কিছু — সবজি, ফলমূলাদি গ্রহণ করা যেতে পারে । যেমন — গোল আলু,
মিষ্টি আলু, চাল কুমড়ো, পেঁপে, টমেটো, ফুলকপি ইত্যাদি সবজি ঘি অথবা বাদাম
তেল দিয়ে রান্না করে ভগবানকে উৎসর্গ করে আহার করতে পারেন। হলুদ, মরিচ, ও
লবণ ব্যবহার্য। আবার অন্যান্য আহার্য, যেমন — দুধ, কলা, আপেল, আঙুর, আনারস,
আখ, আমড়া শস্য, তরমুজ, বেল, নারিকেল, মিষ্টি আলু , বাদাম ও লেবুর শরবত
ইত্যাদি ফলমূলাদিও খাওয়া যেতে পারে ।
□ একাদশীতে পাঁচ প্রকার রবিশস্য গ্রহণ করতে নিষেধ করা হয়েছেঃ—
□ ১। ধানজাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন – চাউল, মুড়ি, চিড়া, সুজি, পায়েস, খিচুড়ি, চালের পিঠা, খৈ ইত্যাদি
□ ২। গমজাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন – আটা, ময়দা, সুজি, বেকারির রুটি , বা সকল প্রকার বিস্কুট, হরলিকস ইত্যাদি ।
□ ৩। যব বা ভুট্টাজাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন — ছাতু, খই, রুটি ইত্যাদি ।
□ ৪। ডালজাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন — মুগ, মাসকলাই, খেসারি, মসুরি, ছোলা অড়হর, ফেলন, মটরশুঁটি, বরবটি ও সিম ইত্যাদি ।
□ ৫। সরিষার তেল, সয়াবিন তেল, তিলের তেল ইত্যাদি। উপর্যুক্ত পঞ্চ রবিশস্যের যেকোন একটি একাদশীতে গ্রহণ করলে ব্রত নষ্ট হয়।
□ উল্লেখ্য যারা সাত্ত্বিক আহারী নন এবং চা, বিড়ি/সিগারেট, পান,
কফি ইত্যাদি নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করেন, একাদশী ব্রত পালনের সময়কাল
পর্যন্ত এগুলি গ্রহণ না করাই ভালো।
□ সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, একাদশী করলে যে কেবল নিজের
জীবনের সদ্গতি হবে তা নয়। একাদশী পালন করা ব্যক্তির প্রয়াত পিতা/মাতা যদি
নিজ কর্ম দোষে নরকবাসী হন, তবে সেই পুত্রই (একাদশী ব্রত) পিতা–মাতাকে নরক
থেকে উদ্ধার করতে পারে। একাদশীতে অন্ন ভোজন করলে যেমন নরকবাসী হবে, অন্যকে
ভোজন করালেও নরকবাসী হবে।
□ একাদশী পারণঃ (একাদশী তিথির পরদিন উপবাস ব্রত ভাঙার পর নিয়ম)
পঞ্জিকাতে একাদশী পারণের (উপবাসের পরদিন সকালে) যে নির্দিষ্ট সময় দেওয়া
থাকে, সেই সময়ের মধ্যে পঞ্চ রবিশস্য ভগবানকে নিবেদন করে, প্রসাদ গ্রহণ করে
পারণ করা একান্ত দরকার। নতুবা একাদশীর কোন ফল লাভ হবে না। একাদশী ব্রত
পালনের প্রকৃত উদ্দেশ্য কেবল উপবাস করা নয়, নিরন্তর শ্রীভগবানের নাম
স্মরণ, মনন, ও শ্রবণ কীর্তনের মাধ্যমে একাদশীর দিন অতিবাহিত করতে হয় ।
এদিন যতটুকু সম্ভব উচিত । একাদশী পালনের পরনিন্দা, পরচর্চা, মিথ্যা ভাষণ,
ক্রোধ, দুরাচার, স্ত্রী সহবাস সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ।
□ বিঃ দ্রঃ নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি দৃষ্টি রাখা বাঞ্ছনীয়ঃ — একাদশী
ব্রতের আগের দিন রাত ১২ টার আগেই অন্ন ভোজন সম্পন্ন করে নিলে সর্বোত্তম।
ঘুমানোর আগে দাঁত মাজা।
□ রাতে ব্রাশ করে দাঁত ও মুখগহবরে লেগে থাকা সব অন্ন পরিষ্কার করে নেওয়া সর্বোত্তম। সকালে উঠে শুধু মুখ কুলি ও স্নান করতে হয়।
□ একাদশীতে সবজি কাটার সময় সতর্ক থাকতে হবে যেন কোথাও কেটে না
যায়। একাদশীতে রক্তক্ষরণ বর্জনীয়। দাঁত মাজার সময় অনেকের রক্তক্ষরণ হয়ে
থাকে। তাই একাদশীর আগের দিন রাতে দাঁত ভালোভাবে মেজে নেওয়াই সমীচীন।
□ একাদশীতে চলমান একাদশীর মাহাত্ম্য ভগবদ্ভক্তের শ্রীমুখ হতে শ্রবণ অথবা সম্ভব না হলে নিজেই ভক্তি সহকারে পাঠ করতে হয়।
□ যারা একাদশীতে একাদশীর প্রসাদ রান্না করেন, তাদের পাঁচফোড়ন
ব্যবহারে সতর্ক থাকা উচিৎ, কারণ পাঁচফোড়নে সরিষার তৈল ও তিল থাকতে পারে যা
বর্জনীয়।
□ একাদশীতে শরীরে প্রসাধনী ব্যবহার নিষিদ্ধ। তৈল (শরীরে ও মাথায়) সুগন্ধি, সাবান, শ্যাম্পু ইত্যাদি বর্জনীয়।
□ সকল প্রকার ক্ষৌরকর্ম — দাড়ি-গোঁফ করা এবং চুল ও নখ কাটা নিষিদ্ধ।
পারমার্থিক জ্ঞান হিন্দুদের
কেন গো মাংস খাওয়া উচিত না? গো মাতা কেন সনাতন ধর্মে পূজনীয় ? উত্তর:-
আমরা হিন্দুরা নানান জায়গায় মানুষের কাছ থেকে এই প্রশ্নের সম্মুখীন …
আরও পড়ুন » পূজা-পার্বনের তাৎপর্য ও মহিমা অম্বুবাচী
(আম্ববর্তী) কি? কেন অম্বুবাচী পালন করা হয়? প্রবাদে রয়েছে 'কিসের বার
কিসের তিথি, আষাঢ়ের সাত তারিখ অম্বুবাচী।' এদিন থেকেই হয় অম্…
আরও পড়ুন » পারমার্থিক জ্ঞান আমার
মতো ছেলেরা মনে করে, একটা মেয়ে হয়তো তাঁকে হ্যাপী করবে বা রাখতে পারে।
তদ্রুপ, একটা মেয়েও ভাবছে কোন ছেলে হয়তো তাঁর দুঃখ নিবারণ করবে। তবে
আমাদের…
আরও পড়ুন » পারমার্থিক জ্ঞান শ্রীকৃষ্ণ
হচ্ছেন সর্ব কারণের পরম কারণ এবং লীলা পুরুষােত্তম স্বয়ং ভগবান । গীতায়
বিভিন্ন শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণ যে পরম পুরষ ভগবান তার উল্লেখ পাওয়া যায়, য…
আরও পড়ুন » পূজা-পার্বনের তাৎপর্য ও মহিমা মা
লক্ষ্মীর কৃপালাভের কিছু মন্ত্র ও আচার-অনুষ্ঠান ! মা লক্ষ্মীর চারটি হাত।
ধর্ম, কর্ম, অর্থ ও মোক্ষ— হিন্দুশাস্ত্রে এই চার হাতের তাৎপর্য ব্যাখ্য…
আরও পড়ুন » পারমার্থিক জ্ঞান ছাত্র-ছাত্রীদের
আট প্রকার প্রবণতা বিদ্যা অর্জনে বিশেষ বাধা-স্বরূপ: কাম ক্রোধ তথা লোভং
স্বাদ শৃঙ্গার কৌতুকে । অতি নিদ্রাহতি সেবে চ বিদ্যার্থী হৃষ্ট …
আরও পড়ুন » মহাপ্রসাদ
কিভাবে পৃথিবীতে আসলো? নারদ মুনির একবার বাসনা হলো যে তিনি ভগবান নারায়নের
প্রসাদ পেতে চান। কিন্তু যা ছিল অসম্ভব। কারন নারায়নের প্রসাদ কেবল …
আরও পড়ুন » বৈদিক গ্রন্থ সনাতন
ধর্মের মূল গ্রন্থসমূহ: বেদ ৪ টি-মন্ত্র সংখ্যা-২০,৪৩৪ ১.ঋগবেদ.
মন্ত্রসংখ্যা-১০,৫৮৯ ২.সামবেদ. মন্ত্রসংখ্যা-১,৮৯৩ ৩.যজু:বেদ. মন্ত্র
সংখ্যা-১,৯…
আরও পড়ুন » শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা গীতার ১৮ টি নামের মাহাত্ব্যঃ- ০১) গঙ্গা - এর অর্থ হল, গঙ্গায় ডুব দিলে কোন ব্যাক্তি তার সকল পাপ নাশ করতে পারে ।তাই সবার প্র…
আরও পড়ুন » পারমার্থিক জ্ঞান বেদ
শাস্ত্রে বলা হয়েছেঃ ------------------------------- আহার শুদ্ধৌ সত্ত্ব
শুদ্ধি সত্ত্ব শুদ্ধৌ। ধ্রুবাস্মৃতি স্মৃতিলম্ভে সর্বগ্রন্থিনাং
বিপ্রমোক্ষ…
আরও পড়ুন » পূজা-পার্বনের তাৎপর্য ও মহিমা অক্ষয়
তৃতীয়া হল চান্দ্র বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের তৃতীয়া তিথি। অক্ষয় তৃতীয়া
বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ তিথি। অক্ষয় শব্দের অর্থ হল যা ক্ষয়প্রাপ্ত হয় ন…
আরও পড়ুন » পূজা-পার্বনের তাৎপর্য ও মহিমা রামায়
রাম-ভদ্রায় রামচন্দ্রায় মেধসে, রঘুনাথায় নাথায় সিতায় পাতায় নমঃ
শ্রীরাম নবমী তাৎপর্য ও মহিমাঃ শ্রীরামের নবমী তিথি লক্ষ লক্ষ সূর্যগ্রহ…
আরও পড়ুন » পূজা-পার্বনের তাৎপর্য ও মহিমা মা
মনসার ধ্যান মন্ত্র অনুসারে ------ . ওঁ দেবীমম্বামহীনাং শশধরবদনাং
চারুকান্তিং বদন্যাম্ । হংসারূঢ়মুদারামস সুললিতবসনাং সর্বদাং সর্বদৈব ।।
স্মেরাস্য…
আরও পড়ুন » সনাতন ধর্মের বিভ্রান্তি নিরসন রাশি
বা লগ্ন অনুসারে জেনে নিন আপনার বৈশিষ্ঠ্য........... রাশি বা লগ্ন, এই
দুইয়েরই বিচার করে বলে দেওয়া যায় একজন মানুষের ব্যক্তিত্ব। ১২টি লগ্ন
রয…
আরও পড়ুন » পূজা-পার্বনের তাৎপর্য ও মহিমা মহা
বারুণী স্নান মাহাত্ম্যঃ গঙ্গা হল পুণ্যদায়িনী। এটা আমরা সকলেই জানি। তাই
আমরা সকলেই গঙ্গা স্নান করে থাকি পুণ্য লাভের আশায়। আবার সমস্ত পূজোতে
গঙ…
আরও পড়ুন » পূজা-পার্বনের তাৎপর্য ও মহিমা আর
মাত্র হাতে গোনা কয়েক দিন তারপরই আসছে নববর্ষ। পুরনো বছরকে বিদায়
জানিয়ে নতুন বছরকে আগমন জানাবার সময় আর এই নতুন বছরের আগমনের আগেই আসবে
চৈত্র সং…
আরও পড়ুন » পূজা-পার্বনের তাৎপর্য ও মহিমা বাসন্তী
পূজা দূর্গাপূজা বা দূর্গোৎসব, সনাতনী হিন্দু সম্প্রদায়ের দেবী দূর্গাকে
কেন্দ্র করে প্রচলিত এক বৃহৎ উৎসব। এই দূর্গাপূজা সমগ্র হিন্দু সমাজেরই…
আরও পড়ুন » পূজা-পার্বনের তাৎপর্য ও মহিমা আসুন
সকলে জেনে নিই দোল পূর্ণিমা বা হোলি কি ? হিন্দু ধর্ম অনুসারে চারটি
যুগ-সত্যযুগ, ত্রেতাযুগ, দ্বাপরযুগ এবং কলিযুগ। বর্তমানে চলছে কলিযুগ। এর
আগের …
আরও পড়ুন » সাধু-গুরু-বৈষ্ণব ১৮৩৬
সালে একটি সাধারণ বাঙালি গ্রামীণ পরিবারে জন্মগ্রহণকারী রামকৃষ্ণ ছিলেন
একজন সাধারণ যোগসাধক, দার্শনিক ও ধর্মগুরু। তিনি উনিশ শতকের এমন এক
ব্যক্তি…
আরও পড়ুন » পূজা-পার্বনের তাৎপর্য ও মহিমা শিবের
প্রনাম মন্ত্রঃ নমঃ শিবায় শান্তায় কারণত্রয় হে তবে। নিবেদয়ামি
চাত্মানং ত্বং গতি পরমেশ্বর। দেবাদিদেব মহাদেব শিব চতুর্দশী ব্রত মাহাত্ম্য
…
আরও পড়ুন » পারমার্থিক জ্ঞান শ্রীমদ্ভগবদগীতা
কি? কেন গীতা পড়বেন? বর্তমান সময়ে প্রতিটি মানুষ অজ্ঞানতার অন্ধকারে
আবদ্ধ। ভগবদ গীতার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে মনুষ্য সমাজকে সেই অন্ধকা…
আরও পড়ুন » পূজা-পার্বনের তাৎপর্য ও মহিমা অশ্বিনীকুমার
ব্রত মাহাত্ম্য আশ্বিনে রাধেঁ , কার্ত্তিকে খাঁয়, যে বর মাগে সেই বর পাই।।
অশ্বিনী (অশ্ব রূপিণী সূর্যপত্নী সংজ্ঞা) এবং তাঁর কুমার (পুত…
আরও পড়ুন » পূজা-পার্বনের তাৎপর্য ও মহিমা দামোদর
মাস ও ব্রত...মাহাত্ম্য গৌরাব্দ মাসের একটি মাসের নাম দামোদর মাস। এই
দামোদর মাসে মা যশোদা দড়ি দিয়ে শ্রীকৃষ্ণের উদরে বেধেঁছিলেন। এই মাসটি শ্র…
আরও পড়ুন » পূজা-পার্বনের তাৎপর্য ও মহিমা দুর্গাপূজার
তাৎপর্য, মহিমা ও বিভিন্ন তিথির আনুষ্ঠানিকতা এবং সময় নির্ঘণ্টঃ
শ্রীশ্রীচণ্ডী, শ্রীমদ্ভাগবত ও শ্রীমদ্ভগবদগীতা সনাতনী মানুষের নিত্যপাঠ্…
আরও পড়ুন » পূজা-পার্বনের তাৎপর্য ও মহিমা পিতৃপক্ষ
এবং দেবীপক্ষ বিশেষ তাত্পর্য্য পিতৃপক্ষ আর দেবীপক্ষের সন্ধীক্ষণ হচ্ছে
মহালয়া। ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষে শুরু হয়ে পরর্বতী অমাবস্যা র্পযন্ত…
আরও পড়ুন » একাদশি ব্রত পালনের তাৎপর্য মাহাত্ম্য ও নিয়মাবলিঃ একাদশী
ব্রত পালনের তাৎপর্য ও নিয়মাবলিঃ একসময় জৈমিনি ঋষি তার গুরুদেব মহর্ষি
ব্যাসদেবকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে গুরুদেব! একাদশী কী? একাদশীতে কেন উপবা…
আরও পড়ুন » একাদশি ব্রত পালনের তাৎপর্য মাহাত্ম্য ও নিয়মাবলিঃ শয়ন
একাদশী মাহাত্ম্য মহারাজ যুধিষ্ঠির বললেন-'হে কৃষ্ণ! আষাঢ় মাসের
শুক্লপক্ষের একাদশীর নাম কি? এর মহিমাই বা কি? তা আমাকে কৃপা করে
বলুন।'শ্র…
আরও পড়ুন » একাদশি ব্রত পালনের তাৎপর্য মাহাত্ম্য ও নিয়মাবলিঃ আমলকী
একাদশী মাহাত্ম্য যুধিষ্ঠির বললেন-হে কৃষ্ণ! মহাফলদাতা বিজয়া একাদশীর কথা
শুনলাম।এখন ফাল্গুন মাসের শুক্লপক্ষের একাদশী যে নামে বিখ্যাত তা বর্ণ…
আরও পড়ুন » একাদশি ব্রত পালনের তাৎপর্য মাহাত্ম্য ও নিয়মাবলিঃ পবিত্রারোপণী
একাদশী মাহাত্ম্য একদিন মহারাজ যুধিষ্ঠির ভগবান শ্ৰীকৃষ্ণকে জিজ্ঞাসা
করলেন হে প্ৰভু ! শ্ৰাবণ মাসের শুক্লপক্ষের একাদশীর নাম কি তা কৃপা …
আরও পড়ুন » একাদশি ব্রত পালনের তাৎপর্য মাহাত্ম্য ও নিয়মাবলিঃ অন্নদা
একাদশী মাহাত্ম্যঃ এই ভাদ্রবতী কৃষ্ণপক্ষীয়া অন্নদা একাদশীর মাহাত্ম্য
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে বর্ণনা করা হয়েছে। মহারাজ যুধিষ্ঠির বললেন--হে কৃষ…
আরও পড়ুন » একাদশি ব্রত পালনের তাৎপর্য মাহাত্ম্য ও নিয়মাবলিঃ পার্শ্ব
একাদশী এর মাহাত্ম্য পার্শ্ব একাদশী মাহাত্ম্য: ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে
যুধিষ্ঠির শ্রীকৃষ্ণ সংবাদে বর্ণিত আছে। একদা যুধিষ্ঠির মহারাজ-ভগবান শ্র…
আরও পড়ুন » একাদশি ব্রত পালনের তাৎপর্য মাহাত্ম্য ও নিয়মাবলিঃ ইন্দিরা
একাদশী মাহাত্ম্য মহারাজ যুধিষ্ঠির বললেন- হে মধুসূদন!! আশ্বিন মাসের
কৃষ্ণপক্ষীয়া একাদশীর নাম কি তা কৃপা করে আমাকে বলুন। শ্রীকৃষ্ণ বললেন-…
আরও পড়ুন » একাদশি ব্রত পালনের তাৎপর্য মাহাত্ম্য ও নিয়মাবলিঃ সফলা
একাদশী মাহাত্ম্য পৌষ মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশীর নাম "সফলা"। ব্রহ্মাণ্ড
পুরাণে যুধিষ্ঠির শ্রীকৃষ্ণ সংবাদে এই তিথির মাহাত্ম্য বর্ণিত…
আরও পড়ুন » একাদশি ব্রত পালনের তাৎপর্য মাহাত্ম্য ও নিয়মাবলিঃ পুত্রদা
একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য যুধিষ্ঠি বললেন-হে কৃষ্ণ!! পৌষ মাসের শুক্লপক্ষের
একাদশীর নাম কি? বিধিই বা কি,কোন দেবতা ঐ দিনে পূজিত হন এবং আপনি ক…
আরও পড়ুন » একাদশি ব্রত পালনের তাৎপর্য মাহাত্ম্য ও নিয়মাবলিঃ ষটতিলা
একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য মাঘ মাসের কৃষ্ণপক্ষের 'ষটতিলা' একাদশীর মাহাত্ম্য
ভবিষ্যোত্তরপুরাণে বর্ণিত আছে। যুধিষ্ঠির মহারাজ বললেন-হে জগন…
আরও পড়ুন » একাদশি ব্রত পালনের তাৎপর্য মাহাত্ম্য ও নিয়মাবলিঃ পাপমোচনী
একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য যুধিষ্ঠির শ্রীকৃষ্ণকে বললেন- হে জনার্দন! চৈত্র
মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশীর নাম ও মাহাত্ম্য কৃপা করে আমাকে বলুন। শ্র…
আরও পড়ুন » শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা প্রথম
অধ্যায় অর্জুন বিষাদ-যোগ ধৃতরাষ্ট্র উবাচ ধর্মক্ষেত্রে কুরুক্ষেত্রে
সমবেতা যুযুৎসবঃ। মামকাঃ পান্ডবাশ্চৈব কিমকুর্বত সঞ্জয়।।১।। অনুবাদঃ…
আরও পড়ুন » শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা দ্বিতীয়
অধ্যায় সাংখ্য-যোগ সঞ্জয় উবাচ তং তথা
কৃপয়াবিষ্টমশ্রুপূর্ণাকুলেক্ষণম্। বিষীদন্তমিদং বাক্যমুবাচ মধুসূদনঃ।।১।।
অনুবাদঃ সঞ্জয় বললেন-…
আরও পড়ুন » শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা তৃতীয়
অধ্যায় কর্মযোগ অর্জুন উবাচ জ্যায়সী চেৎ কর্মণস্তে মতা
বুদ্ধির্জনার্দন। তৎ কিং কর্মণি ঘোরে মাং নিয়োজয়সি কেশব।।১।। অনুবাদঃ
অর্জুন বলল…
আরও পড়ুন » শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা একাদশ-অধ্যায়
বিশ্বরূপ-দর্শন-যোগ অর্জুন উবাচ মদনুগ্রহায় পরমং
গুহ্যমধ্যাত্মসংজ্ঞিতম্। যত্ত্বয়োত্তং বচস্তেন মোহোহয়ং বিগতো মম।।১।।
অনুবাদঃ অর্…
আরও পড়ুন » শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা দ্বাদশ-অধ্যায়
ভক্তিযোগ অর্জুন উবাচ এবং সততযুক্তা যে ভক্তাস্ত্বাং পর্যুপাসতে। যে
চাপ্যক্ষরমব্যক্তং তেষাং কে যোগবিত্তমাঃ।।১।। অনুবাদঃ অর্জুন জিজ…
আরও পড়ুন » শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা প্রকৃতি-পুরুষ
বিবেকযোগ অর্জুন উবাচ প্রকৃতিং পুরুষং চৈব ক্ষেত্রং ক্ষেত্রজ্ঞমেব চ। এতদ্
বেদিকুমিচ্ছামি জ্ঞানং জ্ঞেয়ং চ কেশব।।১।। অনুবাদঃ অর্জুন …
আরও পড়ুন » গুরু তত্ত্ব শিব
কল্প তরু শ্রী শ্রীমৎ স্বামী অদ্বৈতানন্দ পুরী মহারাজ শিব কল্প তরু শ্রী
শ্রীমৎ স্বামী অদ্বৈতানন্দ পুরী মহারাজ মানব কল্যাণ কামী ও সংসারত্যাগী
একজন…
আরও পড়ুন » গুরু তত্ত্ব শ্রী
অদ্বৈত আচার্য শ্রী অদ্বৈত আচার্য(১৪৩৪-১৫৫৮) বৈষ্ণব দার্শনিক। শ্রীহট্ট
(বর্তমান সিলেট) জেলার নবগ্রাম-লাউড় গ্রামে এক বারেন্দ্র ব্রাহ্মণ পরিব…
আরও পড়ুন » গুরু তত্ত্ব শ্রীগদাধর
পণ্ডিত : মহাপ্রভুর ছায়া শ্রীগদাধর পণ্ডিত শিশু কাল থেকেই মহাপ্রভুর
সঙ্গেই থাকতেন । তাঁর পিতার নাম ছিল মাধব মিশ্র আর মাতার নাম ছিল
রত্নাবলীদে…
আরও পড়ুন » সনাতন ধর্মের বিভ্রান্তি নিরসন সংঘাত
নিরসনের পন্থা আধ্যাত্মিক
ভিত্তি গঠন ভগবানের অবিচ্ছেদ্য অংশ হওয়ায়, আত্মা সমস্ত জড় উপাধি থেকে
মুক্…
আরও পড়ুন » পারমার্থিক জ্ঞান হরি
নামের মহিমা একদিন একজন অধার্মিক লোক একজন ধার্মিক লোককে বলছে, আচ্ছা!
হরিনাম করলেও মানুষের মৃত্যু হয়, না করলেও মৃত্যু হয়। তাহলে করার চেয়ে না
কর…
আরও পড়ুন » পারমার্থিক জ্ঞান কামকে
কিভাবে জয় করবেন ? প্রতিটি মানুষের অন্তরে রয়েছে শুদ্ধ কৃষ্ণ - প্রেম ।
কিন্তু এই প্রেম, ভক্তি ও শুদ্ধ চেতনা বিকৃত কামের দ্বারা আবৃত হয়ে আছে…
আরও পড়ুন » পারমার্থিক জ্ঞান ভগবান
শ্রীকৃষ্ণের প্রিয় হতে চান এই গুনগুলোর চর্চা করুনঃ এগুলোর সবগুলো অথবা
কয়েকটি গুন চর্চা করুন গুনগুলো আয়ত্ত্বে আনার জন্য চেষ্টা করুন। আর শ্রীকৃ…
আরও পড়ুন »
পারমার্থিক জ্ঞানমহাভারত
পড়ার সময় না থাকলেও এর মূল সূত্রগুলি আমাদের জীবনে কার্যকর প্রমাণ করতে
পারে----------------------- ১== যদি আপনি সময়মতো বাচ্চাদের ভুল দাব…
আরও পড়ুন » পারমার্থিক জ্ঞান বৈদিক
শাস্ত্রে জন্ম ও মৃত্যুযোগ অশৌচ সনাতন ধর্মের বৈদিক শাস্ত্রে জন্ম ও
মৃত্যুযোগ অশৌচ কি? অশৌচ দুই প্রকার যেমনঃ— ১৷ জননাশৌচঃ — পরিবারে কেউ
জন্মগ্র…
আরও পড়ুন » পারমার্থিক জ্ঞান পূজাতে
ঘট লাগে কেন? যে কোন পূজায় ঘট কেন অপরিহার্য? ঘট আমাদের দেহের
প্রতিরূপ।পূজার সময় পঞ্চগুড়ি দিয়ে পিঠ তৈরী করা হয়।এই
পঞ্চগুড়ি,পঞ্চমহাভূত …
আরও পড়ুন » পারমার্থিক জ্ঞান কলিযুগের
মানুষদের ভগবানের নামে রুচি নেই কেন ? এক সাধুবাবা সকলকে সৎপথে উপাৰ্জন
করার পরামৰ্শ দিতেন । তার কাছে এক রাজা প্রায়ই আসা - যাওয়া করতেন । একদ…
আরও পড়ুন »
পারমার্থিক জ্ঞান মহাভারতে
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কিছু বাণী ও উপদেশঃ ১.যখন সংসারে দেখার মত কিছুই থাকে
না, তখন মানুষ ঈশ্বর এর দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। -(ভগবান শ্রীকৃষ্ণ)…
আরও পড়ুন » পারমার্থিক জ্ঞান শ্রীচৈতন্য
মহাপ্রভুর কিছু অমৃত বাণী কলির জীবের কল্যাণ আর উদ্ধারের জন্য
সচ্চিদানন্দঘন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই ধরায় আবির্ভূত হন নিমাই রুপে।সময়ের …
আরও পড়ুন » পারমার্থিক জ্ঞান চার
যুগ-সত্য,ত্রেতা,দ্বাপর ও কলির সময় পরিমাণ ও বৈশিষ্ট্যসমূহঃ চার যুগের
সময় পরিমাণ ও বৈশিষ্ট্যসমূহ:- ★ ১.সত্য যুগ হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী সত্য
যুগ …
আরও পড়ুন » অডিও ভিডিও ভজন ও নামকীর্তন সনাতন
অডিও ভিডিও ভজন-আরতি-নামকীর্তন শুনুন এবং ডাউনলোড করুন নিচের লিংকে ক্লিক
করে... বি:দ্র:- আপলোডের কাজ চলমান রয়েছে ..কৃপা করে অপেক্ষা করুন …
আরও পড়ুন »
0 মন্তব্যসমূহ